–জন। আর আপনার?
–স্টিফেন।
–আর শুনুন, অ্যারেস্ট করেই আমায় খবর দেবেন। মিঃ পোয়ারো খুব চিন্তায় আছেন।
-স্যারকে চিন্তা করতে বারণ করুন। মিঃ ডিনসমেড এ চত্বরে থাকলে নিশ্চয় অ্যারেস্ট হবেন।
–ঠিক আছে ছাড়ছি।
–পোয়ারো এখান থেকে বেরিয়ে চারদিক ভালো করে দেখে একটা বুথে ঢুকে ডায়াল করে।
–হ্যালো মিঃ এমিট।
–হ্যাঁ, আপনি কে বলছেন?
–আমি পোয়ারো।
–গুড মর্নিং স্যার।
–গুড মর্নিং, আপনাকে আমার এখন ভীষণ দরকার।
–বলুন স্যার, কী কাজে লাগতে পারি?
–আপনি এক্ষুনি একবার থিয়েটা থানায় আসবেন?
–থিয়েটো মানে….
–হ্যাঁ, ট্রেনে কয়েক ঘণ্টার পথ।
–স্যার, আপনি ওখান থেকে কথা বলছেন?
-হ্যাঁ, এখানে এসে আমার দেখা পাবেন না। ছদ্মবেশে আসবেন, ভালো করে শুনুন, আপনার কী করতে হবে।
-বলুন স্যার।
বার্টের বিবরণ দিয়ে পোয়ারো বলে–এ থানায় আছে। দারুণ একটা চীজ। কাল ওকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনাকে দেখতে হবে ও যাতে পালাতে না পারে আর পালালে কোথায় যায় সেদিকে নজর রাখবেন। সুতরাং সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
-ইয়েস স্যার।
–আর পালালে স্থানীয় থানায় যেমন জানাবেন আমাকেও জানাতে ভুলবেন না।
–ঠিক আছে স্যার, ছাড়ছি।
–আচ্ছা।
.
২৯.
–হ্যালো।
–হ্যালো। চার্লস, আমি পোয়ারো!
–সেটা বলতে হবে না। কিন্তু তুমি এখন কোথা থেকে বলছে?
–থিয়েটা। শোনো তোমার কী আজ অফিস যাবার খুব দরকার?
–কেন বলো তো?
-তোমায় এক্ষুনি একবার মিঃ ডিনসমেডের বাড়ি যেতে হবে। গিয়ে দেখবে মিঃ ডিনসমেড অ্যারেস্ট হয়েছে কী না?
–অ্যারেস্ট? মিঃ ডিনসমেড?
–হ্যাঁ।
–কিন্তু কেন?
–মিঃ রবার্টের মেয়েকে নিজের হেফাজতে রাখার জন্য।
–তাতে কী হয়েছে? বন্ধুর নিঃস্ব মেয়েকে..
–সে যে জোন্সকে হত্যা করে…
–মিঃ ডিনসমেড?
–না, সে নয়, লোক লাগিয়ে কাজ করিয়েছে।
কাকে দিয়ে?
–তাকে তুমি চিনবে না। শোনো তোমার এখন অনেক কাজ।
তার আগে আমায় একটু ধাতস্থ হতে দাও। তোমাদের ডিটেকটিভের ধাঁধা যে বড়ো জটিল।
–তোমার ধারণাই ঠিক। মেরী আর শার্লট দুই বোন নয়।
–কে ডিনসমেডের মেয়ে?
-সেটা এখন ঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে মিস জুলিয়েট, মিসেস ম্যাকডোনাল্ড আর মিঃ হেনেসের কথায় মেরী নামের কিছু মিল পাওয়া গেছে। তবে…। আমার মন অন্য কথা বলছে।
-কী বলছে?
–সম্ভবত শার্ট ডিনসমেডের মেয়ে নয়।
কারণ ওঁর মাথায় পরচুল আছে, তাই?
-তা ঠিক নয়। ঐ মেয়েকে নিয়ে ডিনসমেড গ্রীন উড়ে পালিয়ে এসেছে, যাতে কেউ সন্দেহ না করে।
–যেই রবার্টের মেয়ে তোক ও নাম তাদের আসল নাম নয়।
–হঠাৎ একথা বলছ?
–সব সন্দেহের অবসান মিঃ ডিনসমেড ঘটাতে চেয়েছে। আর এস. ও এস.-এর মধ্যে অনেক কিছু লুকানো আছে।
-যেমন?
–দুবোন কিছু একটা আঁচ করেছিল অনেকদিন ধরে ওদের বাবা-মার কথায়। নইলে তাদের অজান্তে এস. ও. এস. লিখত না। এক্ষেত্রে তাদের অবচেতন মন খেলা করেছে।
–আর আমার মনে হয় ওখানে সত্যি কোনো বিপদ ঘটতে চলেছে।
–তুমি কোন বিপদের কথা ইঙ্গিত করছ?
—মৃত্যুর।
-কার মৃত্যু?
–তা সঠিক বলতে পারছি না। মেরী নয় শার্লট।
–নিজের মেয়ের কথা ছেড়ে দাও, বন্ধুর মেয়ে ও তো। আর সেখানে বলছ কী না…
-হ্যাঁ বন্ধু সেটাই রহস্য। বড়ো বিচিত্র এ জগৎ। কেন ডিনসমেড বন্ধুর মেয়েকে পাবার জন্য এত লালায়িত হয়ে উঠেছিল? শুধু কী বন্ধুর মেয়েকে কাছে পাবার জন্য? আমার মন কিন্তু অন্য কথা বলছে।
–সেটা কী?
—লোভ, সম্ভবত অর্থ, সেটা প্রায় সময়ই অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন না পারে গিলতে পারে ওগরাতে। ফলে নিজের বেছানো জালে নিজেই জড়িয়ে পড়ে। সেটাই ক্ল খেলে যায়।
-হ্যাঁ। সত্যিই তো মেয়ে পাবার জন্য অত কাঠখড় পোড়াতে যাবে কেন?
–শোন তুমি যদি ওখানে গিয়ে দেখ মেরী আর শার্লট ঠিক আছে তাহলে কিছু করার নেই।, তবু একজন ডাক্তার দেখিয়ে ওদের চেকআপ করিয়ে নিও।
-চেকআপ করাবো? একথা বলছ কেন? এদের মধ্যে কে অসুস্থ হতে পারে?
–এদের দুজনের মধ্যে একজন এবং সত্যিই তার বিপদ।
–কে?
–ডিনসমেড নিজের মেয়েকে রবার্টের মেয়ে বলে চালাতে চাইবে। ফলে অন্য জনের ঘটবে বিপদ।
–রবার্টের মেয়ে? তাতে ডিনসমেডের লাভ?
–লাভ তো বটেই হয়তো টাকা পয়সার প্রশ্ন জড়িতে আছে। আর রবার্টের মেয়ে নিশ্চয়ই অতগুলো টাকার লোভ ছাড়তে পারবে না। সেদিক দিয়ে নিজের মেয়ে হলে স্বস্তি।
–হয়তো তাই।
–তোমার মনে আছে, ডিনসমেউ কয়েক মাস অন্তর মেরীকে নিয়ে কোথায় যেন যেত। সেই ব্যাপারে মেরীকে প্রশ্ন করলে সে বলত রাস্তাটা সে গুলিয়ে ফেলেছে। প্রথমবার বাবা একই রাস্তায় অনেকবার ঘুরিয়েছে, তারপর এক বৃদ্ধ ভদ্রলোকের সাথে আলাপ করিয়ে তাকে পাশের ঘরে যেতে বলেছে। আবার ফেরার সময় ঘুরপথে বাড়ি ফিরেছে। এখন প্রশ্ন সেই বৃদ্ধ লোকটি কে যার জন্য মিঃ ডিনসমেডের এত লুকোচুরি খেলা। আর মেরী বলেছিল বৃদ্ধ লোকটি হয়ত লইয়ার কারণ তার বাড়িতে অনেক মোটা বই সে দেখেছে।
-সলিসিটারও হতে পারে।
-হা, ওখানে রবার্ট হয়তো টাকা গচ্ছিত রেখেছে যেটা ডিনসমেড জানত। আর শোন ওখানে গিয়ে দেখবে টম নাম একটা ছেলে কাজ করছে। তুমি ঘন্টা চারেক পর ওকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবে।
–ঠিক আছে।
পোয়ারো ঘণ্টা তিনেক পর বাড়ি ফিরে ডিনসমেডের স্থানীয় থানায় ডায়াল করে–হ্যালো।