কীসের শব্দ? চাবুকের মত শপাং করে উঠল যেন তাঁর কণ্ঠ।
রাইফেলের বোল্ট টানার শব্দটা যেন বোমা ফাটাল শ্রোতাদের কানে।
১৫
ধড়াস করে উঠল কিশোরের বুক। স্থির হয়ে গেল ও। লুক এখন চিলেকোঠায় উঁকি দিলেই সর্বনাশ। ওদের পরিকল্পনা বরবাদ। তা ছাড়া একজন খেপা লোকের মুখোমুখি হতে হবে, যার হাতে আছে গুলিভর্তি রাইফেল। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কিশোর। লুককে ওপরে উঠতে দেয়া যাবে না। মইয়ের ধাপে পা রাখা মাত্র তাঁকে ফেলে দিতে হবে। গুলি করার আগেই তাকে কাবু করে ফেলতে হবে।
কী করছেন? তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল বিগসের কণ্ঠ। নামান ওটা। নামিয়ে রাখুন। রাইফেল-বন্দুক দেখলে আমার ভয় লাগে।
কিন্তু শব্দ যে শুনেছি তাতে কোন সন্দেহ নেই, লুক বলল। ওপর থেকে এসেছে।
শুনতেই পারেন, বিগস বলল। কেবিন ভর্তি হঁদুর। ইদুরের জ্বালায় মরলাম। ভাবছি, বাড়িওলাকে বলব। ইঁদুর না তাড়ালে ভাড়া দেব না।
রাইফেলের সেফটি ক্যাচ অন করার শব্দ শোনা গেল। মেঝেতে বাটের শব্দ শুনে বোঝা গেল চেয়ারের কিনারে রাইফেলটা ঠেস দিয়ে রেখেছেন। চেপে রাখা দমটা আস্তে আস্তে ছাড়ল কিশোর। নীরবে চলছে টেপরেকর্ডার। যন্ত্রটা পাটাতনে নামিয়ে রাখল ও। অসময়ে টেপটা শেষ না হলেই হয়।
কী করতে চান? লুক জিজ্ঞেস করলেন। চিঠিতে কোন কিছুই স্পষ্ট করে লেখেননি।
ভূমিকার কোন প্রয়োজন দেখছি না, বিগৃস্ বলল। সোজাসাপ্টা কথাই আমার পছন্দ। আপনি কী করে বেড়াচ্ছেন, সব আমি বুঝে ফেলেছি। আমার সুবিধে করে দিয়েছেন। লোকে হা-ভোট দিতে বাধ্য হবে। সেজন্যই ভাবলাম আপনাকে দলে নেয়া যায় কি না আলোচনা করে দেখি।
শুনে খুশি হলাম, কণ্ঠস্বরে কোন পরিবর্তন নেই লুকের।
আশঙ্কা মাথা চাড়া দিচ্ছে কিশোরের মনে। লুককে সন্দেহ করে ভুল করল না তো? হয়তো তিনি অপরাধী নন।
থিম পার্কের পক্ষ থেকে আপনাকে নতুন কোনও কাজ দেয়া যায় কি না ভাবছি। যা আপনি ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন তার জন্য অবশ্যই খরচাপাতি আর মোটা অঙ্কের বোনাস পাবেন।
কবে?
বোনাস পাবেন আমরা ভোটে জেতার পর, বিগ বলল। তবে খরচাপাতির টাকা এখনই দিয়ে দিতে পারি।
আমি রাজি, জবাব দিতে এক মুহূর্ত দ্বিধা করলেন না লুক।
আশঙ্কা দূর হলো কিশোরের। মুসার দিকে তাকাল। হাসি দেখতে পেল। টোপ গিলেছে অতি ধূর্ত রাঘব বোয়াল। বিগস্ এখন ওটাকে খেলিয়ে তীরে তুলতে পারলেই হয়।
আপনি তো রাজি হলেন, বিগ বলছে, কিন্তু আপনিই দুর্ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন, এ ব্যাপারে আমি শিওর হব কীভাবে?
তাহলে আমাকে ডাকলেন কেন?
কানদিন একজ। পুরানো গুড়ে, সেজন্য
ডেকে নিশ্চয় ভুল করিনি? অনেক ভেবেছি। দুর্ঘটনাগুলোর পিছনে আর কারও হাত আছে বলে মনে হয়নি।
নেইই তো। আমিই করেছি সব! একা।
শুধু একটা কথা বুঝতে পারছি না, নিজের ঘরে আগুন দিলেন কেন?
হাসি শোনা গেল লুকের। এই সহজ কথাটা বুঝলেন না? লোকের সন্দেহ যাতে আমার ওপর না পড়ে, সেজন্য। সবাই ভাববে, আমি নই, অন্য কারও কাজ। পুরানো ওই ছাউনিটা এমনিতেই ভেঙে পড়ত যে কোনদিন। একটা ভাল কাজে লাগালাম।
আর জেফরি টিনুকের কেবিন? ওটাতে আগুন লাগালেন কীভাবে?
কিশোর দেখল, কঠিন হয়ে গেছে জেফরির চেহারা। হাত মুঠোবদ্ধ। ইশারায় তাঁকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করল ও।
এটা কোন কাজ হলো? পিছনের জানালা দিয়ে স্টোভের কাছে একটা পেট্রলের ক্যান ফেলে, একটা জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি ছুঁড়ে দিলাম, ব্যস, লুক বলল। জোসির বাবার কেবিনে লাকড়ি ছুঁড়লাম ওদের ভয় দেখানোর জন্য। ওই জেফরিটা থিম পার্কের বিপক্ষে বহুত গলাবাজি করে। লোকে মানেও ওকে। ভাবলাম, ওকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখতে পারলে সুবিধে।
মুজের মাংসটাও আপনিই চুরি করেছিলেন? বিগ জানতে চাইল।
তো আর কে? গর্ব করে বললেন লুক। জো সারটনের নৌকাটাও আমিই নষ্ট করেছি, বুঝতেই পারছেন। রাতের বেলা ইলেকট্রিক করাত চালু করে রেখে হাতুড়ি আর গজাল নিয়ে চলে গেলাম। তারপর নৌকার তলায় গজাল বসিয়ে ধ্যাচাং-ধ্যাচাং! ব্যস, গেল বাতিল হয়ে নৌকাটা।
বিগ বলল, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, টেডের কুকুরগুলোর পিছনে লাগলেন কেন আপনি? ওর বাবা তো আমাদের বিপক্ষে নয়।
অট্টহাসি হাসলেন লুক। মুসার মনে হলো, উন্মাদের হাসি। গায়ে কাঁটা দিল ওর।
ওটাই তো আসল চালাকি, লুক বলছেন। জোসির ক্ষতি করে ওর চাচার মনোবল ভাঙতে চেয়েছি। কুকুরের দড়ি কেটেছি টেডের ওপর জোসির সন্দেহ বাড়ানোর জন্য। টেডকে ওর ওপর খেপিয়ে তুলেছিলাম আরও আগেই। কুকুরের ঘরে বিষ মাখানো মাংস ফেলে রেখে, স্লেজের লাগাম কেটে দিয়ে, রানার ওয়্যাক্সে বালি ফেলে। পরম বন্ধুকে চরম শত্রু বানিয়ে দিয়েছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম, আমি অঘটন ঘটানো শুরু করলে লোকের সন্দেহ ওদের ওপর গিয়ে পড়বে। ঘোলাজলে মাছ শিকার করতে সুবিধে হবে আমার। কেউ আমাকে সন্দেহ করবে না।
আর সহ্য করতে পারল না টেড। কিশোর বা মুসা বাধা দেয়ার আগেই লাফ দিয়ে নীচে পড়ল। চিৎকার করে উঠল, শয়তান! ছুঁচো! আমার কুকুরকে বিষ খাইয়ে মেরেছিস! আজ আমি তোকে খুনই করে ফেলব!
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আর চুপ করে থেকে লাভ নেই। নীচে উঁকি দিল কিশোর। টেডের দিকে রাইফেল তাক করেছেন লুক। খবরদার! ঝাঝরা করে ফেলব বলে দিলাম! আর বিগস, তুমি আমার জন্য ফাঁদ পেতেছিলে! তোমাকেও ছাড়ব না