আমরা মরগ্যানের দূত। আমরা সাহায্য করতে এসেছি, জানাল কিশোর।
মাথা নাড়লেন মানুষটি।
বুঝতে পারছি না, গভীর, ক্লান্ত স্বরে বললেন তিনি, তোমাদের মত বাচ্চামানুষরা কীভাবে সাহায্য করতে পারে!
কখনও কখনও ছোটরাও অনেক কাজে আসে, বলল জিনা।
কিশোর আর আমি আহত সৈনিকদের সাহায্য করেছি।
আমরা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদেরও সাহায্য করেছি, যোগ করল কিশোর।
মানুষটি খানিকটা সোজা হয়ে বসলেন।
বাহ, চমৎকার, সপ্রশংস কণ্ঠে বললেন।
কীভাবে করেছি আপনাকে জানাতে চাই, বলল জিনা। গৃহযুদ্ধের সেই তালিকাটা তুলে ধরে দেখাল। আহতদেরকে কীভাবে সাহায্য করতে হয় তা এখানে আছে।
এবার কিশোর স্যান ফ্রান্সিসকো ভূমিকম্পের সময় পাওয়া কাঠের টুকরোটা তুলে ধরল।
এতে বলছে সব হারানোর পরও আশা টিকে থাকে, বলল ও।
বিশেষ লেখা দুটি এক ঝলক দেখে নিলেন মানুষটি। এবার অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে কিশোর আর জিনার দিকে চাইলেন।
এগুলো আমার কাছে নিয়ে আসার জন্যে ধন্যবাদ, বললেন তিনি। তোমরা কি জাদু জানো?
না, না, বলে উঠল জিনা। মরগ্যান জাদু জানে। আমরা সাধারণ ছেলে-মেয়ে।
মানুষটি মৃদু হাসলেন। তাঁকে এখন আগের চাইতে কম ক্লান্ত আর বিষণ্ণ দেখাচ্ছে।
আর আমি সাধারণ এক রাজা, মৃদু কণ্ঠে বললেন। দুটো সাধারণ ছেলে-মেয়ে যদি সাহস আর আশা খুঁজে পেতে পারে, তা হলে একজন সাধারণ রাজারও তা পাওয়া উচিত।
ধীরেসুস্থে উঠে দাঁড়ালেন তিনি।
যাই নাইটদের সাথে কথা বলিগে, বললেন। তোমাদের আনা জ্ঞানের কথা ওদেরকে জানাই।
আলখিল্লা জড়িয়ে নিয়ে কিশোর আর জিনার উদ্দেশে বাউ করলেন।
ধন্যবাদ, বললেন। এবার দৃপ্তপায়ে, বেরিয়ে গেলেন মরগ্যানের লাইব্রেরি ছেড়ে।
হ্যাঁ, ধন্যবাদ, বলে ওদের দিকে এগিয়ে এল মরগ্যান।
ইউ আর ওয়েলকাম, বলল ওরা।
এগুলো আপনার লাইব্রেরির জন্যে, বলল কিশোর। বিশেষ লেখাগুলো তুলে দিল মরগ্যানের হাতে।
মরগ্যান স্মিত হাসল।
এখানে যে সব পাঠক আসবে এগুলো তাদের কাজে লাগবে, বলল।
খুব ভাল, বলল জিনা। না, তোমাদের বাড়ি ফেরার সময় হলো, বলল মরগ্যান।
কিশোর মরগ্যানের লাইব্রেরির চারধারে নজর বুলাল। ওর যেতে মন চাইছে না। এত সুন্দর কামরা ও এর আগে দেখেনি।
চিন্তা নেই, তোমরা আবার ফিরে আসতে পারবে, বলল মরগ্যান, ওর মনোভাব বুঝতে পেরেছে। তোমরা অবশ্যই আসবে, কারণ তোমাদের জন্যেই ক্যামেলট রক্ষা পেয়েছে। আপাতত বিদায়।
কিশোর আর জিনা মুখ খুলতে পারার আগেই, আরেকটি চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানি দেখা গেল।
এবার ওরা পৌঁছে গেল ট্রী হাউসে, ফ্রগ ক্রীক বনভূমিতে-ভোর বেলায়।
১০
বিশ্বাসই হচ্ছে না আমরা মরগ্যানের লাইব্রেরি থেকে ঘুরে এসেছি, বলল জিনা।
কিশোর মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকাল।
অবিশ্বাস্য না? বলল জিনা।
হ্যাঁ, বলল কিশোর।
এসময় দমকা হাওয়া প্রবেশ করল ট্রী হাউসের জানালা দিয়ে। ফলে, স্যান ফ্রান্সিসকো নিয়ে লেখা ওদের গবেষণার বইটা খুলে গেল। জিনা বইটার দিকে হাত বাড়াল।
কিশোর! বলল সে। এটা দেখো!
বইটার এক ফটোগ্রাফে আঙুল রাখল। ওটায় দেখা গেল ধুলোয় মাখামাখি এক ছেলে ও এক মেয়েকে। ছেলেটির হাতে এক টুকরো কাঠ। আশা জাগানিয়া সেই কবিতাটি।
জিনা ক্যাপশনটা পড়ে শোনাল:
ভূমিকম্পের পরে, গোটা শহর যখন গ্রাস করে
নিচ্ছে আগুন, তখন দুটি সাহসী ছেলে-মেয়ে
অন্যদের মনে আশা জাগানোর চেষ্টা করে।
হেসে উঠল জিনা।
আমাদের কথা লিখেছে! বলল ও। আমরা স্যান ফ্রান্সিসকো ছেড়ে আসার আগে জন এই ছবিটা নেয়।
কিশোর হেসে উঠে মাথা ঝাঁকাল। বিস্মিত।
বইটা বন্ধ করল জিনা।
আমরা রাজা আর্থারকেও আশা দেয়ার চেষ্টা করেছি, বলল কিশোর। তাই না?
রাজা আর্থার? জিনার প্রশ্ন।
হ্যাঁ, বলল কিশোর। ব্যাক-প্যাক পিঠে নিয়ে দড়ির মই বেয়ে নামতে লাগল। ওটাই মরগ্যানের লাইব্রেরির রহস্য। ক্যামেলটকে রক্ষার জন্যে রাজা আর্থারকে আশা আর সাহস দেয়ার দরকার ছিল, আমরা সেটা দিয়েছি।
উনি রাজা আর্থার নন,বলল জিনা। কিশোরকে অনুসরণ করল।
অবশ্যই রাজা আর্থার, বলে মাটিতে পা রাখল কিশোর। উনি বললেন শোননি উনি একজন সাধারণ রাজা?
কিন্তু রাজা আর্থার তো কোন সাধারণ রাজা নন।
উনি তেমনটাই ভাবেন। আমি জানি উনিই রাজা আর্থার, বলল কিশোর।
স্মিত হাসল ও। বনভূমি ভেদ করে পা চালাল।
জিনা ওকে অনুসরণ করল।
রাজা আর্থার!
পাখির গানে ভোরের বনভূমি ভরপুর, জিনা মরগ্যানের লাইব্রেরিতে ওদের বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবল। বিষাদগ্রস্ত রাজার কথা মনে পড়ল ওর এবং কীভাবে ওদের জোগাড় করা লেখাগুলো তাকে সাহস জুগিয়েছে।
কিশোর মনে হয় ঠিকই বলেছে। ওরা সত্যিই হয়তো ক্যামেলটকে রক্ষায় সাহায্য করেছে রাজা আর্থারকে। আবার কোনদিন হয়তো ওরা
ওখানে ফিরে যাবে।
জলদি চলো! চেঁচিয়ে ডাকল কিশোর। আঙ্কল-আন্টি জেগে ওঠার আগেই।
আসছি! পাল্টা চেঁচাল জিনা। দৌড় দিল কিশোরের পিছু পিছু।