জোসি, এরিনা বললেন, তুমি চলে যাওয়ার পর ব্ৰিণ্ডল এসেছিল। আরেকটু হলেই হাতাহাতি বেধে যাচ্ছিল দুজনে।
কী নিয়ে? থিম পার্ক?
ঝগড়া তো করল ফাঁদ পাতা নিয়ে, তবে আমার মনে হয় থিম পার্কের পরিকল্পনাটাই আসল কারণ। তোমার চাচা যেহেতু পার্ক বানানোর বিপক্ষে, জানা কথা ব্ৰিণ্ডল যাবে পক্ষে, সব সময় উল্টো, এটাই তো হয়ে আসছে। ভোটটা শেষ হলে বাঁচি। এদিক ওদিক কিছু একটা হয়ে যাক। শহরটাকে দুই ভাগ করে ফেলেছে ওই থিম কোম্পানি। সবার ওপর সবাই খেপা। এমন তো কখনও হয়নি। এ কী গজব নেমে এলো!
কোন দল জিতছে? জানতে চাইল কিশোর।
মুখ বাঁকাল জোসি। বোঝা যাচ্ছে না। আগামী হপ্তায় ভোটাভুটি শেষ হওয়ার আগে বুঝতে পারবও না কিছু। কেউ মুখ খোলে না। কে যে কাকে সাপোর্ট করছে, বোঝা কঠিন।
লুক স্টার্লিঙের কথাই ধরা যাক। সে কাকে সাপোর্ট দিচ্ছে, কিছুতেই বুঝতে দেয় না, এরিনা বললেন। চালাক তোক তো। ওর দোকান থেকে মাল কেনা বন্ধ করে দেবে এই ভয়ে কাস্টোমারদের বুঝতে দেয় না কোন পক্ষ সমর্থন করে ও। সবার মন রক্ষা করে চলতে চায়।
অকারণ ভয়, জেফরি বললেন। লোকে ওর দোকান থেকে জিনিস কিনতে বাধ্য, কেউ ওকে পছন্দ করুক বা না করুক।
টেডের ব্যাপারটা কী? জিজ্ঞেস করল মুসা।
হাসল জোসি। টেডের এখন একটাই ভাবনা, ইডিটারোড রেসে আমাকে পরাজিত করা। এ ছাড়া ওর মগজে আর কোন চিন্তা খেলে না। ওর বাবা মিস্টার সিউল থিম পার্কের পক্ষে। শুনলাম, ব্ৰিণ্ডলও গিয়ে তার সঙ্গে খাতির জমিয়েছে।
সিউলকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি আমি, জেফরি বললেন। চুপ করে থাকে, কোন জবাব দেয় না। মুশকিল। ওদের ধারণা, পার্ক হলে শহরের ক্ষতি না হয়ে বরং লাভ হবে, আয় বেড়ে যাবে লোকের।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল কিশোর। মাত্র কয়েক গজ দূরে মাথা তুলে রেখেছে কালোবন। জেফরি, জোসি, জোসির বাবা-সবার কেবিনই এই বনের মধ্যে। কেউ আগুন লাগাতে চাইলে বনের ভিতর দিয়ে এসে সহজেই কাজটা সেরে যেতে পারে। জেফরিকে কথাটা বলতে যাচ্ছিল কিশোর, কিন্তু তার আগেই জানালায় এসে পড়ল একটা ভারী জিনিস। ঝনঝন করে ভেঙে পড়ল কাঁচ।
৪
লাফ দিয়ে সরে গেল মুসা। কাঁচের টুকরো থেকে বাঁচাতে দুই হাত ঝটকা দিয়ে উঠে এল মুখের সামনে। কেবিনের মেঝেতে এসে পড়ল একটা মোটা আধপোড়া লাকড়ি। সময়মত মাথাটা সরিয়ে ফেলায় অল্পের জন্য লাগেনি মাথায়। জানালা দিয়ে ওকে সই করেই বোধহয় ছুঁড়ে মেরেছিল কেউ।
এক টানে হুক থেকে পার্কাটা খুলে নিয়ে দরজার দিকে দৌড় দিল মুসা। ছাড়বে না লোকটাকে।
কিন্তু বাইরে এসে মুনস্টোনকে ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়ল। জে নিয়ে আসছে মুন। বিশ গজ দূরে রয়েছে এখনও। তার পক্ষে এত তাড়াতাড়ি লাকড়ি ছুঁড়ে আবার স্নেজের কাছে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া সে ছুঁড়তেই বা যাবে কেন?
মুন চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা, এদিক দিয়ে কাউকে যেতে দেখেছ?
না! জবাব দিল মুন। কী হয়েছে?
কিশোরও বেরিয়ে এল। মুসাকে জিজ্ঞেস করল, লোকটাকে দেখেছ নাকি?
মাথা নাড়ল মুসা। না!
তারমানে পালিয়েছে, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর।
কাছে এল মুন। ততক্ষণে জেফরি আর জোসিও বেরিয়ে এসেছে। জেফরির হাতে একটা লাকড়ি। লাঠির মত করে ধরেছেন।
ওদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল কিশোর। নেই। আমার মনে হয় বনের ভিতর দিয়ে পালিয়েছে।
সব শুনে মুখ কালো হয়ে গেল মুনের। জ্বলে উঠল চোখ। কী শুরু হলো আমাদের শহরটায়!
হাতের দিকে তাকালেন জেফরি। লাকড়ি দেখে অবাক হলেন। ওটা কীভাবে এসেছে তার হাতে, মনে করতে পারলেন না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর লাভ নেই। কেবিনে চলো। ভাঙা জানালাটা বন্ধ করা দরকার। ঘরে ঠাণ্ডা ঢুকবে।
সারি দিয়ে ঘরে ঢুকল সবাই।
কালো রঙের একটা প্লাস্টিকের চাদর খুঁজে বের করল জোসি। কাঁচভাঙা জানালার ফোকরটা বন্ধ করতে ওকে সাহায্য করলেন জেফরি। ঝাড়ু দিয়ে কাচের টুকরোগুলো মেঝে থেকে সরিয়ে ফেললেন এরিনা। তারপর চা ঢাললেন। চা খাওয়ার জন্য সবাই এসে টেবিলে বসল।
জোসির দিকে তাকালেন এরিনা। তোমার ঘর তো শূন্য। কোনও খাবারই নেই। আমাদেরগুলোও পুড়ে ছাই। দোকানে যেতে হবে।
আমি লিস্ট বানাচ্ছি।
চামচ দিয়ে নেড়ে চা ঠাণ্ডা করছে কিশোর। বলল, আগুন লাগার কারণ এখনও জানি না আমরা। আপনাআপনি লেগেছে, না কেউ লাগিয়ে দিয়েছে জানি না। তবে কড়িটা আপনাআপনি উড়ে আসেনি। কেউ জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মেরেছে। নীচের ঠোট কামড়াল। তারপর চামচটা রেখে মুখ তুলে তাকাল। কে?
সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না! ধরতে পারলে আজ…দাঁত কিড়মিড় করলেন জেফরি।
এ সব ঘটনা এখন ডালভাত হয়ে গেছে গ্লিটারে, মুন বলল। থিম পার্ক বানানো নিয়ে ঝগড়া করে শহরটাই ধ্বংস হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
মুনের কথা সমর্থন করল জোসি। ইদানীং প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে শহরে। আগেও যে একেবারে ঘটত না তা নয়, তবে এখনকার মত এত বেশি না।
তারমানে তোমরাই একমাত্র লক্ষ্য নও? কিশোরের প্রশ্ন। কিশোরের দিকে তাকাল মুন। কিশোর, তোমাদের কথা সব আমাকে বলেছে জোসি। তোমরা গোয়েন্দা। অনেক জটিল রহস্যের সমাধান করেছ। আমাদের গ্লিটারের রহস্যটার সমাধান করতে পারবে?