দারুণ মেশিন তো, মুসা বলল। আপনার?
না, জো সারটনের। একটা লোককে এটার কাছে ঘুরঘুর করতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল। দেখতে এসেছি, এটাও নষ্ট করে দিল কি না, বেচারার নৌকাটার মত। নৌকাটা নষ্ট করে খুব খারাপ কাজ করেছে।
লোকটাকে চিনতে পেরেছেন?
দ্বিধা করলেন লুক। পিছন থেকে দেখেছি তো, ঠিক চিনতে পারিনি। তবে হাঁটার ভঙ্গি গোল্ড ফেরানির মত। তোমরা কোথায় যাচ্ছিলে?
আপনার কাছেই এসেছি। কথা ছিল।
দোকানে চলো।
কয়েক সেকেণ্ড নীরবে ফিশহুইলটার দিকে তাকিয়ে থেকে ঘুরে দাঁড়াল কিশোর। লুকের সঙ্গে তার দোকানের দিকে এগোল। হাঁটতে হাঁটতে ডিনামাইটের কথা জিজ্ঞেস করল।
নাহ, দুচার দিনের মধ্যে কারও কাছে বিক্রি করিনি, লুক বললেন। শেষ বিক্রি করেছি শীতের শুরুতে। আমার ছাউনিটার কথা ভুলতে পারছ না তোমরা, তাই না? তবে লিখে দিতে পারি, ডিনামাইট দিয়ে পোড়ায়নি। ডিনামাইটের দাম আছে। মাছি মারতে কামান দাগতে যাবে না। আমি শিওর, আগুন লাগার মূলে ওই জেরিক্যানের পেট্রল। দোকানের বারান্দায় উঠে গেলেন তিনি। ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ডিনামাইটের কথা মাথায় এল কেন তোমাদের?
বিগসের কাছে ডিনামাইট কোম্পানি চিঠি দিয়েছে, ফস করে বলে ফেলেই বুঝল মুসা, গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয়াটা ভুল হয়ে গেছে।
তাই নাকি? তাহলে তো চিন্তার কথাই… দোকানে ঢুকে গেলেন লুক।
নিজেদের কেবিনে ফিরে চলল দুই গোয়েন্দা। মুসা বলল, আমাদের চোখ এড়িয়ে ফিশহুইলটার কাছে কীভাবে গেল গোল্ড, বুঝতে পারছি না। রাস্তা তো মোটে ওই একটা। এমন নির্জন রাস্তা দিয়ে একজন লোক হেঁটে গেল আর আমাদের চোখে পড়ল না, এত কানা তো এখনও হইনি।
লুক তো বললেনই পিছন থেকে দেখেছেন। গোল্ড কি না শিওর নন তিনি। চিন্তিত ভঙ্গিতে জবাব দিল কিশোর। আচ্ছা, গোল্ডকে বিপদে ফেলার জন্য মিথ্যে কথা বলেননি তো?
তা কেন বলতে যাবেন?
কারণ, তিনি গোল্ডকে দেখতে পারেন না।
তা নাহয় বললেন। কিন্তু ফিশহুইলটার কাছে তো কেউ একজন নিশ্চয় গিয়েছিল। নইলে দেখতে যেতেন না লুক। সেই লোকটা কে?
বিগ নয়, এটা ঠিক। লুকের রহস্যময় লোকটা যখন ফিশহুইলের কাছে, বিগ তখন আমাদের সামনে। আমাদের সঙ্গে কথা বলছিল।
রাস্তার মোড়ের কাছে আসতে ওপাশ থেকে কুকুরের চিৎকার কানে এল। হুকুম শোনা গেল, হাইক! হাইক!
মোড় ঘুরে ছুটে এল টেড সিউলের কুকুরবাহিনী।
হাইক! হাইক! বলে চেঁচিয়ে কুকুরগুলোকে গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিতে থাকল টেড। স্লেজ নিয়ে ছুটে আসছে ঢাল বেয়ে। কিশোর-মুসা সেই পথের ওপরই দাঁড়ানো। ওদের দেখেও দেখল যেন টেড।
দাঁত বেরিয়ে গেছে সামনের নেতা-কুকুরটার। বিকট মুখভঙ্গি। কিশোরের কাছ থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে রয়েছে। থামার কোন লক্ষণই নেই।
স্লেজটা গায়ের ওপর এসে পড়বে।
১৩
এক ধাক্কায় কিশোরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিল মুসা। লাফ দিয়ে নিজেও সরে গেল একপাশে। বেরিয়ে থাকা বরফের টুকরোয় হোঁচট খেল কিশোর। সামলাতে পারল না। বরফে ঢাকা ঢাল বেয়ে গড়ানো শুরু করল। মুসা দাঁড়িয়ে রইল। চেঁচিয়ে বলল, টেড, দাঁড়াও, তোমার সঙ্গে কথা আছে…
জবাবে দস্তানা পরা হাত তুলে ঘুসি দেখাল টেড।
রেগে গেল মুসা। থাবা দিয়ে টেডের বাড়ানো হাতটা ধরে ফেলল। কজিতে মোচড় দিয়ে মারল হ্যাচকা টান। এটা আশা করেনি টেড। রানারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। স্লেজ থেকে উড়ে এসে পড়ল রাস্তার ওপর। সতর্ক হয়ে গেল বুদ্ধিমান কুকুরগুলো। কয়েক গজ এগিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
ধীরে ধীরে উঠে বসল টেড। মাথার পিছনে ব্যথা পেয়েছে, হাত বোলাচ্ছে সেখানে। বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুসার দিকে।
কিশোরও উঠে এসেছে।
রাগ যায়নি মুসার। চিৎকার করে উঠল, কী মনে করো তুমি নিজেকে, টেড? আমাদের ওপর কীসের রাগ তোমার? গ্লিটারে যখনই কোন দুর্ঘটনা ঘটছে, তার আশপাশে দেখা যাচ্ছে তোমাকে। টিনুকদের কেবিনে যখন আগুন লেগেছিল, তোমাকে স্লেজ নিয়ে ছুটে পালাতে দেখেছি। বিষ মেশানো আপেল এনে দিয়েছ তুমি ওদেরকে। কাল যখন লুকের ছাউনিতে বোমা ফাটানো হলো, টাউন হলের মিটিঙে ছিলে
তুমি। আমি আরও জানতে চাই, জোসির রেড লাইটের দড়ি কাটল কে?
কথা শেষ হয়েছে তোমার? রুক্ষ কণ্ঠে জবাব দিল টেড। তাহলে শোনো, আমিও জানতে চাই, আমার কেনলে বিষ মাখানো মাংস ফেলেছিল কে। কে আমার লাগামের অর্ধেকটা কেটে রেখেছিল। আমার রানার ওয়্যাক্সে বালি দিয়ে রেখেছিল কে।
মুসা জিজ্ঞেস করল, কে?
উঠে দাঁড়াল টেড। কে আবার? তোমাদের প্রিয় বন্ধু জোসি। একা শয়তানি করে মন ভরেনি। তোমাদেরকে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ডেকে নিয়ে এসেছে সাহায্য করার জন্য। তবে আমি তোমাদেরকে আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেব না। কখনই না!
টেডের কথায় স্তম্ভিত হয়ে গেছে কিশোর ও মুসা দুজনেই। ধোকা দিচ্ছে না তো টেড? নাকি জোসির মত টেডও একই ষড়যন্ত্রের শিকার?
এ সব ঘটনা কবে ঘটেছে? আমরা গ্লিটারে আসার পর? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
টেড বলল, না, আগে। জোসি আমার এত প্রিয় বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও ওর ওপর রাগ কেন আমার বুঝতে পারছ না? কেন ওকে এখন দেখতে পারি না? স্বার্থপর হিংসুক বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকা ভাল।
মুসা জিজ্ঞেস করল, জোসিই যে দোষী, কী করে বুঝলে?