মুহূর্তে ঘরের সমস্ত চোখ ঘুরে গেল দুই গোয়েন্দার দিকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনদিন পড়েনি ওরা। অস্বস্তি বোধ করতে লাগল দুজনে।
সবাই উঠে এসে ঘিরে ফেলল ওদেরকে। পিঠ চাপড়ানো, হাত মেলানো আর ধন্যবাদ জানানোর পালা চলল। মুসা নিশ্চিত, এত আন্তরিক আর গর্বিত একটা জাতির উন্নতি হতে বাধ্য।
শুক্রবার সকাল। কুকুরের দল, স্লেজ আর রসদ গোছাতে জোসিকে সাহায্য করল কিশোর ও মুসা। জোসির সঙ্গে ওর স্লেজে করে নদীর ওপর গিয়ে উঠল। মুনও রয়েছে ওদের সঙ্গে। দলবল নিয়ে ওখানে অপেক্ষা করছে টেড।
ডায়মণ্ডহার্টকে দেখে দাঁত বের করে গজরানো শুরু করল টেডের নেতা-কুকুরটা। তবে ডায়মণ্ডহার্টের মেজাজ শান্ত। প্রতিপক্ষের গজরানোতে কান দিল না। পুরোপুরি উপেক্ষা করল। হেসে ফেলল জোসি। আদর করতে লাগল কুকুরটাকে। মুনও ওটার মাথা চাপড়ে আদর করে দিল।
হই-চই শুনে ফিরে তাকাল মুসা। দলে দলে লোক আসছে।
জোসি! মুসা বলল, এত লোক!
ভয় নেই, বরফের স্তর ভাঙবে না। অনেক পুরু।
বরফের কথা বলছি না। আমি ভাবছি, প্লেনে এত লোকের জায়গা হবে?
হেসে ফেলল জোসি। এত লোক তো যাচ্ছে না। আমাদের বিদায় জানাতে এসেছে। তোমাদের জানানো হয়নি, থিম কোম্পানি আমাদের স্পন্সর করছে। বড় দুটো প্লেন পাঠাচ্ছে ওরা। আমার আর টেডের দুটো কুকুরবাহিনী, দুটো স্লেজ আর ওগুলোর সমস্ত মালপত্র যাতে বহন করতে পারে।
দূর থেকে ইঞ্জিনের শব্দ ভেসে এল। আকাশের দিকে তাকাল মুসা। বহুদূরে একটা কালো বিন্দু দেখে বলল, প্রথম প্লেনটা আসছে।
জনতার সঙ্গে জেফরি আর এরিনা রয়েছেন। নদীর বরফের ওপর উঠে এলেন দুজনে।
টেডের দিকে তাকাল জোসি। বলল, ইডিটারোড রেসে যাদের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতা করছি, তারা সবাই অভিজ্ঞ, বড় বড় রেসার।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল টেড। তাদেরকে হারিয়ে প্রথম হওয়ার চেষ্টা করতে হবে আমাদের।
খুব কঠিন কাজ, তবে হাল ছাড়ব না আমি। প্রথম হওয়ার চেষ্টা করব।
আমিও করব।
ঠিক, পিছন থেকে বলল বিগস্। গ্লিটারবাসীর মুখ উজ্জ্বল করতে হবে তোমাদের। জনতার দিকে ফিরল ও। শুনুন, জোসি আর টেডের জন্য দোয়া করবেন আপনারা। ওরা যেন প্রথম ও দ্বিতীয় হতে পারে।
সবাই হাততালি আর উৎসাহ দিল দুই রেসারকে। নিজেদের শহরের গর্ব জোসি ও টেডকে।
দুই রেসারের কাঁধে হাত রাখলেন এরিনা। আমার ছেলেরা ফার্স্ট হবেই।
দুজনেই ফাস্ট হতে না পারলে তো আবার একজনের মন খারাপ হবে, হাসল বিস্। যা-ই হোক খেলা খেলাই। ব্যাপারটাকে সেভাবেই দেখতে হবে ওদের। এবার কিশোর-মুসাকে থ্রি চিয়ার্স দিন।
ঘনঘন আনন্দধ্বনি, থ্রি চিয়ার্স আর করতালিতে মুখরিত হলো নদীতীর। আবেগে চোখে পানি এসে গেল মুসার। হাত তুলে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, প্রিয় গ্লিটারবাসী, আমার ও কিশোরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ গ্রহণ করুন। যে আদর আর অভ্যর্থনা আপনারা আমাদের দিয়েছেন, কোনদিন ভুলব না। আরেকটা কথা, ইডিটারোড রেসে অবশ্যই আমাদের সমর্থন থাকবে গ্লিটারের পক্ষে। মুনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। মুন, তোমাকেও ভুলব না আমরা।
অনেক আনন্দ, অনেক কিছু, কিন্তু একটা কাঁটা রয়েই গেল কিশোরের মনের কোণে–এই আনন্দের মুহূর্তে রবিন নেই ওদের মাঝে। নিজের অগোচরেই দীর্ঘশ্বাস পড়ল ওর।