–আচ্ছা, পরের দিন কাগজে লেখা হয়েছিল?
–সামান্য,-চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে জনৈক ট্রেনযাত্রীর মৃত্যু।
–আপনি জানতেন রবার্ট সেদিন ট্রেনে করে কোথাও যাবে?
–হ্যাঁ, মিঃ রবার্ট আমায় বলেছিলেন। নইলে হয়তো জোন্স বলত। ও আমায় সব কথা বলত।
রবার্ট কীসে অফিসে যেত?
–গাড়ি করে।
–সেদিন রবার্ট অফিস যাবার পর আপনি কী করছিলেন?
–এই প্রশ্ন কেন? আপনি কী আমায় সন্দেহ করেন?
–না, তা নয়। আচ্ছা আপনি বিয়ে করেছেন?
–হ্যাঁ, তবে সে বিয়ে সুখের হয়নি ডিভোর্স হয়ে যায়।
–আচ্ছা বাচ্চাটার নামটা বলতে পারবেন?
-হ্যাঁ, রোজি, আমিই ঐ নামটা রেখেছিলাম। ওকে যে যা ইচ্ছে নামে ডাকত, বিশ্রী লাগত। আমি জোন্সকে বলেছিলাম সবাইকে বলে দিতে হবে যে, ওকে রোজি বলে ডাকতে। আর আমি কেন জানি না ওকে নিজের বাচ্চা বলে ভাবতে শুরু করেছিলাম। সেই বাচ্চা কিনা…জুলিয়েটের চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো।
–আচ্ছা তার আগে বাচ্চাকে কী কী নামে ডাকা হতো মনে আছে।
–একশত নামে ডাকা হত এখন কী আর মনে থাকে?
–আচ্ছা ওর মেরী বলে কোনো নাম ছিল বা শার্লট?
–না, ওরকম নাম হলে আমিই নাকচ করে দিতাম।
–আচ্ছা, মিঃ রবার্ট তো ভালো ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। মেয়ের জন্য নিশ্চয়ই কিছু রেখে গেছেন?
–তা আমার জানা নেই।
–আচ্ছা, তার কোনো শত্রু।
–না, ওরকম মানুষের কিছুতেই শত্রু থাকতে পারে না, আমি গ্যারান্টি দিতে পারি।
–সব কিছু কী আর নিয়ম মেনে চলে?
–হ্যাঁ, তা যে চলে না তার নিদর্শন মিঃ রবার্ট।
.
২০.
একজন গোয়েন্দার কাছে কেসের মেরিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পোয়ারো অন্য কেস বাদ দিয়ে এই কেসের কথাই ভাবছে।
কফি খেতে খেতে পোয়ারো অনেক কথাই ভাবছে। জোন্স কেন পালিয়ে গেল? এর পেছনে কী রহস্য? জোন্স বাচ্চাকে বাবা-মায়ের ভালোবাসা দিয়েছে। সে বাচ্চাকে খুবই ভালোবাসত। এখানে থেকেও তো তা হত, তাহলে চোরের মতো গা ঢাকা দিল কেন? শুধু কী অ্যাপার্টমন্টে বিক্রির টাকার লোভে? তাও তো মাত্র চল্লিশ হাজার টাকা। তা দিয়ে কীই বা হবে, তা কী সে জানত না? নাকি ভেবেছে ঐ টাকা দিয়ে জমিজমা কিনে চাষবাস করবে আর অন্যের বাড়িতে কাজ করবে, এইভাবে দুজনের পেট চলে যাবে। হয়তো ভেবেছে অন্যের কাছে থাকলে মেয়ের অবহেলা হবে আর এখানে থাকলে যদি মেয়েকে তার কাছে থেকে কেড়ে নেওয়া হয় তাই ভয়ে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে পোয়ারা নিশ্চিত ডিনসমেডের একটি মেয়ে হয় মেরী না হয় শার্লট। কিন্তু কে? মেরীর সাথে তাদের পরিবারের মিল নেই। তবে সে যে ঐ পরিবারের নয় এমন বলা যায় না। একই পরিবারে সকলের মিল থাকবেই এমন কথা নেই। শার্লটের সাথে মিল থাকলেও অমিলও আছে। তাই নিশ্চিত হবার জন্য পোয়ারো হেনেসের কাছে ওদের ছবি চেয়েছিল কিন্তু পায়নি।
-আচ্ছা জোন্সকে দেখলে আপনি চিনতে পারবেন?
–তা হয়তো পারি কারণ পরিণত বয়সে মানুষ বড়ো একটা পালটায় না। বেশ লম্বা-চওড়া চেহারা, স্বাস্থ্য ভালো, কথাবার্তায় মার্জিত ভাব, চুল ছোটো করে ছাঁটা।
–জাতে কী?
–মেক্সিকান। এর বেশি আমি আর কিছু জানি না।
পোয়ারো তারপর সেখান থেকে চলে এসেছিল।
কফির কাপে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে এবার ভাবে–মিস জুলিয়েটের বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি কেন? জুলিয়েট রবার্টকে ভালোবাসত। রবার্ট নির্বিকার ছিল। শেষে কী একরকম ক্ষিপ্ত হয়েই কী ট্রেন থেকে ধাক্কা মারে…। প্রেমের জন্য মানুষ সব কিছু করতে পারে। জুলিয়েট ভেবেছে রবার্ট তার হবে না। তাই হয়তো ভীষণ পরিণতি।
পোয়ারো রবার্টের চলন্ত ট্রেন থেকে নামা বিশ্বাস করতে পারছেন না। কারণ রবার্ট বড়ো তাই সে জানত আগুনে হাত দিলে হাত পুড়ে যায়।
লোকাল ট্রেনে তিন মাইল অন্তর স্টেশন। পরের স্টেশনে নামতে পারত। অফিসের কাজে একটু দেরি হলে কী হত। সে একজন অফিসার, সামান্য বুদ্ধি কী ছিল না! ধোঁয়াটে লাগছে। পোয়ারোকে কুয়াশা ঘিরে ধরেছে।
জোন্স জানতো অ্যাপার্টমেন্টটা রবার্টের তাই কী সে এইভাবে রবার্টকে সরিয়ে সব নিজের করে নিয়েছিল….
মেরী না শার্লট ডিনসমেডের মেয়ে? তবে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বলেছে ওরা তাদের সন্তান এবং সন্তানরাও একই কথা বলছে। হয়তো ওরা তাদের শিখিয়ে পড়িয়ে রেখেছে তাই ওভাবে চলেছে। সেদিন ওরা এস. ও. এস. তাও মুখ খোলেনি। শুধু বলেছে একটা ভয়ের সংকেত পাচ্ছে।
বিপদ আসতে পারে। কিন্তু এখন কী ওদের ভুল ভেঙেছে? ওরা কী জানতে পেরেছে ওরা পরস্পরের বোন নয়।
আর শার্লটের পরচুলের ব্যাপার। কী কারণে সে পরচুল ব্যবহার করে? ওর সোনালি চুল গর্বের ব্যাপার। মেরী ও শার্লট–কে ডিনসমেডের মেয়ে? আর কেই বা রবার্টের মেয়ে হতে পারে?
হেনেস আর মিসেস ম্যাকডোনাল্ড দুইজনেই বলেছে শার্লট নয় মেরী হতে পারে।
জুলিয়েট বলেছে মেরী বা শার্লট না রোজি। রোজি থেকে মেরী হওয়া আশ্চর্যের নয়। কারণ রোজমেরী বলে কথা আছে। তাই এদিক ওদিক করে কার নাম রোজি হতে পারে?
পোয়ারো ভাবে মেরীর মধ্যে যে দুশ্চিন্তা তা শার্লটের মধ্যে কিন্তু বিশেষ লক্ষ্য করা যায় না।
সব মিলিয়ে পোয়ারো পড়েছে একটা গোলকধাঁধার মধ্যে; কোনো কূলকিনারা নেই।
২১. স্থানীয় থানার অফিসার
২১.
স্থানীয় থানার অফিসার মিঃ ওয়াকার পোয়ারোর বিশেষ পরিচিত। পোয়ারোকে দেখে তিনি বলেন–আরে মিঃ পোয়ারো বসুন? কেমন আছেন?