–ওকে নিয়ে মিঃ ডিনসমেড কোথাও বেরিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, একা ওকে নিয়েই গিয়েছিল। কথাচ্ছলে আমি মিস মেরীকে জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারি ও বাবার সঙ্গে বাবার এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল।
–আর মিস শার্লট কী এখনও পরচুলা পরেন?
–প্রথম দেখেছি তবে এখন আর পরেন না।
–কেন?
–হয়তো প্রথমে ভেবেছে আমি কে দেখা দরকার তারপর নিশ্চিত হয়েই…
–আচ্ছা সে নিয়মিত কলেজ যাচ্ছে?
–হ্যাঁ, দুবোন একই সাথে যায়।
–আর কোনো খবর আছে?
–না স্যার, তবে মিস শার্লটকে কেমন নির্জীব দেখাচ্ছে।
নির্জীব? কেন বলো তো?
–ঠিক বুঝতে পারছি না।
-ঠিক আছে তুমি ভালো করে ওয়াচ করে যাও। আর প্রয়োজন হলেই টেলিফোন করবে। আর ঝট করে বুথ থেকে বেরিয়ে দেখো তো কেউ তোমায় ফলো করছে কি না।
–দেখছি স্যার।
এমিট রিসিভার নামিয়ে হট করে বাইরে বেরিয়ে দেখে কেউ নেই। রিসিভার তুলে জানায়–না স্যার, কেউ নেই। সব ঠিক আছে।
-তাহলে ঐ কথাই রইল।
–আচ্ছা স্যার।
২৬. আধময়লা জামাকাপড়
২৬.
পোয়ারোর পরনে আধময়লা জামাকাপড়। মাথার চুল উস্কোখুস্কো, মুখে আট-দশ দিনের দাড়ি তাও কাঁচা-পাকা। পায়ে একটা তাপ্পি দেওয়া জুতো। পোয়ারো সন্ধেবেলা ইচ্ছে করে বেছে নিয়েছে যাতে তাকে কেউ চিনতে না পারে।
চাদরটা ভালোভাবে মুড়ি দিয়ে পোয়ারো রেল স্টেশনে প্রবেশ করে। বেন্ট উডের একটা দ্বিতীয় শ্রেণীর নির্দিষ্ট ট্রেনের দিকে যেতে যেতে ভালোভাবে চারিধারে দেখে নেয় কেউ তাকে লক্ষ্য করছে কি না।
তারপর ভিড়ের মাঝে একটা কাঠের বেঞ্চিতে বসে। বসার ভঙ্গীটা দেখার মতো। অন্য আর পাঁচজনের মতো সে পা তুলে গুটি মেরে বসেছে। তারপর আর সকলের মতো নিতান্ত সস্তা একটা বিড়ি ধরাল। বিড়ির উগ্র গন্ধে পোয়ারো কয়েকবার খকখক করে কাশল।
বেন্ট উড চলেছে পোয়ারো। থানায় লেখা আছে ওখানে নাকি জোন্স আছে। তবে তার সন্দেহ আছে জোন্সের দেখা পাবে কি না, কারণ এমিট বলেছে জোন্স নামে ঐ গ্রামে কেউ নেই।
তবু পোয়ারো নিজে গিয়ে তদন্ত করতে চায় আর জোন্সকে পেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাই তাকে প্রয়োজন। এবারে পোয়ারো বিড়িতে কিছুটা অভ্যস্ত হয়েছে। পাশের লোকটাকে জিজ্ঞাসা করে–বেন্ট উড়ে যাবার গাড়ি কটায়?
নটা চল্লিশে।
–তা বেন্ট উডে পৌঁছাবে কখন?
সাড়ে পাঁচটার আগে তো নয়ই। তুমি বুঝি প্রথম ওখানে যাচ্ছ?
–হ্যাঁ, বোকার মতো হাসে পোয়ারো।
–ওখানে তোমার কে আছে?
–এক খুড়তুতো ভাই।
তারপর ট্রেন আসতে পোয়ারো ভিড়ের মধ্যে গিয়ে বসল আর দেখে নিল কোনো চেনামুখ আছে কি না। না নেই। ইতিমধ্যে গাড়ি গতি নিয়েছে। এইভাবে ছটা নাগাদ গাড়ি বেন্ট উডে পৌঁছালো।
ছোট্ট স্টেশন, গাড়ি বেশিক্ষণ থামে না। পোয়ারোর মতো দু-একজন নামল, আরও কয়েকজন উঠল।
যে দুজন যাত্রী নেমেছে তারা স্টেশনে টিকিট জমা দিয়ে গেট দিয়ে হনহ করে বেরিয়ে চলে গেল। পোয়ারো স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটা চায়ের দোকানে চা আর জলখাবার খেয়ে নেয়।
ঝকঝকে রোদ উঠেছে। জলখাবার খেয়ে পোয়ারো গ্রামের রাস্তা ধরে। সারি সারি মাটির বাড়ি। কোথাও বা একতলা পাকা বাড়ি। দূরে চাষের জমিতে কৃষকেরা চাষ করছে। একটা বাড়ির সামনে কয়েকজন লোক গোল হয়ে কাজের কথা বলছে। তাদের কাছে গিয়ে পোয়ারো বলল, ভাই-জোন্স কোথায় থাকে জানো? এই তার ছবি।
-না ভাই, এ ছবি চিনতে পারছি না। তাই গ্রামের নাম কী বলেছে?
–বেন্ট উড।
–তুমি এই গ্রামে প্রথম এলে?
–হ্যাঁ, আসলে বাইরে চাকরি করি তো।
–ও! আর একটু এগিয়ে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করো।
–আচ্ছা বলে, পোয়ারা চলে গেল। অনেকের কাছে জানতে চাইল কেউ বলতে পারল না। শেষ পর্যন্ত থানায় গিয়েও লাভ হল না।
পাশের গ্রামে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো ফল পাওয়া গেল না। হঠাৎ পোয়ায়োর মাথায় এল বেন্ট উডের পাশের স্টেশনে গেলে কেমন হয়? কিন্তু এখানেও আশাপ্রদ ফল পাওয়া গেল না। অবশেষে একজন লোক বলল–আমি চিনতাম।
পঞ্চাশের কাছে বয়স লোকটির, মজবুত স্বাস্থ্য, গায়ের রং কালো।
–চিনতাম কেন বলছেন? পোয়ারো লোকটার কাছে একটা সস্তা দামের সিগারেট এগিয়ে দেয়।
–লোকটি খুশী হয়–আসলে অনেক আগের কথা তো আর ও তো বেঁচে নেই।
বেঁচে নেই?
–না।
কবে মারা গেছে?
–বছর পনেরো।
–ও কি এই গ্রামের লোক?
-না, পাশের গ্রামের। ও আমায় বলেছে আর গ্রামে যাবো না–আপনার জমির সন্ধান পেলাম, এখানেই কাজ করব।
-জোন্স আপনার জমি নিল?
দুবিঘা নিল। দামও বেশ ভালোই দিল। ঐ যে সামনে একটা একতলা পাকাবাড়ি দেখছ, তারপরই খানিকটা ফাঁকা জায়গা তারপরই ওর জমি।
-এখন ওর জমি কে দেখাশোনা করে?
–ওর এক ভাই।
–ওর সঙ্গে কী একটা মেয়ে আছে?
–হ্যাঁ আছে, ওটা কী ওর মেয়ে? আমার তো বিশ্বাস হয় না।
–বোধ হয় ওর। তা সে মেয়ে কোথায়?
–ও আসার পরে তো আর দেখি না।
–জোন্স কীভাবে মারা গেল?
–হার্ট অ্যাটাক।
–তোমায় অনেক ধন্যবাদ।
.
সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় গিয়ে পোয়ারো নিজের পরিচয় দেয়। থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বলে ওঠে–বসুন স্যার, আপনার জন্য কী করতে পারি?
-আপনি ফোর্স নিয়ে এক্ষুনি আমার সঙ্গে বেরিয়ে পড়ুন।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওরা বেরিয়ে পড়ে। তরুণ অফিসার বলে–স্যার আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।