মাসখানেক পর বার্ট জোন্সের কাছে যায়। দেখে সে ক্ষেতে কাজ করছে আর মেয়েটা পাশে বসে মাটি নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছে। বার্ট জোন্সের কাছে গিয়ে করুণভাবে বলে–আমায় একটা কাজ দেবেন?
–এ বাজারে কাজ কী অত সহজে পাওয়া যায়?
–আমায় একটু জল দেবেন। বলেই মাটিতে পড়ে যায়।
-কী হল? পাশের ক্ষেত থেকে সকলে ছুটে আসে–কী হয়েছে। কী হয়েছে। বেঁচে আছে। তো?
-দেখ না ভাই, কাজের কথা বলতে বলতে একটু জল চাইল তারপরই অজ্ঞান হয়ে গেল।
তারপর একজন ডাক্তার এসে বলল যে অনাহারে এমন হয়েছে, এতে ভয়ের কিছু নেই। খাবার দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। সবাই তাকে ধরাধরি করে জোন্সের বাড়ি নিয়ে গেল। আর তখন থেকেই সে ওখানে রইল।
প্রথমটা জোন্স বার্টকে বিশ্বাস করেনি। মেয়েকে ওর কাছে একা রাখত না এবং সন্দেহের চোখে দেখত।
কিন্তু মাসখানেকের মধ্যে বার্ট মেয়ের মন জয় করে নেয় এবং মধুর ব্যবহারের জন্য জোন্সও তাকে আর সন্দেহ করে না। এটাই হল চরম একটা ভুল।
এখন তো সংসারে বার্ট না হলে কোনো কাজই হয় না। ফলে জোন্স বিশ্রাম নিতেও পারছে, আবার আগের তুলনায় জমির আয়ও বেড়েছে। এতে জোন্স মহাখুশী। এখন সন্ধ্যে হলেই ঘরে মদের আসর বসে। জোন্সের একগ্লাসের বন্ধু এখন বার্ট। সারাদিন পরিশ্রমের পর মদ না হলে যেন চলেই না। বার্ট সঙ্গে যে আর্সেনিক নিয়ে এসেছিল তা একটু একটু করে মদের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে লাগল। দুপুরে যে খাবার নিয়ে যেত তাতেও মেশাতে লাগল।
একদিন মাঠে কাজ করতে করতে জোন্স যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেল। চটজলদি ডাক্তার নিয়ে এল বার্ট। ডাক্তার জানালো হার্ট অ্যাটাক, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তাই করা হল। সকলে বার্টকে ধন্য ধন্য করতে লাগল। সাপে বর হল। তাকে আর কেউ সন্দেহ করবে না। দিন কুড়ি পর জোন্স হাসপাতাল থেকে ফিরে এল তবে তার আর আগের সেই শক্তি নেই।
জোন্স বাড়ি ফিরতে বার্ট নিশ্চিন্ত কারণ তার ভয় আর্সেনিকের কথাটা যদি বেরিয়ে পড়ে।
তবে এভাবে জোন্সকে মেরে ফেলার পেছনে বার্টের স্বার্থ আছে। একদিকে সে যেমন টাকা পাবে তেমনই অন্যদিকে জোন্সের অবর্তমানে এই জায়গা জমির মালিক সেই হবে। মিঃ ডিনসমেডের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে এসব জিনিসে হাত বাড়াবে না, বাড়ালেই খতম। গুণ্ডামী, বদমায়েশী, থানা, পুলিশ এ জীবন বার্টের আর সহ্য হচ্ছে না।
তারপরেই একদিন সকালে উঠে বার্ট দেখল জোন্স কথা বলছে না। গা ঠেলতে গিয়ে দেখল গা বরফের মতো ঠান্ডা।
সঙ্গে সঙ্গে বার্ট আশেপাশের দু-একজনকে ডেকে ডাক্তারের কাছে ছোটে। বৃদ্ধ ডাক্তার, চোখে তেমন ভালো দেখে না। কিন্তু গ্রামের সেই ভরসা।
বার্ট আসতে আসতে ডাক্তারকে বলল যে, সে যদি জোন্সকে বাঁচিয়ে তোলে তাহলে তাকে বার্ট পুষিয়ে দেবে। শুনে ডাক্তার খুবই খুশী। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলে আমার আর কিছু করার নেই ও মারা গেছে।
বার্ট কাঁদো কাঁদো গলায় মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে, ডাক্তার বলল–হার্টফেল করেছে।
–আপনি আর কী করবেন! বলে বার্ট ডাক্তারকে একটা একশো টাকার নোট দিয়ে বলল –আমি এখন কী করব?
সবাই সান্ত্বনা দেয়–এভাবে ভেঙে পড়লে তো চলবে না। মেয়েটাকে তো দেখতে হবে।
.
২৮.
বার্টের জবানবন্দী শেষ হলে পোয়ারো বলে–মিঃ জন, টেপটা বন্ধ করে দিন। ডিনসমেডকে অ্যারস্ট করতে হবে।
-হা কিন্তু এতোদিনের পুরোনো ঘটনা টেনে বার করলেন কিভাবে?
–এখনো পুরোটা হয়নি, আরো বাকি আছে। এখন বলব না, কারণ, অনুমান ভুলও হতে পারে।
তারপর জন তার সহকারীদের জরুরী নির্দেশ দিয়ে পোয়ারোকে নিয়ে তার অফিসে যায়। পোয়ারোকে বসতে বলে জন রিসিভার তুলে নেয়।
-হ্যালো!
–আমায় একটু গ্রীন উড থানার লাইনটা দিন না। এক্ষুনি ভীষণ দরকার।
একটু পরেই লাইন বেজে ওঠে। জন রিসিভার তোলে।
-হ্যালো।
–স্যার অনেকবার ট্রাই করলাম, কোনো রেসপন্স নেই?
বারবার ট্রাই করে যাও।
ইতিমধ্যে ওদের কফি এসে গেছে। পোয়োরো কফিতে চুমুক দিয়ে বলে–মিঃ জন, বার্টের দিকে একটু বিশেষ নজর দেবেন। কারণ ও আমার প্রধান সাক্ষী হিসাবে কাজ করবে। আর টেপটাও সাবধান।
কিন্তু পোয়ারো নিজেও কথাগুলো একটা ছোটো টেপ রেকর্ডারে টেপ করে নিয়েছে। পুলিশের লাইন। টাকা পেলে দিনকে রাত বানানো খুবই সহজ ব্যাপার। অবশ্য কয়েকটা দুষ্টু লোকের জন্য এই কথা বললাম। বার্ট দাগী আসামী, ছলচাতুরীতে পারদর্শী। তাই জনের উপর পোয়ারোর পুরোপুরি ভরসা নেই তার ওপর পাড়া গ্রামের থানা। একবার পালালে ধরা মুশকিল।
ইতিমধ্যে ফোন বেজে ওঠে। জন রিসিভার তুলে নেয়–হ্যালো!
–স্যার লাইনটা পেয়েছি। স্পিক হিয়ার প্লিজ।
-থ্যাঙ্ক ইউ। হ্যালো! গ্রীন উড থানা? আমি অফিসারের সাথে কথা বলতে চাই। আমি থিয়েটো থানা থেকে বলছি।
ধরুন।
–হ্যালো! অফিসার বলছেন?
–হ্যাঁ।
–আপনি গ্রীন উডের মিঃ ডিনসমেডকে চেনেন?
–ডিনসমেড? হা হা, চিনতে পেরেছি। একটা বাংলো বাড়ির মালিক।
তাকে অ্যারেস্ট করুন।
–অ্যারেস্ট করবো? কিন্তু তার বিরুদ্ধে চার্জ কী?
–অনেক চার্জ আছে। নিশ্চয়ই এরকুল পোয়ারোর নাম শুনেছেন?
–তা নিশ্চয়ই।
–তিনি এ বাপারে ইনভেস্টিগেশন করছেন।
–তাহলে তো এক্ষুনি মিঃ ডিনসমেডকে অ্যারেস্ট করতে হয়।
–হ্যাঁ, তাই করুন।
–আপনার নামটা?