–ব্যস্ত আছেন?
–তা ঠিক নয় আসলে আপনার কথাটা না শোনা পর্যন্ত স্বস্তি নেই।
–আপনার এখানে কত বছর হল?
–তা ধরুন কুড়ি বছর হবে।
–আপনার এখানে জুলিয়েট নামো কোনো মহিলা কী কাজ করতেন?
–আচ্ছা এটা কী অনেক বছর আগের কথা?
–হ্যাঁ।
–না, তবে ইদানিং ও-নামে পারমানেন্টলি কেউ নেই।
–টেম্পোরারি?
–তাহলে রেজিস্টারটা দেখতে হবে।
–তাই দেখুন, ঘটনাটা কিন্তু বছর পনেরোর কথা।
–ও গড। আপনার জন্য কুড়ি বছর ব্যাকেও যেতে রাজী।
–শুনে খুশী হলাম।
–তা আর এককাপ কফি চলবে?
–হ্যাঁ, একটু অপেক্ষা করতে হবে বুঝি?
মিসেস বার্জের নির্দেশে একজন ক্লার্ক তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পেল না। পোয়ারো অন্য এক স্কুলে গেল, সেখানে জুলিয়েট টেম্পোরারি কাজ করত। সেখান থেকে জুলিয়েটের ঠিকানা নিয়ে পোয়ারো চলে গেল।
.
১৯.
এবার আর জুলিয়েটের সঙ্গে দেখা করা কষ্টের হবে না। হয়তো ছুটির দিনগুলোতে জুলিয়েট রবার্টকে কাছে পেত, মেয়ে তো তখন ছোট্ট। রবার্টের মৃত্যুতে জুলিয়েটের হাত নেই তো?–এই সব ভাবতে ভাবতে পোয়ারো সুইন স্ট্রিটে পৌঁছায়। পথের মাঝে গাড়ি থামিয়ে দুপাশে চোখ বোলাতে বোলাতে এগোয়, খুঁজতে থাকে তেষট্টি নম্বর বাড়ি।
সহসা চোখের সামনে ভেসে ওঠে তেষট্টি নম্বর বাড়ি। একতলা, সামনে ছোটো মাঠ, তাতে একপাশে দোলনা, স্লিপ, এককোণে ফুলের বাগান অনেকটা শিশু উদ্যানের মতো। বাড়ির রং হলদে।
বাড়ির সামনে গিয়ে বেল টিপতেই লম্বা গাউন পরা, তার উপর নীল হাইনেক সোয়েটার, বুকের বোম খোলা–বেরিয়ে দরজা খুলল জুলিয়েট।
–গুড মর্নিং।
–গুড মর্নিং, আমায় আসতে দেখে অবাক হয়েছেন।
–হ্যাঁ, তা একটু হয়েছি। জুলিয়েটের ঠোঁটে হাসি।
পোয়ারো খুবই চতুর, সেও হেসে–আপনার সঙ্গে দরকার ছিল।
দরকার! আসুন ভেতরে আসুন। জুলিয়েটের মনে সন্দেহ হয়।–বলুন কী করতে পারি?
তার অফিসঘরে অসংখ্য ফাইলপত্তর। আলমারি ভর্তি খাতা বই। পোয়ারো বসতে বসতে বলে–আমার মনে হচ্ছে আমি একটা স্কুলে বসে আছি।
-হ্যাঁ, এখনো ঠোঁটে হাসি। কিন্তু চাউনি তীক্ষ্ণ।
–এটা কিন্ডারগার্ডেন স্কুল বুঝি? চারিদিকে পোয়ারোর সতর্ক দৃষ্টি।
–হ্যাঁ, আপনার ধারণাই ঠিক। সে ভাবে সব কিছু জেনেই এসেছে।
–আপনিই চালান? আপনিই কী মালিক?
-হ্যাঁ, আমি একাই চালাচ্ছি, আর আমিই মালিক। জুলিয়েট অসহিষ্ণু। বয়স চল্লিশ, চুল বব করা, মাঝারি লম্বা চেহারা, চুলের রুপোলী রং তাকে আরও বৈশিষ্ট্যময়ী করে তুলেছে আর ভারিক্কি করে তুলেছে যা তাকে হেডমিস্ট্রেস হতে সাহায্য করে। চোখের চশমা তাকে ব্যক্তিত্বময়ী করে তুলেছে।
–স্কুলটা কত বছর চালাচ্ছেন?
–তা প্রায় পনেরো বছর। তা আপনার আসার কারণটা যদি…
-ভুল হয়ে গেছে ওটা আমার আগেই বলা উচিত ছিল। আপনার মিঃ রবার্টকে মনে আছে? আমি তারই বন্ধু। বিদেশ থেকে ফিরে ওর মৃত্যুর সংবাদ পাই। বছর পনেরো আগে আপনি তার শিশুকন্যাকে পড়াতেন।
রবার্ট শুনে চমকে ওঠে জুলিয়েট, পরে বলে–হ্যাঁ মনে পড়েছে। তার একটা সুন্দর মেয়ে ছিল তিন বছরের, আমার কাছে পড়ত। তারপর আর কোনো খবর জানি না।
-কেন?
–চাকর জোন্স ফার্নিচার সহ অ্যাপার্টমেন্ট বেচে মেয়ে নিয়ে কোথায় যেন পালিয়ে যায়। আমার এখনও বিশ্বাস হয় না।
–আমায় দয়া করে খুলে বলুন তো।
-ঐ মেয়েকে জোন্সের মিঃ ডিনসমেডের কাছে দেবার কথা ছিল কিন্তু সে তার কথা না রেখে সর্বস্ব বেচে পালিয়ে যায়। মিঃ ডিনসমেড বহু খোঁজ করেন জোন্সের দেশেও যান। কিন্তু কোনো লাভই হয় না। সেখানেও জোন্সকে পাওয়া যায় না।
–আচ্ছা, তারপর কী জোন্সের সাথে আপনার দেখা হয়েছিল?
–না।
–সেই মেয়েটার মুখ বা ওর চেহারার কোনো বৈশিষ্ট্য কিছু মনে পড়ে?
–তিন বছর বয়স ছিল যখন পড়তাম এখন সতেরো আঠারো হবে এর মধ্যে চেহারার কত পরিবর্তন হয়। তেমন কিছু মনে পড়ছে না। আচ্ছা আপনি ওর ব্যাপারে এত কথা জানতে চাইছেন কেন?
–মেয়েটাকে ফিরে পেতে চাই।
–ফিরে পেয়ে আপনার লাভ?
–লাভ-ক্ষতির প্রশ্ন অবান্তর। অসহায় মেয়েটাকে আমার হেফাজতে রেখে মানুষ করতে চাই।
-ও।
-আচ্ছা আপনি রোজ সেখানে যেতেন?
–না, ছুটির দিনে যেতাম না।
–ঐ বাড়িতে তখন কার বেশি যাতায়াত ছিল?
মিঃ ডিনসমেডের। রবার্টের বন্ধু। আর কেউ বড় একটা আসত না। মিঃ রবার্ট মিশুকে ছিলেন না।
-আচ্ছা তার কোনো লইয়ার বন্ধু ছিল?
–না, আমি কোনোদিন দেখিনি, বাড়িতে দেখিনি।
–ওদের কথার সময় কী আপনি ওখানে থাকতেন? কী কথাবার্তা হত জানেন?
-মামুলি কথা। আবার অনেক সময় আমিই ওদের বিষয়বস্তু হতাম। মানে মিঃ ডিনসমেড চাইতেন আমার আর মিঃ রবার্টের…মানে আমাদের বিয়ে হয়।
লজ্জায় রাঙা হয় জুলিয়েটের মুখ।
–আচ্ছা আপনি কী রবার্টকে ভালোবাসতেন?
-সত্যিই আমি তাকে ভালোবাসতাম। প্রথমে তাকে এড়িয়ে চলতাম পরে ঐ অসহায় মানুষটার প্রতি একটা আকর্ষণ অনুভব করি।
–মিঃ রবার্ট সে কথা জানতেন?
–আমি তাকে কোনোদিন বলিনি। তবে যেদিন মনে মনে স্থির করলাম তার পরেই তো শুনি ওর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।
–কিন্তু আমি ভাবছি অ্যাক্সিডেন্ট হল কী করে?
–চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে।
–কী এমন তাড়া যে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গেল।
–শুনেছিলাম ও ঘুমিয়ে পড়েছিল। তারপর জেগেই স্টেশন পার হয়ে যাচ্ছে শুনে ধড়মড় করে নামতে গিয়ে নাকি দুর্ঘটনা ঘটল।