আমরা পালাতে পেরেছি, কিন্তু বেশিরভাগ জিনিস পুড়ে গেছে, বলল অ্যাণ্ড্রু।
এমনকী জুতোও, বলল পিটার।
কিশোর আর জিনা ছেলে দুটির পায়ের দিকে চাইল। কেটে গেছে, রক্তাক্ত।
আমার বুটজোড়া ছেলেদের বুটের মত, বলল জিনা। একজন এগুলো পরতে পারো।
আমারটাও নাও, বলল কিশোর। ও আর জিনা বুটের ফিতে খুলতে লাগল।
আমরা এমনি এমনি তোমাদের জুতো নিয়ে নিতে পারি না, বলল। অ্যাণ্ড্রু।
তা হলে ধার নাও, বলল কিশোর।
ছেলে দুটির হাতে জুতো তুলে দিল ওরা।
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, বললেন মেরি খালা। আবারও কেঁদে ফেললেন।
ছেলে দুটি বুট পায়ে গলাল। এবার পিটার ফিসফিস করে অ্যাণ্ড্রুকে কী যেন বলল। অ্যাণ্ড্রু কাঠের টুকরোটা কিশোর আর জিনার দিকে বাড়িয়ে দিল।
তোমরা এটা ধার নিতে পারো, বলল ও।
কাঠের টুকরোয় লেখা দুভাইয়ের একটা কবিতা পড়ল কিশোর আর জিনাঃ
দেয়ার ইজ নো ওয়াটার
অ্যাণ্ড স্টিল লেস সোপ
উই হ্যাভ নো সিটি
বাট লটস অভ হোপ
ধন্যবাদ, বলল জিনা।
দারুণ উপহার এটা, বলল কিশোর। আমাদের মনে আশা জাগানো দরকার ছিল।
তোমাদেরকে ধার দেয়ার মত একমাত্র এটাই আছে আমাদের কাছে, বলল অ্যাণ্ড্রু।
ধার? বলে উঠল জিনা। কিশোরের দিকে চাইল। আরি, ওরা এইমাত্র আমাদেরকে বিশেষ লেখাটা দিল-সামথিং টু লেণ্ড!
মৃদু হাসি ফুটল কিশোরের মুখে। ওরা এখন বাড়ি ফিরে যেতে পারে।
আপনারা গোল্ডেন গেট পার্কে চলে যান-এক রিপোর্টার আমাদেরকে ওখানে যেতে বলেছে, ছেলে দুটি আর তাদের খালাকে বলল কিশোর।
তোমরা কি ওখানে যাচ্ছ? মেরি খালা জানতে চাইলেন। কান্না বন্ধ হয়েছে তার। মনে হচ্ছে মনের জোর ফিরে পেয়েছেন।
আমরা বাড়ি ফিরে যাব, বলল জিনা।
নিরাপদে ফিরতে পারবে তো? খালার প্রশ্ন।
সায় ফিরলেই আমরা নিরাপদ, বলল কিশোর।
বুট ধার দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ! বলল পিটার। তোমাদের কথা মনে থাকবে!
আমাদেরও মনে থাকবে! বলল জিনা।
তোমরা আমাদের কতটা সাহায্য করেছ নিজেরাও জান না, বলল কিশোর।
সাবধানে যেয়ো, মেরি খালা বললেন।
ঠিক আছে! বলল কিশোর। আপনি ভাববেন না।
পরিবারটি পার্কের দিকে এগোলে হাত নেড়ে বিদায় জানাল ওরা।
কিশোর দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
রেডি? প্রশ্ন করল।
হ্যাঁ, জানাল জিনা। যেখান থেকে এসেছিলাম সেখানে ফিরে গেলেই হলো।
রাস্তার দিকে চাইল কিশোর। পাহাড়ের নীচ থেকে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উঠছে।
কাজটা অত সোজা হবে না, বলল কিশোর।
৭
সাবধানে, বলল জিনা।
ভাঙা নুড়িপাথরের উপর মোজা পরা পা ফেলল ওরা। সতর্ক রইল যাতে কেটে না যায়।
পাহাড় বেয়ে নেমে চলল ওরা। পথে পুলিসদের দেখতে পেল। আহতদেরকে স্ট্রেচারে বইছে।
সৈনিকদের দেখল আগুন থেকে যারা বাঁচার চেষ্টা করছে তাদেরকে পথ নির্দেশ দিচ্ছে।
এক লোক রাস্তা দিয়ে একটা পিয়ানো ঠেলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আরেক লোক একটার উপর একটা এভাবে এক গাদা হ্যাট পরেছে। এক মহিলা ব্যাগের মধ্যে তার তিনটে কুকুরছানা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সবাই যার যার প্রিয় জিনিস সেভ করার চেষ্টা করছে, বলল জিনা।
সেই লাইব্রেরিয়ানের মত, বলল কিশোর। আর আমরা যেমন কবিতাটা সেভ করার চেষ্টা করছি। কাঠের টুকরোটা আঁকড়ে ধরল।
পাহাড় বেয়ে অর্ধেকটা নেমেছে, এসময় এক সৈনিক ঘোড়া ছুটিয়ে ওদের সামনে চলে এল।
রাস্তা থেকে সরে যাও! আমরা ডিনামাইট বসাচ্ছি! গর্জে উঠল সে।
ডিনামাইট? বলল কিশোর।
বলে কী! বলল জিনা।
মানুষ-জন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করল। কিশোর আর জিনা মরিয়ার মত চারপাশে নজর বুলাল একটা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। এক অলিপথ দেখতে পেল কিশোর।
ওখানে চলো! বলল ও।
এক দৌড়ে অলিপথটায় ঢুকে মাটিতে গুটিসুটি মেরে বসল ওরা।
কিশোর ব্যাগে হাত ভরে দিল গবেষণার বইটার জন্য। ইনডেক্সে ডিনাইমাইট শব্দটা খুঁজে পেল। এবার সঠিক পৃষ্ঠা নম্বর বের করে পড়ল:
আগুন ধরে যাওয়ার পরে মেয়রের মাথায়
একটা আইডিয়া আসে। তার মনে হয়
কিছু বাড়ি যদি ধসিয়ে দেয়া যায়
তবে একটি কাঠের ছাদ থেকে অপর
কাঠের ছাদে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়াতে
পারবে না। ডিনামাইট দিয়ে তিনি কিছু
বাড়ি উড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।
তার পরিকল্পনা কাজ করেনি, আগুন
ছড়িয়ে পড়ে বাড়ি থেকে বাড়িতে, রাস্তা
থেকে রাস্তায়।
ভয়ঙ্কর ব্যাপার, মনে মনে বলল কিশোর।
ও বইটা সরিয়ে রাখতে না রাখতেই বিকট শব্দে ডিনামাইট ফাটল।
ধুলো-মাটি উড়ছে চারদিকে। এমনকী অলিপথটিতেও।
এক হাতে কাঠের টুকরোটা চেপে ধরে থাকল কিশোর।
অপর হাতে চোখ ঢাকল। একই কাজ করল জিনাও।
আরেকটা প্রচণ্ড শব্দে মাটি কেঁপে উঠল।
কিশোর মুখে মাটির স্বাদ পেল। জিনার দিকে চাইল সে। আপাদমস্তক ধুলোয় ধূসরিত ও। নিজের দিকে চোখ নামিয়ে চাইল। কিশোর। ওর অবস্থাও জিনার মত।
ওদের দুজনকে দেখো! কেউ বলে উঠল। একটা স্টোরি পাওয়া গেছে!
মুখ তুলে চাইল কিশোর। খবরের কাগজের রিপোর্টার লিণ্ডা আর ফটোগ্রাফার জন ওদের সামনে দাঁড়িয়ে।
সারা গায়ে ধুলো-মাটি, তারপরও ক্যামেরা সেট আপ করছে জন। আর লিণ্ডা তার নোট বইতে কী সব টুকছে।
কাঠের টুকরোটা তুলে ধরো, বাছা, বলল লিণ্ডা।
হতভম্ব কিশোর মুখে কিছু বলল না, আশা জাগানিয়া কবিতাটা তুলে ধরল।
জন ছবি নিল।
আরেকটা ডিনামাইটের শব্দ মাটি কাঁপিয়ে দিল।