-আরে পোয়ারো যে; কী ব্যাপার?
–তোমাদের চাকরিটাই বেশ, তার সংসার ধর্ম করাই দেখছি ভালো।
–সংসার করবে নাকি?
–তেমন পাত্রী তোমার হাতে আছে নাকি?
–আছে। সদ্য বিধবা প্রচুর সম্পত্তির মালিক।
–তা তুমি একবার লড়ে যাবে নাকি?
ইচ্ছা তো ছিল। বুড়িবউ আর ছেলে-মেয়েরা গলার কাছে অক্টোপাসের মতো আটকে আছে।
–তা বুড়ি হল কীসে?
–দশ বছরের পুরোনো বউ বুড়ি নয়?
–ও, আচ্ছা ওয়েড, এখানে তোমার কত বছর চাকরি?
–তা পনেরো-কুড়ি বছর হবে।
–তুমি রবার্ট বলে কাউকে চেনো?
–রবার্ট…হঠাৎ মনে পড়ে যায়।
-হ্যাঁ, আমি তখন প্রথম জয়েন করেছি। শুনলাম আগের অফিসার, কাজে যাচ্ছিল সেই সময় চলন্ত ট্রেনের থেকে পড়ে মারা যায়। তা বন্ধু তোমার এ কৌতূহল কেন? নিশ্চয়ই এমনই এত বছরের পুরোনো ঘটনা তুমি জানতে চাইছ না?
–একটু দরকার ছিল। আচ্ছা ওর সঙ্গে যারা কাজ করত তাদের নাম বলতে পারবে?
দাঁড়াও ভাবতে হবে। আগে একটু কফি খাও দেখি। তারপর বলে-ম্যানেজার মিঃ উইলসন, মিঃ রবার্টের সহকর্মী।
-তাহলে উঠি।
–বাঃ। কাজের বেলা কাজী, কাজ ফুরোলেই পাজী?
-বাঃ, সেই বিধবা পাত্রীটার সঙ্গে দেখা করতে হবে না? যাই মিঃ উইলসনের সঙ্গে একটু দেখা করে আসি। তার কাছে আমার আসল পরিচয়টা গোপন রাখাই ভালো।
-তথাস্তু। কিন্তু বন্ধু কোনো কারণে আবার ফেঁসে যাবে না তো? তোমার ব্যাপারে আমার বড্ড ভয় হয়।
-তুমি যে মহা ভীতু, চলি এবারে।
একজন বেয়ারাকে জিজ্ঞাসা করে পোয়ারো মিঃ উইলসনের কামরায় টোকা মেরে দরজা ফাঁক করে বলল–ভেতরে আসতে পারি।
উইলসন ইন্টারকমে কার সঙ্গে কথা বলছিল। তাই ইশারায় পোয়ারোকে বসতে বলে। তার বয়স পঞ্চাশের কাছে, ঝকঝকে চেহারা, বুদ্ধিদীপ্ত মুখ, মাঝারি গড়ন, পরনে নিখুঁত স্যুট।
উইলসন ফোনটা নামিয়ে রাখতেই পোয়ারো বলল-আপনাকে একটু বিরক্ত করব। কথাটা কিন্তু ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত নয়।
-তাতে কী আছে? কারো ব্যক্তিগত প্রয়োজনও থাকতে পারে।
-ধন্যবাদ, আচ্ছা মিঃ রবার্টের কথা মনে আছে? তারপর ম্যানেজার জানায় রবার্টকে কখনও ভোলা যায় না, সে তার অনেক উপকার করেছে আর দুজনে একই সঙ্গে অফিসার হয়েছে। তার কাছ থেকে রবার্টের বাড়ি কেনার শখের কথা জানা যায়। তার স্ত্রী বেঁচে থাকাকালীন কিছু টাকা তার কাছে ছিল বাকি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তোলে বাড়ি কেনার জন্য। কিন্তু সেই টাকা কিছুদিন পর আবার ব্যাঙ্কে ফেলে দেয়। কয়েকদিন পর আবার সেই টাকা তোলে কিন্তু আর ব্যাঙ্কে রাখেনি। কার কাছে রেখেছে তা ম্যানেজার বলতে পারল না।
–আচ্ছা, রবার্টের ব্যাপারে পুলিশি তদন্ত হয়?
–হ্যাঁ।
–আচ্ছা, সেদিন কী মিঃ রবার্টের কাছে টাকাকড়ি ছিল?
–না।
-আচ্ছা, এটা কী আত্মহত্যা হতে পারে।
–তা হয়তো না, তবে স্ত্রী মারা যেতে ও ভীষণ আপসেট হয়ে পড়ে।
–ও কী অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসত?
–ও ওর স্ত্রীকেই ভীষণ ভালোবাসত।
–মিস জুলিয়েটের সঙ্গে ওর সম্পর্ক কেমন ছিল?
–ভালোই। ওকে আমি রবার্টের মেয়েকে পড়ানোর জন্য দিই।
–তবু একটু খুলে বলুন।
–একজন ভদ্রমহিলার প্রতি যতটা সম্মান দেখানোর সে দেখাতে। স্ত্রী মারা যাবার পর তাকে এড়িয়ে চলত।
–আচ্ছা, রবার্টের কোনো লইয়ার বন্ধু ছিল?
–যতদূর জানি, না, এখানে অন্তত আসেনি। ওর একটাই কাছের বন্ধু ডিনসমেড এখানে এসেছে বহুবার।
–টাকাটা কী অন্তরঙ্গ বন্ধুর কাছে রেখেছে?
–না, রাখলে আমার পরামর্শ চাইত। আমি তাহলে না বলতাম। কার মনে কী আছে আগে থেকে বোঝা যায় না। আর টাকা? বউ মরে যাবার পর ও ভাবত যে ও কোনোদিন মরে যাবে।
-ওর মেয়ের খবর কিছু জানেন?
–শুনেছি জোন্স আর জুলিয়েটের কাছে মানুষ হচ্ছিল।
–জোন্স মিঃ রবার্টের অ্যাপার্টমেন্ট বেচে মেয়ে নিয়ে উধাও হয়।
–হ্যাঁ, খবরটা শুনে গিয়ে দেখি সত্যি।
–আচ্ছা এমনও তো হতে পারে টাকাটা জোন্সের কাছে ছিল?
হতেও পারে কারণ রবার্ট শেষের দিকে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল।
–আচ্ছা, ওর মেয়ের নামটা মনে আছে?
–না, আসলে যে যার প্রিয় নামে ওকে ডাকত।
–আচ্ছা, সেই মেয়েকে আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন?
–একবার না, বহুবার। স্ত্রী, মেয়ে নিয়ে ও বহুবার আমার বাড়ি গেছে।
–মেয়েটির গায়ে কোনো চিহ্ন ছিল?
–না।
–আচ্ছা মিঃ রবার্ট মিস জুলিয়েটের কাছেও তো টাকা রাখতে পারে?
জানি না, কিন্তু কার উপর ভিত্তি করে একথা বলছেন?
–কারণ মিস জুলিয়েট যে একটা স্কুলে টেম্পোরারি কাজ করত আজ সে একটা কিণ্ডার গার্ডেনের মালিক।
–হয়তো নিজের টাকা আবার লোনও তুলতে পারে।
–ভাবছি মিস জুলিয়েটের প্রতি রবার্টের দুর্বলতা ছিল। কারণ ওর বয়সও তখন তরুণ। তাই…। ঠিক আছে মিঃ উইলসন, পরে দেখা হবে। বিরক্ত করার জন্য মাফ চাইছি।
-আরে না না।
.
২৪.
বাড়িতে গিয়ে পোয়ারো এমিটকে ফোন করে। সে ফ্রি জেনে তাকে পোয়ারো তার ফ্ল্যাটে আসতে বলে। এমিট জানায় পনেরো মিনিটের মধ্যে সে পৌঁছোবে।
বেলা সাড়ে এগারোটায় পোয়ারোর বৈঠকখানায় পোয়ারো আর এমিট পানীয় হাতে কথা বলছে।
–মিঃ এমিট এখন আপনার একমাত্র কাজ জুলিয়েটকে ফলো করা।
–ঠিক আছে।
–তাকে অন্তত দিন তিনেক ওয়াচ করবেন। আর দেখবেন সে যেন আপনাকে সন্দেহ না করে। সে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে কথা বলছে, স্কুলে থাকাকালীন কী করছে? কে দেখা করতে আসছে সমস্ত।