–তুমি কখনো পারো?
–না পারার কি আছে? আগে থেকে ওর চেহারা ফিরেছে সেটা তো দেখতেই পাচ্ছেন।
–চেহারা? না না ও তোমার চোখের ভুল। যাক সেকথা, এ দু-কামরার বাড়িটা তোমার, এখানে কী করছো?
–জমি কিনে চাষবাস করছি।
–তা মেয়েকে নিয়ে কেমন করে চাষবাস করছ?
–একটা লোক রেখেছি। সেটা যেমন চোর তেমন ফাঁকিবাজ।
–চাষবাস করা আর মেয়েকে দেখাশোনা করা একভাবে চলতে পারে? এখানে একটা ভালো স্কুল পর্যন্ত নেই। তারপর রবার্টের মেয়ে বলে কথা।
–মোটকথা এ মেয়েকে আমি দেবো না। একদিন বয়স থেকে দেখে আসছি।
–অস্বীকার করছি না। কিন্তু বাচ্চা তো বাবা মার কত আদর চায়। আমার সংসারে গেলে ও সব পাবে আর মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে। রবার্টের বন্ধু হিসেবেও তো আমার কিছু কর্তব্য আছে।
–ওসব তথ্য বুঝি না। আমি মেয়েকে দেবো না।
–তাহলে আমি পুলিশের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।
–পুলিশের কাছে যাবেন যান। বারণ করছি না তো।
–তুমি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছ? ডিনসমেড জানে থানায় গেলে সে বাচ্চাকে পাবে না, কারণ বাচ্চা তাকে দেখে ভয়ে কাঁদতে থাকে।
-বলতে বাধ্য হচ্ছি। আপনি ঐ অনুরোধ করবেন না।
–তোমাকে আমি পাঁচ হাজার টাকা দেবো।
–পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে আমি মেয়েকে দিতে পারব না। আমি অতটা পিশাচ নই।
–আরো পাঁচ হাজার দিচ্ছি।
–আমি এক পয়সাও চাই না।
–জোন্স প্লিজ।
-আমি আপনার কথা রাখতে পারব না এবং আপনি এখান থেকে চলে গেলে আমি খুশী হবো।
–ঠিক আছে, দেখি কেমন করে ও মেয়ে তোমার কাছে থাকে। ডিনসমেড জানে এটা একটা বৃথা আস্ফালন।
ডিনসমেড চলে আসে। মেয়ের জন্য সে দারুণভাবে উতলা হয়, দিশেহারা হয়ে অফিস ঘরে পায়চারী করতে থাকে। হঠাৎ দেখে দরজার সামনে বার্ট এসে দাঁড়ায়।
বার্ট এ পাড়ার উঠতি মস্তান। হিপিদের সঙ্গে মিশে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একবার তার কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে একশো টাকা নিয়ে গেছে। কুড়ি বছর বয়স হবে বার্টের, মজবুত স্বাস্থ্য, লম্বা লম্বা দাড়ি, গোঁফ, চুল।
–আপনার সঙ্গে দরকার ছিল। আমার একটা চাকরি চাই।
চাকরি? ডিনসমেডের মাথায় হাত।
–হ্যাঁ।
–ব্যাবসা লাটে উঠতে চলেছে।
–যে কোনো কাজ করতে রাজী। পুলিশ এসে আমায় টানা-হ্যাচড়া করে, এ আর ভালো লাগে না। এছাড়া, কয়েকবার জেলও খেটেছি।
তবু ডিনসমেড না না করতে করতে হঠাৎ জোন্সের কথা মনে পড়ে যায়। তাই বলে একটা লোককে শায়েস্তা করতে পারবে?
–পিরবো। কত টাকা দেবেন?
–পাঁচশো টাকা দেবো।
–আমি রাজী। কাজটা কী?
তারপর সত্যি মিথ্যে দিয়ে সাজিয়ে একটা ঘটনা তাকে বুঝিয়ে বলে, ঐ মেয়েকে আমার চাই।
–ঐ মেয়েকে চান? তাহলে তো পাঁচশো টাকায় হয় না।
–তা কত লাগবে?
দশ হাজার দিতে হবে। আর মনে হচ্ছে ওর মধ্যে আর কিছু ঘটনা লুকোনো আছে।
–আবার কী থাকবে?
–আছে নইলে…। থাক কত দেবেন বলুন?
–হাজার টাকার বেশি দিতে পারব না।
শেষে দুহাজারে রফা হল। জোন্সের পূর্ণ বিবরণ দিয়ে বার্ট বেরিয়ে পড়ল।
একদিন বার্ট সেখানে গিয়ে দেখে আসে কোথা দিয়ে ঢুকবে আর কোথা দিয়ে পালাবে।
তিন দিন পরে একদিন বার্ট সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। বেশ একটা কালো ভাব চারদিকে ছেয়ে আছে।
ওদিকে জোন্স ভাবে ডিনসমেড নিশ্চয়ই আবার আসবে। শুধু কী মেয়ের প্রতি কর্তব্য না অন্য কোনো রহস্য। হয়তো মেয়েটার মায়ায় পড়ে গেছে।
কিন্তু এই মেয়েকে ছেড়ে তো সে বাঁচবে না। এই মেয়ে তো তার ধ্যানধারণা।
ডিনসমেডের চিন্তা করতে করতে জোন্স একটা শব্দ শোনে। শব্দটা কোথা থেকে এলো? আশেপাশে কোনো বাড়ি নেই। বাড়ির একদিকে বুনো লতা আর অন্যদিকে কাটা ঝোঁপঝাড়ে ভর্তি।
আবার একটা পায়ের শব্দ। কে যেন বাড়ির পেছনের দিকে উঠল। ওখানে একটা ছোট্ট লোহার সিঁড়ি আছে–ছাদে ওঠা যায়।
সেদিকে তাকাতেই একজনের অস্তিত্ব টের পায়। সে বোঝে হয় চোর না হলে ডিনসমেডের দূত। চোর না, তার কাছে কীই বা আছে? তাই যে চোর আসবে? নিশ্চয়ই ডিনসমেডের লোক। মেয়েকে আঁকড়ে ধরে একটা পাথর ছুঁড়ে মারল জোন্স। পাথর বার্টের মাথায় না লেগে হাতে লাগল। সে বেশ আঘাত পেল এবং আঁ শব্দ করে ছাদ থেকে নেমে দৌড়ে পালায়, ভাবে লোকটা ডাকাত নয়তো খুনে। কাজটা কৌশলে করতে হবে। বার্ট এসে ডিনসমেডকে জানায় চিন্তার কিছু নেই একটা উপায় নিশ্চয় বের হবে। দরকার হলে লাসও ফেলে দেবে।
-লাস ফেলে দেবে? না না ওকাজ করো না।
আপনি কিছু ভাববেন না। ও আমার বাঁ হাতের কাজ। সঙ্গে আমার এক বন্ধুকে নেবো।
-সে বিশ্বাসী? সে কী করে?
–হ্যাঁ বিশ্বাসী। ওর বাবা মরে যেতে একটা ল্যাবোরেটরিতে কাজ পেয়েছে।
ল্যাবোরেটরিতে? ওর কাছ থেকে আর্সেনিক জোগাড় করতে পারবে? সেটা বিষ।
ডিনসমেড বার্টকে বলে–এখন থেকে দাড়ি গোঁফ কাটবে না। তারপর কিছুদিন গেলে জোন্সের কাছে হাতে পায়ে ধরে কাজ চাইবে। বলবে সব কাজ করতে পারো। ওর একটা কাজের লোকের দরকার। ওর কাছে থেকে ওর খুব তোয়াজ করবে আর প্রতিবার মদের সঙ্গে কিছুটা করে আর্সেনিক মিশিয়ে মিশিয়ে স্লো পয়জন করে মেরে ফেলবে। এতে কোনো সন্দেহ হবে না। সাপ মরবে অথচ লাঠি ভাঙবে না।
বার্ট আরো তিন হাজার টাকা চায়। ডিনসমেড তাতেই রাজী, তবে সে কাজ চায়। বার্ট তাকে আশ্বস্ত করে।