মাথা নাড়ল কিশোর। উঁহু, আমার তা মনে হয় না। কেন এ সব করছে অপরাধী, আসল কারণটা না জানলে ওকে ধরা কঠিন হবে। এখনও আমরা জানি না, এ সবের মূলে থিম পার্ক, না অন্য কিছু। দড়ি কেটে রেড লাইটকে ছেড়ে দেয়ার সঙ্গে ভোটেরই বা কী সম্পর্ক?
জবাব না পেয়ে চুপ হয়ে গেল মুসা।
শহরে ঢুকল ওরা। মুনকে দেখল। ঢাল বেয়ে নেমে আসছে। কাঁধে ময়দার বস্তা। দূর থেকে ওদের চিনতে পেরে হাত নাড়ল মুন। বস্তাটা নামিয়ে রেখে ওদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। ওরা কাছে গেলে বলল, মনে মনে তোমাদেরকেই খুঁজছিলাম। একটা জিনিস দেখে এলাম। জরুরি কি না জানি না, তোমরা শুনলে হয়তো বুঝবে।
কী জিনিস? জানতে চাইল কিশোর। দ্বিধা করতে লাগল মুন। তারপর বলল, পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম, আমাদের নামে কোন চিঠি এসেছে কি না দেখতে। ইলকিস বিগসও গিয়েছিল চিঠি নিতে।
এত তাড়াতাড়ি পোস্ট অফিসে চলে গেল? ভুরু কোঁচকাল মুসা। একটু আগে তো দেখে এলাম।
কোথায় দেখেছ?
গোল্ডের ওখানে।
আমি দেখেছি কয়েক মিনিট আগে, মুন জানাল। বহু চিঠি এসেছে ওর নামে। ওর একটা চিঠির ঠিকানা দেখে ফেলেছি।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, কী দেখলে?
অন্যের চিঠি চুরি করে দেখাটা অভদ্রতা, জানি, মুন বলল, কিন্তু চোখ চলে গেলে কী করব?
কার ঠিকানা? অধৈর্য হয়ে হাত নাড়ল মুসা।
চোখের পাতার বড় বড় পাপড়ি নাচাল মুন। নীল চোখে অস্বস্তি। ডিনামাইট!
মানে?
খামের গায়ের ফিরতি ঠিকানাটা ফেয়ারব্যাংকসের নর্থফিল্ড ডিনামাইট কোম্পানির। ডিনামাইট কোম্পানি থেকে বিগসের নামে কেন চিঠি আসে? খটকা লাগে না?
মাথা ঝকাল কিশোর। লাগে।
তথ্যটা কাজে লাগবে তোমাদের?
লাগতে পারে।
খুশি হলো মুন। আমি যাই। ময়দার ভারী বস্তাটা অবলীলায় কাঁধে তুলে নিয়ে স্বচ্ছন্দ গতিতে পাহাড়ী রাস্তা ধরে হেঁটে চলল।
কিশোরের দিকে ফিরল মুসা। ভুরু নাচাল। ডিনামাইট কোম্পানিকে বিগসের কী দরকার?
ডিনামাইট দিয়ে ঘরবাড়ি ওড়ানো যায়, ঠোট কামড়াল কিশোর।
ছাউনি পোড়ানো যায় না?
চিন্তিত ভঙ্গিতে মুসার দিকে তাকাল কিশোর। চলো। বিগসকে পেলে জিজ্ঞেস করব।
শহরের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলল দুজনে। গ্লিটার এতই ছোট শহর, কেউ রাস্তায় বেরোলে দেখা হবেই। ঠিকই পেয়ে গেল বিগৃকে। একটা কেবিন থেকে বেরোচ্ছে।
হাই, বয়েজ, ওদের দেখে উল্লসিত গলায় হাঁক ছাড়ল ও। গ্লিটার তোমাদের কেমন লাগছে?
ভালই লাগত, জবাব দিল কিশোর। কিন্তু এত উত্তেজনা, আগুন, বোমাবাজি, ডিনামাইট… আচ্ছা, নর্থফিল্ড ডিনামাইট কোম্পানির নাম শুনেছেন?
রাগ দেখা গেল বিগসের চোখে। সামলে নিয়ে হাসল। শুনেছি, তবে আজই প্রথম। খবরটা এত তাড়াতাড়ি কে দিল তোমাদের? পোস্ট অফিস থেকে কেউ চুরি করে খামের ঠিকানা দেখে গেছে নিশ্চয়?
আপনিই তো বলেছিলেন এখানে কোন কথা গোপন থাকে না, হেসে বলল কিশোর। হঠাৎ করেই আপনার কাছে চিঠি লিখে বসল কোম্পানিটা?
হ্যাঁ। প্রাইস লিস্ট পাঠিয়েছে।
কেমন কাকতালীয় না ঘটনাটা? লুক স্টার্লিঙের ঘরে বোমা ফাটার একেবারে পরদিনই বিস্ফোরক কোম্পানির প্রাইস লিস্ট এসে হাজির।
কাকতালীয়ই, জবাব দিল বিগস। আমি ওদের কাছে প্রাইস লিস্ট চাইনি। ডিনামাইটের কোন প্রয়োজন নেই আমার। লাগলে
তো লুকের কাছ থেকেই নিতে পারতাম।
কুঁচকে গেল মুসার ভুরু। লুক ডিনামাইটও বিক্রি করে?
করে। খনির কাজে লাগে ডিনামাইট। তা ছাড়া গাছের বড় বড় গুঁড়ি উপড়ানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনীয় জিনিস, চাহিদা আছে, লুকের দোকানে পাওয়া না যাওয়ার কোন কারণ নেই। চলি। পরে দেখা হবে। পা বাড়িয়েও ফিরে তাকাল বিগস্। তোমাদেরকে একটা উপদেশ দিই, যদিও শুনতে ভাল লাগবে না; সেই পুরানো প্রবাদটা জানো তো, বেশি কৌতূহলে বিড়াল মরে?
চলে গেল বিগ। কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। ও কি হুমকি দিয়ে গেল আমাদের?
তাই তো মনে হলো।
ওর কথা বিশ্বাস করেছ?
করা কঠিন, কিশোর বলল। কিন্তু দোষীই যদি হবে, প্রাইস লিস্ট পাঠানোর কথা স্বীকার না করলেও পারত।
চালাকি করেছে। স্বীকার না করলেই বরং বেশি সন্দেহ করতাম ওকে। ও সেটা জানে। কিন্তু আমি ভাবছি শেষ কার কাছে ডিনামাইট বিক্রি করেছেন লুক, জানতে পারলে ভাল হতো।
চলো না গিয়ে জিজ্ঞেস করি।
দোকানের কাছাকাছি এসে লুককে দেখতে পেল মুসা। নদীর ধারে একটা অদ্ভুত মেশিনের সামনে দাঁড়ানো। ওই যে।
তার দিকে এগোল দুজনে।
কয়েক গজ দূরে থাকতে বলল কিশোর, কী করছেন?
আচমকা ডাক শুনে ভীষণ চমকে গেলেন লুক। ফিরে তাকালেন। তোমরা! উফ, হার্ট অ্যাটাক করিয়ে দিয়েছিলে। ছায়ার মত হাঁটো। একটু শব্দ হয় না।
ঝরঝরে পুরানো মেশিনটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা, কী মেশিন? চাঁদ থেকে আনালেন নাকি?
না, বৃহস্পতি গ্রহ থেকে, হাসলেন লুক। সামলে নিয়েছেন। এর নাম ফিশহুইল। গরমকালে নদীর বরফ গলে গেলে স্রোতের মুখে বসিয়ে দেয়া হয়। স্রোতের টানে চাকা ঘোরে। চাকায় লাগানো এই যে তারের থলিগুলো দেখছ, এগুলো ডোবে আর ভাসে। ডুবে যাওয়া থলিগুলো স্যামন মাছে ভর্তি হয়ে ওপরে উঠে আসে, ওপরেরগুলো তখন নীচে চলে যায়। মাছগুলো আপনাআপনি একটা বাক্সে পড়তে থাকে। খালি থলি নীচে নামে, ভরা থলি ওপরে ওঠে। এভাবেই চলতে থাকে মাছ ধরা।