আমি!
রক্ত সরে গেল বিগসের মুখ থেকে। দেয়ালের দিকে পিছিয়ে গেল। আমাকে মেরে আপনিও বাঁচতে পারবেন না।
পারব। খুব পারব। একবার টেডের দিকে, একবার বিগৃসের দিকে নলের মুখ সরাচ্ছেন লুক। গুলি করে মারব আমি তোমাদের। তারপর এমন করে সাজাব, মনে হবে একে অন্যকে খুন করেছ তোমরা। সবাই তখন জানবে, টেডের কুকুরকে বিষ দিয়েছিলে তুমি, রাগে পাগল হয়ে গিয়ে প্রতিশোধ নিতে ছুটে এসেছিল ও।
লুকের কথা শুনে চোখ বড় হয়ে গেল কিশোরের। লোকটা আসলেই উন্মাদ। লুক এখনও ভাবছেন ঘরে বিগস্ ও টেড ছাড়া আর কেউ নেই। মুসা, জেফরি ও জোসির দিকে তাকাল কিশোর। ইশারা করল।
এখন বলল, মজা পাচ্ছেন যেন লুক, কে আগে মরতে চাও? বিগস, তোমারই আগে মরা উচিত। আমার সঙ্গে বেইমানি করার শাস্তি। বিগসের দিকে নিশানা করলেন তিনি।
চিলেকোঠার কিনার থেকে ঝাঁপ দিল কিশোর। মার্শাল আর্ট এক্সপার্টদের মত ইয়া-হু! বলে তীক্ষ্ণ চিৎকার দিয়ে মুসাও লাফিয়ে পড়ল নীচে।
চমকে গেলেন লুক। রাইফেলের নলের মুখ ঘুরে যেতে শুরু করল কিশোর-মুসার দিকে।
বাঘের মত লুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল মুসা। মেঝেতে ফেলে দিল লোকটাকে।
গুলি ফোটার প্রচণ্ড শব্দ। মুসার কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল বুলেট। সময় নষ্ট করল না ও। লুকের কলার ধরে টেনে তুলে দশ মনি একটা ঘুসি বসিয়ে দিল চোয়ালে। আবার মেঝেতে পড়ে গেলেন লুক।
রাইফেলটা কেড়ে নিল কিশোর। লুকের বুকের দিকে ধরে রেখে মুসাকে জিজ্ঞেস করল, গুলি লেগেছে?
না, জবাব দিল মুসা।
মই বেয়ে দ্রুত নেমে এল জোসি ও জেফরি।
জেফরির দিকে তাকাল কিশোর। লুকের কথা সবই তো শুনলেন?
শুনেছি, মনেও রেখেছি। মেঝেতে পড়ে থাকা লুকের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন জেফরি। প্রতিটি শব্দ আদালতকে জানাতে পারব আমি।
কেউ বিশ্বাস করবে না… বিড়বিড় করলেন লুক।
টেপরেকর্ডারটা তুলে দেখাল মুসা। এটার কথা তো বিশ্বাস করবে? আপনি হেরে গেছেন, লুক।
হাসল জোসি। এভাবে কারও পরাজয়কে লস অ্যাঞ্জেলেসে বলে, ইয়োর গৃজ ইজ কুকড। আর আমরা অ্যাথাবাস্কানরা বলি, ইয়োর মুজ ইজ কুকড।
হেসে উঠল মুসা।
পরদিন সকালে প্লেনে করে ফেয়ারব্যাংকস থেকে উড়ে এল আলাস্কান পুলিশ। নদীর জমাট বরফের ওপর নামল প্লেন। দুজন পার হাতকড়া পরিয়ে দিল লুকের হাতে। সাক্ষীদের বক্তব্য শুনল। কিশোরের রেকর্ড করা টেপটা পকেটে ভরল।
কিশোর ও মুসাকে ধন্যবাদ দিলেন অফিসার। ওদের গোয়েন্দাগিরির প্রশংসা করলেন।
আসামীকে নিয়ে চলে গেল পুলিশ।
সেদিন অ্যাসেম্বলি হলে একটা মিটিং ডাকল বিগস। গত কয়েক মাসে অনেক কিছু জেনেছি আমি, অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। আপনাদের অহঙ্কার, আপনাদের ঐতিহ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। সেসব নষ্ট করার কোন অধিকার আমার নেই তারপরেও আমি বলব, আমার কোম্পানিকে কাজ করার একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন। আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের জীবনযাত্রায় কোনরকম বাদ সাধা হবে না। বরং, আপনাদের এই সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যই আমাদের পুঁজি। এগুলো দেখতেই তো টুরিস্ট আসবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এ সব ধ্বংস হতে দেব না আমরা।
জেফরি, এরিনা, জোসি ও মুনের দিকে তাকাল ও। পাশাপাশি বসেছে গোটা পরিবার। আজ সকালে থিম পার্কের হোম অফিসের সঙ্গে কথা বলেছি আমি। গত কয়েক দিনে এখানে যার যা ক্ষতি হয়েছে, যদিও সেগুলোর জন্য কোনভাবেই দায়ী নয় আমাদের কোম্পানি, তবুও ক্ষতি পূরণ দেবার অঙ্গীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। টিনুকদের কেবিন নতুন করে তৈরি করে দেবে, জো সারটনকে একটা নৌকা কিনে দেবে।
ঘরের মধ্যে জোর গুঞ্জন। হাততালি। থামতে সময় লাগল।
বিগস বলল, ফেয়ারব্যাংকসের সবচেয়ে বড় ফলের দোকানটায় অর্ডার পাঠিয়েছি আমি। বাক্স ভর্তি করে তাজা ফল আনাব। এলে, সবার আগে আমি নিজে খেয়ে দেখব, বিষ মেশানো আছে কি না।
বিগ্সের রসিকতায় আরেক দফা হাসাহাসি, হুল্লোড়।
উঠে দাঁড়ালেন জেফরি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, বিগস্। আপনি অনেক করেছেন আমাদের জন্য। লুককে ধরার জন্য মস্ত ঝুঁকি নিয়েছেন। অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারত আপনার। আমাদের ধারণায় চিড় ধরিয়ে দিয়েছেন। আমরা বুঝেছি, গ্লিটারের ক্ষতি নয়, মঙ্গলই চাইছেন আপনি। সত্যিই গ্লিটারের উন্নতি দরকার। টাকা ছাড়া কিছু হয় না। পূর্বপুরুষের ঠুনকো আভিজাত্য আর অহঙ্কার আঁকড়ে থেকে না খেয়ে মরারও কোন মানে হয় না। তাদের যুগ চলে গেছে। এখন আমাদের যুগ। বর্তমানকে বুঝে সে-মত চলতে না পারলে অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখতে পারব না আমরা।
জোরাল গুঞ্জন। জনতাকে চুপ করাতে হাত তুললেন জেফরি। এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। এখনই ভোট দিচ্ছি না আমরা। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব। ভাবনা-চিন্তা করব। নিজেদের কোনরকম ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে থিম পার্কের পক্ষে ভোট দেব না।
যা বললেন, তাতেই আমি খুশি, বিগৃস্ বলল। পরে আরও মিটিং দরকার হবে আমাদের।
হ্যাঁ, হবে। এতবড় একটা সিদ্ধান্ত, এক মিটিঙেই নেয়া যায় না, জেফরি বললেন। তবে এখন আমি সমস্ত গ্লিটারবাসীকে অন্য একটা অনুরোধ জানাব। কিশোর ও মুসাকে আপনাদের থ্যাংকস-ভোট দিতে অনুরোধ করব, কারণ ওদের সহযোগিতা না পেলে লুক-দানবের হাত থেকে রক্ষা পেতাম না আমরা। শহরটাকে ধ্বংস করে দিত ও। ওর কাছ থেকেও একটা শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত আমাদের। অতিরিক্ত লোভ করা ভাল না। আমরাও করব না। অতি লোভ একটা জাতিকে। ধ্বংস করে দিতে পারে। হাত তুলে বললেন তিনি, এখন, কিশোর ও মুসাকে থ্যাংকস-ভোট।