- বইয়ের নামঃ এস ও এস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, গোয়েন্দা কাহিনী
এস ও এস
০১. চিন্তিত দেখাচ্ছে ডিনসমেডকে
০১.
কদিন ধরেই একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে ডিনসমেডকে। সে ভেবে ভেবে যেন সঠিক পথের সন্ধান পাচ্ছে না। কিন্তু কদিনের মধ্যে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এইভাবে ঠিক ভালো লাগে না। অথচ আগেই কথাটা আবার সুসানকে বলতে চায় না। তবে সে ব্যাপারটা স্থির করে তবেই স্ত্রীকে জানাবে।
চিন্তিত হয়ে প্রায় সাতটায় ডিনসমেড বাড়ি ফিরল। শীতের সময় ঠান্ডাটা বেশ উপাদেয়। শীতের শুরুটা বেশ মনোরম। তারপর বাড়ি ফিরে যদি ফায়ার প্লেসের সামনে এক কাপ গরম কফি নিয়ে বসা যায় তাহলে তো কথাই নেই।
অবশ্য অন্যদিন ডিনসমেড আটটা; সাড়ে আটটায় বাড়ি ফেরে। তিনতলা বাড়িটায় তার। অ্যাপার্টমেন্টটা দোতলায়। ডিনসমেড সিঁড়ি বেয়ে নিজের অ্যাপার্টমেন্টটার কাছে দাঁড়ায়। বাড়িটা তিন বছরের পুরোনো।
তা বছর দশেক ডিনসমেড এ অঞ্চলে আছে। ভাড়া একটু বেশি হলেও শহরের একদম কাছে বলেই এই অ্যাপার্টমেন্টটা তার দেখামাত্র পছন্দ হয়েছিল। আশেপাশে সবকিছু পাওয়া যায়। তখন তার সংসারটা ছোটো আর ব্যাবসাও উন্নতির পথে জোরকদমে এগোচ্ছে। তারপর সংসারও বাড়ল আর সহসা ব্যবসায় ভাটা নেমে এলো, এবং এখনও তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
হঠাৎ একটা গাড়ির ব্রেক কষার শব্দে ডিনসমেড সম্বিৎ ফিরে পায়। তারপর সে একটু চমকে উঠে কলিং বেল পুশ করে।
সুসান ডিনারের তদারক করছিল। কলিং বেলের শব্দে ন্যাপকিনে হাত মুছে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
দরজা খুলে অবাক হয়ে সুসান বলে, আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরলে?
–হ্যাঁ, চলে এলাম। অফিসে বসে থাকতে আর ভালো লাগছিল না।
এসে ভালোই করেছ।
–একটু কফি কর তো।
করছি।
তারপর কফির কাপ হাতে নিয়ে সুসান বলে, এই ঘণ্টাখানেক আগে রজার আবার এসেছিল।
এসে কি বলল?
–বলল, তুমি যদি দয়া করে তার সঙ্গে একটু কথা বলো তাহলে সে খুশী হবে।
–খুশী হবে? বিনয়ের অবতার। কথার মারপ্যাঁচ বোঝে না।
–ভাবটা তাই দেখাচ্ছে।
–দেখবে ও এখুনি আমায় আবার ফোন করবে।
–তুমি কীসে বুঝলে? স্বামীর হাতে কফির কাপটা দেয়।
–ইদানিং ও আমার আসা যাওয়ার ওপর নজর রাখে।
ডিনসমেড কফিটা তখনো শেষ করেনি টেলিফোনটা ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে উঠলো।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডিনসমেড রিসিভারটা তুলে, হ্যালো।
–হ্যালো, ডিনসমেড, এখন আপনাকে ফোন করে বিরক্ত করছি না তো?
–আদৌ নয়।
–ধন্যবাদ, আমার ব্যাপারটা একটু চিন্তা করলেন?
–হ্যাঁ, অন্য বাড়ির চেষ্টায় আছি।
সুসান ইঙ্গিতে জানায় যে, এখানে যে ভাড়ায় আছে অন্য কোনো জায়গায় সেই ভাড়ায় বাড়ি পাওয়া যাবে না। ডিনসমেড মাথা নেড়ে সুসানকে হাসতে বারণ করে।
-তা অবশ্য ঠিক। তবু আমার কথাটা ভেবে দেখবেন।
–হ্যাঁ, আমার চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।
–কিন্তু তেমন তো কোনো গরজ দেখছি না।
–আমি দালালকে পর্যন্ত বলেছি সেও আমায় অপেক্ষা করতে বলেছে।
–ও, তা আপনি কার সঙ্গে কথা বলেছেন?
–পিটারের সঙ্গে। আপনি তাকে চেনেন নাকি?
–চিনি বই কি। ঠিক আছে কিন্তু আমি ওকে বলতে চাইনি।
–কেন? বললে ভালো হবে মনে হয়।
–তাহলে আমার কাছেও দালালি চাইবে তবু বলব।
–এই করেই তো ওদের চলে।
–আমার ছেলে মাস চারেকের মধ্যেই এসে পড়বে বলেই আপনাকে একথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। একতলার সব দোকানদারকে বলতে তার ফল হাতেনাতেই পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গেই তারা নেই নেই করে উঠেছে। ওদিকে আমার ছেলের আসার সময় হয়ে গেছে। সে তো পাঁচ সাত মাস থাকবেই। এই কমাসের জন্য ব্যবস্থা করতে পারছি না। অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া অবশ্য সমস্যার ব্যাপার।
–আমার ক্ষেত্রেও একই কথা।
–বুঝি। গুড নাইট।
–গুড নাইট।
.
০২.
বন্ধু রবার্টের বাড়ি যাবার জন্য ডিনসমেড সকালের দিকেই বেরিয়ে পড়ল। আধঘণ্টার মধ্যে ডিনসমেড একটা দোতলা বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। এরই একটা অ্যাপার্টমেন্টে রবার্ট থাকে।
স্কুলের গণ্ডি তারা একসঙ্গেই পেরিয়েছে। তারপর একজন যায় সাহিত্য আর অন্যজন বিজ্ঞানের দিকে। রবার্ট বরাবরই পড়াশোনায় ভালো থাকার জন্য দুজনের মধ্যে রেষারেষি ছিল।
এখন মিঃ রবার্ট একটা ব্যাঙ্কে উচ্চপদস্থ অফিসার। তিরিশ বছর বয়সে বিয়ে করে সে সুখেই ছিল। তাদের একটা কন্যাসন্তান জন্মায়, ফুলের মতো সুন্দর মেয়ে পেয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খুব খুশী। ছুটিছাটায় দুজনেই মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এত সুখ আর সইল না। কারণ তার স্ত্রী হঠাৎ স্ট্রোকে মারা যায়।
স্ত্রীর খবরটা অফিসে বসে পেয়ে যখন রবার্ট সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফেরে তখন সব শেষ।
ডিনসমেড খবরটা শুনে ছুটে এসে বন্ধুকে সান্ত্বনা দিয়ে, তার স্ত্রীর শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেছে। আর শিশুকন্যার ভার তুলে দিয়েছে সুসানের হাতে।
মাসখানেক বাদে ডিনসমেড বাড়ি নিয়ে এখানে এসেছে। ওখানে মেয়ে ভালোই আছে।
বাবা মেয়েকে পেয়ে খুশী হতে পারল না কারণ মেয়েই মাকে দূরে পাঠিয়েছে। এখন মেয়েই তার কাল।
রবার্ট একথা বিশ্বাস করে না। মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করে। আবার কী খেয়ালে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। কাদলে তাকায় না। তখন জোন্স মেয়েকে সামলায়। সাহেবের হাবভাব না বুঝে একটু দেখে সে চলে যায়। মেয়ে বায়না করে বাবার কাছে যাবে বলে। মেয়েকে সামলাতে পারে না। আপনি অথবা মিসেস ডিনসমেডকে পাঠিয়ে দেন, মেয়েকে আদর ও খেলনা, খাবার নিয়ে আসতে।