Site icon BnBoi.Com

টুওয়ার্ডস জিরো – আগাথা ক্রিস্টি

টুওয়ার্ডস জিরো - আগাথা ক্রিস্টি

টুওয়ার্ডস জিরো

১-৩. ক্লাবের এক কোণে

০১.

ক্লাবের এক কোণে যারা সেদিন আসর জমিয়ে বসেছিলেন, মামলা মোকদ্দমার ব্যাপারে, তাদের প্রত্যেকেই বেশ ঝানু লোক। বসেছিল মিঃ মার্টিনবেল, মিঃ রুকাস নও লিউয়িস। এদের মধ্যে কেউ অ্যাটর্নি, কেউ বা ব্যারিস্টার আর বসে ছিলেন সলিসিটার মিঃ ট্রিভস। তিনি অনেক দেখেছেন, অনেক শিখেছেন কিন্তু আর কাউকে তিনি মামলা করতে বলেন না। নথিপত্তরের ওপর চোখ বুলিয়ে বলেন, মামলা করে লাভ কি, মামলা চালাবার ঝক্কি কম নয়, খরচও বিস্তর। তার চাইতে চেষ্টা করো আপসে মামলা মিটিয়ে নেবার।

মিঃ ট্রিভস অপরাধ বিজ্ঞানে একজন পণ্ডিত। একটা মামলা নিয়ে আলোচনা চলছিল। ওল্ড বেলিতে যে খুনের মামলা চলছিলো তাই নিয়ে একটা তর্ক বেধে উঠেছিল। খুনের মামলা জোরালো কিনা তা প্রমাণ দাখিল করা যায়নি, মামলা ওল্ড কোর্সে গিয়েছে।

মিঃ মার্টিনবেল বললো যে গোড়াতেই ভুল হয়েছিল। সবছেড়ে মিঃ ডিক্রিচি কেন যে একটা উকিলের কথায় কেস দাঁড়া করাতে গেল কে জানে। আসামী পক্ষের কৌসুলী কিভাবে তাকে নাস্তানাবুদ করল দেখলে তো। এরপর আর মামলা টেকে।

লিউয়িসের মতে ওই ব্যাপারে জুরি বেঁকে বসল। জনিয়েল মনে করেন যে উকিলের সাক্ষ্যের উপর নির্ভর না করে উপায় ছিলো না। তাছাড়া সে সাক্ষ্য ভালই দিচ্ছিল। হঠাৎ সে অমন বেফাঁস কথা বলবে তা কেউ ভাবেনি।

মিঃ ক্লিভাব বললেন, তা ভাবুক সেটা কোন কথা নয়। কিন্তু মেডিক্যাল এভিডেণ্ডের উপর কেসটাকে দাঁড় করিয়ে যেত। ট্রিভস তখনো কোন কথা বলেনি।

মিঃ ট্রিভস বললো, তিনি অনেক বইপত্তর ঘাটলেন, তিনি বুঝতে পারলেন না হত্যাকে কেন আমরা আমাদের চিন্তা কিংবা আলোচনার একটা প্রাথমিক ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করি। হত্যা হল সমাপ্তি, অনেক দিন আগে থেকেই হত্যাকারীর মধ্যে যার সূচনা হতে থাকে। হত্যা রহস্য যদি বুঝতে হয় তাহলেই সূচনা পর্ব বুঝতে হবে। প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য যেটা ধীরে ধীরে পঞ্চম অঙ্কে দৃশ্যে এগিয়ে যেতে হবে। পঞ্চম অঙ্কের শেষ দৃশ্য হল হত্যার দৃশ্য। তা তোমরা শেষ দৃশ্যটাকে গোড়ায় বসাতে চাও। ওই করে মামলায় জেতা যায় কিন্তু হত্যা রহস্য বোঝা যায় না। ট্রিভস বলত লাগলো রহস্য কাহিনী এমন হবে সূচনা থেকে শুরু হবে সমাপ্তি হবে হত্যায়। ট্রিভসের সঙ্গীরা তাকে বুড়ো বলতে লাগলো এবং তাকে অবসর নিতে বললো।

ট্রিভস নানারকমের হত্যার রহস্য কাহিনীর কথা ভাবতে ভাবতে বাড়িতে ঢুকলেন। ঢুকেই তিনি টেবিলের ওপর একটা চিঠি দেখতে পেলেন। সেটা পড়তে পড়তে তার মুখের চেহারা পালটে গেল। তিনি বলতে লাগলেন এতদিন পরে কী আশ্চর্য। তাকে হুশিয়ার থাকতে হবে। তখন তাকে যদি কেউ দেখত তাহলে হয়তো বলতো, তিনি তাঁর জীবনের একটা মৌলিক সমস্যার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন।

.

০২.

 ১১ই জানুয়ারী

হাসপাতালের বিছানায় সে শুয়েছিল। তার কোকানির আওয়াজে নার্স এসে তার মাথায় হাত দিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলো, তার খুব কষ্ট হচ্ছে কিনা।

মার্ক হোয়াটারের সত্যই কষ্ট হচ্ছিল। যদিও নার্সের স্বরে সহানুভূতি ছিল তবুও তার ভালো লাগছিলো না। সে আত্মহত্যা করতে গিয়েও পারেনি। পাহাড়ের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়েও গাছের মাথায় আটকে গিয়েছিল। অন্যেরা তাকে উদ্ধার করে। তার চাকরী নেই, তাঁর স্ত্রী তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। বেঁচে উঠে সেকি স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে? সবাই তাকে কৃপা করবে। অন্যেরা তাকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলবে এই লোকটা আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। এটা খুবই লজ্জার ব্যাপার। তাহলে সে কেন বেঁচে উঠলো।

তাকে নার্স ঘুমের ওষুধ দিতে চাইলে তিনি ওষুধ খেতে রাজি হলেন না। তাকে কেন বাঁচানো হল এই কথা জিজ্ঞাসা করতে নার্স বললেন, আত্মহত্যা করা মহাপাপ।

মার্কহোয়াটারের ক্ষেত্রে পাপ নয়। সে বলল যে, সে মালিকের গাড়িতে করে কারখানায় যাচ্ছিল। মালিক এ্যাকসিডেন্ট ঘটিয়ে বসলো। তাকে বলা হলো ঘণ্টায় ৫০ কিমি চালাচ্ছিলেন কেন, কেন তিনি ৩০ কি.মি. চালাচ্ছিলেন না? উত্তরে তিনি বললেন, তাহলে নাকি ইনসুরেন্সের টাকা পাওয়া যাবে না। তিনি মিথ্যে সাক্ষ্য দেননি, উকিলের কাছে তিনি সত্য কথা বললেন, তার জন্য তার চাকরী চলে যায়। তার জন্য তার বন্ধুরা তাকে ত্যাগ করে এবং তাদেরই একজনের সঙ্গে ভাব হলে তার স্ত্রীও তাকে ত্যাগ করে। সেই দুঃখে সে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেয়। সে বাঁচতে চায় না তবে কেন তাকে বাঁচানো হলো।

নার্স বললো, বাঁচা মরা সবই ঈশ্বরের হাতে। তিনিই বাঁচা মরার মালিক।

.

১৪ই ফেব্রুয়ারী

একলা ঘরে একটা কাগজের উপর সে সব প্ল্যান অনুযায়ী লিখে যাচ্ছিল। টেবিলের আলোয় সে মুখটি দেখা গেল না। সে মুখটি বড়ই নিষ্ঠুর সে শুধু প্রতিশোধ চায়। কাগজের উপর সে হত্যার প্ল্যান লিখে যাচ্ছিল। সেপ্টেম্বর মাসের একটা তারিখে সে হত্যা করবে। সে ফায়ার প্লেসের কাছে এগিয়ে গেল। ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালাচ্ছিল। সেই আগুনের মধ্যে কাগজখানা সে নিক্ষেপ করল। আগুনের দিকে তাকিয়ে সে বললো, যাক সমস্ত প্রমাণ পুড়ে যাওয়াই ভলো। তার মাথার প্ল্যান কখনও পুড়ে ছাই হবে না।

.

৮ই মার্চ

পুলিস কমিশনার ও তার মেয়ে সিলভিয়ার গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলেন। সিলভিয়ারের চোখে জল। তার বাবা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন যে, সে তো কোন অন্যায় করেনি। তবে সে কাঁদছে কেন? তিনি মেয়েকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন। স্কুলের অবস্থাটা জেলখানার মত। সিলভিয়ারের কোন দোষ না থাকলেও সে দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। কেননা সে দোষ অস্বীকার করলেও তিনি তা মেনে নেবেন না এই ভয়ে অস্বীকার করলে তিনি সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থাকবেন, এই ভেবে সিলভিয়া ভেবেছিল যে তার চাইতে শাস্তি পাওয়া ভালো। আজ সকালে সিলভিয়ার স্কুলের হেডমিস্ট্রেস একটি চিঠিতে জানাল।

বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের কাগজপত্র চুরি যাচ্ছিল, তার কন্যা সিলভিয়ার বিরুদ্ধে একজন নালিশ জানায়। নানাভাবে প্রশ্ন করে তারা সিলভিয়াকেই চোর সন্দেহ করেন। অবশ্য চোরাই মাল সে কোথায় রেখেছে তা এখনও জানা যায়নি। জানি খবর শুনে আপনি মর্মাহত হবেন কিন্তু যে বালিকা চুরিতে হাত পাকিয়েছে তাকে বিদ্যালয়ে রাখা সম্ভব নয়। আপনি যদি এই চিঠি পেয়ে নিজে আসেন তারা এবিষেয়ে আপনার সাথে কথা বলতে পারেন।

সুপারিন্টেন্টে নিজেই গিয়ে বুঝেছিলেন সিলভিয়া নির্দোষ। তিনি অনেক চোর ডাকাত ঘেটেছেন। তিনি এটাও বুঝেছিলেন তারা প্রশ্ন করে মেয়েটাকে দোষ স্বীকার করিয়েছেন। তিনি তার মেয়েকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যদি দরকার হয় তারা পুলিসে খবর দিতে পারেন। তারা না দিলে তিনিই তা করবেন। সিলভিয়ার ক্রন্দনরতা মুখটির দিকে চেয়ে গাড়িতে যেতে যেতে তার বাবা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, সে দোষী না হলেও কেন দোষ স্বীকার করল।

আসলে শিশুরা ভয়ে তার দোষ স্বীকার করে।

.

১৯শে এপ্রিল

খেলা-টেলার খবর যারা রাখেন লেভিলকে না চেনার কথা তাদের নয়। সে একজন খেলোয়াড়। ফুটবল, ক্রিকেট, গল্ফ, সাঁতার ইত্যাদি যাবতীয় খেলায় সে পটু। তার সবচেয়ে বড় গুণ হারলেও তার মুখের হাসিটা ম্লান হয় না। তার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য হল তার স্ত্রীভাগ্য। তিনি খ্যাতিবান ও অর্থবান। লেভিলের বয়স এখন ৩৩, তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটেছে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী কো। এত কিছুর পরে তার মনে একটা অস্বস্তির কাটা বিধে আছে। সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল লেভিল।

কয়েকদিন আগে ফ্রান্স থেকে ফিরেছে তারা সস্ত্রীক।

কো বললো, তার বন্ধু শাটি তাকে সামনের জুনে নরওয়েতে যেতে লিখেছে কিন্তু সেপ্টেম্বরে যদি ক্যামিলিয়ার কাছে যাওয়া হয় তাহলে কি জুন মাসে যাওয়া সম্ভব হবে।

লেভিল বললো, এই তারা ফ্রান্স থেকে ফিরলেন। সেপ্টেম্বরে যদি ক্যামিলিয়ার কাছে যাই, তাহলে জুন মাসে যাওয়া সম্ভব হবে না।

কো বললেন ক্যামিলিয়া তার মায়ের মতন, স্যার ম্যাথু ট্রেসিলিয়ানের স্ত্রী তিনি। যার সাহায্যনা  পেলে তিনি জীবনে দাঁড়াতে পারতেন না। যিনি তার অবিভাবক ছিলেন। তিনি তাকে তার ছেলের মত মানুষ করছেন। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি তার বাড়ি গিয়ে থাকেন। এবারে যদি তিনি না যান তাহলে খারাপ দেখাবে। তাছাড়া তোমাকেও তিনি নিয়ে যেতে বলেছেন।

কোর বক্তব্য ভদ্রমহিলা মারা গেলে বিস্তর টাকা পাবে বলে যাওয়া উচিত। তাছাড়া টাকার উপর ক্যামিলিয়ার হাত নেই, এটা বোঝাল লেভিল। তিনি ভালোবাসেন বলে তার কাছে তারা যাবে। ম্যাথু তার মৃত্যুর সময় যে ব্যবস্থা করে গেছেন, সেই অনুযায়ী ক্যামিলিয়া তার জীবনদশায় সে টাকার সুদ পাবে। উইলে লেখা আছে ক্যামিলিয়ার মৃত্যুর পর এমনিতেই সেই টাকা স্ত্রীর কাছে চলে আসবে। ক্যামিলা সেই উইল পাল্টাতে পারেন না।

কো বললো তাকে ভালোবাসলেও কোকে তিনি ভালোবাসেন না। তিনি অড্রেকে ভালোবাসতেন। তার মতে গলাস পয়েন্টে সবাই তাকে ঘেন্নার চোখে দেখে। কো বললো যে, অড্রের প্রতি তার এখনও অস্বস্তি যায়নি। তার মনে হয় সে তার প্রতি অন্যায় করেছে। আসলে অড্রের কাছ থেকে লেভিল ডির্ভোস চায় কিন্তু সে মন থেকে তা দিতে না চাইলেও লেভিলের কথা ভেবে একবাক্যে তাকে ডিভোর্স করে দেয়। কেননা সে কো-কে ভালোবাসত। অড্রেকে নিয়ে কো একটু বিরক্ত। তার মনে হল লেভিল একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে। সে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ছুটি কাটাতে বেড়াতে যাচ্ছে এখানে প্রথম স্ত্রীকে ডাকার কোন প্রয়োজন আছে?

লেভিল বললো, তাকে যে ডাকা হল কারণ প্রতি বছর তাকে সেখানে ডাকা হয়। অড্রে প্রতিবারের মত এবারেও আসবে, কেন না তাতে প্রতিপন্ন হবে যে, লেভিলকে ভালো মনেই নিয়েছে। লেভিল বললো, অড্রের সঙ্গে সে বন্ধুত্বের মত সম্পর্ক রাখতে চায়। এইকথা শুনে কোর ভালো লাগলো না। লেভিল বললো যে, তার চিঠি পেয়ে সে খুশী হয়েছে। এটা ক্যামিলিয়াকে জানিয়ে দেওযা হোক সেপ্টেম্বরে তারা দুজনেই তার বাড়িতে উঠবে।

.

৩০শে এপ্রিল

লেভিলের চিঠি পেয়ে পাগল হয়েছে বলে সেই চিঠি সে তার ভগ্নীর দিকে ছুঁড়ে দিলেন, ক্যামিলিয়া মেরীর বয়স ছত্রিশ, কিন্তু সে তার মায়ের মৃত্যুর পর আর বিয়ে করেনি। মেরি তার পিসীমার কাছে আছে।

ক্যামিলয়া বললেন যে তাকে সেপ্টেম্বরে আসতে বলা হয়েছে বলেই কি ওকে আসতে হবে। তাও আবার প্রথম স্ত্রীর উপস্থিতিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে। প্রথম স্ত্রীকে সে ত্যাগ করেছে। বিনা অপরাধে।

মেরি বললেন এসব তার দ্বিতীয় পত্নীর দোষ। সে একজন স্ত্রীকে ত্যাগ করতে সাহায্য করেছে আবার সেই স্ত্রীকে মুখের উপর অপমান করতে চায়।

মেরী জানাল একজন ভদ্রলোক তাদের সঙ্গে আসছে। এটা শুনে তিনি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন বিয়ের আগে কোর পেছনে ঘুরত সে এখনও তার পেছন ছাড়েনি। নেহাত লেভিলের মত ভদ্র ছেলে বলে এসব করছে।

মেরীর বক্তব্য সে আসতে চাইলে তাকে বারণ করা যায় না। তাছাড়া সে হোটেলে থাকবে। তাই শুনে ক্যামিলিয়া বললেন, তিনি আর কাউকে নেমন্তন্ন করবেন না। তিনি লেভিলের কথা বললেন বেহায়া একটা মেয়ের পাল্লায় পড়ে যে অড্রের মত বউকে ত্যাগ করতে পারেন, তার মুখ তিনি দেখতে চান না।

লেভি ট্রেসিলিয়ানের সামনে জানালা তার সামনে হোটেল, সেখানে হৈচৈ হল্লা, এই নিভৃত সুন্দর প্রাচীর পরিবেশে এই বাড়িটা মোটেও খাপ খায় না। বাড়িটা একটা ভয়ঙ্কর ইন্দ্রপতনের মত। ক্যামিলিয়া বললেন তিনি কি লেভিলকে আসতে নিষেধ করে দেবেন।

অড্রে আসতে মেরী বললেন যে অড্রের নাকি এতে আপত্তি নেই। লেভিদের সঙ্গে তার এই ব্যাপারে কথা হয়েছে। কো এখানে এলে নাকি খুশিই হবে।

আসলে লেভিল অড্রেকে ত্যাগ করে অস্বস্তিতে আছে। সে তার বিবেক দংশনে ভুগছে। সে তার ক্ষমতা পেতে চায়। তাই ইচ্ছে করেই এমন সময় আসছে যখন কিনা অড্রে এখানে থাকবে।

মেরী বললো, এগুলো আসলে কোর কারসাজি। সে অড্রেকে দগ্ধে মারতে চায়।

লেভি ট্রেসিলিয়ান বললেন বিয়ের পরে যারা পুরুষ বন্ধু নিয়ে ঘুরে বেড়ায়; তাদের পক্ষে সবই সম্ভব। এরজন্য লেভিলকে পস্তাতে হবে।

.

২৯শে মে

মালয়ীচাকরটা সব বাঁধাছাদা করে দিচ্ছে, টমাস রয়েড সেদিকে তাকিয়ে বসে ছিল। সে ইংল্যাণ্ডে যাবে। অ্যালেন ট্রেক তার বাংলোয় এসে ঢুকল। টমাসের দিকে তাকিয়ে বললো যাচ্ছ তাহলে। টমাস সাত বছর পর তার দেশে যাচ্ছে। সে কারো সাথে কথা বলে না, চাপা স্বভাবের। গতবার তার এক দাদার মৃত্যু হলেও সে দেশে যায়নি, যার সঙ্গে তার প্রকৃতিগত মিল ছিল না। তার মা বেঁচে আছেন। টমাসের কোন বোন নেই। দূর সম্পর্কের আত্মীয়া আছে, বাবা মা মারা যেতে তার বাড়িতেই মানুষ হয়েছিল। যার স্বামী ছিলেন লেভিল, যিনি বিখ্যাত খেলোয়াড় তিনি সেপ্টেম্বরে মাসে ক্রীনে যেতে চান, তিনি ওখানে এক পরিচিতা মহিলার সঙ্গে দেখা করবেন। অ্যালেন তাকে ব্যলমোরান কোর্টে থাকার পরামর্শ দিল।

.

২৯শে জুন

বৃদ্ধ সলিসিটার মিঃ ট্রিভসকে ব্যারিস্টার রুফার্স লর্ড ব্যালমোরাল কোর্টে থাকতে বললেন। যেখানে রজাম নামে এক ব্যক্তির বউ রান্নার কাজ করে, যা অত্যন্ত উপাদেয়।

রুফার্স লর্ড বললেন, সেপ্টেম্বর মাসে হোটেলে ঘর মিলবে এ আশ্বাস দিলেন। ভদ্রলোক নিজের শরীর সারাতে ওখানে যাবেন। সেখানে গেলে পুরনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হবে। স্যর ম্যাথুর বিধবা স্ত্রী এখন সেখানে থাকেন। এবারে গিয়ে লেভি ট্রেসিলিয়ানের সঙ্গে দেখা করা হবে। তিনি তো তার বন্ধুর বাড়িতে থাকতে পারতেন! লেভি ট্রেসিলিয়ান যদি জানতে পারেন যে তিনি সস্ত্রীক এখানে আছে তাহলে মাঝে মাঝে ওখানে নেমন্তন্ন করে খাওয়াবেন। রজাসক ট্রিভস বললেন যে, তার জন্য যেন ব্যালমোরাল কোর্টে ঘর ভাড়া করা হয়।

.

২৮শে জুলাই

কো ও ট্রেড খেলা দেখছিল। মেরীক আর লেভিলের সেমি ফাইনাল খেলা। মেরীক তরুণ। কে জিতবে এই খেলায় বলা শক্ত। তিন সেটের খেলা। প্রথম দুটি সেটের একটি জিতেছে লেভিল। অন্যটি মেরীক। এখন তৃতীয় সেটের খেলা চলছে হঠাৎ ট্রেড নামক বন্ধুর প্রবেশ ঘটল। যে তার কুমারী জীবনের বন্ধু।

ওদিকে দুজনের খেলাই জমে উঠছে। শেষ পর্যন্ত সেট হারল লেভিল, জিতল মেরীক, লেভিল হারার পরে কোকে জড়িয়ে ধরল। সে সত্যিই যে একজন খেলোয়াড় তাই তার প্রমাণ। খেলা সেরে লেভিল তার স্ত্রীকে ট্রেডের কথা জিজ্ঞাসা করল।

কো বললো, ট্রেড-কে সে হিংসে করে, ট্রেড কি তাকে হিংসা করে না? কেননা সে মনে করে তিনি তার স্বামী, এককালে তার সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সম্পর্কে ছিল, কিন্তু আজও সে তার বন্ধু।

.

১০ই আগস্ট

লর্ড কর্নেলকে যারা চেনেন তারা বললেন, লোকটি ভালো কিন্তু খামখেয়ালী, তবে তিনি আদর্শবাদী। এহেন মানুষটি অফিস কামরায় বসেছিলেন। তিনি ভাবছিলেন দক্ষিণ আমেরিকায় তার ব্যবসা দেখাশুনা করার জন্য একজন লোক দরকার। সেক্রেটারী একটা স্লিপ রাখল। মার্ক হোয়াটার নামের একজন ব্যক্তি। তিনি এই নামে কাউকে চেনেন না।

একটু বাদে মার্কহোয়াটার ঘরে ঢুকলেন। তাকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন কর্নেল। জিজ্ঞাসা করলেন তিনি কি হার্বাট ক্লে কারখানায় কাজ করতেন, সে সম্মতি জানাল।

সে বললো সে মিথ্যে সাক্ষ্য দেয়নি বলে তার চাকরী গেছে। সে মিথ্যা কথা বললো।

লর্ড কর্নেল বলেন, যে তার একটা ব্যবসা আছে। দক্ষিণ আমেরিকায়, সেখানে তিনি তার ম্যানেজার করে তাকে পাঠাতে চান, অতঃপর কিছু কথাবার্তা হল এবং তারপর কর্নেল চলে গেলেন। মার্ক হোয়াটারের পকেটে তখন নতুন চাকরীর কাগজপত্র; ব্যাপারটা তার কাছে স্বপ্নের মত ঘটে গেল। সে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে যাবে বলে কথা দিল। তার শরীর এখনও সুস্থ হয়নি। সে সেপ্টেম্বরে কোন নির্জন জায়গায় গিয়ে বিশ্রাম নেবে। লর্ড কর্নেল তাকে কিছু টাকা দিলেন। সে কোথায় যাবে এখনও ঠিক করতে পারলো না।

.

১৯শে আগস্ট

সুপারিটেণ্ডেন্ট ব্যাটেল বললেন, ব্যস ছুটির বারোটা বেজে গেল। তিনি ভাবছিলেন মাস খানেকের ছুটি নিয়ে কোথাও যাবেন কিন্তু দপ্তরে কি চুরি ধরা পড়েছে, তার তদন্তের জন্য তার যাওয়া হবে না। তার স্ত্রী এটা শুনে বললেন, সেপ্টেম্বর না হয় অক্টোবর মাসে যাবে। তার ঘর বুক করা আছে। তাই তিনি বললেন তার স্ত্রী বেন, ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে যায়। তার তদন্তের কাজটা তাড়াতাড়ি চুকে গেলে তিনি হপ্তাখানেকের জন্য ওয়াশিংটন থেকে বেড়িয়ে আসবেন তার সাথে জিমের দেখা হবে। জিমের পুরো নাম জেমস্ লীচ। এটা পছন্দ না হলেও মিসেস ব্যাটল করতে রাজী হলেন।

.

০৩.

৩.১

সলাটিংটন স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে টমাস লয়েডের জন্য অপেক্ষা করছিল মেরী। টমাস নামার পর তার সাথে মেরীর দেখা হল। ওরা দুজন ছোটবেলার বন্ধু, তাদের মধ্যে পত্রবিনিময় হয়।

টমাস বললো যে, সে হোটেলে থাকবে। মেরী তাকে তার পিসীমার বাড়ি রাখতে চায়। মেরীর কথামত টমাস বসল গাড়িতে মেরী গাড়ি স্টার্ট দিল। মেরী বললো, সলাটিংটন থেকে সল্টীক মাত্র সাত মাইল। একটু বাদেই আমরা সেখানে পৌঁছে যাব। পিসীমা তোমাকে দেখলে খুশী হবেন। পিসীমার বাড়ির নাম গাল পয়েন্ট। মেরী জানাল তার বাড়িতে একটা অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটেছে। লেভিলের সঙ্গে অড্রের বিচ্ছেদ ঘটেছে, প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে তারা ছুটি কাটাতে আসত। এবার দুজনকে পিসিমা নিমন্ত্রণ করেছেন। কিন্তু লেভিল তার দ্বিতীয়া পত্নীকে নিয়ে আসছেন। এটাতেই অশান্তিজনক অবস্থা তৈরী হয়েছে।

টমাস বললো যে, লেভিল কি জানত যে অড্রে আসবে। পিসীমা তার চিঠিতে লেভিলকে জানিয়েছিলেন। টমাস একথা শুনে খুব আশ্চর্য হল।

মেরী বললো, আশ্চর্য বলে আশ্চর্য। এখন আর একটা ফ্যাশন হয়েছে নতুন বউয়ের সঙ্গে পুরানো বউয়ের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছে না। একটা থমথমে আবহাওয়া সৃষ্টি হবে। এইসময় যদি একজন বাইরের লোক থাকে তবে সবাই স্বাভাবিক ভাবে চলবে।

টমাস অড্রের কথা জিজ্ঞাসা করল। অড্রেকে এককালীন ভালোবাসত টমাস। কিন্তু সেকথা সে মুখ ফুটে বলতে পারেনি। অড্রের সঙ্গে লেভিলের বিচ্ছেদের কথা ভেবে সে ইংল্যাণ্ড ছেড়ে মালয়ে চলে গেছিল। এতদিন বাদে সেকি অড্রের বিচ্ছেদের কথা শুনে চলে এল? এটা ভাবছিল মেরী।

গালস পয়েন্টে গাড়ি ঢুকল। লন পেরিয়ে বাড়ি, প্রথমে ড্রইংরুম। ড্রইংরুম পেরিয়ে ওদিকে বারান্দায় গিয়ে পৌঁছাল টমাস। দেখা হল অড্রের সঙ্গে, সে ভীষণ রোগা হয়ে গেছে। তার চোখ দুটি উজ্জ্বল।

টমাসকে অড্রে দেখতে পায়নি। অড্রের পাশে একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটি কি অড্রের সপত্নী? একজন ঠাণ্ডা অপরজন উগ্র; খুব আকস্মিক ভাবেই তুলনা করা যায়। ওদিক থেকে লেভিল বারান্দায় ঢুকল। তার হাতে একটা পত্রিকা। সেও দেখতে পায়নি টমাসকে। এগিয়ে এসে সে বললো, একটাই মাত্র কাগজ ছিল। তা সেইটিই নিয়ে এলাম। পরমুহূর্তে দুটি ঘটনা ঘটল। কো বললে দাও। আর অড্রেও হঠাৎ মুখ না তুলে হাত বাড়িয়ে দিল লেভিলের দিকে। লেভিল বুঝতে পারছিল না কাগজটা কাকে দেবে। হঠাৎ তীব্র গলায় কো বলে উঠল কাগজটা তাকে দেওয়া হোক। অড্রে বললো যে, সে বুঝতে পারেনি। টমাস দেখতে পাচ্ছিল লেভিলের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে। সে ঘরে যাবার সময় ধাক্কা খেল টমাসের সাথে। টমাস দেখল তার চোখে অশ্রুপ্লাবিত। লেভি ট্রেসিলিয়ানকে বললেন সব লেভিলের কাণ্ড, তাকে আসতে বললেন, তিনি তার নতুন বউকে নিয়ে এসেছেন এবং এই নিয়ে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

টমাস বললো, এতে অড্রের সম্মতি ছিল।

টমাসকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনিও অড্রেকে ভালোবাসতেন কি?

তিনি বললেন, যে এখনও বাসেন। টমাস অড্রেকে বিয়ের প্রস্তাব করবেন বলেই এখানে এসেছেন।

মিসেস স্পাইসারকে নিরিবিলিতে পেয়ে বুড়ো বাৰ্টলার হার্টল তার মনের কথাটা খুলে বললেন। সবাই কথাবার্তা বলছেন কিন্তু কেউ কারো মনের কথা খুলে বলছেন না।

হার্টল বুড়ো বাৰ্টলার বললেন এরকম কখনো হয়, দুটি বর্তনের মধ্যে কখনো ভাবসাব হয়।

খাবার ঘরে সবাই বসেছিল। মেরী টমাস, লেভিল, কো আর অড্রে। অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

কো’র উদ্দেশ্যে মেরী বললো, আজ সকালে নদীর ওপারে গেছিলাম। সেখানে তোমার বন্ধু মিঃ ল্যাটিমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কাল রাত্রিতে তাকে এখানে খেতে বলেছি।

কো বললো, তার সঙ্গেও ট্রেডের দেখা হয়েছে। ট্রেড ইটার হেড হোটেলে উঠেছে।

লেভিল বললো, সে একটু হোটেল থেকে ঘুরে আসবে। আচ্ছা মেরী নদী পারের জন্য আজকাল খেয়া পারাপার ব্যবস্থা হয়েছে। তাই না?

মেরী জানাল ভোর থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত খেয়া পারাপার করা যায়। লেভিল বললো, সবাই মিলে একদিন নদীপার হয়ে ট্রেডের হোটেলে যাবো।

টমাস অড্রেকে জিজ্ঞাসা করলো আজকাল কি আর তুমি পিয়ানো বাজাও না?

অড্রে বললে, ভালো লাগে না।

টমাস বললো, এককালে তুমি চমৎকার পিয়ানো বাজাতে।

অড্রে বললো, পিয়ানো ছেড়ে দিয়েছি।

লেভিল বললো, পিয়ানো ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

কো বললো, তুমি কবে থেকে আবার পিয়ানোর সমজদার হলে লেভিল?

লেভিল বললো, অড্রের হাত তো খুব ছোট। অত ছোট হাত দিয়ে অর্কেস্ট্রাকে ধরা খুব সুবিধে নয়।

অড্রে বললো, তার কড়ে আঙ্গুল খুব লম্বা।

কো বললো, যার কড়ে আঙ্গুল খুব লম্বা হয় তারা স্বার্থপর হয়। নানারকম আলোচনা হল কড়ে আঙ্গুল নিয়ে।

মেরী বললো, কো কি হাত দেখতে পারে?

এক জ্যোতিষী বলেছিল তাকে যে, তার অনেক ছেলেমেয়ে হবে। কিন্তু এখনো তার বিয়েই হয়নি। সে অনেক দূরদেশ যাবে একথা ঠিক হলো? ছত্রিশ বছর বয়সেও সে ইংল্যাণ্ড ছেড়ে কোথাও যায়নি। টমাসের এই কথাগুলো একটু করুণ শোনাল। টমাস তাকে আশা দিল। মেরী হেসে বললো, ছুটির শেষে তুমি কি আমাকে মালয়ে নিয়ে যাবে। একথায় লজ্জা পেল টমাস। সবাই হাসছিল টমাসের কথায়। একজন সলিসিটর ট্রিভস আজ রাতে এখানে খাবেন। বুড়ো মানুষ আড্ডাবাজ।

কো বললো, সে বুড়োদের সঙ্গে মেশে না।

.

৩.২

একটু আগে ডিনারের পালা শেষ হয়েছে। প্রশস্ত ড্রইংরুমে এসে জড়ো হয়েছে সবাই। মিঃ ট্রিভস তাদের সঙ্গে জড়ো হয়েছেন। গানবাজনা চলছিল। মিঃ ট্রিভস ভাবলেন যৌবনের মতন সময় আর হয় না। মেরী বললো, একটু ব্রীজ খেলা যাক; বেশিক্ষণ হয়তো খেলা যাবে না কারণ পিসীমা ডাকবেন। তিনি এখন আর নীচে নামেন না।

কথায় ছেদ পড়ল। কো তার নাচের সঙ্গী করে নিল ল্যাটিমারকে। লেভিল জিজ্ঞেস করল অড্রেকে, তার সাথে সে নাচবে না কি? অড্রে নাচতে রাজী হলো। সে জানতো লেভিলের সঙ্গে যদি নাচতে রাজী না হয় তাহলে সেটা ভারী বিশ্রী হবে। লেভিলের হাতে হাত মিলিয়ে পা মিলিয়ে সে এগিয়ে এল।

মিঃ ট্রিভস সব দেখলেন, তিনি ভাবছিলেন বিগত যৌবনের কথা। তার আনন্দ আর যন্ত্রণার কথা। অড্রে লেভিলের বাহুবদ্ধ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন। তিনি একটু অস্বস্তিভাবে বললেন তার নাচতে ভালো লাগছিল না। তিনি ঘর ছেড়ে বারান্দায় চলে গেলেন। টমাসকে তার কাছে যেতে বলছিল ট্রিভস।

মেরী বললেন, টমাসকে বলা হয়েছে অড্রেকে বিয়ে করার জন্যে। মিঃ ট্রিভসকে তিনি সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

মিঃ ট্রিভস বললেন মানুষের চেহারা দেখে চরিত্রের আন্দাজ করা হয়। এটা তিনি পারেন। আরও কিছু বলার আগে কফি এসে গেল। মেরী অড্রেকে বারান্দায় কফি দিয়ে আসলেন।

অড্রের সঙ্গে লেভিল বারান্দায় ছিল, মেরী চা নিয়ে যেতে তাদের দেখতে পেলেন। অড্রের চুলের সঙ্গে লেভিলের কোর্টের হাতার বোতাম আটকে গেছিল। তারা ছাড়াবার চেষ্টা করছিলেন। তাতে অড্রের একটু কষ্ট হয়েছিল। মিঃ ট্রিভস দেখতে পেলেন অড্রে কাঁপছে। ট্রিভস মেরীর অলক্ষ্যে তাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল। সে ছাড়িয়ে দিতে চাইলে লেভিল বললো, সে ছাড়িয়ে নিতে পেরেছে। অড্রে শীতে কাঁপছিল মেরী তার কফিটা নিয়ে এলো।

.

৩.৩

মিঃ ট্রিভসকে দেখে ট্রেসিলিয়ান খুশী হলো, তাদের পুরানো দিনের কথা নিয়ে গল্প হলো। তারা অতীত দিন থেকে বর্তমানে পৌঁছালেন। প্রেম নিয়েই কথা হচ্ছিল। আগে জীবনে যাই থাক সুখ ছিল, শান্তি ছিল। অথচ একালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালোবাসা একটা নেশা ছাড়া কিছু নয়। তাও চোখের নেশা; যদি তাই না হবে তাহলে অড্রেকে ছেড়ে কো-কে কেন লেভিল বিয়ে করল?

তাদের বাড়িতে একটা ক্রিকোণ প্রেমের সৃষ্টি হয়েছে। আচ্ছা মিঃ ট্রিভস এটি দেখে আপনার কি মনে হয়?

তার মতে উভয়ই সুন্দরী। তাহলে কেন তাকে ছেড়ে দিল। মেরী বললো, দ্বিতীয় পত্নীকে নিয়েই যে খুশী থাকবে তার কি মানে?

ট্রিভস বললো, দ্বিতীয় পত্নীকে ছেড়ে দিয়ে প্রথম পত্নীর কাছে ফিরে যাওয়ার ঘটনা সে অনেক দেখেছে।

ট্রেসিলিয়ান বললে এটা তার ক্ষেত্রে ঘটবে না। কারণ অড্রে খুব অভিমানী মেয়ে তার স্বামী তার ভালবাসার সম্মান দেয়নি। লেভিল যদি অড্রের কাছে ফিরে আসতে চায় সে রাজী হবে না। অড্রে দুঃখ জ্বালায় মরে গেলেও কাউকে সে কথা জানাতে চায় না। ও দেখাতে চায় লেভিলকে ছাড়া ও বাঁচতে পারে। না আসলে এটা অভিমানের ব্যাপার। ট্রিভস মনে করেন এমন হতে পারে সেই ছেলেটিকে আবার কাছে টানতে চাইছে।

লেভি ট্রেসিলিয়ান বললেন তাহলে এটা একটা বিশ্রী ব্যাপার হবে। তিনি চান অড্রে এখান থেকে চলে যাক। কিন্তু এটা সম্ভব নয়; এক্ষেত্রে লেভিলের এখান থেকে বিদায় নেওয়া উচিত, তিনি মনে করেন।

ট্রেসিলিয়ান মিঃ ট্রিভসকে বললেন যেন তিনি সময় পেলেই চলে আসেন। যদি কিছু না মনে করেন তাহলে ঘণ্টির দড়ি টেনে দিয়ে যাবেন। এটি মাদামের ইলেকট্রিক কলিংবেলের বদলে করা হয়েছে। ঘন্টি আছে উপরতলায় ব্যারেটের ঘরে। সেখান থেকে দড়ি টানলেই সেটা বেজে ওঠে।

মিঃ ট্রিভসকে দেখে মেরী অলিডন প্রস্তাব করলেন একরাউণ্ড ব্রিজ খেলা যাক। ট্রিভস হোটেলে ফিরতে চাইলেন। লেভিল বললেন সবে তো দশটা বাজে। আসলে এই হোটেল রাত বারোটায় কাজ হয়।

কো বললো, ট্রেড তুমি ইচ্ছে করলে ব্যালমোরাল কোর্টে আসতে পার। ট্রেড বললো, অত তাড়াতাড়ি তার পক্ষে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়।

মেরী বললো, ট্রিভস দেখেছেন কি, খুনের মামলায় একজন নাকি গ্রেপ্তার হয়েছে?

ট্রিভস বললো, কারো বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া না গেলেও আর আজকাল নিশ্চিন্ত হবার উপায় নেই। কে খুনী নয়, আমি নিজেই এমন একজনকে জানি যে কিনা শিশু হত্যার অপরাধী। কিন্তু আদালত তাকে শাস্তি দিতে পারেনি। জনকয়েক সাথী জুটিয়ে এমন একটা অ্যালিবাই সে দাঁড় করিয়ে দিলে, কিছুতেই তাকে মিথ্যা প্রমাণ করা গেল না। ফলে প্রমাণের অভাবে সে ছাড়া পেয়ে গেল। ভদ্রসমাজে দিব্যি সে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে।

টমাস প্রশ্ন করল, অথচ আপনি জানেন সে হত্যাকারী?

বিলক্ষণ।

তাহলে আপনি তাকে নিজের হাতে শাস্তি দেননি কেন? দেইনি কারণ আইনকে আমি নিজের হাতে তুলে নিতে পারি না।

সে হলে পারত টমস রাইভ বললো। যদি অপরাধ সম্পর্কে নিঃসন্দেহে হতেন তাহলে যে স্রেফ প্রমাণের অভাবে আদালত তাকে শাস্তি দিতে পারছে না, তাহলে শাস্তি দেবার ভার আমি নিজের হাতে তুলে নিতুম।

ট্রিভস বললেন, এটা ঠিক নয়। বিশৃঙ্খলা তাতে বেড়ে যায়। আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়া অন্যায়।

টমাস বললেন, স্রেফ প্রমাণের অভাবে খুনী ছাড়া পেলে তাকে তিনি হত্যা করতেন। ট্রিভস বললেন তার ফলে পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করবে।

টমাস বললো, ন্যায় বিচারের স্বার্থে যদি সে হত্যা করে তাহলে সে প্রমাণ সোপ করে দেবে।

খানিকবাদে ট্রিভস একটা গল্প বললেন, তীর ধনুক নিয়ে দুটি অল্পবয়সী শিশু একদিন খেলা করছিল। তাদের মধ্যে একজনের তীর হঠাৎ অন্যশিশুর বুকে বিধে যায় এবং সে তার ফলে মারা যায়। এ নিয়ে তদন্ত হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত রায় দেওয়া হয়েছিল এটা দুর্ঘটনার ব্যাপার। কেননা খেলতে খেলতে এমন দুর্ঘটনা হতেই পারে।

মেরী মন্তব্য করল যে, যতই মর্মান্তিক হোক এরজন্য শিশুটিকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু এটা যদি দুর্ঘটনা না হয়। কেননা দিনকয়েক পরে সেখানে গিয়ে (ওই দুর্ঘটনার স্থলে) দেখলো এটা সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একটা শিশু অন্য একটা শিশুকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সে তারজন্য তীরধনুক নিয়ে দিবারাত্র প্র্যাকটিস করতো।

মিঃ ট্রিভস বিদায় নিলেন। টমাস তার সঙ্গে গেল। কো, মেরী বিদায় নিল। লেভিল উঠে দাঁড়াল। সে বারান্দায় গিয়ে বসতে চাইল, লেভিল বারান্দায় ঘুরতে গেল। ট্রেড বললো যে, ভোরের দিকে হোটেলে সে একসঙ্গে যেতে চায় ট্রিভসের সাথে। তাই সে কতগুলি রেকর্ড কো কে দেওয়ার জন্য গুছিয়ে রাখছে।

ট্রিভস টমাসকে বললো যে, মিঃ ট্রেড-এর বন্ধু অত্যন্ত ছটফটে।

অড্রের কথায় টমাস বললো যে, তার মত শান্ত মেয়ের পক্ষে তাকে বন্ধু করা সম্ভব নয়। অড্রে তার সঙ্গে ছেলেবেলায় একসঙ্গে মানুষ হয়েছে। টমাস জানাল যে অড্রের সৌজন্যের খাতিরে সে এখানে এসেছে।

ট্রিভস বললেন অড্রে আসবে জেনে লেভিল নিজের থেকে এখানে আসতে চেয়েছিল এর কারণ অড্রের সঙ্গে দেখা করা তার উদ্দেশ্য ছিল। ভাঙ্গা মন কি কখনও জোড়া লাগে।

লেভিল ট্রেডল্যাটিমার ঘরে ঢুকল। ট্রেডের হাতে রেকর্ড ছিল, টমাস বেরিয়ে গেল। লেভিল বললো, টমাস খুব চাপা স্বভাবে, মানুষ। ট্রেড ল্যাটিমাকে সঙ্গে নিয়ে ড্রইংরুম থেকে চত্বরে নেমে এলেন। লেভি ট্রেসিলিয়ানের বাড়ি থেকে ব্যালমোরাল কোর্টের দূরত্ব কম, ট্রেড যাবে ফেরীঘাটে, সে নদী পার হয়ে ইটারহেড হোটেলে যাবে।

ব্যালমোরাল কোর্টে গিয়ে নেমে পড়লেন ট্রিভস, ট্রেড ল্যাটিমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। তিনি বললেন যতদিন না একঘেয়ে লাগে ততদিন নিশ্চয়ই তিনি এখানে থাকবেন।

ফেরীঘাট থেকে টমাস আসলেন। তিনি বললেন, রাত্রিতে খাবার পর পায়চারি না করলে তার ঘুম আসে না। তিনি হাঁটতে হাঁটতে ফেরীঘাটে গেছিলেন। এবার ফিরে শুয়ে পড়বেন। হোটেলের দরজা দিয়ে লিফটের সামনে এলেন। লিফটের সামনে নোটিশ ঝুলছে।

লিফটটা বিকল হয়ে গেছে। মিঃ ট্রিভস বললেন তাকে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হবে। টমাস বললেন তার সিঁড়ি ভাঙ্গা উচিত নয় কিন্তু উপায় তো নেই। সিঁড়ি দিয়ে রাস্তায় ট্রিভস বেরিয়ে গেলেন। টমাসও রাস্তায় বেরিয়ে গেল। দুজনে দুদিকে যাবে। টমাস গাল পয়েন্টের দিকে যাবে আর ট্রেড ফেরীঘাটের দিকে যাবে।

মেরী বললো, ঠিক যেন গ্রীষ্মকাল। মেরী আর অড্রে ইটারহেড হোটেলের সামনে বসেছিলো। ওপারে গালস পয়েন্ট লেভি ট্রেসিলিয়ানের বাড়ি। কো জলে নামল না। সে মেরীর পাশে এসে বসল, বললো ভীষণ ঠাণ্ডা। ট্রেড ল্যাটিমার তার পিছনে এসে দাঁড়াল, সে জলে নামবে না। কো বললো যে, সে জলে নামে না খালি পাড়ে বসে রোদ পোহায়। কো ট্রেডের সঙ্গে ঘুরতে চাইল। তারা চলে যেতে মেরী বললো যে দুটোকে বেশ মানায়। কিন্তু কেন যে লেভিল তাদের মধ্যে এল। অড্রের মতে তাদের মানিয়েছে। অড্রের কথা শুনে মেরী মনে করল সে নিজেকে সান্ত্বনা দেবার জন্যই এই কথাটা বলছে। অড্রের আগে লেভিলের জন্য কষ্ট হত এখন আর হয় না। অড্রে গরম কাপড় পরার জন্য ভেতরে গেল।

মেরী বসে ভাবছিল। ট্রেড হঠাৎ ফিরে এসে তার পেছনে দাঁড়িয়েছেন সে এসে কো-র কথা জিজ্ঞেস করল। মেরীর মনে হল কো-কে লেভিল বিয়ে করেছে দেখে ট্রেডের মনে কোন দুঃখ আছে। ট্রেডের হয়তো এ জায়গাটা ভালো লাগছে না। ট্রেড আসলে কোর বন্ধু বলে তাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। আসলে পাছে কো কিছু মনে করে তাই তাকে কাছে টানা হয়েছে। মেরীর ভীষণ খারাপ লাগছিল। তার নিজের জন্য নয়, ট্রেডের জন্য তার সমবেদনা জাগছিল।

ট্রেড তাকে জানাল যে, তাকে কো ভালোবাসত কিন্তু তা লেভিলকে দেখার আগে। তারপরও সে ভালোবাসে কো-কে। মেরী তাকে এখান থেকে চলে যেতে বললো। কেননা চলে না গেলে দুঃখের বোঝা আরও বাড়বে। ট্রেড শুনে বললো যে, তাকে তিনি চেনেন না। নীরবে নতমুখে সব কিছুকে মেনে নেওয়া তার স্বভাব নয়। খুব শিগগির হয়তো নতুন কিছু ঘটতে পারে। মেরী তার কথা বুঝতে পারল না। ট্রেড তাকে অপেক্ষা করতে বললো।

.

৩.৪

ইটারহেড হোটেলের সামনে বেলাভূমির উপর টমাস রয়েড বসে ছিল। একটু আগে মেরী আর ট্রেন্ড সেখানে বসে গল্প করছিল। অড্রে এসে টমাসের পাশে বসল। তাদের মধ্যে প্রথম অড্রেই কথা বললো। সে জিজ্ঞাসা করল গালস পয়েন্ট এখান থেকে কত কাছে?

অড্রে সাঁতরে পার হতে চেয়েছিল। অড্রে জানালা দিয়ে দেখেছে স্রোতের ওদিকে পাহাড় থেকে একটা লোক ঝাঁপ দিয়ে মরতে চেয়েছিল। কিন্তু মরতে পারেনি। গাছের ডালে আটকে গেছিল। কাগজে সেইরকম পড়েছে। মানুষ কেন আত্মহত্যা করে এই প্রশ্নে অড্রে জানাল যে বাঁচতে ভালো লাগে না।

টমাস অড্রের দিকে তাকাল। চুপচাপ সে অড্রেকে দেখছিল। তার সৌন্দৰ্য্য এখনও ম্লান হয়নি। আসলে অড্রের চেহারায় এমন ম্লান বিষণ্ণতা আছে যে তাকে সুন্দর দেখায়। উচ্ছ্বসিত সৌন্দর্য্যের থেকে যার আকর্ষণ বেশী। অড্রের কানবালাটা টমাস কুড়িয়ে পেয়েছিল। সেটা তাকে দিল। তার কানে একটা খুঁত আছে বলে বোধহয় সে অতবড় কানলাবাটা পড়ে। সে আসলে সব ব্যাপারেই নিখুঁত। পোশাকে, কথায়, আবরণে। অড্রে মনে করে কো-র চেহারা তার থেকে সুন্দর। টমাস বললো, সে তো বাইরে।

অড্রে বললো যে, সে তাকে ভালোবাসত বলে বিয়ে করেছিল।

অড্রে বললো, তার কোন সুখ নেই।

তোমাকে বাঁচতে হবে অড্রে। সেই জন্যই সামনের দিকে তাকাতে হবে।

টমাসকে সে বললো, লেভিলকে সে কি ঈর্ষা করে?

টমাস বললো, হা করে, সে তাকে ভালোবাসত এবং বিয়ে হল তার লেভিলের সাথে। এক্ষেত্রে ঈর্ষা যদি না করে তাহলে অস্বাভাবিক ব্যাপার হত।

অড্রে বললো যে, সে তার ভালোবাসার যোগ্য নয়। সে এখন বদলে গেছে।

টিলার ধারে উবু হয়ে লেভিল কি করছিল। অড্রে উঠে সেখানে যেতে তার সাথে লেভিলের দেখা হল।

অড্রে বললো, তার বউ তাকে ডাকছে।

লেভিল বললো, বউ বলতে সে তাকেই বোঝে।

.

৩.৫

গালস পয়েন্টে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। মেরী উপরে গেল। পিসীমা জানালেন মিঃ ট্রিভস মারা গেছেন।

মেরী বললো, কখন?

পিসীমা বললেন, তিনি কাল রাত্রিতে মারা গেছেন। তিনি তেমন কিছু খাননি। রান্না সাদামাটা হয়েছিল। মিসেস রজার্সকে গিয়ে জিজ্ঞেসা করেন যে কিছু করতে হবে কিনা। কারণ তিনি এবং তার পিসেমশাই খুব বন্ধু ছিল।

মেরী তার পিসীমার কথা শুনে লেভিল ও টমাসকে জানালেন। তারা এ খবরে চমকে উঠল। টমাসের মতে রাত্রিতে লিফট খারাপ থাকায় তিনি হার্টের রুগী সিঁড়ি বাইতে পারেননি, যার জন্য তার মৃত্যু হয়।

মেরী টমাসকে নিয়ে ব্যালমোরাল কোর্টে ঢুকতে গেলেন। সেখানে হোটেলের কত্রী রজার্স হোটেলের চত্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার সঙ্গে স্থানীয় ডাক্তার ল্যাজনবি দাঁড়িয়ে ছিলেন।

মেরী বললেন, তিনি গালস পয়েন্ট থেকে আসছেন। মিঃ ট্রিভস তার পারিবারিক বন্ধু ছিলেন। মিসেস রজার্স তাদের ভেতরে যেতে বললেন।

ডাক্তার তাদের জিজ্ঞাসা করলেন মিঃ ট্রিভস গতরাতে কেমন ছিলেন।

মেরী বললেন তিনি হঠাৎ এভাবে মারা যাবেন এটা কেউ বুঝতে পারেননি।

ল্যাজনবি বললেন, তার ঘরের প্রেসক্রিপশন দেখে মনে হয় তার হার্ট খুব দূর্বল ছিল।

মিসেস রজার্স বললেন তিনি সবসময়েই সতর্ক থাকতেন, পরিশ্রমের কাজ করতেন না।

ডাক্তারকে জানান হলো যে, মিঃ ট্রিভস রাতে অনেক সিঁড়ি ভেঙ্গেছেন তার জন্য তার হার্ট অ্যাটাকে হয়তো মৃত্যু হয়েছে কেননা যা তার হার্টের পক্ষে ভালো ছিল না।

ডাক্তারকে রজার্স বললেন লিফট ভালোই আছে।

রজার্স টমাসকে বললেন যে লিফট রাত্রিতে চালু ছিল না। তিনি আর মিঃ ল্যাটিমার তার সাক্ষী। কাল রাত্রিতে হোটেলের চত্বরে ট্রিভসের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। সেখানে লিফট বিকল হওয়ায় একটা নোটিশ ঝোলানো ছিল, তাই তাকে সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে হয়েছিল।

মিঃ রজার্স বললেন যে লিফট খারাপ হলে তাদের নোটিশ দিয়ে জানানো হয়। কিন্তু নোটিশ তো লাগানো হয়নি, যদি কেউ লাগিয়ে থাকে তাহলে সে খুলে নিল কেন? কেননা তিনি সকালে উঠে নোটিশ দেখতে পাননি।

ডঃ ল্যাজনবি বললো, মজা করার জন্য কেউ হয়তো টাঙ্গিয়ে রেখেছিল, তারপর আবার খুলে নিয়েছে। কিন্তু তার রসিকতায় কারো যে মৃত্যু হতে পারে এটা সে ভাবেনি। মিঃ ট্রিভসের সোফারের কাছে এক আত্মীয়ের ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাকে একটা খবর পাঠাতে হবে। মেরী ও টমাস উঠে পড়ল। মেরি বললো যে, নোটিশটা সে দেখেছিল কি?

ল্যাটিমার বললো, হ্যাঁ, সে দেখেছিল। তারা দুজনে হাঁটতে লাগল।

.

৩.৬

মেরী বললো, আর মাত্র দুদিন–টমান তার দিকে তাকাল।

সে বললো, অতিথিরা বিদায় নিলে বাঁচা যায়।

মেরী বললো, সে বড়ই অস্বস্তি বোধ করেছে। অথচ লেভিল এলে আমরা সুখী হই। অড্রে এলেও আমাদের ভালো লাগে। অথচ এবারে ওদেরকে দেখে মনে হচ্ছে বোমার ওপর বসে আছি আমরা আর সেই বোমাটা যে কোন মুহূর্তে ফাটতে পারে।

টমাস প্রশ্ন করল অড্রে বুধবার এখান থেকে চলে যাবে?

লেভিলরা বৃহস্পতিবার যাবে আর তিনি যাবেন শুক্রবারে। মেরী বললো, টমাস আছে বলে সে ভরসা পাচ্ছে।

টমাস বললো, এরা একই সঙ্গে থাকার পর একটা অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে। ওপরকার ভদ্রতাটা যদি এরা বজায় রাখতে না পারে তাহলে একটা ঝগড়া লেগে যাবে।

মেরী বললো, তার ঝি চাকর রাধুনী কেউ কাজ করতে চাইছে না। এর কি কারণ তিনি জানেন না। তবে লেভিল যদি এমন পাগলামি না করত তাহলে এসব কিছুই হতো না। লেভিল চেয়েছিল অড্রের সঙ্গে কোর বন্ধুত্ব করিয়ে দিতে। কো সহ্য করতে পারে না অড্রেকে। সে মনে করে লেভিল নিজের সুখটাকে বড় করে দেখে। অড্রেকে ছেড়ে দিয়ে যদি অনুতপ্ত হয় তাহলে অড্রেকে ছেড়ে দেওয়া তার উচিত হয়নি।

টমাস মনে করে লেভিল কো-কে ছেড়ে যদি অড্রের দিকে হাত বাড়ায় তাহলে কো ছেড়ে দেবে না। কো ভীষণ জেদী মেয়ে। মেরীও এই আশঙ্কা করছিল।

টমাস চলে যেতে লেভিল মেরীকে বললো, টমাস মনে হয় আমাকে পছন্দ করে না।

মেরী বললো, সে চাপা স্বভাবের মানুষ। তবে ওর মন সাদা। সঙ্গে এও বললো সহ্য না করার যথেষ্ট কারণ আছে, অড্রেকে সে বিয়ে করতে চেয়েছিল। লেভিল তাকে তার কাছ থেকে প্রায় ছিনিয়েই নিয়েছে। টমাস ভেবেছিল যে, সে বেহায়ার মত তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব তুলবে না, টমাস বিয়ের প্রস্তাব তুলছিল না দেখে অভ্রের সারাজীবন বিয়ে হতো না। অড্রে টমাসকে বিয়ে করবে কিনা জানিনা। অড্রের আর টমাসের চরিত্র একেবারে আলাদা। অড্রে তা জানে। আর জানে বলেই অড্রের পক্ষে টমাসকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। অড্রের হয়ত আদৌ কাউকে বিয়ে করবার কথা এখন ভাবছে না। তার বোধহয় একা থাকতেই ভালো লাগছে।

লেভিল বুঝলো অড্রেকে ছেড়ে সে খুব ভুল করেছে।

মেরী বুঝল এখানে তার থাকা উচিত নয়।

লেভিল বাগানে ঘুরছিল। ঘুরতে ঘুরতে নদীর ধারে অড্রের সঙ্গে দেখা হল। অড্রে বাইরে থেকে ভেতরে যেতে চাইল। সেখানে একটু ঘুরে বেড়াতে চাইল। লেভিল অড্রেকে একটা কথা বলতে চাইল। অড্রে তা শুনতে চাইল না কারণ সে জানে সেকি বলবে। লেভিল সবকিছুকে ভুলে গিয়ে তার আগের জীবনকে ফিরে পেতে চায়।

অড্রে জিজ্ঞাসা করলো কো-কে ভুলে যেতে চায় কিনা।

লেভিল বললো, কো-কেসবকিছু বোঝালে নিশ্চয়ই সব বুঝবে। তাকে সে মুক্তি দিতে চায়।

অড্রে বললো, তাকে তো সে ভালোবেসেই বিয়ে করছে, তবে কেন সে মুক্তি পেতে চায়?

লেভিল বললো, সে ভুল করেছে, সেই ভুলটাকে শুধরে নিতে চায়।

বাড়ির ভিতর থেকে হঠাৎ কো এলো, তার চোখে জ্বলন্ত ছবি। সে বললো, তার যা ক্ষতি করার সে করে দিয়েছে। পরে তা নিয়ে সে অড্রের সঙ্গে বোঝাপড়া করবে। এখন লেভিলের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চায়।

তাদের মধ্যে কোন বোঝাপড়া যদি হতেই হয় তাহলে তারা নিজেরাই করবে এতে অড্রেকে টেনে আনার দরকার কি?

অড্রে চলে যেতে চাইছিল, কো অনেক গালাগালি করছিল, সে বললো যে, আমাকে তুমি ভালোবেসেছিলে তার জন্য তাকে তার আগের স্ত্রী সহ্য করতে পারে না। লেভিলের মুখ সাদা হয়ে গেছিল, সে বললো, সত্যিই কো আবার অন্যায় করেছে। তার ভুল যা হবার তা হয়েছে। সেই ভুলের জের টেনে চলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। ক্ষতি যা হবার তা হয়েছে, সে মুক্তি চায়।

লেভিল বললো যে, তার জন্য তিনবছর অপেক্ষা করতে হবে। তারপর তাকে ডিভোর্স করবে।

কো বললো, হ্যাঁ, তারপরে আবার অড্রের কাছে ফিরে যাবে। কিন্তু আমার কি হবে।

লেভিল বললো, তার চেয়ে ভালো কাউকে সে বিয়ে করবে। টাকার জন্য চিন্তা করতে হবে না। যতটাকা চাইবে, তত দেওয়া হবে।

কো বললো, ঘুষ দিয়ে বিদায় করতে চাও। সে দুজনকেই খুন করবে।

লেভিল কো-কে ধরলো, চাপা গলায় তাকে চুপ করতে বললো, আর বললো, সে নিজের বাড়িতে যাই করুক, এখানে সে যেন পাগলামি না করে।

সেই মুহূর্তে তাদের চা খাবার জন্য ডাকা হল।

.

৩.৭

লেভিল ইন্টারহেড হোটেলে ল্যাটিমার-এর সঙ্গে বিলিয়াড খেলতে যেতে চাইল। কো উপরে শুতে গেল। ড্রইংরুমে ফাঁকা হয়ে গেল। লেভিল বর্ষাতি পরে ফেরীঘাট দিয়ে হোটেলে যাওয়া ঠিক করল।

লেডি লেভিলকে বললেন, কারও ব্যক্তিগত কথাবার্তা শুনতে তার ইচ্ছে নেই। কিন্তু তুমি আর তোমার বউ যদি আমার ঘরের জানালার ঠিক নীচে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে তোমাদের ব্যক্তিগত জীবনের কথাবার্তা বল, তাহলে তা না শুনেও আমার উপায় থাকে না। আজ বিকালে বাগানে দাঁড়িয়ে যেসব কথাবার্তা তোমরা বলেছো এখান থেকেই তা আমি শুনেছি, বুঝতেও পেরেছি। তুমি চাও কো তোমায় ডিভোর্স করুক। তারপর তুমি অড্রেকে বিয়ে করবে।

লেভিল সব শুনে শান্ত গলায় বললো, চেঁচিয়ে ঝগড়া করা আমাদের উচিত হয়নি। তার জন্য তিনি ক্ষমা চাইছেন কিন্তু অড্রেকে বিয়ে করা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। লেভিল এ বিষয়ে অড্রেকে দোষী করতে চায় না।

লেভি মনে করেন তারা উভয়ে অন্যায়ের সুযোগ নিয়েছে। কো তার স্ত্রী, তার দাবী আছে সে যেন তার দাবীগুলি মেটাতে পারে এটা লেভি মনে করেন। তার সম্পর্কে যে কর্তব্যগুলো আছে সেগুলি অবশ্য পালনীয়। লেভি ট্রেসিলিয়ান মনে করেন ব্যাপারটা যদি না তার বাড়ির মধ্যে না ঘটতো তাহলে তিনি মাথা গলাতেন না।

অড্রেকে তিনি তার বাড়ি থেকে চলে যেতে বলতে চান। লেভিল তাকে বাধা দিল। কিন্তু লেভি তাকে চলে যেতে বললেন।

বারান্দার ওদিকে কোন ঘরে কো দরজা বন্ধ করল।

.

৩.৮

গালস পয়েন্টে ঝিদের কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী মর্যাদার তারতম্য আছে। অ্যালিস, যে ব্যারেটের ঘরে চা পৌঁছে দেয়। আজ ব্যারেটকে অনেক ডাকার পরেও সে এলো না।

মিসেস স্পাইসার ট্রের উপর সবকিছু সাজিয়ে দিতে সে চা নিয়ে উপরের ঘরে গেল। দরজা ভেজানো বলে টোকা দিল অ্যানিস। দরজায় কোন সাড়া না পেয়ে ঠেলে ঢুকলো। যা দেখলো তাতে সে ভয় পেয়ে গেল। সে ছুটতে ছুটতে বাইরে এলো। সে চেঁচিয়ে উঠে জানাল সারাঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। কর্তামা (লেভি ট্রেসিলিয়ান) খুন হয়েছেন।

৪-৫. সুপারিন্টেন্টে ব্যাটলের ছুটি

৪.১

সুপারিন্টেন্টে ব্যাটলের ছুটিটা নেহাত খারাপ কাটেনি। আর মাত্র তিনদনি তারপর ছুটি ফুরোবে। সালিটিংটনের এই মনোরম পরিবেশ থেকে তিনি আবার লণ্ডন-এ ফিরে যাবেন।

তিনি তার ভাগ্নে জেমস্ লীচ-এর কাছে উঠেছেন। হঠাৎ ফোন এল, তার ভাগ্নেকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। ছেলেটি বেরোনোর উদ্যোগ নিল। কারণ স্যার ম্যাথু ট্রেসিলিয়ানের স্ত্রীর মৃত্যু ঘটেছে।

জিমি যাবার আগে তার মামাকে বললেন এই প্রথম তিনি খুনের তদন্ত করছেন। যদি দরকার হয় তাহলে যেন তাকে সাহায্য করে।

তিনি বললেন তিনি তা করবেন। জিমি আর দাঁড়ালেন না।

.

৪.২

আধঘণ্টার মধ্যে জিমি আবার ফিরে এল। তার সঙ্গে মেজর রবার্ট মিচেল এল। তিনি খুনের ব্যাপারে নিয়ে ব্যাটলের সঙ্গে কথা বলতে চান। ব্যাটলকে বললেন এটা বাইরের ব্যাপার নয়। তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তদন্তের ভার তিনি নিতে রাজী কিনা।

ব্যাটল বললেন, তার কোন আপত্তি নেই কিন্তু ওপরওয়ালা রাজী হবেন কিনা।

মেজর মিচেল বললেন আপনি এখন স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে আছেন না। তিনি আরও বললেন কমিশনার তার বন্ধু এখুনি তাঁকে তিনি ফোন করবেন। যদি তাকে ছেড়ে দেন তাহলে আর কোন আপত্তি নেই। তিনি সম্মতি জানালে মেজর মিচেল স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে ফোন করলেন। সুপারিন্টেন্টে ব্যাটল এটা বুঝেছিলেন যে এই খুনের ব্যাপারে পুলিসকে খুব হুশিয়ার হয়ে এগোতে হবে। প্রতিটি পদক্ষেপ সতর্ক হওয়া চাই। যতক্ষণ না পাকাঁপোক্ত প্রমাণ মিলছে ততক্ষণ গ্রেপ্তার তো দূরে থাক কাউকে সন্দেহ করা চলবে না। কারণ মানহানির আশঙ্কা এখানে পদে পদে। মেজর মিচেল পাকা লোক হিসাবে সুপারিন্টেন্টে ব্যাটলকে তদন্তে নিয়োগ করতে চান। গাল পয়েন্টে ঢুকে লেডি ট্রেসিলিয়ানের ঘরের সামনে গিয়ে তিনি দাঁড়ালেন। মেঝের উপর একটা গলফ খেলবার ছড়ি আছে–যা রক্তমাখা, একজন পুলিস অফিসার পরীক্ষা। করছিলেন ছড়ির উপর আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া যায় কি না। ডঃ ল্যাজনবি বিছানায় ঝুঁকে লেভি ট্রেসিলিয়ানের মৃতদেহ পরীক্ষা করছিলেন।

তার মনে হয়, সামনে থেকে জোরে কেউ তাকে আঘাত করেছিল। প্রথম আঘাতেই হাড় ভেঙে মৃত্যু ঘটে। কিন্তু তার পরেও তাকে আঘাত করা হয়েছে।

মৃত্যু সম্পর্কে খুনী নিশ্চিত হতে চেয়েছিল। তিনি রাত ১০-১২ টার মধ্যে মারা গেছেন। ডঃ ল্যাজনবি বললেন, খুনী যদি গলফের ছড়িটা এখানে ফেলে যেত তাহলে ঠিক কি দিয়ে যে আঘাত করা হয়েছে, তা হয়ত তিনি বুঝতে পারতেন না। যাইহোক ছড়ির প্রান্তভাগ কিন্তু লেভী ট্রেসিলিয়নের মাথায় লাগেনি। লেগেছে বাঁকানো জায়গাটা। খুনী কি চেয়েছিল। আমরা তা জানি না; আমরা শুধু এটুকু বুঝতে পারছি, বাঁকানো জায়গাতেই আঘাত করেছে।

তিনি বললেন যে আঘাত লেগেছে লেভি ট্রেসিলিয়ানের ডান কপালে অথচ যেই আঘাত করুক, সে যে এই বিছানায় ডানদিকে, খাটের শিয়রের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল, তাতেও সন্দেহ নেই। খাটের বাঁদিকে দেওয়াল।

ডঃ ল্যাজনবি বলতে চান লোকটি ন্যাটা, প্রমাণ হতে পারে ট্রেসিলিয়ান বাঁ দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিলেন সেই মুহূর্তে খুনী আঘাত হেনেছে কিংবা খাটটা বাঁদিকে টেনে এনে আবার তাকে সরিয়ে রেখেছে। এ ব্যাপারটা অস্বাভাবিক।

ডিটেকটিভ সার্জেন ছড়ি পরীক্ষা করে বললেন, এটা একটি সাধারণ ছড়ি। ন্যাটাদের জন্য ব্যবহৃত ছড়ি নয়। ন্যাটা হওয়া ছাড়াও সে অন্য কারো ছড়ি হাতিয়ে এনেছিল ল্যাজনবি এই ব্যাপারে সঠিক নয়।

তবে লোকটি পুরুষ জিমি বললেন, কোন মেয়ের পক্ষে অত জোরে আঘাত করা সম্ভব নয়।

ডাক্তার বললেন, তিনি গল খেলার সময় অনেক মেয়েকে জোরে ছড়ি চালাতে দেখেছেন।

মিঃ ব্যাটল ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলেন গলফের এই ছড়িটা দিয়ে আঘাত করা হয় এ বিষয়ে কি তিনি নিশ্চিত নন।

তিনি বললেন, তিনি এটা অনুমান করেছেন। ছড়ির মাথায় চুল রক্ত লেগে থাকায় তিনি এটা অনুমান করেছেন। তবে সেগুলি ট্রেসিলিয়ানের কিনা তা প্রমাণ করতে হবে। ব্যাটলও এই বিষয়ে তার সঙ্গে একমত।

জিমি ব্যাটলকে জিজ্ঞাসা করলেন লেভি ট্রেসিলিয়ানকে যখন আঘাত করা হয় তখন কি তিনি জেগে ছিলেন না ঘুমিয়েছিলেন?

ব্যাটল মনে করেন তিনি ঘুমিয়েছিলেন। তার বিশ্বাস খুনী তার চেনা ছিল। ব্যাটলকে দেখে তার মনে হল ঘুম থেকে তাকে জাগিয়ে ভোলা হয়েছিল। তার মুখে আতঙ্কের ভাব নেই। তার চোখে একটু বিস্ময়ের ভাব ছিল।

এমন হতে পারে উনি জেগেই ছিলেন।

জিমি ছড়ি দেখে আঙ্গুলের ছাপ পেলেন। জিমি সার্জেন্ট জোন্স-এর থেকে জানতে পারলেন। তিনি বললেন এ বেশ ভদ্র খুনী। ছড়ি, আঙ্গুলের ছাপ সবই রেখে গেছে, নাম ঠিকানা রেখে যায়নি?

ডঃ ল্যাজনবি লেভির চাকর ব্যাটলকে চিকিৎসা করতে গেলেন যাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। লেভি ট্রেসিলিয়ানের ঘরের কাণ্ড শুনে যেন ব্যাটল ছুটে না আসতে পারে, তারজন্য তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। বিপদের মুহূর্তে লেভি ঘন্টি টেনেছিলেন কিনা জানা যায়নি। টেনে থাকলেও ব্যাটল কিছু জানতে পারেনি।

ব্যাটল বললো, জানতে পারার কথা নয়। কিন্তু একটা কথা ঠিক, যে তাকে খুন করেছে সে এই বাড়ির খবর রাখে। ডঃ ল্যাজনবি ব্যাটলকে দেখে চলে গেলেন। ব্যাটল জিমিকে বললেন, গলফের ছড়ির ওপরকার ওই আঙ্গুলের ছাপ খুনীর নয়, ছাপ হয়ত অন্য কারোর, খুনী হয়ত দস্তানা পরে ওই ছড়িটা ব্যবহার করেছিল।

ঘাড় নেড়ে জিমি বললো, তা হতে পারে না। ছড়ির ওপর কারও আঙ্গুলের ছাপ পড়বার পর যদি কেউ দস্তানা হাতে ও ছড়ি ব্যবহার করতো তাহলেও ছাপটা অস্পষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু আমরা যে ছাপ পেয়েছি সেটা খুবই স্পষ্ট।

ব্যাটল বললো, তাহলে আমাদের কাজ সহজ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই বাড়িতে যারা আছে তাদের আঙ্গুলের ছাপ এই ছাপটির সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে যার ছাপ মিলবে তাহলে সেই খুনী। এই ছাপটা একটা পুরুষের…মেয়ের নয়।

লেভি ট্রেসিলিয়ানের সম্পত্তি কে পেতে পারে এটাই ব্যাটলের প্রশ্ন। নীচে সবাই বসেছিল। মেরী লেভিল, কো অড্রে বসেছিল। ব্যাটল মনে করেন যে, যতক্ষণ না নির্দোষিতা অকাট্য প্রমাণ হচ্ছে ততক্ষণ সবাই খুনী। খুনের ধর দেখে মনে হচ্ছে বাইরে থেকে কেউ খুন করেনি। এদের মধ্যে কেউ খুনী।

জিমি সকলকে বললেন খুনীকে বের করবার ব্যাপারে আপনারা সকলেই আমাদের সহযোগিতা করবেন। তিনি গলফের ছড়িটা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন এটা সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারেন কিনা।

কো দেখে বললেন, কি আশ্চর্য এটা তো মনে হচ্ছে, সে কথাটা শেষ পর্যন্ত বললো না।

লেভিল ইনসপেক্টারকে বললেন এটা তারই মনে হচ্ছে।

লেভিলের হাতে ছড়ি তুলে জিম বললেন, আপনি এটা এখন নিশ্চয়ই দেখতে পারেন।

লেভিল হাতে নিয়ে ছড়িটা দেখল। লেভিল ছড়িটা দেখে জিমির হাতে ফেরত দিয়ে বললো যে, সে গলফ খেলার জন্য যে ছড়িটা ব্যবহার করে এটা বোধহয় তার। তবে তিনি নিশ্চিন্ত নন, নিশ্চিত হবার জন্য ছড়ির আরেকটা মিলিয়ে দেখতে হবে। আসুন না এখুনি আমি মিলিয়ে দেখছি। লেভিল দোতলার সিঁড়ির নীচে দাঁড়াল। সেখানে একটা মস্ত আলমারি রয়েছে। সেখানে। টেনিসের প্যাকেট সাজানো রয়েছে। এটা দেখে ব্যাটলের খুব চেনা মনে হল। শান্ত গলায় তিনি বললেন যে, তাকে তিনি উইম্বলডন টেনিস খেলতে দেখেছেন।

লেভিল আলমারির এককোণে থেকে একটা ব্যাগ বার করলেন। বললেন যে ছড়িটা পাওয়া গেছে ওটা তারই ছড়ি, অতএব এটা একটা পুরুষের ছড়ি।

ব্যাটল তাকে লেভি ট্রেসিলিয়ানের সলিসিটারের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন যে অ্যাসকুইথ অ্যাণ্ড ট্রেননি তারা পুরানো ফার্মে। তাদের অফিস হচ্ছে সেন্ট লুতে। কিন্তু তাদের খবর কেন নেওয়া হচ্ছে এটা জানতে চাইলেন লেভিল।

লেভি ট্রেসিলিয়ানের উইল সম্পর্কে খবর নেওয়ার জন্য। লেভি ট্রেসিলিয়ানের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি সম্পর্কে লেভিল জানালেন তার টাকাকড়ি বিশেষ কিছু ছিল না। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন তার টাকা পয়সা তিনি পাবেন। তার অবর্তমানে লেভিলের স্ত্রী তা পাবেন। সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় লক্ষ পাউণ্ড।

লেভিল বললেন, তার অবস্থা অসচ্ছল নয়। স্যার ম্যাথুর টাকা না পেলেও চলবে।

জিমি বললেন তিনি তা বলতে চাননি। এবারে এর হাতের ছাপ নেওয়া হলো। প্রথমে হার্টলকে জেরা করা হল।

রাত্রিবেলা গালস্ পয়েন্টের দরজা কিভাবে বন্ধ করা হয় তার বর্ণনা দিয়ে হার্টল বললো, বাইরে থেকে কেউ ঢুকেছিল বলে তার মনে হয় না। সদর দরজা বন্ধ ছিল কিনা সেটা জিজ্ঞাসা করতে বললো সে সেটার ল্যাজটানা টানছিল, কারণ লেভিল বাইরে তাস খেলতে গেছিলো। রাত্রিতে ফিরলে তার যদি অসুবিধে হয় তাই ভিতর থেকে সে হুড়কো দেয়নি। মিঃ লেভিল রাত আড়াইটে নাগাদ বাইরে থেকে ফেরেন। তিনি মটর থেকে নেমে কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন। মিঃ ট্রেড দরজা খুলে উপরে উঠে গেলেন। মিঃ ট্রেডকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সেই ভদ্রলোক গাড়ি হাঁকিয়ে চলে গেলেন।

হার্টলের পরে অন্যান্য ঝি চাকরের পালা। তাদের কাছ থেকে বিশেষ কিছু জানা গেল না। ব্যাটল জিমিকে বললেন আচ্ছা ওই মেয়েটির নাম এসা ওয়েলস না। সে খুব ভয় পেয়েছিল। ব্যাটল তাকে ধমকে তার থেকে কথা বার করতে চাইলেন।

সে বললো, সে রাত দশটায় কাজকর্ম চুকিয়ে শুতে যাচ্ছিল, যেতে যেতে শুনলো যে ঘরের মধ্যে কর্তামা আর মিঃ ট্রেড-এর মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল। শুধু সে শুনেছে কর্তামা বলছে এসব অনাচার আর সহ্য করবে না। বনে দেব…কালই যেন সে এখান থেকে চলে যায়। গলা শুনে মনে হল মিঃ ট্রেডও ভীষণ রেগে আছেন। তাছাড়া সে একা নয় হার্টলও ঝগড়া শুনছিল।

উইলিয়াম সে সব ঘর তল্লাশি করছিল। সে এসে বললো যে, লেভিলের ঘর থেকে একটা গাঢ় নীল রঙের কোর্ট, ট্রাউজার্স, আর ওয়েস্টকোট মেঝের উপর পড়ে থাকতে দেখেছেন।

জিমি বললেন যে, এগুলি তিনি কোথা থেকে পেলেন।

ব্যাটলের দিকে এগিয়ে এসে সে বললো, হাতের উপর রক্তের দাগ দেখেছেন।

ব্যাটল মনে করলেন লেভিল ছোকরা মারা পড়বে। ঘরে একটা ছাইরঙের স্যুট পাওয়া গেছে। চেয়ারের উপরে সেটা ঝুলছিল। কিন্তু বেসিনের ধারে মেঝের উপর, এত জল এল কোত্থেকে? মনে হচ্ছে বেসিনের কল খুলে কেউ তাড়াহুড়া করে হাত ধুয়েছিল।

সুপারন্টেন্টে ব্যাটল বললেন বৃষ্টির জল হতে পারে। জানালা খোলাই ছিল।

উইলিয়াম বললেন যে, বৃষ্টির ছাঁট হলে মেঝে ভেসে যেত না। মনশ্চক্ষে ব্যাটল দেখলেন আততায়ী এই ঘরের মধ্যে এসে ঢুকল, বেসিনের কল খুলে দিয়ে হাতের রক্ত ধুয়ে ফেলল, রক্তাক্ত জামাকাপড় খুলে দলা পাকিয়ে ওয়ার্ডডোবের মধ্যে ছুঁড়ে দিল।

মিসেস ট্রেডও পাশের ঘরে থাকেন। এঘর ওঘর মাঝের দরজাটা বন্ধ। তিনি হার্টলকে ডেকে পাঠাতে বললেন। ব্যাটল হার্টলকে কথা কাটাকাটির কথা জিজ্ঞাসা করলেন। হার্টল আসলে এটা বুঝতে পারেনি।

ব্যাটল তাকে জিজ্ঞাসা করলেন মিঃ ট্রেড রাত্রিতে কি রংয়ের স্যুট পরেছিলেন?

হার্টল বললেন নীল রয়েংর। সার্জেন্ট জোনস গরে ছাপের সঙ্গে অন্য ছাপ মিলিয়ে দেখেছেন। মিঃ ট্রেডের সঙ্গে ছাপ মিলেছে।

ব্যাটল বললেন তাহলে তিনি মারা পড়লেন।

.

৪.৩

চীফ কনস্টেবল মিচেলের অফিসে তারা বসেছিলেন। মেজর মিচেল সুপারিন্টেন্টে আর জিমি। মিচেল বললো, লেভিলকে গ্রেপ্তার না করে উপায় নেই। সুপারিন্টণ্ডেন্ট ব্যাটলের ব্যাপারটা মোটেই ভালো ঠেকছে না। কিন্তু যেখানে এত প্রমাণ সেখানে গ্রেপ্তার না করে উপায় কি?

জিমি বললেন যে গ্রেপ্তার না করলেও কথা উঠবে।

মেজর মিচেল বললেন, প্রথমে স্বার্থের কথাই ধরা যাক। লেভি ট্রেসিলিয়ানের মৃত্যুর জন্য কার লাভ হচ্ছে? বলাবাহুল্য লেভিলের।

লেভিল লেভিকে শেষ দেখেছিল এবং সে যে স্যুট পড়েছিল, তাতেও দাগ আছে। এমনকি গলফের ছড়িতে যে আঙ্গুলের ছাপ ছিল, লেভিলের আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে তা মিলে গেছে।

মেজর মিচেল একটু অস্বস্তি বোধ করছেন। কেননা খুনী কি এইভাবে নিজের প্রমাণ ছড়িয়ে রাখে? জিমিরও তাই। তার অস্বস্তির কারণ হল যে তিনি একজন খাঁটি স্পোর্টসম্যান। তিনি খেলার মাঠে বা তার বাইরে কাউকে গালমন্দ করেন না। তিনি যেমন বিনয়ী তেমনি হাসি খুশী মানুষ। তার অস্বস্তি হচ্ছে গলফের ছড়ির জন্য, কিংবা লেভি ট্রেসিলিয়ানের ঘণ্টির জন্য, তার মানে খুব সহজ দুটোর মধ্যে একটাকে বাদ দিতে হবে। ছড়ি আর ঘণ্টাকে তিনি মেলাতে পারছেন না।

ব্যাপারটা বেশ ভালো করে একবার ভেবে দেখা দরকার। কাল রাত্রিরে লেভিল লেভি ট্রেসিলিয়ানের ঘরে গেছিল। তার সাথে ঝগড়া করেছিল। সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে হত্যার ব্যাপারটা মোটেই পূর্ব পরিচিত নয়। যদি পূর্বপরিকল্পিত না হয় তাহলে গলফের ছড়ি এলো কোথা থেকে? রাত দশটার সময় এমনিতে কেউ গলফের ছড়ি নিয়ে ঘুরতে বেড়ায়? আর লেভিল যে ধরনের মানুষ তাতে সে রেগে যাবার পাত্র নয়।

মেজর মিচেল বললেন, সে যে হঠাৎ গিয়ে খুন করেছেন এসব কথাই বা ভাবছেন কেন,–এমন তো হতে পারে গোটা ব্যাপারটাই পূর্ব পরিকল্পিত।

ব্যাটল বললেন, হতে পারে এটা একটা প্ল্যান করা ব্যাপার। যদি তাই হয় তাহলে সে ব্যারটকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়েছে, যাতে লেভি তাকে ডাকতে না পারেন। যদি তাই হয় তাহলে সে তার খুনের হাতিয়ার ওখানে ফেলে আসবে কেন? আবার যদি এটা প্ল্যাণ্ড ব্যাপার হত সে আসার সময় ছড়িটাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসত। ছড়িটাকে ধুয়ে মুছে আবার যথাস্থানে রেখে দিত। তাহলে সে লেভির সাথে ঝগড়া করত না।

ব্যাটল মনে করছে এটা আকস্মিক খুন নয়। পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অর্থাৎ দুরকম চিন্তার অবকাশ আছে এর মধ্যে।

কিন্তু লেভিকে হত্যা করা হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু সেটা ছড়ি দিয়ে নয়। এটা হত্যার হাতিয়ার হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।

যদি ছড়িটাকে বাদ দেওয়া হয় তাহলে লেভিলকে সন্দেহ করার কি স্বার্থ থাকে? লেভিলের স্বার্থ আছে। লেভি মারা গেলে সে বিস্তর টাকাকড়ি পাবে। টাকাকড়ি তার নিজের সত্যিই আছে কিনা তা জানতে হবে।

মেজর মিচেল বললেন, তার সন্দেহ ইতিমধ্যেই শিথিল হয়ে এসেছে। তার ধারণা কেউ লেভি ট্রেসিলিয়ানকে হত্যা করেছে। তারপর এমনভাবে সব প্রমাণ ছড়িয়ে রেখেছে আমাদের সন্দেহ যাতে লেভিলের উপর গিয়ে পড়ে।

ব্যাটল বললেন, তিনি সবাইকে সন্দেহ করছেন। তিনি লেভিলকে গ্রেপ্তার করবেন না। আমাদের মনে যে প্রশ্ন জেগেছে, তার একটা সদুত্তর না পাওয়া পর্যন্ত লেভিলকে তারা গ্রেপ্তার করবে না।

এ্যাটর্নী মিঃ ট্রেনানি জানালেন যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন, তার সম্পত্তির আয় তার স্ত্রী ভোগ করবেন। আর তার অবর্তমানে তার টাকা লেভিল সস্ত্রীক ভোগ করবে। তার টাকা থেকে ব্যারেট হার্টল ও মেরী পাবে।

মিঃ ট্রেনানীকে তিনি বললেন, উইল দুটোর নকল করে তিনি যেন পাঠিয়ে দেন।

জিমিকে সঙ্গে করে ব্যাট গালস পয়েন্ট ফিরে এলেন। সার্জেন্ট জোন একটা ছোট প্যাকেট এগিয়ে দিল। এতে মেয়েদের মাথার কয়েক গাছি চুলছিল। লালরংয়ের চুল পাওয়া গেছে মিঃ ট্রেডের কোর্টের হাতায় আর কালো রং-এর চুল ছিল তার কোর্টের কলারে।

ঝি চাকরদের মধ্যে কেউ তাকে খুন করছে বলে মনে হয় না। মেরী অণ্ডিল চাকর-বাকরদের নিয়ন্ত্রণ করে। তাকে সবাই সমীহ করে চলে। ব্যারেটকে শোবার আগে খাবার দুধে ওষুধ মিশিয়ে তাকে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। এটা জোন্স বললেন।

একাজ ভিতরের কোন লোকের কারণ ব্যারেট যে ঘুমের ওষুধ খায় সেটা সবার জানার কথা নয় এবং দুধটা যে সন্ধ্যেবেলা থেকে ঢাকা দেওয়া থাকে এটা কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয়। সন্ধ্যার পর কেউ গিয়ে ওষুধ মেশায়। তারপর মাঝরাত্রিরে সে লেভি ট্রেসিলিয়ানকে খুন করেছে।

সারাবাড়ির লোকজনদের ঘর থেকে কিছু খোঁজার জন্য সব ঘরে ঢোকা হল। থমে অড্রের ঘরে দেখা হল। সেখানে তার জামাকাপড় ছাড়া আর বিশেষ কিছু পাওয়া গেল না।

অড্রের ঘর থেকে বেরিয়ে সবাই টমাস বয়েডের ঘরে গিয়ে ঢুকল। এখানে জামাকাপড় পড়ে আছে, যেখানে ছাই পড়ে আছে। তারপর তারা মেরীর র খুঁজল। কিন্তু সেখানে কিছুই পেল না। এরপর লেভি ট্রেসিলিয়ানের ঘর তারপর জোড়া দুটি ঘর। সেখানে লেভিল আর কো থাকে। এই ঘরের মাঝে একটি দরজা। কোর ঘরে প্রসাধন আর জামাকাপড় দেখে মনে হয় সেগুলো সস্তা নয়।

মিঃ ট্রেডকে আবার ডেকে পাঠান হলো। এবং তাকে বলা হল যে তাকে কিছু প্রশ্ন করা হবে অবশ্য তার যদি তাতে আপত্তি থাকে তাহলে তিনি তার প্রশ্নের উত্তর নাও দিতে পারেন। ব্যাটল তাকে বললেন, তিনি যা উত্তর দিবেন সেটা লিখে রাখা হবে। আদালতে সেগুলি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল কাল রাত্রে ডিনারের পরে তিনি কোথায় ছিলেন?

তিনি বললেন তিনি তার বন্ধু এ্যাডওয়ার্ড ল্যাটিলের সঙ্গে দেখা করতে ইটারহেড হোটলে গিয়েছিলেন। সেই হোটেলের দরজা সারারাত খোলা থাকে। তিনি নীলরংয়ের স্যুট পরেও পরে আবার ছাইরংয়ের স্যুটটা পারেন। তারপর লেডির সঙ্গে তার কথাবার্তা হয়। তিনি মিনিট কুড়ি তার ঘরে ছিলেন। তারপর সাড়ে দশটার সময় তার বন্ধুর সঙ্গে খেলতে বেরোন। রাত দেড়টার সময় তিনি ফেরীঘাট থেকে, যখন তিনি নৌকা না পান তখন তার বন্ধুর গাড়িতে রাত আড়াইটে নাগাদ এখানে ফিরিয়ে দিয়ে যান।

লেভি ট্রেসিলিয়ানের সঙ্গে যে তার বাদানুবাদ হয় সেটা তিনি বললেন। তিনি ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারজন্য রেগে গিয়ে তার মাথা ফাটাননি। তার ছড়িতে যে তার আঙ্গুলের ছাপ আছে এটা শুনে তিনি বললেন যে এটাই স্বাভাবিক ছড়ির উপর আঙ্গুলের ছাপ থাকায় প্রমাণিত হয় ওটা তিনি ব্যবহার করেছিলেন শেষে।

লেভিল বললো যে, কেউ দস্তানা পরে ওটা ব্যবহার করেছে।

ব্যাটল বললেন, তাহলে আঙ্গুলের ছাপও মুছে যেত বা অস্পষ্ট হয়ে যেত। লেভিল বললেন যে, তিনি খুন করেননি। তার স্যুট থেকে রক্ত পাওয়া গেছে এটা শুনে বললেন, এটা হতেই পারে না।

তিনি বললেন যে, লেভি ট্রেসিলিয়ানকে তিনি খুন করেছেন এটা হতেই পারে না। কারণ তিনি তাকে মায়ের মত ভালোবাসতেন। তার টাকার দরকার নেই। ব্যাঙ্ক থেকে ফোন করে মিঃ রোনাণ্ডসন জানালেন যে তাদের ব্যাঙ্কে তার বিস্তর টাকা আছে।

ব্যাটল বললেন, তিনি খুনী না হলেও প্রমাণ তার বিপক্ষে যায়নি। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা যায় না, যদি কোন মোটিভ পাওয়া যায় তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

.

৪.৪

কো স্টেড সাক্ষ্য দিতে এলেন। তিনি জানালেন রাত নটা নাগাদ তার ঘুম এসে যাওয়ায় তিনি শুতে যান। ড্রইংরুমে থেকে বেরিয়ে আসার পর তার সাথে আর দেখা হয়নি, কাল বিকালে তার স্বামীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। তাই তিনি খিল তুলে দিয়ে শুয়ে পড়েন। ঝগড়ার কারণ হল ওই মেয়েটি। লেভিলকে,যে ভুলিয়ে ভালিয়ে এখানে এনেছে। সে লেভিলকে দেখিয়ে টমাসের সঙ্গে মেলামেশা করছে এটা ট্রেডকে কষ্ট পাওয়ানোর জন্য, যাতে সে ঈর্ষায় জ্বলে। এটা হবে তিনি জানতেন। কিন্তু লেভিল ভাবে তিনি অড্রেকে হিংসা করেন। অড্রেকে ত্যাগ করে তার অন্যায় হয়েছে। ভালোবেসে তাকে বিয়ে করে লেভিল কিন্তু তার মন পড়ে রয়েছে অড্রের কাছে।

ব্যাটলকে তিনি বললেন যে, তিনি জানেন যে, লেভি ট্রেসিলিয়ানের মৃত্যুর পর টাকাটা যাবে লেভিল ও তার স্ত্রীর হাতে। তিনি জানেন যে, লেভি তাকে বিশেষ ভালোবাসতেন না। তার মানে এই নয় যে, তার মৃত্যু এইভাবে তোক তিনি তা চেয়েছিলেন। তিনি অতটা স্বার্থপর নন।

এরপর মেরি অল্ডিন বললেন, তিনি রাত্রি ১০টা নাগাদ শুতে যান, তিনি মিঃ স্টেডকে মেরীর সঙ্গে ঝগড়া করতে শুনেছিলেন। তার মনে হয় হত্যাকারী বাইরের লোক।

ব্যাটল বললেন, এরকম ভাবতে না পারার কারণ আছে। প্রথমতঃ কোন কিছু খোয়া যায়নি, তাছাড়া দরজা ভেঙে বাইরের লোক কেউ যে ভেতরে ঢুকেছিল, এমন কোন প্রমাণ নেই, বাইরে থেকে কাউকে যদি এ বাড়িতে ঢুকতে হয় তাহলে দরজা জানালা ভেঙ্গে ঢুকবে কি করে? এ বাড়ির পশ্চিম দিকে গভীর খাদ, সেদিক থেকে কারও আসার উপায় নেই। অবশ্য পাঁচিল টপকে কিংবা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে সদর দরজা খুলে কারো ভিতরে ঢোকা সম্ভব নয়। এমন কথা তিনি বলছিলেন। তাকে যে খুন করেছে সে রাত্রিতে ব্যারটের দুধের মধ্যে বিষ মেশাতে চেয়েছেন, দুধের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ব্যারেটকে অজ্ঞান করা বাড়ির লোকের পক্ষেই সম্ভব।

এই কাজ লেভিলের নয় তিনি মনে করেন। এছাড়া টাকার লোভে সে মানুষ খুন করতে পারে না। তার বউ খরচে হলেও ইদানীং সে টাকাপয়সার কথা ভাবছিল না। কো আর অড্রেকে নিয়ে সে দারুণ দুর্ভাবনায় পড়ে গেছে, তার দুই বউকে নিয়ে। এই নিয়ে বাড়িতে একটা দারুণ অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে, সবাই ভয়ে ভয়ে আছে। এমনকি মিঃ ল্যাটিমার।

মিঃ ল্যাটিমার হলেন কোর বন্ধু। লেভিলের সঙ্গে বিয়ে হবার আগে তিনি কো-কে চিনতেন, মিঃ ট্রেড তাকে পছন্দ করতেন কিন্তু লেডি তাকে পছন্দ করতেন না। ব্যারট অত্যন্ত বিশ্বাসী। সে পিসীমাকে ভালোবাসত। সে খুন করতে পারে না। সে টাকা পাবে উইল থেকে। সে মেরীও পাবেন।

মেরী চলে গেল। এরপর অড্রে এল, সে মানুষ নয় যেন শ্বেতপাথরের মূর্তি। তিনি গতকাল রাতে দশটা নাগাদ শুতে গেছিলেন। তিনি রাত্তিরে কোন শব্দ শুনতে পাননি। প্রতিবছরের মতো এখানে তিনি বেড়াতে আসেন। মিঃ স্টেঞ্জের এটা আইডিয়া ছিল। আপত্তি করলে খারাপ দেখাত বলে তিনি তা করেননি। তাঁর প্রতি এখন তার কোন আক্রোশ নেই। মিসেস কো তাকে বিশেষ পছন্দ করে না। তাকে সে পছন্দ করে। সে বললো যে, লেভিল খুন করেনি কেননা টাকার লোভ তার নেই।

.

৪.৫

সর্বশেষে টমাস রয়েড, ব্যাটলের প্রশ্নের উত্তরে সে জানাল, যে মালয় থেকে তা প্রায় সাত বছর বাদে সে দেশে ফিরেছে। মিসেস স্টেঞ্জ তার দূর সম্পর্কের বোন, একই বাড়িতে তারা মানুষ হয়েছেন। সে আগের রাতের ১১টার আগে ঘুমোতে গেছিল। সদর দরজা বন্ধ করার শব্দ সে বুঝতে পেরেছিল। সে সচক্ষে তাকে বেরোতে দেখেননি। তিমি মিঃ স্টেঞ্জ দুই স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে কিছু জানেন না। তার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কেও কিছু জানেন না। তিনি অত্যন্ত চাপা স্বভাবের তা বোঝা গেল।

ব্যাটল বলছেন যে লেডির ঘরে মিঃ স্টেঞ্জের যে আঙ্গুলের ছাপ পেয়েছি সেটা যে তার, সেটা টমাস শুনেছেন।

টমাস বললো যে, কে খুন করেছে সেটা তার বিচার নয়। তিনি মনে করেন না মিঃ স্টেও এটা করতে পারেন। টমাস বলেন যে তাকে একজনকেই সন্দেহ হয় কিন্তু সে তার নাম বলতে চাইল না। কেননা এটা তার ব্যক্তিগত ধারণা।

কোর্টের হাতের রক্ত যে লিডিট্রেসি তা প্রমাণিত হল। লেভিলের দিকে সমস্ত প্রমাণ যাচ্ছে। ল্যাটিমার রাত্রে হোটেলে ছিল বলে সে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ।

এরপর আবার লেভিলকে ডেকে আনা হল। তাকে জিজ্ঞেসা করা হল এমন কাউকে সে ঘৃণা করে কিনা। সে এমন কাউকে জানে না। যে অড্রের উপর অবিচার করেছে বটে তারজন্য সে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে।

ব্যাটল বলেন যে, তার বিরুদ্ধে এমনসব প্রমাণ পাওয়া গেছে যে তাকে তিনি বাঁচাতে পারতেন না। কিন্তু তার ক্ষেত্রে এমন একটি প্রমাণ পাওয়া গেছে তা তার ভাগ্য বলে বলা যায়। আগের দিন রাত্রে ট্রেসিলিয়ানের ঘর থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনি ঘন্টি বাজিয়ে ছিলেন। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি চলে আসার পরও তিনি জীবিত ছিলেন। জ্ঞান হবার পর ব্যারট তা জানিয়েছে। লেভিল এটা শুনে অভিভূত হয়ে গেল।

এরথেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় তার যে আঙ্গুলের ছাপ আছে এবং সেটা যে ওই ছড়ি দিয়েই খুন করা হয়েছে এমন কোন প্রমাণ নেই। কোন আততায়ী পরে গিয়ে খুন করে। অন্য কোন হাতিয়ার দিয়ে খুন করে এবং সন্দেহের জন্য গলফের ছড়িতে ট্রেসিলিয়ানের রক্ত ও চুল লাগিয়ে ছড়িটা ঘরে ফেলে রাখে।

.

৪.৬

ব্যারট হাসপাতালে জানান যে দুধ খেয়ে শুয়ে পড়ার পর লেভি ট্রেসিলিয়ানের ঘন্টি বাজে। ঘড়িতে তখন দশটা বাজে। সে নিচে নেমে সদর দরজা দিয়ে মিস্টার স্টেঞ্জকে যেতে দেখে। তিনি ছাই রংয়ের স্যুট পরেছিলেন। উপরে গিয়ে সেরকম কোন কথা তিনি বলেন না। তিনি তার বালিশ ঠিক করে উপরে চলে এলেন। তার মুখ দেখে একটু ক্লান্ত মনে হচ্ছিল।

ডাক্তার ল্যাজনবি জানান রাত এগারোটা নাগাদ তিনি মারা গেছেন। লেভিল চলে গেছিল অনেক আগে তাই তাকে সন্দেহ করা যায় না।

লেভিল রাতে কোথায় গেছিল, কোথায় ছিল সেদিকে বেশ ভালো নজর রাখা দরকার। আরও দেখা দরকার লেভিলের উপর কারো কোন আক্রোশ আছে কিনা।

ডাক্তারের বাড়ি থেকে ব্যাটল চলে এলেন বিল আ জর্জ নামক মাঝির কাছে। যারা খেয়াপারাপার করে সকাল থেকে রাত্রি দেড়টা পর্যন্ত। তারা জানান রাত সাড়ে দশটার সময় মিঃ স্টেঞ্জ নদী পার হয়ে ওপারে গেছিলেন কিন্তু রাত দেড়টায়ও তিনি ফেরেননি।

মিঃ ল্যাটিমারকে তারা দুজনে চেনেন।

হোটেলে যেতেই তার সঙ্গে দেখা হল। তিনি বললেন যে, লেভিল কাল রাতে সেখানে এসেছিল। কিন্তু তার দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে সে কিছু জানে না। তার সাথে লেভির খুব ঝগড়া চলছিল এটা সে জানাল। হোটেলে ঢুকে লেভিল তার দেখা পায়নি। তিনি তখন লাউঞ্জে বসেছিলেন। লেভিল যখন আসে তখন তিনি হোটেলের বাগানে ঘুরে বেড়ালেন, যখন অনেক রাত হল তখন তারা বিলিয়ার্ড খেলায় মত্ত ছিল। যখন ফেরেন স্টিমার পাওয়া যায়নি। তখন তিনি তাকে গালস পয়েন্টে পৌঁছে দেন।

ল্যাটিমার, সে হোটেলে দশটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত ছিল। তারপর সাড়ে দশটা পর্যন্ত ল্যাটিমার লাউঞ্জে বসে গল্প করছিলেন। এবং এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটা তাকে তিনি হোটেলের বাগানে পায়চারী করতে দেখেছেন। এরথেকে প্রমাণিত হয় যে সে দশটা থেকে ১১টা পর্যন্ত হোটেলে ছিল তা প্রমাণিত হয়। ল্যাটিমার তাহলে খুনী নয়। তাহলে বাকী রইল কো, অড্রে, মেরী, টমাস ও ঝি-চাকরেরা।

.

৪.৭

টমাস বললো যে, তাদের মধ্যে একজন কেউ খুন করেছে এটা ভাবতেই খারাপ লাগছে। টমাস বললো, ব্যারেটোর সাক্ষ্যে দেখা যায় লেভিল খুন করেনি।

মেরি বললো, মিঃ ট্রিভস একটি শিশুর কথা বলেছিলেন যে অপর একজনকে খুন করেছিল। এমন ধারণা হলো কেননা, সেই শিশু এখন বড় হয়েছে কিন্তু তার হত্যার নেশা এখনও কাটেনি। মিঃ ট্রিভস আসলে সেই শিশুটিকে চিনতে পেরেছিলেন। যে এখন বড়ো হয়ে আমাদের মধ্যে একজন হয়েছে। তাকে ছোট বেলায় হয়ত তিনি খুনী বলে বুঝতে পেরেছিলেন। এখন বড়ো হয়ে যদি সে কাউকে খুন করে তাহলে তিনি তাকে ক্ষমা করবেন না। কারণ নাম চেহারা বদলালেও তার শারীরিক লক্ষণ দেখে তাকে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।

টমাস বললো যে, লেভিকে যে খুন করা হবে এটা মিঃ ট্রিভস বুঝতে পেরেছিলেন। মেরী বললো, এখন তার মনে হচ্ছে যে ট্রিভসকেও একপ্রকার খুন করা হয়েছে। কেননা খুনী তার হার্টের কষ্টটাকে খুনের ক্ষেত্রে একটি উপসর্গ বলে ধরেছিল। তাই লিফটের কাছে নোটিশ ঝুলিয়ে রেখেছিল।

.

৪.৮

লেভি ট্রেসিলিয়ানের ঘরে ব্যাটল, জিমি, জোনস উইলিয়াম ছিলেন। ব্যাটল বললো যে, দরজার ওপর একটা পাল্লায় লম্বা দুটো পেতলের হাতল। একটার মধ্যে বাঁদিকের হাতলটা ঝকঝক করছে অথচ ডানদিকেরটা ময়লা হয়ে আছে। ব্যাটল জোনসকে বলতে সে ডানদিকের ওই ময়লা হাতলে আঙ্গুলের ছাপ পেল। বাঁদিকের হাতলে পেল না। ব্যাটল বললো, বাঁদিকের ওই ঝকমকে হাতল হল হত্যার হাতিয়ার। ⇒ডাইভার দিয়ে হাতল খুলে ওর আঘাতে লেভি ট্রেসিলিয়ানকে খুন করা হয়েছে।

ব্যাপারটি ব্যাটল বোঝালেন যে খুনী দস্তানা পরে খুন করে। সে ভিজে নেকড়া দিয়ে রক্তমাখা হাতলটাকে মুছে ফেলেছে। আর মুছেছে বলেই হাতলটা ঝকমক করছে।

জিমি খুব অবাক হল। ব্যাটল বললো, যে খুন করে হাতলটা আবার লাগিয়ে দেয় সে বোকা না হলেও চালাক নয়। চালাক হলে সে দুটো হাতলই মুছে রাখত। বাঁদিকে ঝকমকে হাতল থেকে খুব সম্ভব রক্তের দাগ লেগেছিল। ওটাকে ল্যাবরেটরীতে পাঠাতে বলা হল।

.

৪.৯

মেরি বাগানে ছিল, সে ব্যাটলকে বললো যে সত্যিই কি তিনি বিশ্বাস করেন যে বাইরের লোক খুন করেছে। ব্যাটল এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ। তিনি বললেন যে, পিসীমা কারো অপকার করেননি। তিনি বাড়ির সকলকে ভালোবাসতেন। যে খুন করেছে সে উন্মাদ।

ব্যাটলকে মেরী তার সন্দেহের কথা শোনালেন। এবং মিঃ ট্রিভসের গল্প ও সে বিষয়ে কথা বলতে ব্যাটলও সেই সন্দেহ সম্পর্কে একমত হলেন। তিনি বললেন যে, একই খুনী ট্রিভসকেও খুন করেছে।

মেরির একটা শারীরিক লক্ষণ আছে। তার মাথার সমস্ত চুল সাদা শুধু একগুচ্ছ কালো।

ব্যাটল দেখলেন ঘরে এ্যাটনী বসে আছেন। ঘরে লেভিল এলেন। লেভিল জানালেন সম্পত্তির অংশ পাবেন তার প্রথম স্ত্রী অড্রে। এ নিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে কোন আলোচনা হয়নি।

ব্যাটল বললেন যে, এবিষয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জানেন না, তার মতে তিনি টাকা পাবেন এবং সম্পত্তির অংশ পাবেন। তার কথা শুনে এইরকম মনে হল।

লেভিল বললো, কোর এখন টাকার দরকার নেই। বরং অড্রের এখন টাকার প্রয়োজন। অড্রের বর্তমান অবস্থা প্রশ্নে এ্যাটনী জানালেন বিচ্ছেদের দরুণ তিনি কোন টাকা লেভিলের কাছ থেকে নেননি।

ব্যাটলকে জিমি বললেন, টাকার চাহিদাটা প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই আছে। লেভি ট্রেসিলিয়ানের মৃত্যুর পর স্যার ম্যাথুর সম্পত্তির অর্ধেক পাবেন লেভিল আর অর্ধেক পাবেন অড্রে। সুতরাং স্বার্থের বিচারে তাদের উপরে আমার সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। এদিকে কো যদিও কিছুও পাবে না, তবু তার ধারণা অড্রে নয় বাকী অর্ধেক ও পাবে। সে যদি লেভি ট্রেসিলিয়ানকে খুন করে থাকে তাহলে অবাক হবার কিছু নেই। টমাসের টাকার স্বার্থ নেই। মেরী, ব্যারট এদেরকেও তাহলে সন্দেহ করতে হয়। তবে তার মতে হেতুটা টাকা নয়, ঘৃণা বা অন্যকিছু।

অ্যঙ্গার্য মার্কহোয়াটার যে আত্মহত্যা করতে গেছিল তার সত্যবাদিতার জন্য লর্ড কর্নেল তাকে দক্ষিণ আমেরিকার ফার্মে চাকরী করতে পাঠান। দিন কয়েক বাদে সে সেখানে যাবে। তার আগে সে এখানে বেড়াতে এসেছে। জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে সে একদিন আত্মহত্যা করতে এসেছিল। খাবার আগে সে জায়গাটাকে আবার দেখতে চায়।

মার্ক হোয়াটার ইটারহেড হোটেলে উঠেছে। হোটেলের বারান্দায় বসে সে ওপারে পাহাড়ের দিকে তাকিয়েছিল। আজ তার কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই। সে দেশ ছেড়ে চলে যাবে।

তার ভাবনায় ছেদ পড়লো। তার পাশের ঘরে থাকে ছোট্ট একটা মেয়ে ডায়না নামে। সে তার কুকুরকে নিয়ে লনে ঘুরছে, সেই মেয়েটি তাকে ডাকছে।

হঠাৎ মার্ক হোয়াটারের মনে পড়ল তাকে একবার সালটিংটনে যেতে হবে। সেখানকার ড্রাইক্লিনিকে একটা আর্জেন্ট স্যুট কাঁচাতে দিয়েছে। সেটা আনতে হবে। হোটেল থেকে বেরিয়ে সে বাসে উঠল।

দোকানে বললো, তার স্যুট এখনও কাঁচা হয়নি। সে ভয়ানক রেগে গেল এবং তার স্যুট ফেরত দিতে বললো।

হোটেলে ফিরে সে কাগজ খুলে দেখল। সে তো একটা গাঢ় নীল রঙের স্যুট কাঁচতে দিয়েছিল। স্যুটের মধ্যে লেভেলের নাম লেখা থাকলেও এটা তার স্যুট নয়। সেই স্যুট থেকে একটা পচা গন্ধ বের হচ্ছিল। ওটা কিসের দাগ সে বুঝতে পারল না। সে ওই স্যুট নিয়ে ড্রাই ক্লিনিকে দেবে ঠিক করল।

.

৪.১০

রাত্তিরের খাওয়া চুকিয়ে ইটারহেড হোটেলে বেরিয়ে এল মার্কাহোয়াটার। ব্যালমোরাট কোর্টের সামনে খানিকটা যেতেই তার চোখে পড়ল গালস্ পয়েন্ট সেখানে একজন বৃদ্ধা খুন হয়েছে।

সে পাহাড়ের সেইখানে এসে দাঁড়াল, যেখানে সে মরতে চেয়েছিল কিন্তু মরতে পারেনি। তার জীবনে সঙ্গীর অভাব আজ তার তীব্রভাবে লাগছে। তার পত্নী মোনার কথা তার মনে হল সে যার জন্য মরতে চেয়েছিল। হঠাৎ সে দেখল একটা পরীর মত মেয়ে খাদের দিকে ছুটে আসছে। তাকে বাঁচাল সে। বললে তাকে সে মরতে দেবে না। মেয়েটি তার হাতে পাখির মত ছটফট করছিল। তাকে সে বললো, আত্মহত্যা করা মহাপাপ। তার দুঃখের কাহিনী শুনতে চাইল। সে যে অড্রে, মিঃ স্টেঞ্জর প্রথম স্ত্রী এটা সে বুঝতে পারল। তার স্বামীকে সবাই খুনী বলছে এটা সে মেনে নিতে পারছে না। তার মতে আসল খুনী তার স্বামীকে খুনী হিসেবে সাব্যস্ত করতে চায়। আসলে সে তার পূর্বতন স্বামীকে ভালোবাসে। এখনও সে তার স্বামীকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে দিতে চায় না। তাকে ফাঁসিকাষ্ঠে যাতে ঝুলতে না হয় তার ব্যবস্থা সে করবে বললো।

.

৪.১১

বাড়িতে মেরী একা ছিল। কিন্তু তার মন অবসন্ন। আজ জেরা কেউ করছে এই বিষয়ে সে বেশ আগ্রহী।

তার চাকর জানাল মিঃ মার্ক হোয়াটার নামে একজন ভদ্রলোক, যে অড্রের বন্ধু সে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। তাকে মেরী জানালেন যে অড্রে এখানে নেই। তিনি একগোছা লম্বা দড়ির খোঁজে এখানে এসেছেন। মেরী কিছু না প্রশ্ন করে বললো যে, মালীর ঘরে হয়তো দড়ি পাওয়া যাবে।

মার্কহোয়াটার মালির ঘরে দড়ি পেলেন না। তখন মেরী বললো যে, সিঁড়ির নীচে কুঠুরী আছে। যেখানে নানারকম জিনিসের মধ্যে (নিত্য প্রয়োজনী জিনিস নয়) দড়িও হয়তো পেতে পারেন।

মার্কহোয়াটার কুঠুরী থেকে লম্বাদড়ি বের করে নিলেন এবং মেরীকে বললো যে, কুঠুরীর ভিতরে সবকিছুর উপর ধুলো জমে আছে। কিন্তু দড়িটাতে কোন ধুলো লেগে নেই, একটু স্যাঁতসেঁতে মনে হচ্ছে।

তিনি মেরীকে বললেন তিনি দড়ি নিতে আসেননি। তার মনে হয়েছিল বাড়িতে একটা দড়ি থাকতে পারে সত্যিই আছে কিনা সেটা দেখতে এসেছিল। যাইহোক দড়িটাকে ওই কুঠুরীর মধ্যে আবার রেখে দিল। তারপর কুঠুরীর দরজায় তালাদিয়ে চাবিটা মেরীকে দিয়ে বললো, এটা এখন আপনার কাছে রাখুন পরে সুপারিন্টেন্টে ব্যাটল বা ইনসপেক্টরকে দিয়ে দেবেন।

মেরী কিছুই বুঝতে পারছিল না। মার্ক হোয়াটার বললো, বোঝার কিছু দরকার নেই বলে বেরিয়ে গেল।

বাড়ির সকলে এসেছিল এক জায়গায়। ব্যাটল বললো যে, তাদের সকলকে বাধ্য হয়ে বিরক্ত করতে হল। ব্যাটল তার পকেট থেকে নরমচামড়ার হলুদ রংয়ের ছোট্ট দস্তানা বার করলো।

অড্রেকে জিজ্ঞেস করলো এটা কার।

অড্রে মেরী দুজনেই বললো, তাদের নয়। কোর হাতে দস্তানাটা ঢুকল না। পরে অড্রের হাতে সেটি ঢুকল। লেভিল বললো যে, অড্রে জানিয়েছে ওটা ওর দস্তানা নয়।

ব্যাটল বললেন, এর জোড় দস্তানাটা তিনি তার ঘরের পাশে আইভিলতার ঝাড় থেকে পেয়েছেন। অড্রে বললেন যে, সে হয়ত ভুল বলেছিল। তার মানে একইরকম দস্তানা পাওয়া ভুল নয়।

লেভিলকে ব্যাটল অন্যঘরে ডাকলেন। তাকে ব্যাটল বললেন যে, গলফের ছড়ি দিয়ে নয়, লেভি ট্রেসিলিয়ানকে তার ঘরের দরজায় লম্বা একটা হাতল দিয়ে খুন করা হয়েছে। হাতলের ওজন কম নয়। তবে হ্যাঁ হাতলটা যে খুনের হাতিয়ার তা তারা বুঝতেন না যদি না পাশাপাশি হাতলের মধ্যে একটি ময়লা আর অন্যটা পরিষ্কার না থাকতো। পরিষ্কার হাতলে লেভির রক্ত পাওয়া যায়।

লেভিল বললো, এরজন্য কেন অড্রেকে সন্দেহ করা হচ্ছে?

ব্যাটল বললেন, হাতলের ছাপ থাকা অসম্ভব কারণ খুনী নিশ্চয়ই দস্তানা পরে ওই হাতলটা ব্যবহার করেছিল। এইরকম কথাবার্তা চলাকালীন অড্রে এসে সেই ঘরে ঢুকলো।

ব্যাটল এতে অসুবিধা বোধ করল না। লেভিল জানাল যে তার কোর্টের হাতায় অড্রের চুল আটকে যায়। তাই তার নীলরঙের স্যুটে কালো লম্বা মেয়েদের চুল ছিল। ব্যাটল এই কথায় মোটেও খুশী হলেন না। তিনি বললেন যে, তার কোটের হাতায় যে চুল পেয়েছি তার রং লাল। কালো চুল পেয়েছি কলারে আর কাঁধে।

ব্যাটল বললেন, ওই কোটে প্রাইমোভেরা ন্যচুয়াল পাউডারের গন্ধ পাওয়া গেছে, যে পাউডার মিসেস অড্রের। মিসেস অড্রের বা হাতের দস্তানা যেটায় রক্ত লেগে আছে মিস্টার ব্যাটল সেটা দেখালেন। তিনি বললেন যে, অড্রে ন্যাটা সেটা তিনি দেখেছেন। কেননা সে বাঁহাতে সিগারেট ধরে। খুনী যে ন্যাটা তাতে সন্দেহ নেই। আঘাত করা হয়েছে সামনে থেকে এবং আঘাত করা হয়েছে তার ডান কপালে এবং যেদিকে মাদামের আঘাত লেগেছিল একজন ন্যাটার পক্ষেই সেখানে আঘাত করা সম্ভব।

লেভিল এটা ব্যাটলকে বোঝাতে চান যে, অড্রে টাকার লোভে লেডিকে খুন করেনি।

ব্যাটল বললেন যে, অড্রে তার উপর মনে মনে অখুশী। তাই তাকে শাস্তি দেবার জন্য তিনি নিজে তাকে খুন না করে সে খুনের দায়টা লেভিলের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। তিনি এমন ভাবেই নির্বাচন করে খুনটা করেন। লেভি ট্রেসিলিয়ানের সঙ্গে যে রাত্রে তার ঝগড়া হয় তিনি বেরিয়ে যাবার পর খানিকবাদে তার পরিত্যক্ত নীলকোট পরে হাতল দিয়ে খুন করে। হাতল ধুয়ে মুছে, গলফের ছড়িতে ট্রেসিলিয়ানের ঘরে তার চুল, রক্ত লাগিয়ে রাখেন তারপর ওয়ার্ডডোবে তার কোর্টটা রাখেন। এর একমাত্র উদ্দেশ্য তাকে ফাসানো। কিন্তু লেভিল বেরিয়ে যাবার পর যে লেভি ঘণ্টা বাজান এটা সে বুঝতে পারেননি। তাই তিনি ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছেন।

লেভিল তা মানতে চাইল না। আসলে অড্রে যে খুনী নয় এটা লেভিল বলতে চায় বার বার কিন্তু পুলিস তাকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করবে বলে ঠিক করেছে।

টমাস বললো যে, অড্রে লেভিলকে ত্যাগ করে তার দাদা অড্রিয়ানের সঙ্গে চলে যায়। যিনি কয়েকদিন পর মারা যায়। অড্রে নিজে বিবাহবিচ্ছেদ মামলা নিয়ে আসে যাতে কলঙ্ক লেভিলের উপর পড়ে। এসব ঘটনা অড্রিয়ানের চিঠির থেকে টমাস জানতে পারে।

লেভিলকে অড্রে ঘৃণা করে না বরং তার মনে যাতে দুঃখ না হয় এইজন্য সে কয়েকদিন তার সাথে কাটাতে চেয়েছিল। তার খুন করার কোনো উদ্দেশ্য নেই।

ব্যাটল তথ্য প্রমাণের জন্য তাকেই খুনী মনে করছেন। তিনি যদি তাকে খুনী না মানেন তাহলে এমন কেউ খুন করেছে, সে যে এমনভাবে প্রমাণ সাজিয়েছে, যাতে তিনি খুনী বলে প্রতিপন্ন হন।

ব্যাটল তাই প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে ধরতে চায়। ব্যাটল বললেন যে, উপস্থিত প্রমাণের ভিত্তিতে তিনি তাকে গ্রেপ্তার করবেন। পরে যদি তা জাল মনে হয় তাহলে যা করবার করবেন, ব্যাটল ঘরে ঢুকতে অড্রে উঠে দাঁড়িয়ে বললো যে, তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য এসেছেন।

অড্রে উৎকণ্ঠা থেকে বাঁচল যখন তাকে গ্রেপ্তার করা হলো না।

মিঃ মার্ক হোয়াটারের উদয় হলো। তিনি ব্যাটলকে বললেন যে, সোমবার রাত্রে তিনি যা দেখেছেন তার গুরুত্ব কতখানি তিনি বুঝতে পারেননি, কিন্তু তিনি সোমবার রাতে যে জিনিসটা এ বাড়ির দিকে তাকিয়ে এ বাড়িটার মধ্যে যা দেখেছিলেন, খুনের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

কে হঠাৎ অড্রেকে বললো যে, সে জেনেছে অড্রে খুন করেছে। লেভিল তাকে চুপ করাল। ইনসপেক্টর জেনে যাবার জন্য অড্রেকে জামাকাপড় গুছিয়ে নিতে বললেন। ব্যাটল বললেন যে, ভদ্রলোক বড় অদ্ভুত কথা বললেন।

লেভিল অড্রের জন্য এ্যাটর্নী দাঁড় করাতে চান। ব্যাটল বললেন যে, মার্কহোয়াটার যা বললেন, তাতে মনে হয় তাকে একটা ছোট্ট এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে।

অড্রে চলে গেল, মিঃ মার্ক হোয়াটারের সঙ্গে ব্যাটল একটা এক্সপেরিমেন্টের জন্য ফেরীঘাটে যাওয়া হল।

.

০৫.

৫.১

রহস্য উপন্যাসে একেবারে গোড়াতে কেউ না কেউ খুন হয়ে যায়, ব্যাটল বললেন। তিনি মনে করেন ক্লাইম্যাক্স খুনের জন্য প্ল্যান করতে হবে। আর সেই প্ল্যান অনুযায়ী একটু একটু করে এগোতে হয়। একটু একটু করে চক্রান্তের জাল বিছিয়ে যেতে হয়। খুন হচ্ছে চক্রান্তের শেষ পরিণতি।

ব্যাটল বললেন, এই ঘটনায় বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে। এখানে নাটকের পঞ্চম অঙ্কের শেষ দৃশ্য ঘটেছে।

ব্যাটল মনে করেন লেভির খুন পরিণতির পথে এটা একটা সোপান মাত্র। খুনী আসলে লেভিকে খুন করে দুসেট প্রমাণ সাজিয়ে রেখেছিল। প্রথম সেটটা লেভিল স্টেঞ্জের বিরুদ্ধে এবং দ্বিতীয়টি অড্রের বিরুদ্ধে। খুনী জানত প্রথমটি ভুয়ো হলে তার নজর গিয়ে পড়বে দ্বিতীয়টির উপর। কিন্তু দ্বিতীয় সেটের প্রমাণগুলিকে আমরা সাজানো বলে সন্দেহ করতে পারি। এটা সাজানো প্রমাণ বলে সন্দেহ হয়েছে। অড্রের চিরুনী থেকে খানিকটা চুল আর খানিকটা পাউডার লেভিলের কোটে বসানো হয়েছে। খুনী দস্তানাটা আগে চুরি করে সেখানে লেভির রক্ত লাগিয়ে সেটাকে আইভিলতার ঝাড়ের মধ্যে ফেলে দেয়। অড্রের বিরুদ্ধে যেসব প্রমাণ পেয়েছি সেগুলি অকাট্য প্রমাণ।

অড্রে যে নির্দোষ তা তার মনে হয়েছে। কিন্তু তার প্রমাণ যতক্ষণ না জাল বলে প্রমাণিত হয় ততক্ষণ তাকে তিনি দোষী ভাবছেন।

মিঃ মার্কহোয়াটার বলেন সোমবার রাত্তিরে তিনি ইটারহেড হোটেলের বারান্দায় বসেছিলেন। তার হাতে দূরবীনও ছিল। সেই দূরবীন রাত ১১টা নাগাদ সে চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখে গালস পয়েন্টের জানালা থেকে দড়ি ঝুলছে। পাঁচিলের উপর দিয়ে সেই দড়ির প্রান্ত নদীর উপর এসে পড়েছে। নদীর মধ্যে থেকে আবছায়া একটা মূর্তিকে তিনি গাল পয়েন্টের দোতলায় উঠে যেতে দেখেছেন।

মেরী বললো, তাহলে খুনী বাইরের লোক। ব্যাটল বললেন, সে বাইরে থেকে গালস পয়েন্টে ঢুকেছিল বটে তবে সে বাইরের লোক নয়। নদীর ওপার থেকে সাঁতরে সে এপারে এসেছিল। কিন্তু ওপারে গিয়ে গালস্ পয়েন্টের ভিতরে কোন বন্ধু তার জন্য দড়ি ঝুলিয়ে রেখেছিল। ব্যাটল বললেন, রাত এগারোটার সময় কেউ এখানে এসেছিল। বিভিন্ন লোক ইটারহেড হোটেলে আসা যাওয়া করেন।

এখন সবাই যদি বলেন তারা হোটেলেই আছেন, তাহলে সবাই সত্যি বলছেন এটা নির্ভরযোগ্য নয়। ল্যাটিমারের দিকে তাকাতে তিনি বললেন তিনি সাঁতার কাটতে জানেন না। তিনি মিঃ ল্যাটিমারকে জলে ফেলে দিলেন। মিঃ জোনস্ তাকে বাঁচিয়ে আনলেন এর থেকে প্রমাণ হল যে তিনি সত্যি সাঁতার জানেন না। কিন্তু সেই ব্যক্তি?

মিঃ ব্যাটল তখন স্টেঞ্জকে বললেন যে, তিনিই সাঁতরে এদিকে এসেছিলেন দশটা পঁয়ত্রিশে। এগারোটার সময় তার বন্ধুর সঙ্গে তার দেখা হয় তাহলে মাঝের সময়টা তিনি কি করছিলেন? তিনি বলতে চাইলেন তিনি তার বন্ধুকে খুঁজছিলেন। কিন্তু ব্যাটল বললেন এটা ভুল কেন না অতক্ষণ ধরে কারোকে খোঁজা সম্ভব নয়। তিনি স্টীমার থেকে নেমে আবার ওপরে চলে যান। তারপর দোতলায় উঠে আমি লেভিকে খুন করি এটা বললো লেভিল।

ব্যাটল বললেন, হ্যাঁ, তিনি দড়িবেয়ে তার ঘরে ওঠেন, যে দড়িটা আগেই তিনি উপরে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। তার ঘরে জল ঝরতে দেখেছিলেন। তিনি নিজের ঘর থেকে লেভির ঘরে গিয়ে তাকে খুন করেন। তারপর হাতলটা ধুয়েমুছে রাখেন এবং তার আগে তিনি অড্রের দস্তানা চুরি করে রক্ত লাগিয়ে আইভিলাতার ঝড়ে ফেলে আসেন এবং দড়িটা অকেজো জিনিসপত্রের ঘরে ফেলে আসেন। এইসব তিনি অড্রের স্টেঞ্জকে ঘৃণা করেন কেননা সে তাকে ত্যাগ করে অড্রিয়ানের কাছে চলে গেছিল বলে সেইজন্যই করেছেন।

আসলে তিনি বাল্যকাল থেকে অপ্রকৃতিস্থ, ছোটবেলায় তিনি একটি শিশুকে খুন করেন। অড্রেকে তিনি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলাবেন বলে এইটি করেন, তিনি দুসেট প্রমাণ সাজান, যাতে পুলিস বিভ্রান্ত হয়। নিষ্কৃতি অড্রে পেতেন না যদি না টমাস বলে বসতেন যে তাকেই ত্যাগ করেছেন অড্রে। আসল খুনীকে বের করার জন্য মার্কহোয়াটার এলেন। আসলে তিনি চালাক মনে করলেও তিনি মূর্খ উন্মাদ।

হঠাৎ বলে উঠল লেভিল যে সে পাগল নয়। যদি মার্কহোয়াটার দেখতে না পেত তিনি কোনদিন ধরা পড়তেন না।

.

৫.২

অড্রে বললেন যে, তার সারাটা সময় ভয়ে কাটত। লেভিলকে তিনি ভয় করতেন। এক এক সময় মনে হত তার যে তিনি মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছেন। আসলে লেভিল নিজেও পাগল হয়ে যাচ্ছিলেন।

তিনি নিজের উপর রাগ পুষে রাখতেন এবং তারজন্য তিনি কেমন হয়ে যাচ্ছিলেন। অড্রিয়ান তার বন্ধুকে তিনি বিশ্বাস করেন। তার সাথে তিনি পালিয়ে ছিলেন। সে মোটর অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান। অড্রের মনে হয় এটা ঘটানো হয়েছে। এমনসময় একদিন সে লেভিলের ঠিকানা জোগাড় করে তার সাথে দেখা করতে আসে তারপর তাকে সে ডিভোর্স দিতে চায়।

অড্রে ডিভোর্স নেয় এর জন্য সে কোন টাকা নেয়নি। তারপর সে আবার বিয়ে করল। গালস। পয়েন্টে যখন সে বউকে নিয়ে এল তখন অড্রেকে ডেকে আলাপ করিয়ে দেবার জন্য তাকে ডাকা হল। অড্রে সহৃদয় ভাবেই তার ডাকে সাড়া দিল। এই ভাবেই সে তার ফাঁদে পড়ল। কিন্তু অড্রে ভাবতে পারেনি এরকম কিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটবে।

ব্যাটল বললেন, প্রত্যেকের একটা না একটা কিছু শারীরিক লক্ষণ থাকে। লেভিলেরও আছে। তার বাঁহাতের কড়ে আঙ্গুল ডান হাতের কড়ে আঙ্গুল থেকে ছোট। মিঃ ট্রিভস বলেছিলেন খুনীর একটা শারীরিক লক্ষণ আছে।

অড্রে জানাল মিঃ ট্রিভস এবং ল্যাটিমার যখন গল্পে মেতে ছিলেন তখন লেভিল লিফটের সামনে নোটিশ লাগান।

মিঃ মার্কহোয়াটারের সাক্ষ্য এক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করছে। তিনি দেখেছিলেন কে একজন দড়ি বেয়ে গালস পয়েন্টের দোতলায় উঠেছে। তার আগে ড্রাইক্লিনিকের ব্যাপারে তার সন্দেহ হয়। তিনি সে স্যুটটি পান তাতে পচা মাছের গন্ধ ছিল। ওটি মিঃ স্টেঞ্জের স্যুট ছিল। সোমবার রাতে গালস্ পয়েন্ট থেকে বেরোবার পর তার পরনে ছিল ছাইরঙের স্যুট। স্টিমারে পার হয়েই অন্ধকারে তিনি স্যুটটি খুলে নদীর টিলারের ফোঁকরে রাখেন যেখানে মাছ ছিল। তারপর খুন করে ওপারে যাবার পর ছাইরঙা স্যুটটা পরেন। তার কোর্টের থেকে একটা পচা মাছের গন্ধ পাওয়া যায়। যা ইটারহেড হোটেলের কর্মচারীরাও পেয়ে থাকে। মার্কহোয়াটার তিনি সালটিংটনে একটা ড্রাই ক্লিনিক থেকে তার স্যুটটা আনতে গিয়ে দেখেন তার স্যুটটা বদলে যায়। সেই স্যুট দেখে তিনি বুঝতে পারেন যে এটা পড়ে কেউ নদীতে সাঁতার কেটেছিল যা রেখে ছিল পচা মাছের কাছে। দুয়ে দুয়ে চার হওয়াতে তার অসুবিধে হয়নি। তিনি তাই তা পুলিসকে জানান।

ব্যাটল বললেন যে, লেভিল ঘর থেকে বার হয়ে যাবার পর একটা ঘণ্টা বেজেছিল। আসলে ঘন্টা লেভি বাজাননি, আসলে মিঃ লেভিল নিজের অ্যালবাই পরিষ্কার রাখার জন্য ঘন্টাটা বাজায়। ঘন্টা বাজার পর ব্যারট ওপরে যাবার পর লেভি বলতে পারেননি কি কারণে ঘণ্টা বাজানো হয়েছে।

তিনি ব্যারটকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রাখলেন। এর কারণ যাতে পুলিস বাইরের কাউকে সন্দেহ না করে। কো যাতে তার প্রতি নজর না দেয় এরজন্য অড্রের প্রতি তিনি বেশ অন্তরঙ্গ ব্যবহার করেন, যার জন্য কো রেগে যান এবং ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। তাই তার পক্ষে কোন সাক্ষী থাকবে না। তিনি ন্যাটা নন কিন্তু এমনভাবে মেরেছেন যাতে মনে হয় ন্যাটা কেউ খুন করেছেন। তিনি টেনিস খেলেন। এইজন্য ব্যাকহ্যাণ্ড মেরে ন্যাটা লোকের কাজ বলে খুনটা প্রতিপন্ন করতে চান।

ব্যাটল বললেন, অড্রেকে দেখে তার নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। তাই তাকে তিনি বাঁচাতে চেয়েছিলেন। তাকে ব্যাটল আবার নতুনভাবে বাঁচার পরামর্শ দিলেন।

.

৫.৩

ইটারহেড হোটেলের কামরায় মার্কহোয়াটার তার স্যুটকেসটা গোছাচ্ছিল। অড্রেকে জানাল সে দক্ষিণ আমেরিকায় যাচ্ছে।

অড্রে তাকে জানালেন তিনি তার প্রাণ বাঁচিয়েছেন বলে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন। তাকে দেখে মার্কের মনে হয়েছিল তিনি নির্দোষ। কিন্তু তিনি নির্দোষ না হলেও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেন। আসলে তিনি পুলিসের কাছে মিথ্যে বলেছিলেন। সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল তিনি তাই চাঁদের আলোয় দড়ি দেখতে পারেননি। তার দেখার কথাটা মিথ্যে হলেও ঘটনাটা মিথ্যে নয়। কোর্টের কাঁধে দাগ দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সেই রাতে কেউ সাঁতার দিয়ে নদী পার হয়ে দড়ি দিয়ে উপরে উঠেছিল। সে গালস পয়েন্টের কুঠুরীতে গিয়ে ভিজে দড়িটা আবিষ্কার করেন। যদি তিনি বলতেন এটা তার অনুমান তাহলে পুলিস তাকে পাত্তা দিত না। তাই সে বললো যে, সে এটা সচক্ষে দেখেছে। আসলে সে মিথ্যে না বললেও সে মনে করে নির্দোষকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যে বলা উচিত। সে ভালোবাসে অড্রেকে তা বলে তার জীবনের সঙ্গে তাকে জড়াতে চায় না, তিনি এদেশ থেকে চলেই যাচ্ছেন। তিনি তার জীবন থেকে দয়া করে মুছে ফেললেন।

আসলে লেভিল তা স্বীকার করেছিল। তবে ঘটনাটা সত্যি ছিল বলে ইনসপেক্টর বুঝতে পারলেও তিনি সন্দেহ চেপে রাখেন। সেইজন্য তিনি বলেন লেভি যেদিন খুন হন সেদিন রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল।

মার্ক বললেন যে, লেভিলের স্বীকারোক্তির পর তাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে। তাই তাকে আর সাক্ষ্য দিতে হবে না। তিনি জাহাজে ওঠার জন্য তৈরী হচ্ছেন।

অড্রে বললো, সে তার সঙ্গে যেতে চায়, কেননা তার মত আর কাউকে সে পাবে না।

টমাস অড্রেকে ভালোবাসে, অড্রে মনে করে মেরীকে সে বিয়ে করলে সে অনেক সুখী হবে।

কিন্তু আমার সঙ্গে যে তোমাকে নিয়ে যাব তার আগে তো আমাদের বিয়ে হওয়া দরকার। স্পেশাল লাইসেন্স নিয়ে যে বিয়ে করব তারজন্য তো বেশকিছু টাকা লাগবে। আমার পকেটটা শূন্য। কাল সকালেই তাহলেই একবার ব্যাঙ্কে যেতে হয়।

ব্যাঙ্কে যাবার দরকার নেই। ও টাকা তোমাকে আমিই দিচ্ছি।

না। মার্কহোয়াটার বললো, বিয়ে যদি করতে পারি তাহলে লাইসেন্সের টাকাও আমি দিতে পারব। অড্রের কাঁধে হাত রাখল মার্কহোয়াটার। বললো, প্রথম যখন আমি তোমাকে দেখি, মনে হয়েছিল আমি মানুষ না পাখি। মনে হচ্ছিল ভয় পেয়ে পালাতে চাইছ। অড্রে মার্কহোয়াটারের দিকে তাকিয়ে বললো, আর পালাতে চাইব না।

 

Exit mobile version