আমাদের সাথে চলো। আমরা পার্কের দিকে যাচ্ছি! বলল লিণ্ডা।
আপনারা যান, আমরা বাসায় যাব, বলল জিনা।
চলো, জন! তোমরা সাবধানে যেয়ো! বলল লিণ্ডা। পালাই চলো!
ফটোগ্রাফারের যন্ত্রপাতি নেয়া হয়ে গেলেই ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিল। ওরা।
মনে হয় ওরা আমাদেরকে চিনতে পারেনি, বলল জিনা।
আমরাই কি নিজেদের চিনতে পারছি? বলল কিশোর।
আরেকটা বিস্ফোরণের শব্দে মাটি কেঁপে উঠল।
পালাই চলো! বলল জিনা।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ওরা দুজন। ব্যাগের ভিতরে কবিতাটা ঢুকিয়ে রাখল কিশোর। এবার আবার পাহাড় বেয়ে নামতে লাগল।
৮
কিশোর আর জিনা নুড়ি পাথরের উপর দিয়ে দৌড় দিল। ডিনামাইটের কানে তালা লাগানো শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ওদের পিছনে।
পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে ওরা। আগুনের শিখা ছিটকে ছিটকে যাচ্ছে এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে।
আমরা সোজা আগুনঝড়ের দিকে যাচ্ছি, শোরগোল ছাপিয়ে শোনা গেল কিশোরের কণ্ঠস্বর।
যেতেই হবে, এ ছাড়া উপায় নেই, পাল্টা চেঁচাল জিনা। দেরি। করলে ট্ৰীহাউসে আগুন ধরে যাবে!
পাহাড়ের নীচে, রাস্তা ধরে ভেসে যাচ্ছে ঘন ধোঁয়ার মেঘ। চোখ জ্বালা করছে কিশোরের।
ট্রী হাউসটা কোথায়? চিৎকার করল ও।
এখানে! বলল জিনা।
কিশোর ওকে অনুসরণ করল।
দড়ির মইতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে জিনা।
এখনও এখানে আছে! স্বস্তির শ্বাস ফেলল কিশোর।
কেন থাকবে না। আমাদেরকে না নিয়ে ট্রী হাউস যায় কখনও? বলল জিনা। তুমি–
ওঠো! ওঠো! তাগাদা দিল কিশোর।
দড়ির মই বেয়ে উঠতে লাগল জিনা। ওকে অনুগমন করল। কিশোর। ট্রী হাউসে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে চাইল ওরা।
চারধারে বাড়িগুলো সব জ্বলছে। কালো ধোঁয়া যেন গিলে খাবে শহরটাকে।
শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কিশোরের। গলা পুড়ে যাচ্ছে। চোখ জ্বালা করছে।
জিনা পেনসিলভেনিয়ার বইটা চেপে ধরল। ফ্রগ ক্রীকের ছবিটা বের করে তাতে আঙুল রাখল।
আমরা ওখানে যেতে চাই, বলল ও। গুড লাক, স্যান ফ্রান্সিসকো!
গুড বাই, স্যান ফ্রান্সিসকো! বলল কিশোর। বাতাস বইতে শুরু করল। ঘুরতে আরম্ভ করেছে ট্রী হাউস। বন-বন করে ঘুরছে। এবার সব কিছু স্থির হয়ে গেল। একদম নিথর।
৯
ভোরের পাখির গানে মুখরিত বনভূমি।
কিশোর চোখ মেলে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
ফ্রগ ক্রীকে ফিরে এসেছে ওরা। আবার বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছে। এখন আর চোখ জ্বালা করছে না। ওর পরনে নিজের পোশাক, পায়ে নিজের স্নিকার্স।
ভাবছি ওদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল, উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল জিনা। অ্যাণ্ড্রু, পিটার আর ওদের খালা, লিণ্ডা আর জন এবং অন্যান্যদের।
কিশোর ওদের গবেষণার বইটা বের করল। পাতা উল্টে শেষ অধ্যায়ে চলে এল। জোরে জোরে পড়ল:
ভূমিকম্পের পর আগুন নেভানো হয়। সারা পৃথিবী
থেকে ত্রাণ পাঠানো হয় স্যান ফ্রান্সিসকোতে। সাহসী
নগরবাসী হাল ছাড়েনি। অনেকে এখুনি,
পুনর্নির্মাণ করি এসো লেখা ব্যাজ পরেছিল। দশ
বছরের কম সময়ে স্যান ফ্রান্সিসকো আবার
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত হয়।
যাক, বাবা, স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলল জিনা। কবিতাটা আছে তো?
প্যাকে হাত ভরে দিল কিশোর। পিটার আর অ্যাণ্ড্রুর কবিতাটা বের করে আনল।
মেঝের উপর রাখল ওটা।
এখন কী হবে? প্রশ্ন করল জিনা।
আচমকা একটা গর্জন শোনা গেল। উজ্জ্বল এক আলো ঝলসে গেল ট্রী হাউসে।
মুখ ঢাকল কিশোর। আঙুলের উপর দিয়ে উঁকি দিতেই, মরগ্যান লে। ফে-কে দেখতে পেল।
মরগ্যান! কিশোর আর জিনা উৎফুল্ল কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল। দুজনেই জড়িয়ে ধরল মরগ্যানকে। মরগ্যানও ওদেরকে আলিঙ্গন করল। আপনার লাইব্রেরির জন্যে লেখা নিয়ে এসেছি! বলল কিশোর। কাঠের টুকরোটা তুলে ধরল জিনা।
এই যে! বলল।
এগিয়ে দিল মরগ্যানের দিকে। কিন্তু মরগ্যান একটা হাত ওঠাল।
আমাকে দিয়ো না, বলল সে। আরেকজনের এগুলো বেশি। দরকার।
হঠাৎই চোখ ধাঁধানো আলো ঝলসে গেল ট্রী হাউসের ভিতর দিয়ে। প্রচণ্ড এক গর্জন উঠল, তারপর নীরবতা।
কিশোর আর জিনা যখন চোখ মেলল, ওরা তখন আর জাদুর ট্র হাউসে নেই।
তার বদলে বিশাল এক ছায়াময় কামরায় দাঁড়িয়ে। ঘরে চমৎকার এক সুগন্ধ-চামড়া, বই আর কাঠ-পোড়া আগুনের।
পেল্লায় এক পাথুরে চুলায় ফট-ফট শব্দে ফাটছে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। দেয়ালগুলোতে সারি সারি লম্বা বইয়ের তাক-বই ভর্তি।
আমার লাইব্রেরিতে স্বাগতম, মৃদু কণ্ঠে বলল মরগ্যান।
বাব্বা, ফিসফিস করে বলল কিশোর। দারুণ তো!
একজন তোমাদের জন্যে অপেক্ষায় আছেন, বলল মরগ্যান।
আমি তাকে বলেছি শীঘি দুজন বিশেষ দূত এসে পৌঁছবে।
কোথায় তিনি? জিনার প্রশ্ন।
মরগ্যান আঙুল তাক করল। গাঢ় নীল পোশাক পরা এক লোক লাইব্রেরির এক কোনায় চেয়ারে বসে। মাথা নোয়ানো তার। কাঁচা পাকা চুল।
ক্লান্ত মনে হচ্ছে, ফিসফিস করে বলল জিনা।
হ্যাঁ, উনি এবং ওঁর নাইটরা পরাজিত হয়েছেন, শান্ত কণ্ঠে বলল মরগ্যান। উনি রাজ্য রক্ষার আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
আমরা ওঁকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি? জিনার প্রশ্ন।
কিশোরের হাতে ধরা বিশেষ লেখাটির দিকে চোখ নামিয়ে চাইল। মরগ্যান।
এটা দেখালে কাজ হবে? কিশোর জানতে চাইল।
স্মিত হাসল মরগ্যান।
যাও, দেখাও ওঁকে! বলল জিনা।
ওরা কামরাটা পার হয়ে ক্লান্ত মানুষটির সামনে নতজানু হয়ে বসল।
মাফ করবেন, বলল জিনা।
মানুষটি চোখ তুলে চাইলেন। ধূসর চোখের মণিতে বিষণ্ণ দৃষ্টি।