ডিনসমেডের পরিবার সম্পর্কে জানা যায় যখন সে এখানে থাকত তখন তার পরিবারে সদস্য বলতে ছিল তার স্ত্রী আর একটি ছেলে, বয়স দেড় বছর আর একটি মেয়ে, বয়স তিন বছর, এছাড়া আর কেউ ছিল না। ব্যাবসা আর বাড়ি এছাড়া লোকটা কিছুই জানত না। তবে একটি মাত্র বন্ধু ছিল রবার্ট। অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়, তার বাড়ি যাতায়াত ছিল। রজার রবার্টের সম্পর্কে কিছু জানত না। আর তার বাড়ি থাকাকালীন ডিনসমেড কোনো কন্যা সন্তানকে আশ্রিতা হিসাবে রাখেনি।
সমস্ত কিছু জানা শেষ হলে পোয়ারো রজারের কাছ থেকে বিদায় নেয়।
.
১৭.
পোয়ারো হেনেসের অ্যাপার্টমেন্টের কলিং বেলটা পুস করে। কোনো সাড়াশব্দ নেই। পোয়ারো আবার বেল বাজালে হেনেস এসে দরজা খুলে দেয়। হেনেসের বয়স পঁচাত্তর ছিয়াত্তর হবে, লম্বা শীর্ণ চেহারা, মোটা কাঁচের চশমা চোখে। মাথায় চুল নেই বললেই চলে।
–গুড মর্নিং, আপনার সঙ্গে একটু কথা ছিল।
–আসুন, ভেতরে আসুন।
একটা জীর্ণ বৈঠকখানার ঘরে বসিয়ে,–আপনার পরিচয়টা জানতে পারলে ভালো হত।
–আপনার উপরের অ্যাপার্টমেন্টে মিঃ রবার্ট থাকতেন, আমি তার বন্ধু।
–মিঃ রবার্ট তো আর বেঁচে নেই।
–হ্যাঁ, মাঝে দশ বছর ওর সঙ্গে যোগাযোগ নেই, এসে শুনলাম।
–বাইরে ছিলেন বুঝি?
–হ্যাঁ, আচ্ছা রবার্টের মৃত্যু কী করে হয়?
রেল অ্যাক্সিডেন্টে। স্টেশনের নামও বলল।
আরো আলোচনার পর পোয়ারো জানতে পারে রবার্টের বেঁচে থাকাকালীন ওর স্ত্রী মারা যান। আর এও জানতে পারে যে, ওদের একটা কন্যাসন্তান ছিল যার বয়স ছিল তিন বছরের কাছাকাছি।
–মেয়েটার নাম জানেন?
হেনেস চিন্তিতভাবে বলল–মনে করতে পারছি না।
–আচ্ছা, মেয়ের নাম কী শার্লট ছিল?
–শার্লট? হতেও পারে। বয়স হয়েছে স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে।
–মেরী হতে পারে কী? এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
–তাহলে তো ভেবেচিন্তে বলতে হবে। তবে মনেই পড়ছে না।
–আচ্ছা, মিসেস রবার্ট মারা যাবার পর মেয়েকে কে দেখাশোনা করত?
–মিঃ রবার্টের চাকর জোন্স আর একজন শিক্ষয়িত্রী মিস জুলিয়েট, ভারী মিষ্টি মেয়ে, আমায় অনেক কাজে সাহায্য করত। সে নিয়মিত পড়াতে আসত।
-আচ্ছা, তার সাথে কী মিঃ রবার্টের কোনো সম্পর্ক ছিল?
–অনেকে তো বলে তবে আমার মনে হয় সব বাজে কথা। আর সত্যি কথা বলতে রবার্ট তখন তাকে বিয়ে করলে আমি সবচেয়ে খুশী হতাম।
–জুলিয়েট কোথায় থাকে?
–শুনেছিলাম ধারে-কাছে। তবে এতদিন পর কী তার খবর পাবেন?
–ঠিক বলেছেন। আচ্ছা, রবার্টের মৃত্যুর পর ওর মেয়ের কী হল?
-ওর অন্তরঙ্গ বন্ধু মেয়েটাকে নেবার কথা বলেছিল। এতে জোন্স রাজী হয়েছিল আর তাকে আসতেও বলেছিল কিন্তু সে আসার পর দেখে জোন্স মেয়ে নিয়ে উধাও আর ফার্নিচার সহ অ্যাপার্টমেন্ট বেচে দিয়েছে।
-কোথায় গেছে জানেন?
–না, মিঃ ডিনসমেড বহু খোঁজ করেও ব্যর্থ হন।
–আচ্ছা, মিঃ ডিনসমেড এখানে প্রায়ই আসতেন?
–হ্যাঁ, শুনেছি একই কলেজে পড়তেন। সেই সুবাদে
–রবার্টের মৃত্যুর কতদিন পর জোন্স উধাও হয়?
–তা দশ-পনেরো দিনের মধ্যে।
–সে পালাবার পর কী থানায় জানানো হয়েছিল?
–সেটা ঠিক মনে নেই।
–আচ্ছা, জোন্স যার কাছে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করেছে এখন গেলে তাকে পাওয়া যাবে?
–না, স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হবে।
–ধন্যবাদ, উঠি।
.
১৮.
নির্দিষ্ট অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে পোয়ারো নক করতেই প্রায় পঞ্চাশ বছরের ভারী চেহারার, চোখে চশমা, মাথায় সাদচুলের রাশি, একজন মহিলা দরজা খুলল।
–আপনি মিসেস ম্যাকডোনাল্ড?
–হ্যাঁ।
–মিঃ ম্যাকডোনাল্ড বাড়িতে আছেন?
–না।
–তাহলে একটু বিরক্ত করব।
–ভেতরে আসুন।
–আপনারা এই ফ্ল্যাটে তো রবার্টের চাকর জোন্স-এর কাছ থেকে কিনেছেন। লেখাপড়া কার সাথে হয়েছিল?
–জোন্সের সাথেই। তখন রবার্টের তো কেউ ছিল না।
–হ্যাঁ, তখন রবার্টের মেয়ে তো দুধের শিশু।
–হ্যাঁ, গুটিগুটি পায়ে হাঁটত। তবে তখনই সুন্দরী ছিল।
–জোন্স টাকা নিয়ে কী করল জানেন?
-না। তবে ও দেশে চলে যাবে বলেছিল। ওর বাড়ি বিক্রির জন্য খুব তাড়া ছিল। কেন জানি না।
–ওর সঙ্গে আপনাদের আর দেখা হয়েছে?
–না।
–আচ্ছা বাচ্চার নাম মনে আছে–শার্লট না মেরী?
–শার্লট না। ফুলের মতো বাচ্চা মেরী হতেও পারে।
–আচ্ছা, একটু মনে করে বলুন তো ওই বাচ্চার কোনো বিশেষ চিহ্ন…কাটা দাগ বা অন্য কিছু…
–অপরিচিত বলে দেখা দিয়ে ও পালাত, তাই খেয়াল পড়ছে না।
–আচ্ছা, এবার চলি।
–
-আপনাকে এক কাপ কফিও খাওয়াতে পারলাম না। আচ্ছা আপনি ওই মেয়ের সম্বন্ধে এতো খোঁজ নিচ্ছেন কেন?
আবার মিথ্যে–মানে..আমার ছেলে ঐ মেয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছে কিনা তাই একটু খোঁজ নিচ্ছিলাম।
-ও তাই বলুন।
–চলি।
.
পোয়ারো সেখান থেকে বেরিয়ে রবার্টের বাড়ির কাছে একটা স্কুলে গেল। এখানকার হেডমিস্ট্রেস মিসেস বার্জ তার বিশেষ পরিচিত।
পোয়ারোকে দেখামাত্র তিনি বেল বাজিয়ে কফি আনতে বলেন। হেসে–হঠাৎ আমার স্কুলে মতলব কী?
-এমনি, স্কুল দেখতে এসেছিলাম।
–সত্যি করে বলুন তো মতলবটা কী? আপনাকে দেখলে ভয় হয় কখন কোনটা নাড়া দিয়ে কী বার করে বসবেন তার ঠিক নেই।
–আপনার এক শিক্ষয়িত্রীর প্রেমে পড়েছি।
–প্রেম? তাও আবার আপনার ক্ষেত্রে? এই তো বেশ কাটিয়ে দিচ্ছেন। এবার দয়া করে আসল কথাটা বলুন তো।