–হুঁ। এমিট পানীয়ে চুমুক দেয়।
-আর একটা কথা। পরবর্তী কাজের কথা জানিয়ে বলে–এসব কাজে গোপনীয়তা রেখে চলবেন। তাহলে ঐ কথাই রইল।
–ঠিক আছে, এমিট বিদায় নেয়।
বেলা একটায় এমিট সানরাইজ স্কুলে ঢোকে। এক মিসেস-এর সঙ্গে দেখা হলে তার কাছ থেকে জেনে নেয় জুলিয়েটের ঘর এবং তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে জুলিয়েটের ঘরে যায়। সেখানে জুলিয়েট এক ছাত্রীর মার সাথে কথা বলছিল। এমিট ভিতরে ঢুকলে, জুলিয়েট ছাত্রীর মার সঙ্গে কথা শেষ করে তাকে বিদায় দেয়।
-বলুন।
–আমি হেডমিস্ট্রেসের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
–আমিই।
–নমস্কার।
–নমস্কার।
–আমি ইনকাম ট্যাক্স থেকে আসছি।
–ও! জুলিয়েট একটু ভয় পেয়ে যায়।
–আপনার স্কুল কতদিনের? এমিট যেন ভারিকি চালে বলে।
–এই দশ পনেরো বছরের।
–সে তো অনেক দিনের ব্যাপার। তা কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়ানো হয়?
–কিন্ডার গার্ডেন থেকে স্ট্যান্ডর্ড-টু পর্যন্ত আছে।
–তাহলে তো মোটামুটি বড়োই স্কুল।
–আরো কয়েকটা ঘর হলে ভালো হত।
–হ্যাঁ ঢোকার মুখে একই ঘরে অনেক ছাত্র-ছাত্রী দেখলাম। তা আপনি কী এখানেই থাকেন?
–হ্যাঁ। এরই সংলগ্ন বাড়িতে।
অন্য মিস্ট্রেসরা।
–অন্যত্র থাকে।
–বাড়িটা তৈরি করা না কিনেছেন?
–কিনেছি।
–কত টাকা? তা কাগজপত্র আছে তো?
–হ্যাঁ, লাখ টাকা দিয়ে।
–টাকা কোথায় পেলেন?
–আমার ছিল। একটু কফি আনতে বলি?
–মাফ করবেন আমি ডিউটিতে এসে কিছু খাই না। আপনার কাছে টাকাটা কী করে ছিল?
–আমি প্রথম জীবনে কয়েক বছর কাজ করেছি।
–কোথায় কাজ করতেন?
বেশ কয়েক বছর গভর্নের্স ছিলাম, তারপর স্কুলে কাজ করেছি আর আমার স্বামীও কিছু দিয়েছে।
–আমরা খবর পেয়েছি আপনি মাস দুয়েক মিঃ রবার্টের বাড়িতে গভর্নেস ছিলেন, তারপর কয়েকটা স্কুলে টেম্পোরারি চাকরি করতে করতে মিঃ স্মিথকে বিয়ে করেন, তাই না?
-হ্যাঁ, জড়তার সঙ্গে বলে।
-মিঃ স্মিথ একটা সামান্য কারখানায় কাজ করতেন, তিনি দেখতে সুপুরুষ বলে আপনি তাকে বিয়ে করেন। কিন্তু সে বিয়ে সুখের হয়নি, শেষে বিচ্ছেদ হয়। পোয়ারোর শেখানো কথা এমিট গড়গড় করে বলতে থাকে।
–হ্যাঁ বাকি টাকা ধার করেছি।
–কোথা থেকে? ব্যাঙ্ক?
–না, মানে…জুলিয়েট ইতস্তত করতে থাকে।
–বলুন, চুপ করলেন কেন?
–আমার এক বন্ধু দিয়েছে।
বন্ধু? তার নাম ঠিকানা জানাবেন?
–জানাতে অসুবিধা নেই, তবে সে আর বেঁচে নেই।
–কত বছর আগে মারা গেছেন?
-বেশ কয়েকবছর আগে। দয়া করে আমায় তার নাম জিজ্ঞাসা করবেন না। জুলিয়েটের গলা ভারী হয়।
–আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু, কর্তব্যের খাতিরে নামটা আমায় জানতেই হবে।
–মিঃ রবার্ট।
–মিঃ রবার্ট। তা উনি কত টাকা দেন?
–প্রায় হাজার ত্রিশ।
–তার রিসিট নিশ্চয়ই আপনার কাছে আছে?
হ্যাঁ, তবে লকারে আছে। জুলিয়েট নিরুপায় হয়ে মিথ্যে বলে।
–ও! আর বাকি টাকাটা?
–বললাম যে..
.–আপনার রিটার্ন সাবমিট করেন?
–না, লসে রান করছি। কী আর করবো?
–লস? তা স্কুলের অবস্থা দেখে তো মনে হয় না।
–উপর উপর ভালো। ভেতরটা ফাঁপা।
–তবু আপনার কথাটা মানতে পারছি না। এতদিন রিটার্ন সাবমিট না করে অন্যায় করেছেন। এবার থেকে করবেন।
-তার জন্য আমি লজ্জিত।
–ও কথা বললে হবে না। তার জন্য আপনাকে কিছু পেনাল্টি দিতে হবে। খুব সহজে ছাড়া পাবেন না।
-স্কুল লসে রান করছে, তা সত্ত্বেও?
-সেটা প্রমাণ সাপেক্ষ। যখন ইনকাম ট্যাক্স কল করবে তখন সব কাগজপত্র নিয়ে অ্যাপিয়ার হবেন।
-ঠিক আছে।
উঠি।
জুলিয়েট এমিটকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয় তারপর দারুণ অস্বস্তি বোধ করে।
এমিট বাড়ি গিয়ে দ্রুত পোশাক পাল্টে নেয়। এখন তার পরনে ময়লা জামাকাপড়, গালে কাঁচা-পাকা দাড়ি, জুতোর ওপর একপ্রস্থ ধুলো মানে খুব পরিচিত মানুষও হট করে তাকে চিনতে পারবে না। এমিট আবার জুলিয়েটের স্কুলে অদূরে দাঁড়িয়ে সব লক্ষ্য করতে থাকে।
.
২৫.
-হ্যালো।
–হ্যালো। আমি পোয়ারো বলছি।
–স্যার, আমি উড বলছি।
–তুমি কোথা থেকে আমায় ফোন করছ?
স্থানীয় একটা টেলিফোন বুথ থেকে।
–ঠিক আছে ওদের ফোন কখনও ব্যবহার করবে না। তা তোমায় কেউ সন্দেহ করছে না তো?
–আদৌ নয় স্যার।
–বল কী খবর?
–স্যার, মিঃ ডিনসমেডকে কদিন বেশ গম্ভীর দেখছি।
–কারণ কি? তোমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছে?
–মন্দ নয়। তবে মাঝেমধ্যে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
–ক্ষিপ্ত? কেন?
ব্যাবসা নাকি আরো খারাপের দিকে চলছে। ও আর ওর স্ত্রী সংসার সামলাতে নাজেহাল। আর একটা কথা লক্ষ্যণীয়–স্বামী-স্ত্রী যখন কথা বলে তখন সেখানে কেউ থাকে না। ছেলে-মেয়েও না।
–আর ওদের কথার মধ্যে কেউ হাজির হলে?
সঙ্গে সঙ্গে সজাগ হয়ে যায় আর প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলে অন্য কথা বলে।
—তারা কী ধরনের আলোচনা করে শুনতে পেয়েছ?
-না, আসলে ওরা তখন খুব চাপা স্বরে কথা বলে। নানাভাবে চেষ্টা করেছি আবার বেশি সাহসেও কুলোয় না, পাছে ধরা পড়ে যাই।
–ঠিক বলেছ। খুব সাবধানে কাজ করতে হবে।
–ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে অত্যন্ত মামুলি কথা বলে, যেন কথাগুলি আগে থেকেই স্থির করা।
–জর্জের খরব কী?
–জর্জ তো এখন আমার খেলার সাথী।
–এখনও কী ল্যাববারেটরি নিয়ে মেতে থাকে?
–না, আগের মতো না। এখন পড়ার পর বেশিরভাগ সময় আমার সাথেই কাটায়।
–মেরী নিয়মিত কলেজ যাচ্ছে?
–হ্যাঁ স্যার।