-কীসে পড়ে?
–তা ঠিক বলতে পারছি না।
–ঠিক আছে ঘড়ির নিচে বসে আছেন জ্যাকসন, আপনি ওর কাছে যান।
জ্যাকসনের সামনে গিয়ে পোয়ারো তাকে সুপ্রভাত জানায়। জ্যাকসন খুশী নয়। কারণ সামনের মাসে তাকে অডিটের মুখোমুখি হতে হবে। তবে পোয়ারোর সম্ভ্রান্ত পোশাক দেখে সে কথা না বলে পারে না। শুধু কথাই নয় তিনটে খাতা খুঁজে সে মেরী আর শার্লটের খোঁজ বার করে। মেরী বি.এ. সেকেন্ড ইয়ার, সেকশন-বি, রোল নং ৩১ আর শার্লট বি.এ. ফাস্ট ইয়ার, সেকশন-এ, রোল নং-২৫।
তাদের সঙ্গে দেখা করতে তিনটে বাজবে তাই একটা স্লিপে নাম লিখে পোয়ারো ভিজিটার্স রুমে বসে।
এখানেও মিথ্যে। স্লিপে লেখা চার্লসের বন্ধু এলবার্ট জোন্স। হলুদ বাড়ির একতলায় সে অপেক্ষা করছে।
পোয়ারো দুজনের নামে স্লিপ লিখে নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেরী আসে, চার্লস না তার বন্ধু? তাই একটু অস্বস্তি হচ্ছে।
ভিজিটার্স রুমে ঢুকে মেরী দেখল বেশির ভাগ পুরুষ তাদের বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে এসে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে। দূরে কোণায় একজন সম্ভ্রান্ত পোশাকের মানুষকে দেখে মেরী বোঝে সেই চার্লসের বন্ধু।
ওদিকে পোয়ারো বুঝতে পারে না, এটা মেরী না শার্লট। পরনে সবুজ মিনি স্কার্ট, গায়ে লাল সোয়েটার ফুলহাতা, স্লিম ফিগার, চোখ কটা, চুল ধূসর, পায়ে হাই হিলের জুতো। কালো স্ট্রাপ, হাঁটু পর্যন্ত মোজা পরেছে। পোয়ারো বলে–আমার নাম…
-শুনেছি।
–আপনি মিস ডিনসমেড তো?
–হ্যাঁ, মেরী ডিনসমেড।
–চার্লস তো আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
–কেন? মুখে হাসি।
–তার জবাব তো আপনি নিজেই।
–কী সে?
–আয়নায় তো রোজই নিজেকে দেখেন তাও বলতে হবে কেন। চার্লস আবার আপনাকে দেখার জন্য আগ্রহী।
-উনি এলে খুশী হতাম। আসতে বলবেন।
–আর ওর বন্ধু হয়ে আমি বুঝি বাদ?
–না না, তা কেন?
–মুখে বলছেন বটে তবে আমার কপালটা খারাপ। নইলে এই বয়সে ঘরণী জুটল না।
মেরী জানায় ঠিক বয়সে বিয়ে না করার জন্য দুই বন্ধুর চালচলন একেবারে এক।
আস্তে আস্তে চর্লস চিন্তিত বলে পোয়ারো জানতে চায় এস.ও.এস. লেখার অর্থ। মেরী ওটা লিখেছে বটে। কিন্তু সঠিক মানে সে জানে না। হঠাৎ লিখলই বা কেন তাও একটা রহস্যজনক।
জাহাজ বিপদে পড়লে…এই সঙ্কেত লেখা হয়। পোয়ারো আরো জানায়, চার্লস মেরীকে সাইক্রিয়াস্টিকে দেখাতে ইচ্ছুক। মেরী লাজুকভাবে দেখাতে রাজী হয় না। তারপর এস.ও.এস. লেখার কারণ মনে পড়লে জানাতে বলে বিদায় নেয় পোয়ারো। যাবার আগে বলে যায় এই কথা বাড়িতে গিয়ে যেন সে না জানায়।
যাবার আগে মেরী জানায় তার বোন শার্লট সেদিন যায়নি।
.
১২.
চার্লস অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছিল। দিন তিনেক পর ফিরে পোয়ারোকে ফোন করে। এই ট্রিপে সে পেনিকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। সে চার্লসের ঠাকুরমা।
পোয়ারো মেরীর সাথে দেখা করার ঘটনা সব বলল। চার্লস প্রথমে বিশ্বাস করতে চায় না। পোয়ারো বলে সে একবার তাদের বাড়ি যাবে। আরো জানায় পোয়ারো, মেরীকে বলেছে চার্লস তার প্রেমে পড়েছে আর শার্লটের সঙ্গে যখন দেখা হবে তখন বলবে পোয়ারো নিজেই তার প্রেমে পড়েছে।
চার্লস বলে–দেখো কিছু অঘটন করো না।
-তোমার হিতোপদেশ মনে রাখব। তবে আজ সন্ধ্যার পর আসছ তো?
–ও নিশ্চয়ই, ছাড়ি।
–হু।
.
১৩.
পোয়ারো কলেজে গিয়ে সোজা জ্যাকসনের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়। জ্যাকসন আজ বান্ধবীর সাথে দেখা করার জন্য একটু তাড়ায় আছে। সে একটা কাগজে লিখে পাঠায় শার্লটের কাছে।
ভিজিটার্স রুমে ভিড় নেই। আজও পোয়ারো সুন্দর পোশাক পরে এসেছে।
শার্লট লাজুক হলেও তার মধ্যে জড়তা নেই। তবে প্রেমিক থাকে গ্রীন উডে আর কলেজে কোনোদিনই আসে না। তাই একটু অবাক হয়ে সে ভিজিটার্স রুমে ঢুকলো।
সতেরো বছর বয়স, পাতলা চেহারা, পান পাতার মতো মুখ, সত্যিই সে সুন্দরী। পোয়ারো চিনতে পারে শার্লটকে কিন্তু তার নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে হল মুশকিল। আগের দিনের নাম ভুলে গেছে সে। এক ফুটবল প্লেয়ারের নাম মনে পড়তে বলে ববি চালটন তার নাম।
পোয়ারো ডিনসমেড বাড়ির প্রশংসা করে কথা শুরু করল। শার্লটের হাসিমাখা মুখ দেখে পোয়ারো ভাবল কাজ হচ্ছে। এবার শার্লটের প্রশংসা মানে শার্লটের সৌন্দর্য্যের প্রশংসা করতে করতে আসল কথায় আসে। সেই এস.ও.এস.-এর কথায়।
শার্লট প্রথমে বলে সে লেখেনি, পরে বলে সেই লিখেছে।
শার্লটের এমন লেখার কারণ কী তার মনের দুঃখ, না, শার্লট জানায় বাবা-মার গম্ভীর মুখ দেখে তার মনে হয় বাড়িতে কোনো বিপদ হবে তাই এমনটা লিখেছে। পোয়ারো বলে–আপনাদের বিয়ের জন্য হয়তো চিন্তা করেন। আপনি তাই নিয়ে চিন্তা করবেন না। চার্লস তো খুব চিন্তা করছিল তাই আমায় জোর করে পাঠালো। নিজে অফিসের কাজে আটকে গেছে। যাক এবার উঠি।
কিন্তু চুল? যাবার সময় ইচ্ছা করে পড়ে গেল শার্লটের গায়ে এবং এতে তার চুলেও টান লাগল।
.
১৪.
চার্লস পোয়ারোকে ফোন করে। তখন পোয়ারো চার্লসকে তার বাড়ি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসতে বলে। কেসের সম্বন্ধে অনেক কথা শুনে চার্লস ধন্যবাদ জানায় পোয়ারোকে। কিন্তু আগেই সে ধন্যবাদ নিতে রাজী নয়, যদি কেস সমাধান না হয়? সেটা অসম্ভব জানায় চার্লস, আর অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে।