–আরে না না, যার কাছে যাচ্ছি, আমরা সেখানে অতীতের অনেক কিছু টেনে বার করতে পারবো আশা করি। আর এ ব্যাপারে আপনার সাহায্য প্রয়োজন।
–নিশ্চয়ই স্যার। আমায় যেমনটি বলবেন আমি তেমনটি করব।
-ওখানে গিয়ে আপনার প্রধান কাজ লোকটার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলবেন যে, লোকটা যাতে ভয় পায়।
–কেন স্যার?
কারণ ঘটনাটা দীর্ঘ পনেরো বছর আগের। তথ্য বলতে কিছুই নেই। জেরায় জেরায়, ভয় দেখিয়ে যদি কিছু বের করা যায়।
ইতিমধ্যে ওরা বাড়ির সামনে উপস্থিত হয় এবং বাড়িটা চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে। বাড়িটার একতলায় দুখানা ঘর। বাড়ির সামনে বাগান মতোন।
ঘরের দরজা বন্ধ, ঘরের লাইট জ্বলছে। সম্ভবত ঘরে কেউ আছে।
পুলিশ অফিসার জন আর পোয়ারো চোখাচোখি হলে অনেক কথা হয়ে যায়। তারপর জন দরজায় টোকা দেয়।
–কে? এক পুরুষ কণ্ঠস্বর।
–আমরা এই বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
-কে আপনারা, বলে একজন দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। পুলিশ দেখে এতটুকুও বিচলিত হয় না।
পোয়ারো বার্টের দিকে তাকায়, বয়স পঁয়ত্রিশ, বেশ মজবুত স্বাস্থ্য, গায়ের রং তামাটে।
বার্ট বেশ ক্রুদ্ধভাবে–আপনার কাকে প্রয়োজন?
–তোমাকে। জন দৃঢ়ভাবে জানায়।
–আমাকে? কিন্তু…
–জোন্স কোথায়?
–জোন্স, সে কে?
–তুমি তাকে চেনো না?
–না।
–আচ্ছা, তুমি কী বরাবর এই গ্রামেই থাকো?
–হ্যাঁ।
–তার কোনো প্রমাণ আছে?
–আছে। এই জমি-বাড়ি সব আমার।
–এটা কী আপনার পৈত্রিক সম্পত্তি?
–হুঁ।
-না, পোয়ারো বেরিয়ে আসে। জোন্স যার কাছ থেকে জমি কিনেছিল তাকে দেখিয়ে বলে–একে চেনো?
-হ্যাঁ। বার্টের মুখটা কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আবার ভাবে ভয়ের কী আছে?
–এবার বল, জোন্স কোথায়?
মারা গেছে; আমি একটু আসছি।
–পালাবে? বাড়ির চারপাশে পুলিশ আছে।
–কিন্তু আপনারা এসেছেন কেন? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি।
–তুমি সব স্বীকার করো, নইলে পুলিশের সাহায্য নিতে বাধ্য হবো।
–আমি কিছু জানলে তো স্বীকার করবো। বেশ জোর গলায় বলে।
–স্যার, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না।
–তাই তো দেখছি। এখান থেকে ভিড় সরাতে হুকুম দিন।
সঙ্গে সঙ্গে জনের নির্দেশে ভিড় পাতলা হয়ে গেল। কিছু কৌতূহলী জনতা অদূরে আগ্রহ ভরে দাঁড়িয়ে রইল।
বার্টকে জিজ্ঞাসা করেও যখন সে মুখ খুলল না তখন তাকে থানায় নিয়ে গেল। তারপর সার্চ করা হল, পাওয়া গেল–কিছু টাকা, কয়েক বোতল ব্র্যান্ডি লিকার আর রবার্টের পরিবারের একটা ছবি। পোয়ারো যার সাথে মেরী বা শার্লটের কোনো মিল পাওয়া গেল না।
স্থানীয় থানা, কনফেসন রুম, এ ঘরে চারজন লোক রয়েছে–পোয়ারো, বার্ট, জন এবং সহকারী এলবার্ট। বার্ট এখন রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। তার উপর কয়েকদিন ধরে বেশ অত্যাচারে দারুণ কাহিল হয়ে পড়েছে।
হঠাৎ পোয়ারোর মনে হয় বার্টকে কোথায় যেন দেখেছে। অনেক চেষ্টার পর মনে পড়ল খবরের কাগজে ও ছবি দেখেছে। এক উত্তেজিত জনতার সামনে দিয়ে পুলিশ ওকে গাড়িতে তুলছে। পরে জেনেছিল–ছেলেটা কয়েকটা খুনের ব্যাপারে জড়িত। কিন্তু জোন্সের সাথে বার্টের সম্পর্ক হলো কী করে? বার্ট হলো শহরের একজন উঠতি মস্তান। আর জোন্স হল গিয়ে… একেই বলে পৃথিবীর বিচিত্র নজির। যা আগে কিছুই বোঝা যায় না। পোয়ারো আবার ভাবে সেদিনের সেই ছবির সেই তো নায়ক? নাকি সে চিনতে ভুল করেছে। মনকে নাড়া দিতে থাকে। হা এই সেই ছেলে। ওদিকে নির্যাতনে বার্ট হাঁফাতে থাকে এবং বলে-স্যার সব বলছি, আগে একটু জল। মরে যাচ্ছি।
-জল দেবো, তার আগে সব বলবে বল?
পোয়ারো গ্লাসটা তুলে ধরে-নইলে গ্লাসের জল বাইরে ফেলে দেবো।
-না না! জল ফেলে দেবেন না; সব বলছি।
–এই নাও জল।
জল খেয়ে চাঙ্গা হয়ে বার্ট বলে–না না, আমি কিছু জানি না, ওরা আমায় এমনি ধরে এনেছে। আমি মানহানির মামলা করবো।
–তাহলে আবার তোমার উপর অকথ্য অত্যাচার করা শুরু হবে। পোয়ারো বেল বাজায়।
দৈত্যের মতো মেক্সিকান লোকটার মারের কথা চিন্তা করে বার্ট বলে ওঠে-না না! বলছি, সব বলছি।
তারপর সে সব স্বীকার করতে বাধ্য হল।
.
২৭.
ডিনসমেড একটু আগে অফিসে এসেছে। বাচ্চা মেয়েটার জন্য সত্যিই সে বিচলিত। জোন্স যে এভাবে তাকে ফাঁকি দেবে সে আদৌ কল্পনা করতে পারেনি। জোন্সের হাতে পড়ে মেয়েটার ইহকাল পরকাল ঝরঝরে হয়ে যাবে। রবার্ট তার অন্তরঙ্গ বন্ধু, সে মারা যায়। তার মেয়েটা ভেসে গেল। অথচ আপদে-বিপদে সে রবার্টের কাছ থেকে কত সাহায্য পেয়েছে। যা করে হোক জোন্সকে খুঁজে বার করতে হবে নইলে সারা জীবন মরমে মরে থাকবে।
কিন্তু আবার খুঁজবে বললেই তো হবে না, তাকে কোথায় আর খুঁজবে? আবার পিছিয়ে পড়লেও তো চলবে না। এই ভাবে ডিনসমেড ঐ গ্রামের উদ্দেশ্যে আবার বেরিয়ে পড়ে। আশেপাশের গ্রাম খুঁজতে খুঁজতে জোন্সের দেখা হয়ে যায়। কিন্তু ডিনসমেড না রেগে শান্তভাবেই তাকে জিজ্ঞাসা করে–আরে জোন্স। তুমি?
-আপনি আমার খোঁজে এখানেও এসেছেন?
-আরে এসব কথা পরে হবেখন। আগে আমায় একটু বসতে দাও, আমায় অনেক ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে।
–ঘরে বসুন।
বাচ্চা মেয়ে ডিনসমেডকে কয়েকবার দেখেও চিনতে পারে না। কয়েকবার দেখে তারপর টলতে টলতে জোন্সের কোলে মুখ লুকোয়।
-ওকে দেখে কে? হাসিমুখে বলে ডিনসমেড।
–কে আবার দেখবে? আমিই।