–গ্রীন উড থানা?
–হ্যাঁ।
মিঃ ডিনসমেড অ্যারেস্ট হয়েছে?
–গুড মর্নিং স্যার, মিঃ ডিনসমেডকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে।
–ঠিক আছে তাদের বাড়ির সবাই ভালো?
–হ্যাঁ স্যার, তবে ওদের বাড়িতে একটা ছেলে কাজ করতো, সে মিসিং।
–মিসিং? পোয়ারো বুঝল তবু অবাক হবার ভান করল।
–হ্যাঁ স্যার, আর মিঃ ডিনসমেড অ্যারেস্ট হবার পেছনে কী চার্জ আছে তা যদি জানতাম…।
–এখন একটু অসুবিধে আছে তবে লোকটি মোটেই সুবিধের নয়।
অথচ স্যার, দেখলে বোঝাই যায় না।
–আপনি তাকে চেনেন নাকি?
–আমার কাছে মাঝেমধ্যেই আসতেন।
–একা?
–না স্যার, তার সঙ্গে তার মেয়ে শার্লট আসত।
–মেরী নয়তো?
–না স্যার, আমি চিনি।
–আপনার কাছে মিস শার্লটকে নিয়ে আসত কেন?
–যাতে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
—শার্লট এসেছিল কী?
–না স্যার।
–আপনি কী শার্টকে ভালোবাসেন?
–ওর মনের কথা জানতে পারি না।
–শার্লটের কোনো প্রেমিক আছে? একটু খোঁজ নেবেন?
প্রয়োজন আছে?
–কথাটা এমনই বললাম। সে ভাবে, শার্লট রবার্টের মেয়ে। বিয়ে হয়ে গেলে ল্যাটা চুকে যেত। তার পর পুলিশের চাকরি। একটা তোফা চাল চেলেছিল ডিনসমেড। আর শার্লটকে কেন্দ্র করেই অফিসারকে হাত করেছিল। তবু শেষ রক্ষা করতে পারল না। পাপ কাউকে ছাড়ে না। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।
–আর স্যার, আমাকে মিঃ ডিনসমেড মাঝেমধ্যেই নিমন্ত্রণ করতেন। তখন একটা জিনিস লক্ষ্য করতাম। তখন মিস শার্লট ছাড়া বড়ো একটা কেউ কাছে আসতেন না।
পোয়ারো ভাবে একেবারে শেষ সময় তাকে হার স্বীকার করতে হল। ওর মধ্যে হয়তো টাকার ব্যাপার রয়েছে। ইস্ তার বাড়া ভাতে এভাবে ছাই পড়লো। আর যত গণ্ডগোল বাঁধাল চার্লস। সে ঝড় জলের রাতে গ্রীন উড থেকে মেরী শার্লট সংবাদ পরিবেশন করে আমার মনে সন্দেহের জাল বুনে দিল। যার মূলে রয়েছে–এস. ও. এস.।
৩০. আতঙ্কের চিহ্ন
৩০.
পোয়ারো রিসিভার নামানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পায় টম দারুণভাবে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরে ঢুকল। তার মুখে একটা আতঙ্কের চিহ্ন।
পোয়ারো তাড়াতাড়ি উঠে টমের কাছে আসে।
পোয়ারো বলে–টম তুমি একটু বিশ্রাম কর আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
এই বলে পোয়ারো কিচেন থেকে কয়েকটা শুয়োরের স্যান্ডউচ আর দুধে কিছুটা ব্র্যান্ডি মিশিয়ে নিয়ে আসে।
টম কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। পোয়ারো নিজের কৌতূহল দমিয়ে রেখে টমকে খেয়ে নিয়ে তারপর কথা বলতে বলে। খাওয়া শেষ হলে টম বলে-স্যার আপনাকে আগে একদিন ফোনে বলেছিলাম, মিস শার্লটের জুতোয় একটা বড়ো পেরেক উঠেছে।
-হ্যাঁ, সে পরে গিয়ে তুমি সারিয়ে নিয়ে এসেছিলে।
-এরপর দেখা গেল মিস শার্লটের জুতোয় আরো কয়েকটা পেরেক বেরিয়ে পড়েছে। তাতে তার বড়ো লাগছে। সে আমায় ডেকে বললো, টম, আবার পেরেক বেরিয়েছে তুমি কী সারালে?
-তারপর?
–আমি বলি, মিস শার্লট আমি তো মুচিকে ভালো করেই সারাতে বললাম। বলে আমি মাথা চুলকাই, যেন অপরাধটা আমারই।
-এবার খুব ভালো করে বলবে।
–আচ্ছা।
হঠাৎ ডিনসমেড এসে বলে–তোমায় যেতে হবে না। যতসব কারবার!
মিস শার্লট যে পড়তে পারছে না। ওনার বড়ো কষ্ট হচ্ছে। আমি আমতা আমতা করে বলি।
–আমি শহর থেকে ভালো করে সারিয়ে আনবো। এখানকার মুচি ভালো না।
–সেটাই ভালো হবে বাবা।
–টম তুই জুতোটা প্যাক করে গাড়িতে তুলে দে।
–এক্ষুনি যাচ্ছি, স্যার।
ডিনসমেড সন্ধ্যের মুখে জুতো এনে শার্লটকে দেয়–এই নাও ভালো করে সারাই করে এনেছি।
শার্লট খুশী, বলে-বাবা চমৎকার সারানো হয়েছে। শহরের সঙ্গে কী গ্রামের তুলনা চলে?
তারপরই একটা ঘটনা ঘটল। শার্লট ও মেরী একই ঘরে শোয়। পাশের ছোটো ঘরে টম শোয়।
একদিন টম লক্ষ্য করে তাদের ঘরের কাছে জুতোর র্যাকের সামনে একটা ছায়ামূর্তি এসে জুতোর কাছে কী যেন করে আবার চলে যায়, যেমন নিঃশব্দে এসেছিল তেমন করেই।
টম কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। দরজা খুলতে সাহস পায় না, যদি ছায়ামূর্তি আবার আসে। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে ভালোভাবে দেখে নেয় কেউ তাকে দেখছে কি না আর তারপর জুতোর কাছে ভালোভাবে খোঁজে কিন্তু সন্দেহজনক কিছুই পায় না।
টম ঐ চাদরে জড়ানো ছায়ামূর্তির উচ্চতা আর হাঁটার ভঙ্গী দেখে বুঝতে পারে যে ওটা ডিনসমেড।
তারপর টম নিরাশ হয়ে ঘরে ফিরে আসে। ভাবে ওখানে কিছু একটা ঘটবেই। তাই ভালোভাবে লক্ষ্য রাখে। তা না হলে ডিনসমেড অত রাতে ওখানে আসবে কেন? হয়তো তার জন্যই পোয়ারো তাকে ওখানে রেখেছে।
টম ওঁৎ পেতে থাকে কিন্তু পরদিন তেমন কিছু ঘটল না।
এর মাঝে কয়েকদিন গেল কিছু হল না। কিন্তু দিন দশেক পরে আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
–টম জানলা দিয়ে জ্বলন্ত সিগারেট ফেলতে গিয়েছিল, পেছন ফিরে তাকাতে দৃশ্যটা চোখে পড়ে। দৃশ্যপটের আবার কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। ডিনসমেড পকেট থেকে কিছু একটা বার করে জুতোর র্যাকের কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চলে গেল।
তারপর টম সেদিনের মতোই করল। একটা পেনসিল টর্চ মেরে জুতোর র্যাকের কাছে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে কিছু না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছিল, এমন সময় তার চোখে পড়ল শার্লটের জুতোর পেরেকের উপর কয়েক জায়গায় একটু জলের মতো দাগ। টম ভাবে হয়তো শিশিরের জল গড়িয়ে জুতোর উপর পড়েছে। আর ঠিক তার উপরে ছাদে ড্যামের মতো দাগ। বর্ষাকালে নাকি এখান দিয়ে জল পড়ে।