হিল রোড থেকে নর্থ রোড এগারো মাইল দূরে আর ফার্স্ট ক্লাসের ভাড়া বাইশ টাকা দশ পয়সা। এটা সেদিন স্টেশন মাস্টারের কাছ থেকে জেনে ডায়েরিতে লেখা।
সুতরাং পোয়ারোর দৃঢ় বিশ্বাস এতে বড় ধরনের টাকার ব্যাপার জড়িত আছে। তা না হলে ডিনসমেড এতোটা বেপরোয়া হত না। সেদিনের কাণ্ডটার পেছনে কী উদ্দেশ্য আছে? আর এই রবার্টই তার প্রাণের বন্ধু।
আর সেই টাকা নিশ্চয়ই কোনো উকিল বা সলিসিটারের কাছে গচ্ছিত আছে। তাই মেরীকে নিয়ে সে প্রায়ই যেত। তাহলে মেরী ব্যাপারটা জানতে চায়নি কেন? অর্থাৎ প্রথম থেকেই অতি সাবধানে পা ফেলে এগিয়েছে।
পোয়ারো হাসে, কিন্তু ভবিতব্য? চার্লসই বা কেন সেই দুর্যোগের রাতে ডিনসমেডের বাড়িতে হাজির হবে? একেই বলে শাস্ত্রের বিধান।
.
৩২.
পোয়ারো খবরের কাগজের অফিসে উপস্থিত হয়। জানে পেনিকে পাবে না। রোজিকে পেলেই ভালো। মেয়েটা বেশ কাজের।
আরে ঐ তো রোজি বসে আছে। রোজির বয়স তেইশ থেকে পঁচিশের মধ্যে, উগ্র প্রসাধন, পরনে হাল্কা গোলাপী রংয়ের মিনি স্কার্ট আর তার উপর একটা ফুল স্পীডের সাদা সোয়েটার।
–আরে রোজি যে।
–আপনাকে কিন্তু আমি মোটেই আশা করিনি। হেসে বসতে বলে পোয়ারাকে।
–তোমায় কিন্তু দারুণ দেখাচ্ছে। ডেটিং আছে নাকি?
–উঁহু।
–বিশ্বাস হয় না। যাক আমার একটা কাজ করে দেবে?
নিশ্চয়ই কিন্তু কাজটা কী?
–শোনো, এ মাসের আট তারিখ থেকে এগারো তারিখ পর্যন্ত বাইরে ছিলাম। এর মধ্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর আছে?
–এক মিনিট। তারপর ইনডেক্স কার্ডের দিকে যায়, তারপর জানায় জন মুখ মারা গেছেন।
–ভালো হয়েছে আশি বছর ভুগে খুব কষ্ট পাচ্ছিল।
–কতগুলো হিপি শেষ রাতে বারে ঢুকে ক্যাবারে ডান্সারকে ছিনতাই করতে গিয়ে স্পটে পুলিশের গুলিতে দুজন মরে।
-ভালো হয়েছে। আর?
–ফুটবল সম্রাট পেলে বলেছেন–খেলাধূলার মান বজায় রাখতে ছোটোদের দিকে নজর দিতে হবে।
–আর কিছু?
–আর পথ দুর্ঘটনা, ছিনতাই ইত্যাদি।
থ্যাঙ্ক ইউ। সন্ধ্যের পর আসতে পারি।
–ইউ আর দি লায়ার। আগে দুবার কথা দিয়েও আসেননি।
–আই অ্যাম সো সরি। হাওয়া বেগতিক দেখে পোয়ারো তাড়াতাড়ি সেখান থেকে কেটে পড়ে।
.
৩৩.
দুটোর সময় গ্রীন উড থানায় ডিনসমেডকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিনসমেড কিছুতেই তার দোষ স্বীকার করছে না। বলছে আমায় এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে আমি এর জন্য মানহানির মামলা করবো। আমার লইয়ার বন্ধু আছে, আমায় না ছাড়লে আমি তাকে ফোন করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তারপর তরুণ অফিসার টমসনকে বলে–তুমি অন্তত এসব আজেবাজে কথা বিশ্বাস করো না।
–আমি বাধ্য। ওপরওয়ালার নির্দেশ না মানলে আমার চাকরি যেতে পারে। আপনি এরকুল পোয়ারোর নাম শুনেছেন?
-হ্যাঁ, আমার মেয়েরা তো তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
–সেই আপনাকে অ্যারেস্ট করতে বলেছেন।
–কিন্তু কেন?
–মিঃ ডিনসমেড আপনি সব দোষ অকপটে স্বীকার করুন। নইলে আমি অন্য ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
ডিনসমেড ফ্যাকাসে মুখে জানতে চায়–কী ব্যবস্থা নেবে? টমসন আমি শার্লটকে তোমার সাথে অবাধে মিশতে দিয়েছি আর তুমি…। আমি কিছুই জানি না।
আবার অনুরোধ করেও ডিনসমেড মুখ খুলল না। পরের দিন তাকে আদালতে পাঠানো হল।
দুদিন পরের ঘটনা। কনফেশন রুমে ডিনসমেডের উপর অত্যাচারের পর সে বলে, বলছি আর পারছি না।
পাশের ঘরে পোয়ারো আর চার্লস বসে আছে। চার্লস বলে–এখন আমার ডিনসমেডের কাছে যেতেই লজ্জা করছে।
পোয়ারো বলে–হ্যাঁ তা তো ঠিক–সেদিন তোমায় আশ্রয় না দিলে তো তুমি বাঁচতে না। আর উপরি হিসাবে পেয়েছিলে মেরীর উষ্ণ সান্নিধ্য।
–সত্যি সব মিলিয়ে তুমি মার্ডার করলে।
–আমি না তুমি? আসলে এস. ও. এস. কথাটা আমার মনে সন্দেহের ছায়া ঢুকিয়েছে।
–তাও ঠিক কিন্তু তুমি যে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বার করবে তা কে জানত?
হঠাৎ টমসন এসে বলে–স্যার, মুখ খুলেছে।
–আমি আসছি। পোয়ারো উঠে দাঁড়ায়।
–আমি আসতে পারি?
–হ্যাঁ, পারো।
ওদিকে ডিনসমেড আর অত্যাচার সহ্য করতে পারে না। যন্ত্রণায় সে ছটফট করে। তারপর পোয়ারো আর চার্লসকে দেখে বলে–আপনারা? দয়া করে চলে যান।
টমসন বলে–উনি হলেন এরকুল পোয়ারো।
–মাপ করবেন মিঃ ডিনসমেড।
–এবার বলুন আপনি কী জানেন?
–আ-আমি কিছুই জানি না।
তারপর আরেক দফা অত্যাচারের পর ডিনসমেড মুখ খুলতে বাধ্য হয়।
স্ত্রী মারা যাবার পর রবার্ট দারুণভাবে ভেঙে পড়ে। মেয়ে নিয়ে তার খুব চিন্তা হয়। তারপর সে ভাবে যে সেও আর বেশি দিন বাঁচবে না। তখন মেয়ের কী হবে বলে বন্ধু ডিনসমেড রবার্টকে সান্ত্বনা দেয়।
-না ডিনসমেড আমি ভালো বুঝছি না।
–কেন? তোমার মরে যাবার মতো বয়স হয়নি।
লিজার কি মরে যাবার মতো বয়স হয়েছিল?
–তা ঠিক। তবে তোমার সঙ্গে আমি আছি, অত মুষড়ে পড়ছ কেন?
রবার্ট বলে বিছানায় শুয়ে না ঘুমোতে পারলে যে কী জ্বালা! মনে হয় ভোর না হলেই এখুনি মরে যাবো।
রবার্ট আমার একটা কথা রাখবে?
–কি কথা?
–মিস জুলিয়েটকে বিয়ে করো।
–লিজার জায়গায় আমি কাউকে বসাতে পারি না।
–জানি, কিন্তু সে তো নেই।
–না। ও আছে
–রবার্ট পাগলের মতো কথা বল না। তুমি জুলিয়েটকে বিয়ে করো। দেখবে নতুন জীবন মধুর হবে।
-না। আজ আর তা সম্ভব নয়।
–কেন নয়? মেয়ের কথা ভাববে না?