কিন্তু আমরা যে শুনলাম, আপনি নাকি ইলকিস বিগসের হয়ে কাজ করেন? মুসা বলল, আপনাকে নাকি অনেক টাকা দিতে দেখেছে।
মুঠোবদ্ধ হয়ে গেল গোল্ডের হাত। কে দেখেছে?
লুক স্টার্লিং, মুসা বলল।
ওর কথা! আস্ত মিথুক! ভঙ্গি দেখে মনে হলো সামনে লুককে পেলে এখনই ঘুসি মেরে বসত গোল্ড। ওর অবর্তমানে বাতাসে মারল। ও আমাকে দেখতে পারে না। যেদিন থেকে বুঝে গেছে, আর সবার মত আমাকে ঠকাতে পারবে না, সেদিন থেকেই আমার পিছে লেগেছে। আজ পর্যন্ত ইলকিস বিগ আমাকে কিছু দেয়নি, বকবকানি ছাড়া।
কথা বলতে যাচ্ছিল কিশোর। থামিয়ে দিল গোল্ড। যাও এখন। আর কোনদিন যেন আমার এলাকায় না দেখি। শুরু থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল তোমরা কারও স্পাই, এখন দেখছি ভুল করিনি।
গোল্ডের কাছ থেকে আর কিছু জানা যাবে না। শহরে ফিরে চলল কিশোররা।
কিশোর বলল, লুক আর গোল্ড, দুজনের মধ্যে একজন মিথ্যে বলছে। কোনজন? গোল্ড যদি ইলকিস বিগসের হয়ে প্রচারের কাজ করেই থাকে, সেটা অন্যায় নয়, লুকানোর দরকার কী?
জবাব দিতে যাচ্ছিল মুসা। দূর থেকে আসা শব্দ শুনে থেমে গেল। ঘাড়ের নোম দাঁড়িয়ে গেল। কিশোর! নেকড়ে!
হাসল কিশোর। হ্যাঁ, ডাকটা নেকড়ের ডাকের মতই। গোল্ড আমাদের ভয় দেখাচ্ছে।
কিন্তু মেনে নিতে পারল না মুসা। শহর এখান থেকে কতদূর?
কেন? ভুরু নাচাল কিশোর। তুমি ভাবছ নেকড়েরা শহরের সীমানায় ঢোকে না?
দেখো, কিশোর, ইয়ার্কি না! ফিরে তাকাল মুসা। নীরব কালো গভীর বন। বনের ভিতর কিছু ছায়ার নড়াচড়া। ওগুলোকে শুধু ছায়া ভেবেই সান্ত্বনা পেতে চাইল ও।
লুকও মিথ্যে বলে থাকতে পারেন, আগের প্রসঙ্গে ফিরে গেল কিশোর। গোন্ডের সঙ্গে তাঁর শত্রুতা। বুড়োর বিরুদ্ধে বলতেই পারেন।
শহরে সীমানার বাইরের শেষ ঢালটা পেরোচ্ছে ওরা, এমন সময় শহরের প্রান্তের একটা কেবিন থেকে বিগত্সকে বেরোতে দেখল। মুসা বলল, ভোটর প্রচার করতে বেরিয়েছে। যাই বলল, ভীষণ পরিশ্রমী লোক। চলো, গোেল্ডকে টাকা দিয়েছে কি না জিজ্ঞেস করি।
বিগসও ওদের দেখেছে। দাঁড়িয়ে গেল। ওরা কাছে গেলে জিজ্ঞেস করল, খনি দেখতে গিয়েছিলে নাকি?
কী করে জানলেন? কিশোরের প্রশ্ন।
অনুমান। ওদিক থেকেই এলে তো।
গোল্ড ফেরানির প্রেসার মাইন দেখতে গিয়েছিলাম, কিশোর জানাল।
ভালই করেছ, বিগ বলল। এখানকার একটা দর্শনীয় জায়গা। ঠিকঠাক করে নিয়ে টুরিস্ট আকৃষ্ট করার উপযুক্ত করা গেলে গোল্ড রাশ টাউন হিসেবে কদর বেড়ে যাবে গ্লিটারের।
মুসা বলল, আপনাদের থিম-প্ল্যান নিয়ে গোল্ড কিন্তু খুব আশাবাদী।
মাথা ঝাঁকাল বিগ্স। হবেই। ওর ওই খনি ওকে স্টার বানিয়ে দেবে। হলিউডের ছবিতে যে সব স্বর্ণসন্ধানীদের দেখো, সবাই অভিনেতা, ওর মত আসল স্বর্ণসন্ধানী ওরা কোথায় পাবে? গ্লিটারে থিম পার্কের সবচেয়ে বেশি বেতনভোগী কর্মচারী হয়ে গেলেও অবাক হব না।
আমি তো ভেবেছিলাম, এখনই বেতন পাওয়া শুরু করেছে গোল্ড, বিগৃসের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য বলল কিশোর।
তীক্ষ্ণ হয়ে গেল বিগসের দৃষ্টি। কার কাছে শুনলে? শুনেছি, যার কাছেই হোক, কিশোর বলল। কথাটা ঠিক কি বলুন।
গ্লিটারে থিম পার্কের একমাত্র বেতনভোগী কর্মচারী আমি, বিগস জবাব দিল। আরও কেউ যদি নিজেকে গ্লিটারের কর্মচারী বলে দাবি করে থাকে, কেন করছে আমি জানি না। যাই, অনেক কাজ। এখনও বহু লোককে বোঝননা বাকি।
চলে গেল বিগস।
ও ছাড়া গ্লিটারে থিম পার্কের আর কোন কর্মচারী নেই, হয়তো ঠিকই বলেছে, বিড়বিড় করল কিশোর, কিন্তু কোম্পানির কাছ থেকে কারও ঘুষ খেতে তো কোন অসুবিধে নেই। কোম্পানির হয়ে যদি কাউকে ঘুষ দিয়ে থাকে বিগস্…
নোংরা কাজ করানোর জন্য, কথাটা শেষ করল মুসা। তারমানে, এখন থেকে বিগসের ওপর নজর রাখতে হচ্ছে আমাদের।
এগিয়ে চলল ওরা। পায়ে চলা যে পথটা ধরে চলেছে, সেটা দিয়েই জোসির কুকুরের কেনলগুলোর কাছে যেতে হয়। মোড় পেরোলেই দেখা যাবে। কুকুরের উত্তেজিত চিৎকার শোনা গেল।
মোড়ের অন্যপাশে এসে জানা গেল উত্তেজনার কারণ। চিৎকার করে বলল কিশোর, মুসা, দেখো, একটা কুত্তা দড়ি ছিড়ে পালিয়েছে।
ঘরের কাছে খুঁটিতে বাঁধা থাকে কুকুরগুলো। একটা খুঁটির দড়ি ছেড়া। মুসা বলল, কামড়ে কেটে ফেলেছে।
দৌড়ে আসতে দেখা গেল জোসিকে। কাছে এসে হেঁড়া দড়িটা দেখে মুখ কালো হয়ে গেল। সর্বনাশ! রেড লাইট পালিয়েছে!
প্রতিটি কুকুরের কাছে গিয়ে কানের কাছে মোলায়েম স্বরে কথা বলে বলে ওগুলোকে শান্ত করতে লাগল ও। চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল কিশোররা। কুকুরগুলো শান্ত হলে জোসি বলল, সাংঘাতিক ক্ষতি হয়ে গেল। রেড লাইট ডায়মণ্ডহার্টের সহকারী। ডায়মণ্ড অসুস্থ হলে কিংবা অন্য কোন কারণে স্লেজ টানতে না পারলে রেড লাইট নেতৃত্ব দেয়। ইস, নেকড়েগুলোর ডাক শুনেই কেন যে চলে আসিনি!
নেকড়ের ডাক আমরাও শুনেছি, মুসা বলল।
দলের শক্তি বাড়ানোর জন্য পোষা কুকুরকে লোভ দেখিয়ে ডেকে নিয়ে যায় নেকড়েরা, জোসি বলল। জ্যাক লণ্ডনের কল অভ দি ওয়াইল্ড পড়নি? আবার কুকুরগুলোর কাছে গিয়ে মৃদু স্বরে ওগুলোর সঙ্গে কথা বলতে লাগল ও।
কী মনে হতে রেড লাইটের খুঁটির কাছে গিয়ে দাঁড়াল কিশোর দড়ির ছেড়া মাথাটা হাতে নিয়ে পরীক্ষা করতে লাগল। ফিরে তাকিয়ে ইশারা করল মুসাকে।