–ভাল। আপনি?
–চলে যাচ্ছে। তা ব্যাপার কী বলুন?
বছর পনেরো আগে এখানকার অফিসার আপনি ছিলেন? সেই সময়ে একটা কেসের ব্যাপারে এসেছি।
–হ্যাঁ, আবার গত দুবছর হল এসেছি। মনে হচ্ছে পুরোনো ঘটনা নিয়ে আপনার মনে কিছু আছে। তা ঘটনাটা কী?
–বছক পনেরো আগে এক ভদ্রলোক মিঃ রবার্ট ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান।
–কোথায় বলুন তো?
ভিক্টোরিয়া টার্মিনাসে। বাড়িতে একটা চাকর ছিল জোন্স। রবার্ট মারা যাবার পর সে রবার্টের শিশুকন্যাকে নিয়ে সর্বস্ব বিক্রি করে কোথায় চলে যায়। আমি তার খবর চাই।
–এতদিনের পুরোনো ব্যাপার…তা জোন্সের কোনো ছবি আছে?
–না।
–কোথায় যেতে পারে বলে আপনার ধারণা?
–ওর দেশের বাড়িতে।
–ওর দেশের বাড়ি কোথায়?
–সেটা জানার জন্যই তো এখানে এসেছি।
–অবশেষে বহু খুঁজে জোন্সের দেশের নাম আর ঠিকানা পাওয়া গেল। ছবিও পাওয়া গেল। রবার্ট সবকিছু জানিয়ে গিয়েছিল। পোয়ারো সব টুকে ওয়াকারকে অনুরোধ করে ছবি নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখে চার্লস।
চার্লস বলে–কোথায় থাক আজকাল?
–আগে একটু গলা ভিজিয়ে নিই। তুমিও পাবে।
ইতিমধ্যে পানীয় এসে যায়। পোয়ারো তাতে চুমুক দেয়।
–কাজে দারুণ ফেসে গেছি।
সেতো দেখছি। মেরী-শার্লট রহস্য কতদূর?
–একটু-আধটু ঘুরেছি তবে কেসে সেরকম মেরিট নেই, তাই এগোইনি।
চার্লস চুমুক দিয়ে তুমি তো এতো দায়িত্বহীন নও। যাক তোমার ব্যাপার। আমি উঠি।
–উঠবে? তাহলে আর আটকাবো না। পোয়ারো বুঝতে পারে চার্লস তার উত্তরে খুশী
হয়নি। চার্লস যাবার পর পোয়ারো ফোনে জয়েন করে।
–হ্যালো! মিঃ এমিট কথা বলছেন?
-হ্যাঁ।
–আমি পোয়ারো।
–বলুন স্যার, অনেকদিন পরে আপনার ফোন পেলাম।
–এ কদিন তেমন কোনো কাজ ছিল না হঠাৎ একটা..যাক আপনি ফ্রি আছেন?
–আপনার জন্য সবসময় ফ্রি স্যার।
–তাহলে এখুনি আমার অ্যাপার্টমেন্টে চলে আসুন।
–এক্ষুনি যাচ্ছি স্যার।
থ্যাঙ্ক ইউ।
দুইজনে মুখোখুখি বসে, হাতে পানীয়। এমিটের বয়স ষাটের কাছে। লম্বাটে ধরনের চেহারা এবং উপস্থিত বুদ্ধি আছে। সে পোয়ারো এবং অন্য গোয়েন্দাদের নানা তথ্য সংগ্রহ করে দেয়। এ ব্যাপারে তার সুনাম আছে। আগে পুলিশে কাজ করার জন্য একাজে তার অসুবিধা হয় না।
জোন্সের ব্যাপারে পোয়ারো এমিটকে সব বুঝিয়ে বলে–জোন্সের বয়স সাতান্ন হবে, তার সাথে একটা আঠারো বছরের মেয়ের থাকার কথা। সেই মেয়েটি কী করছে? আর জোন্সই বা কীভাবে জীবনযাপন করছে সবই আমার জানা দরকার।
-ঠিক আছে স্যার, তাহলে উঠি।
এমিট দিনতিনেক পরে ফিরে এসে জানায়–ওখানকার লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানা গেছে ওটা জোন্সের দেশ তবে ওরা বলেছে জোন্স এখানে থাকে না। শহরে কাজ করে। সমস্ত গ্রাম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি।
–তাহলে নিশ্চিন্ত যে জোন্স দেশে নেই।
–একেবারে ঠিক কথা স্যার।
–ঠিক আছে, আপনার বিলটা দিয়ে যাবেন।
–এরকম কাজ মাঝেমধ্যে পেলে খুশী হবো স্যার।
.
২২.
ডেইলি হারল্ড একটি নামকরা পত্রিকা। সারা পৃথিবীতে এদের প্রতিনিধি রয়েছে। এই অফিসে মিস লরেন্স কাজ করে। বয়স পঁচিশের নিচে হলেও কাজে দক্ষ। কাজে গাফিলতি নেই, যথেষ্ট আগ্রহের সঙ্গে মিষ্টি হাসি দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায়।
পোয়ারো এই লরেন্সের কাছে গেল। এর কাছ থেকে পোয়ারো যে কত সাহায্য পেয়েছে তা বলার নয়। পোয়ারো তিনতলার ঘরের সামনে গিয়ে দেখে লরেন্স একটা ফাইলে ডুবে আছে।
লরেন্স পোয়ারোর উপস্থিতি টের পেয়ে ফাইলের থেকে দৃষ্টি পোয়ারোর দিকে করে। লরেন্সের পরনে মিনি স্কার্ট উপরে হাইনেকের সাদা সোয়েটার। মাথায় একরাশ ধূসর বব চুল।
লরেন্স হাসে–কী খবর।
-তুমি অমন করে হাসবে না তো, যাদু আছে।
–যাদু? তাও তো ম্যানেজ করতে পারলাম না।
–একথা মনে থাকবে।
–থাকবে না। আসল কথাটা বলুন। আপনি তো আমার সঙ্গে গল্প করতে আসেননি।
অমন বলল না ব্যথা লাগে।
–কোথায়?
–বুকে। আজ ডিনারে কোথায় যাবে?
-নাইট ডিউটি ছেড়ে আমি যে আপনার সঙ্গে যাবো না তা জানেন বলেই এই অফারটা দিলেন।
–তাহলে একদিন লাঞ্চের অফার রইল।
–তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারলেন না।
–আই অ্যাম সো সরি।
–এবার আপনার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে পারলে ভালো হত।
-ধন্যবাদ, শোনো, বছর পনেরো আগে মিঃ রবার্ট নামে এক ভদ্রলোক ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। আমি জানতে চাই তোমাদের কাগজে সেই সম্বন্ধে কী বেরিয়েছে।
–এক মিনিট। ইনডেক্স কার্ড থেকে নির্দিষ্ট কার্ডটা বার করে পোয়ারোকে দেয়।
তাতে লেখা রয়েছে–কর্মরত অবস্থায় সিটি ব্যাঙ্কের অফিসার মিঃ রবার্ট চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে। তবে এটা আত্মহত্যা কিনা তা নিয়ে পুলিশ সন্দেহ প্রকাশ করেছে আর তা নিয়ে খোঁজও চলছে।
–এরপর কোনো রিপোর্ট বেরিয়েছে?
লরেন্স রেফারেন্স কার্ডটা দেখে এসে জানায়, না। পুলিশ নিশ্চয় সন্দেহ করেনি। করলে…
-আমারও তাই মনে হয়। তাহলে উঠি।
–লাঞ্চটা? লরেন্স মিটি মিটি হাসে।
–পরের বারের জন্য তোলা রইল।
.
২৩.
সিটি ব্যাঙ্কের অফিসার ছিল রবার্ট। এই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সাথে পোয়ারার আলাপ নেই। তবে একজন এজেন্ট নাম ওয়েড বয়স পঁয়তাল্লিশ, বেশ ভারিকি ধরনের চেহারা তার সাথে পোয়ারোর আলাপ আছে। তারা একই স্কুলে পড়ত। ওয়েড তার ঘরে কাজে ব্যস্ত। মৃদু করাঘাতে পোয়ারো তার ঘরে প্রবেশ করে।