ব্র্যাভো বন্ধু।
–আধা গোয়েন্দা কী বলো? তবে তোমার ট্রেনিং-এ কিছুদিন থাকতে পারলে পুরো হয়ে যেতে পারি।
তুমি অন্তত হবে না। নইলে মিস হবসের মতো পাত্রীকে তুমি প্রত্যাখ্যান করো। সে বিশাল সম্পত্তির একমাত্র অধিকারিণী।
-করাটা বোধহয় উচিত হয়নি। আসলে সেদিন আধো অন্ধকার জায়গায় আমায় টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে গদগদ গলায় কী সব বলতে লাগলো, তাতেই আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে পালিয়েছি।
-তুমি একটা ইডিয়েট।
–বল, আমরা ইডিয়েট।
পোয়ারো হাসে–সত্যি বোধহয় তাই। তা কেসটা কী একটু শুনি।
দ্যাটস লাইক এ গুড বয়। এর মধ্যে একটা ঘন রহস্যের জাল আছে সেটা বার করতে। হবে।
–একটু খুলে বলো তো।
–তাহলে কেসটা টেকআপ করলে?
–আগে কেসটার মেরিট বুঝি।
–মেরিট আছে। আমার দুটো জিনিসের ওপর দারুণভাবে সন্দেহ আছে।
–সে দুটো জিনিস কী?
-প্রথমত আমি মিঃ ডিনসমেডের বাড়িতে ঢুকে তার ছেলে জর্জ ও স্ত্রী-এর সঙ্গে পরিচয় করার পর তার দুই মেয়েরা এলো।
–তাদের নাম।
–মেরী ও শার্লট।
এদের মধ্যে কে বড়ো?
–মেরী।
–বয়স কত?
–আঠারো হবে। শার্লটের বয়স সতেরো হবে। দুজনেই আমার কাছে এসে পড়বার পর মিসেস ডিনসমেড চাপা গলায় শার্লটকে হিসহিস করে উঠলো। কেন জানি না।
-তারপর কী হল?
–শার্লট চলে গিয়ে একটু পরে ফিরে এল।
–হঠাৎ চলে গেল কেন?
–তা ঠিক বুঝতে পারলাম না, তবে শার্লট যখন এল তখন ওর চুলের রং ধূসর দেখলাম। কিন্তু আমার মনে হয় ওর চুলের সে রং ছিল না।
–কী রং ছিল?
–সম্ভবত সোনালি। কিন্তু মিসেস ডিনসমেড ওভাবে শার্লট বলে ডাকল কেন? আর কেনই বা শার্লট চলে গিয়ে একটু পরে ফিরে এল?
-তুমি কী ওদের কিছু জিজ্ঞেস করেছ?
-না আসলে তখন সবে আশ্রয় পেয়েছি শেষে যদি ঘাড় ধরে বের করে দেয়, আর সব ব্যাপারে কৌতূহল ভালো না।
–আর দ্বিতীয় পয়েন্ট?
–আমায় শুতে দেওয়া হয়েছিল একধারে কোণের ঘরে। আমায় ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে দুই বোন লজ্জিতভাবে বলল টেবিলটা ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়নি।
–তুমি গলে গিয়ে তখন কী বললে?
–অবজেকশান। তবে সাময়িকভাবে গলে গিয়ে হেসে বললাম, যা করেছেন যথেষ্ট। এরপর বাথরুম থেকে ফিরে এসে টেবিলের উপর দেখলাম এস.ও.এস.লেখা।
এস. ও. এস.?
—হ্যাঁ।
–কাউকে লিখতে দেখেছ?
–না। হয়তো দুবোনের মধ্যে কেউ লিখেছে।
–তুমি বাথরুম থেকে এসে কাউকে দেখনি।
–না।
–তুমি কখন কোথায় জিজ্ঞাসা করেছ?
–সকালে বাগানে পায়চারী করার সময়।
ডিনসমেড দম্পতি জানে?
–না।
এই বলে চার্লস মেরী ও শার্লটকে যা যা বলেছে বা তারা যা যা বলেছে সবই জানায় পোয়ারোকে। তাকে চিন্তিত দেখায়। চার্লস জানায় পোয়ারোকে এই ঘটনার কারণ বের করতে হবে। পোয়ারোকে বেশ গম্ভীর দেখায়।
.
১০.
বেলা বারোটায় মাঝারি আকারের একটা ঘর নিয়ে ছোট্ট কোম্পানিডিনসমেড কনস্ট্রাকশনের সামনে দাঁড়ায় পোয়ারো। ভেতরে একটা অল্পবয়সী ছেলে কাজ করছে আর টেবিলের ওপর একটা বাড়ির প্ল্যান দেখছে ডিনসমেড।
কালো রং-এর ওপর নীল লাল স্ট্রাইপ করা স্যুট, পায়ে চকচকে স্যু, টাইয়ের রং নীল তার ওপর সাদা কাজ। ভেতরে ওয়েস্ট কোট তার ওপর দিয়ে সাদা জামা উঁকি মারছে।
সুপ্রভাত জানিয়ে ডিনসমেডের সঙ্গে আলাপ করেন পোয়ারো। নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে সে মিথ্যে কথা বলে। বসবাস স্থান জানায় ওয়েস্ট রোড আর পেশা হিসাবে বলে কলেজের শিক্ষকতা। ডিনসমেড তার পোশাকে সম্মানিত বলে আখ্যা দিয়ে বলে
-একটু কফি আনাই?
–না, এক্ষুনি খেয়ে বেরিয়েছি। আর শুধু কফির ওপর দিয়ে চালালে হবে না। আপনার আতিথ্যের প্রত্যাশায় চার্লস পঞ্চমুখ। তাই একদিন সকালে ওর সঙ্গে আপনার বাড়ি যাবো আর ফিরবো সন্ধ্যা বেলায়।
ডিনসমেড রাজী হয়। গ্রামের দিকে বাড়ি হবার জন্য পোয়ারো শহরের সঙ্গে সে জায়গার তুলনা করে জানায় খুব ভালো জায়গায় বাড়ি। তারপর বাড়ির দাম শুনে অবাক হয়ে যায় পোয়ারো, মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা, এই চড়া দামের বাজারে। তারপর পোয়ারো জানতে পারে পনেরো বছর হল তারা ওখানে। প্রথমে তার স্ত্রীর আপত্তির কথাও পোয়ারোকে জানায়।
তারপর পোয়ারো বলে–যদি আমি আপনার বাড়ি যাই তবে আপনার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী বিব্রত বোধ করবে না তো?
-না না, আমার স্ত্রী ভীষণ মিশুকে। আর ছেলে-মেয়েরা কলেজে পড়ে, ওরা সঙ্গী চায়।
–গুড, ছেলে না মেয়েরা বড়ো?
–মেয়েরা।
–মেয়েরা কোথায় পড়ে আর ছেলে কোথায় পড়াশুনা করে?
–মেয়েরা কুরীতে আর ছেলে হোবার্ট ইনস্টিটিউটে পড়ে।
আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেরোবার মুখে পোয়ারোর চোখে পড়ে একটা ছবি, এতে একজন মিঃ ডিনসমেড অপরজন কে?
অপরজন রবার্ট।
পোয়ারো রবার্টের সম্বন্ধে সবকিছুই জানতে পারে ডিনসমেডের কাছ থেকে। তারপর আবার একটা মিথ্যের জাল বোনে। বলে–আমার এক বন্ধু খুব ভালো ফুটবল খেলত। খেলতে খেলতে আঘাত পেয়ে তাতেই মারা যায়। সেই থেকে আমি আর খেলার মাঠে যাই না। কোথাও ফুটবল সম্বন্ধে আলোচনা হলেও আমি সেখান থেকে চলে যাই।
-এখনো তার কথা ভোলেননি, বোঝা যাচ্ছে।
–এরপর হয়তো ভুলে যাবো। আপনার তো আমার মতোই অবস্থা।
–হ্যাঁ, আসলে বড় বেশি রবার্টকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলাম।
১১. কলেজের সামনে
১১.
পোয়ারো একটা কলেজের সামনে এসে দাঁড়ায়। ঘড়িতে তখন বেলা এগারোটা। পরিচয়পত্র দেখে দারোয়ান পোয়ারোকে সম্মানের সাথে ভেতরে যেতে বলে। সামনে একটা বিরাট লন। সেখানে মৌসুমি ফুলের জটলা। তারপরই একটা বাড়ি, সেটা কলেজ বিল্ডিং নয়, কিছু কেরানি ধরনের লোক সেখানে কাজ করছে। তাদেরই একজনকে পোয়ারো মেরী ডিনসমেডকে ডেকে দিতে বলে।