ডিনসমেড যেতে একটা কারণে, সে হল মিস জুলিয়েট। তার প্রতি তার একটা দুর্বলতা ছিল। আবার রবার্টের স্ত্রী লিজা, বন্ধুর স্ত্রীর প্রতি আনুগত্যও বলা চলে।
মেয়ে আর জোন্স-এর দারুণ ভাব হয়েছে। একে অপরকে ছাড়া চলে না।
দরজার বেল টিপতেই জোন্স এসে দরজা খুলে বলে, গুড মর্নিং।
চল্লিশ বছরের জোন্স, মজবুত স্বাস্থ্য, এবাড়িতে বছর দুই কাজ করছে। এখানেই নাকি প্রথম কাজ করছে।
ফিসফিসিয়ে ওঠে জোন্স, স্যার, আপনি সাহেবকে একটু বুঝিয়ে বলবেন। আপনাকে সাহেবকে রাজী করাতেই হরে।
–আমার চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না।
–আমার কথা যেন আবার বলবেন না।
–শোন, মিস জুলিয়েটের খবর কী?
–উনি নিয়মিত পড়াতে আসছেন।
–ভালো, আচ্ছা দুজনে কেমন গল্পগুজব করছে?
–বেশি নয়।
–বেশি নয়! এটা তো ঠিক না। আমি তো অনেক কিছু আশা করেছিলাম।
-স্যার আমিও তাই, তবে বেশ নিরাশ হয়ে পড়েছি। সাহেব যেন একটু গম্ভীর হয়ে গেছে। একটু হেসে কথাও বলে না। মেমসাহেব চলে গিয়েই যত বিপদ বাঁধিয়েছে।
–তা ঠিকই। আর মিস জুলিয়েট?
–সে কিছুটা সহজ। হাসিমুখে জোন্স বলে, কিন্তু স্যার, আমি..
.–কিন্তু আবার কি?
–আমি আপনার উপরই…।
–সে তো আমি আছিই কিন্তু জানো তো মেয়েদের হাতে অনেক গোপন অস্ত্র আছে।
–তবু আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে স্যার।
–দেখা যাক কী করা যায়।
এদিকে মেয়ে হাজির। তাকে নিয়ে যাবার আগে জোন্স বলে–আপনি এগিয়ে যান স্যার।
অ্যাপার্টমেন্টের প্রথমে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় মোটা কার্পেট দিয়ে ঘেরা, সম্ভবত ইজিপসিয়ান।
তারপরই বৈঠকখানায় বেশ কিছু চেয়ার, দু-একটা ল্যান্ডস্কেপ। যা দৃষ্টি কেড়ে নেবার পক্ষে যথেষ্ট।
একটু পরেই রবার্ট এলো–পুরুষালী চেহারা, ছফুট উচ্চতা, চল্লিশের নিচে বয়স।
–তা ডিনসমেড খবর কী?
—ভালো, তুমি কেমন আছো?
ভালো আছি। রবার্টের যেন উদাস ভাব।
–আমার তা মনে হয় না।
–তা না হবার কারণ কী?
–কারণ তো আছে নিশ্চয় বন্ধু, ভালো আছি কথাটা জোর দিয়ে বলতে পারলে না। কথাটার মাঝে যেন একটা…
–উঁহু ঠিকভাবেই বলেছি।
–মিথ্যে কথা আমি বলছি না। ভালো কথাটার মাঝে যেন একটা বিষাদের সুর ঝরে পড়ছে।
–বিষাদের? কিসে বুঝলে?
–ফ্যামিলিম্যানের চোখে অনেক কিছুই ধরা পড়ে যায়।
–ও। রবার্ট এই বলেই চুপ করে থাকে। কী বলবে বুঝতে পারে না।
–হ্যাঁ, ভালো কথা। মেয়ে তো একটু একটু করে বড়ো হচ্ছে।
–হ্যাঁ, অস্বীকার করার উপায় নেই।
-ওর পড়াশোনার কী ব্যবস্থা করছ?
–ওকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। জোন্স তো আছে আর একজন টিচার দিয়েছি।
–ছেলে না মেয়ে?
–মেয়ে, কাছেই থাকে।
–ভালোই করেছ। আমার ছেলে-মেয়ের জন্যও রাখতে হবে। জোগাড় করলে কোত্থেকে?
–আমার অফিসের এক কলিগ জোগাড় করে দিয়েছে। রবার্ট যা ভেবেছিল ঠিক তাই, ডিনসমেড জাল বিছিয়ে দিল।
কলিগ? তা বয়স কত?
–জানি না।
–বেরসিকের মতো কথা বলো না তো।
–এতে বেরসিকের কী আছে? মেয়েদের বয়স চট করে বোঝা যায় না।
ডিনসমেড নাছোড়বান্দা–না গেলেও আন্দাজেই বলল ওর বয়স কত?
-চব্বিশ পঁচিশ হয়তো হবে।
মিস না মিসেস?
রবার্ট ডিনসমেডের কথার ধরন বুঝতে পারে। মিস।
–এ মাস থেকে?
–হ্যাঁ, কিন্তু মিসট্রেসের ব্যাপারে হঠাৎ তুমি এত আগ্রহী হয়ে উঠলে কেন?
–একটু আলাপ করার জন্য। তাও তোমার জন্য।
–সে উপকার তোমায় করতে হবে না।
–মেয়েকে নিয়ে রাখার সময় তো সেকথা বলনি।
–আরে না, কথাটা তুমি অন্যভাবে নিও না।
–না, বলছিলাম কি বিয়ে করো।
–এ বয়সে আর বিয়ে না।
–আজকালকার দিনে পঁয়ত্রিশ চল্লিশ বয়স কী বেশি? এ বয়সে অনেকেই প্রথম জীবন শুরু করে।
–আমার আপত্তি আছে।
–কীসের?
–আমার বিবেকের কাছে।
–কিন্তু কেন সেটাই তো আমি জানতে চাইছি।
–লিজাকে আমি ভুলতে পারছি না।
–কিন্তু রবার্ট লিজা তো আর ফিরবে না। কিন্তু তোমার কামনা বাসনা বলে তো কিছু আছে।
–সত্যি বিশ্বাস করো ওসব আমি ভাবি না।
–কিন্তু মেয়েটার ভবিষ্যৎ বলেও তো একটা জিনিস আছে।
–ওর ব্যাপারে আমার কোনো চিন্তা নেই ও দিব্যি জোন্সের সঙ্গে মেতে উঠেছে।
–সেটাই সব নয়। ওর বাবা-মায়ের স্নেহ ভালোবাসার প্রয়োজন। যা সবাই চায় এই শিশুকালে।
–ও আমার কাছে সেটা পায়।
-মোটেই পায় না। তুমি সকালে অফিসে বেরিয়ে যাও ফের সেই রাতে। তখন মেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আর জেগে থাকলেও সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর তোমার পক্ষে মেয়েকে আদর করা সম্ভব না, তখন দরকার হয় নিজের বিশ্রামের।
–কথাটা ভুল নয়।
–তাই আমার কথাটা একটু ভেবে দেখ।
ততক্ষণে জোন্স কফি ও খাবার নিয়ে হাজির। মিঃ ডিনসমেডকে সে ইঙ্গিত করল। ডিনসমেড কফিতে চুমুক দিয়ে বলল
–তখন তুমি বিবেকের কথা বলছিলে না?
–হ্যাঁ।
–কিন্তু তুমি তো লিজাকে ডিভোর্স করে বিয়ে করছ না। লিজা অকালে মারা গেছে বলে তোমার সন্ন্যাসী হয়ে থাকা চলে না কারণ তোমার মেয়ে এখনও শিশু।
–আমি অস্বীকার করছি না, কিন্তু…
–কিন্তু করো না তো।
–আমায় ভাববার একটু সময় দাও।
–এ নিয়ে এ কথা কবার বললে?
–এবার ভেবে ঠিক বলব।
–কিন্তু আমার মন বলছে এবার বলবে তোমার কথা একেবারে ভুলে গেছি।
–এবার তা হবে না।
–না হলেই খুশী হবো। ঠিক আছে উঠি।
.
০৩.
একেবারে আচমকা ঘটনাটা ঘটল। ডিনসমেড ভাবতেও পারেনি জোন্স অফিসে তাকে ফোন করবে।