তাহলে ঝুড়িতে দেয়া কার্ডটা? মুসার প্রশ্ন।
গ্লিটারের অর্ধেক লোকের কাছেই আমার কার্ড আছে, বিগ বলল। যে কেউ আমার কার্ড ঝুড়িতে রেখে দিতে পারে। যা-ই হোক, আমাকে এখন যেতে হবে। জরুরি কাজ আছে।
তাড়াহুড়া করে চলে গেল বিগস্।
কিশোর বলল, অন্য কেউ পাঠিয়েছিল আপেলের ঝুড়িটা।
কে পাঠিয়েছিল জানি আমরা, মুসা বলল। জোসির বিরুদ্ধে যার প্রচণ্ড আক্রোশ। জোসির রেস জেতা যে বন্ধ করতে চায়। প্রয়োজনে তার আত্মীয়-স্বজনের ক্ষতি করে হলেও।
চলো, লুককে জিজ্ঞেস করে দেখি তিনি কী বলেন। তাঁর টুওয়ে রেডিওটাও লাগবে। থিম পার্কের ব্যাপারে মিস্টার সাইমনকে একটু খোঁজ-খবর করতে বলব।
বিখ্যাত গোয়েন্দা মিস্টার ভিকটর সাইমন, খোড়া গোয়েন্দা বইতে তিন গোয়েন্দার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এরপর থেকে তার সঙ্গে বহু কেসে কাজ করেছে তিন গোয়েন্দা। কখনও তিনি ওদের সহায়তা চেয়েছেন, কখনও তিন গোয়েন্দা ওঁর সাহায্য নিয়েছে।
ভালই হয়, কিশোরের কথায় মুসাও একমত। চলো।
দোকানেই পাওয়া গেল লুককে। রেডিও ব্যবহার করতে চাইল কিশোর। ওদেরকে দোকানের পিছনের ঘরে নিয়ে গেলেন লুক। ফেয়ারব্যাংকসে যোগাযোগ করা হলো প্রথমে। সেখান থেকে লাইন দেয়া হলো রকি বিচে। একটা টেলিফোন রিসিভার কিশোরের হাতে ধরিয়ে দিলেন লুক।
মাইক্রোফোনে হাত চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিশোর। লুকের দিকে তাকাল।
বুঝতে পারলেন তিনি। অ, একা কথা বলতে চাও। তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
গ্লিটারে কী ঘটছে, সংক্ষেপে মিস্টার সাইমনকে জানাল কিশোর। তবে ওর সন্দেহের কথা চেপে গেল। কারণ একটা ছোট শর্ট ওয়েভ রেডিও সেট-এর সাহায্যে যে কেউ ওদের গোপন কথা শুনে নিতে পারবে।
সবশেষে বলল, সার, একটা কোম্পানি এখানে থিম পার্ক বানাতে চায়। কোম্পানিটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে আমার কাছে। এ ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন নাকি?
আলাস্কার গ্লিটারে থিম পার্ক? না, জানি না তো, মিস্টার সাইমন বললেন। তবে ইন্টারেস্টিং বলছ যেহেতু, খোঁজ নেয়া যেতে পারে। ঘণ্টাখানেক পরে আবার যোগাযোগ কোরো এই নম্বরে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। মিস্টার সাইমন ওর ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছেন। মুসাকে বলল, ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জানাবেন। ফলের ঝুড়িটার কথা আর আপাতত জিজ্ঞেস করব না লুককে। মিস্টার সাইমন কী বলেন আগে শুনি। তারপর।
দোকান থেকে বেরিয়ে এল দুজনে। পরের পঁয়তাল্লিশ মিনিট টেডকে খুঁজে বেড়াল ওরা। রাস্তায় কয়েকজন জানাল, সকালে টেডকে দেখেছে। কিন্তু কিশোর-মুসা ওর দেখা পেল না।
দোকানে ফিরে এল ওরা। আবার মিস্টার সাইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করল কিশোর। কথা শেষ করতে মিনিটখানেকের বেশি লাগল না এবার। লাইন কেটে দিয়ে মুসাকে জানাল, কোম্পানিটার কোন বদনাম নেই, তবে টাকার টানাটানিতে পড়েছে। থিম পার্কের প্ল্যান কার্যকর করতে না পারলে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে ওদের পক্ষে।
মাথা দোলাল মুসা। হু। তারমানে ভোটে জিততেই হবে ওদের, যেভাবেই হোক। আর জেতার জন্য হয়তো বিষ খাইয়ে মানুষ মারতেও পিছ-পা হবে না। খুবই জোরাল মোটিভ।
খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নিল কিশোর, কাছাকাছি। লুক আছে কি না। কণ্ঠস্বর নামিয়ে বলল, কিন্তু বিগ তো ফলের ঝুড়ি পাঠানোর কথা স্বীকার করল না।
অপরাধী কি আর সহজে কিছু স্বীকার করে? মুসা বলল, চলো, লুকের সঙ্গে কথা বলি।
দোকানের মূল ঘরে ফিরে এল ওরা। চকচকে পালিশ করা কাউন্টারের ওপাশে তাকের ওপর কনডেন্সড মিল্কের টিন সাজাচ্ছেন লুক। ফিরে তাকিয়ে হাসলেন। কি, কথা হলো?
হ্যাঁ। থ্যাংক ইউ, জবাব দিল কিশোর। আচ্ছা, লুক, কাল আপনি টিনুকদের বাড়িতে ফলের ঝুড়ি পাঠিয়েছিলেন?
মাথা নাড়লেন লুক। আমি না, বিগ দিয়েছিল। আমি টেডকে দিয়ে জেফরির বাড়িতে পাঠিয়েছি। কেন?
আশ্চর্য! মুসা বলল। আপনার দোকানে আসার আগে বিগসের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাদের। স্বীকারই করল না।
তাই নাকি? আমার এই কাউন্টারের ওপর পেয়েছি ঝুড়িটা। তাতে বিগৃসের একটা কার্ড আর একটা নোট ছিল। নোটে অনুরোধ করে লেখা ছিল, ঝুড়িটা যাতে টিকদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। আমি ভাবলাম বিগসই রেখে গেছে।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, নোটটা আছে?
না। ফেলে দিয়েছি। কী যেন মনে পড়তে মাথা দোলালেন। মনে হচ্ছে, শুধু বিস্ না, গোল্ডও এতে জড়িত। ওকে দিয়েই করিয়েছে।
বুড়ো প্রসপেক্টর?
মাথা ঝাঁকালেন লুক। কাউন্টারের দিকে চোখ নামালেন। মানুষের গোপন কথা অন্য কাউকে জানাতে ভাল লাগে না আমার। চোখ তুলে বিব্রত হাসি হাসলেন। কিন্তু মনে হচ্ছে তোমাদের বলা উচিত। কাল রাতে বিগসকে গোল্ডের হাতে টাকার তোড়া দিতে দেখেছি। চুপি চুপি দিচ্ছিল। এত টাকা কেন দিল গোল্ডকে? শুধু শুধু নিশ্চয় নয়? কিছু করানোর জন্য দিয়েছে।
কীভাবে দেখলেন? জানালা দিয়ে। কি জানি কি মনে হলো, রাতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম, তখন দেখলাম।
লুককে ধন্যবাদ দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এল দুই গোয়েন্দা। রাস্তায় নেমে কিশোর বলল, গোন্ডের সঙ্গে কথা বলা দরকার।
একটা কেবিন দেখে থামল ও। গোল্ডকে কোথায় পাওয়া যাবে জিজ্ঞেস করে জেনে নিল।