গম্ভীর হয়ে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। মনে হয়।
কোন বুনো জানোয়ার অত ওপরে নাগাল পাবে না। নেকড়ে ততা পাবেই না, ভালুকেও পাবে না। তাহলে মানুষের খাবার চুরি করতে এল এ কোন জানোয়ার?
মানুষ-জানোয়ার, জবাব দিল কিশোর। খাওয়ার জন্য চুরি করলে মাপ করে দেয়া যেত। কিন্তু আমি শিওর, টিনুকদের ভয় দেখানোর জন্য করেছে। বোঝাতে চেয়েছে, দেখো, কত সহজেই আমি কত বড় ক্ষতি করে দিতে পারি। বসন্তকাল না আসা পর্যন্ত এখন না খেয়ে থাকো।
দেয়ালের কাছে গিয়ে ছবিটা শুকে দেখল কিশোর। তাজা রঙ। ঘণ্টা দুয়েক আগে এঁকেছে।
এক মুহূর্ত ভাবল মুসা। বলল, দুই ঘণ্টা আগে ফল নিয়ে এসেছিল টেড। ফলের ঝুড়ি রেখে ফিরে যাওয়ার সময় মাংসের টুকরোটা বের করে নিয়ে যাওয়া ওর জন্য সহজ।
যে কারও জন্যই সহজ। মাত্র কয়েক পা দূরে বন। ভিতর দিয়ে এলে কারও চোখে পড়বে না।
কিন্তু নিল কীভাবে? মুসার প্রশ্ন। মুজের একটা আস্ত রান কাঁধে করে বয়ে নিতে পারবে না। অনেক ওজন।
কম করে হলেও পঞ্চাশ কেজি। কিন্তু আমি ভাবছি টিনুকরা এখন খাবে কী? শিকারের মৌসুমের তো এখনও অনেক দেরি। কী যেন ভাবল কিশোর। চলল তো, বাইরে গিয়ে দেখি। কোন সূত্র পাই কি না।
কেরোসিন-লণ্ঠনের কাঁপা কাঁপা অতি সামান্য আলো। তবে চিহ্নটা খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হলো না ওদের। এক ইঞ্চি চওড়া দুটো গভীর রেখা চলে গেছে বরফের ওপর দিয়ে। রেখা দুটোর মাঝখানের দূরত্ব দেড় ফুট।
ডগশ্রেজের দাগ না, মুসা বলল। তাহলে দাগের মাঝখানের দূরত্ব আরও বেশি হতো।
ঝর্না থেকে পানি আনতে গিয়েছিল মুন, মনে আছে? হাতে টানা একটা স্লেজ নিয়ে গিয়েছিল সে…
নীচের চোয়াল স্কুলে পড়ার অবস্থা হলো মুসার। কিশোর, তুমি মুনকে সন্দেহ করছ?
না না, তা করছি না, কিশোর বলল। তবে পানি আনার পর ছাউনির বাইরে রেখেছিল হয়তো স্লেজটা। আর তাতে করে মাংস বয়ে নিতে পারে চোর।
মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে ভালমত দাগগুলো দেখল মুসা। হ্যাঁ, স্টেজে করেই নিয়েছে। দেখো, ডানের রেখাটার চেয়ে বায়ের রেখাটা বেশি গভীর। বোঝার ভারে হয়েছে। আর বোঝা মানে মাংস। ভারী দিকটা রাখা ছিল গাড়ির বাঁ পাশে।
অন্ধকারে জোসির ডাক শোনা গেল, কিশোর? মুসা?
জোসি, আমরা এখানে, জবাব দিল মুসা।
জোসি এলে ওকে সব জানাল ওরা। অ্যাথাবাস্কান ভাষার তুবড়ি ছোটাল জোসি। একটা বর্ণও বুঝল না দুজনে।
এই দেখো, স্লেজের দাগ, লণ্ঠনটা উঁচু করে ধরল কিশোর।
ওকে অবাক করে দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল জোসি। একটা রেখার ওপর গাল চেপে ধরল। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চাচার স্লেজ। চুরিটা করেছে সূর্য ডোবার ঠিক পর পর।
কী করে বুঝলে? কিশোরের প্রশ্ন।
রেখা ছুঁয়ে, জোসি বলল। চলো, দেখি চোরটা কোনদিকে গেছে।
বনের ভিতর দিয়ে পঞ্চাশ গজ মত এগিয়ে হাত তুলল জোসি। দাঁড়াও। ঝোপের মধ্যে কী যেন পড়ে আছে। কিশোর, লণ্ঠনটা বা দিকে উঁচু করো তো।
উঁচু করে ধরল কিশোর। চোখের পাতা সরু করে তাকাল মুসা। অন্ধকারে একটা কালো কী যেন পড়ে থাকতে দেখল।
হাসল জোসি। ওটাই আমাদের মুজের মাংস। যাক, রাতে আর খেয়ে থাকতে হবে না।
আস্ত একটা রান সহ এক পাশের অনেকখানি মাংস। টুকরোটা ছাউনিতে বয়ে নিল এল ওরা।
তোমরা কাটতে থাকো, আমি আসছি, ছাউনি থেকে বেরিয়ে গেল জোসি। দাগ ধরে ধরে চোরের সন্ধানে এগোল। কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে জানাল, ওর কাছে যেতে পারলাম না। ভীষণ চালাক। স্লেজটা নেয়নি। ঝোপের মধ্যে মাংস ফেলে দিয়ে জেটা এনে রেখে গেছে আবার ছাউনির কাছে।
কিশোর বলল, আমি জানতাম, চুরির উদ্দেশ্যে চুরি করেনি চোর। ভয় দেখাতে চেয়েছে।
হ্যাঁ, জোসিও কিশোরের সঙ্গে একমত। চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, প্রথমে আমাদের কেবিনে আগুন, তারপর জানালা দিয়ে লাকড়ি ছুঁড়ে মারা, তারপর আপেলে বিষ দেয়া, আর সবশেষে এই মাংস চুরি। কেউ একজন আমাদেরকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে।
পরদিন সকালে জোসি ওর কুকুরগুলোকে দেখতে গেল, কিশোর ও মুসা চলল শহরে, রহস্যের তদন্ত করতে। প্রথমেই যার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, সে ইলকিস বিগ্স্।
হাই, বয়েজ, দেখেই হাসিমুখে চেঁচিয়ে উঠল বিগ। তারপর? গ্লিটারে কেমন কাটছে সময়?
ভাল, জবাব দিল কিশোর। এই ফলের ঝুড়ির ব্যাপারে কিছু কথা ছিল।
বলে ফেলল। কীসের ফল?
ওই যে গতকাল আপনি যেটা পাঠিয়েছিলেন টিনুকদেরকে, মুসা বলল।
আমি ফল পাঠাইনি। তবে মনে করিয়ে দিয়ে ভালই করলে। ওদের তো সবই পুড়ে গেছে। কিছু খাবারটাবার পাঠানো উচিত। শুনলাম, কাল রাতে নাকি ওদের খাবারও চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময়ে কারও মাংস চুরি যাওয়ার মানে ভয়ানক বিপদ। স্রেফ না খেয়ে মরতে হবে।
কিন্তু আপনি জানলেন কীভাবে? কিশোরের প্রশ্ন।
তোমাদেরকে তো আগেই বলেছি, এখানে খবর খুব দ্রুত ছড়ায়। ফলের ঝুড়ির কথা কী যেন বলছিলে?
এক ঝুড়ি তাজা ফল দিয়ে আসা হয়েছিল টিনুকদের বাড়িতে, তাতে আপনার কার্ড ছিল, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বিগসের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। চেহারার কোন পরিবর্তন দেখল না। ওই ঝুড়ির আপেল খেয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন জেফরি আঙ্কেল। প্রায় মরার দশা।
কঠিন হয়ে গেল বিগসের দৃষ্টি। তোমরা কী বলতে চাও, বুঝতে পারছি। কিন্তু কাল কাউকে ফল পাঠাইনি আমি,