এখনও পুরোপুরি বাঁচিনি, পরিস্থিতি হালকা করার জন্য হাসল মুসা। কাপড়ই শুকায়নি ঠিকমত। আরাম পাচ্ছি না।
স্লেজটা রাস্তায় তুলল জোসি। আবার ছুটল।
শহরটা নজরে আসতেই গতি বেড়ে গেল কুকুরগুলোর। লেজ নাড়াও বেড়েছে। শক্তিশালী পেশিতে নতুন শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে।
নদীতীরের রাস্তা ধরে দলটাকে ছুটিয়ে নিয়ে এল ডায়মণ্ডহার্ট। কেনলের কাছে এসে থামল।
লাগাম খুলতে জোসিকে সাহায্য করল কিশোর ও মুসা। কুকুরগুলোকে খাবার আর পানি দিল জোসি। তারপর কিশোরদের নিয়ে ঘরে ফিরে চলল।
কেবিনের কাছাকাছি প্রায় চলে এসেছে ওরা, হাত তুলল মুসা, মুন না?
জোসি বলল, কিছু হয়েছে!
মুন ওদের দেখে দৌড়ে আসতে শুরু করল।
জোসি, কয়েক গজ দূরে থাকতে চেঁচিয়ে উঠল মুন, জলদি চলো! বাবার শরীর খুব খারাপ।
কী হয়েছে?
জানি না। খাওয়ার পর থেকে কেমন করছে। চোখে পানি এসে গেছে মুনের। জোসি, আমার ভয় লাগছে। বাবা যদি মরে যায়!
৭
একটা মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে মুনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল জোসি। পরক্ষণে ঝটকা দিয়ে ঘুরে কেবিনের দিকে ছুটল। পিছনে ছুটল কিশোর ও মুসা। হুড়মুড় করে কেবিনের দরজা দিয়ে ঢুকে থমকে দাঁড়াল।
বিছানায় কুঁকড়ে পড়ে আছেন জেফরি। দুই হাতে পেট চেপে ধরে গোঙাচ্ছেন। পাশে বসা এরিনা। ভিজা কাপড় দিয়ে বার বার জেফরির কপাল মুছে দিচ্ছেন।
এগিয়ে গিয়ে জেফরির কাঁধে হাত রাখল জোসি। চাচীকে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?
মাথা নাড়লেন এরিনা। জানি না। হঠাৎ করেই বলল পেটে ব্যথা। তারপর থেকে বেড়েই চলেছে। বিছানায় থাকতে পারছে না।
আমার ভয় লাগছে, বলে কিশোর-মুসার দিকে তাকাল মুন। কিছু একটা করা দরকার।
উঠে দাঁড়ালেন এরিনা। জোসি, এ অবস্থায় তোমার চাচাকে আমার একা রেখে যাওয়া উচিত হবে না। বনে যাবে? কী আনতে হবে জানোই তো।
দরজার দিকে পা বাড়াতে গিয়ে ফিরে তাকাল জোসি।
কিশোরদের বলল, তোমরাও এসো। আমাকে সাহায্য করবে।
পায়ে চলা পথ ধরে বনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল কিশোর, কোথায় যাচ্ছ?
বনে, জোসি বলল।
তা তো বুঝলাম, মুসা বলল। কী আছে ওখানে?
ভেষজ ওষুধ। চাচীর মা আর নানী খুব ভাল কবিরাজ ছিলেন। চাচী তাঁদের কাছ থেকেই কবিরাজি শিখেছে।
আর তুমি?
চাচীর কাছে।
ইণ্ডিয়ানদের অসাধারণ কবিরাজি জ্ঞানের কথা শুনেছে কিশোর। শত শত বছর নানারকম গাছ, পাতা আর শিকড়-বাকড় দিয়ে কঠিন কঠিন রোগের সফল চিকিৎসা করে আসছে তারা। ইদানীং বড় বড় ওষুধ কোম্পানিগুলোও ইণ্ডিয়ানদের এ সব ওষুধের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ সব ভেষজ সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে গবেষক দল পাঠাচ্ছে ইণ্ডিয়ান অঞ্চলে।
বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মিনিট বিশেক পরেই কিশোর লক্ষ করল, গাছপালার চেহারা বদলে যাচ্ছে। পিছনে ফেলে এসেছে প্রুস গাছের ঘন জঙ্গল। সামনের জায়গাটা মোটামুটি পাতলা। বার্চ আর অ্যাসপেন গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। স্নান সূর্যালোক চিকচিক করছে পাতাঝরা গাছগুলোর ডালে জমে থাকা বরফে।
বড় একটা ওক গাছ দেখাল জোসি। ওটার গোড়ার তুষার চেঁছে ফেলে দিলে এক ধরনের শ্যাওলা পাবে। তুলে নিয়ে এসো।
দৌড়ে গিয়ে কাজ শুরু করে দিল কিশোর ও মুসা। তুষার ফেলে দিতেই বেরিয়ে পড়ল বিচিত্র চেহারার শ্যাওলা। ভিজা মাটির গন্ধে ভরা। জোসি তখন অন্য জিনিস জোগাড়ে ব্যস্ত। বরফ খুঁড়ে এক জাতের চিরসবুজ উদ্ভিদ খুঁজে বের করল। উপড়ে নিল কয়েকটা গাছ। কালো রঙের চেরি-বার্ডের এক টুকরো বাকল কেটে নিল। এলডার ঝোপের শিকড় নিল। আর নিল দুই ধরনের গাছের দুটো নরম ডাল। এ গাছগুলো কিশোরের অচেনা।
কাজ শেষ করতে দশ মিনিট। দৌড়ে গ্লিটারে ফিরে চলল তিনজনে। ফেরার পথে গতি বেশি, কারণ ঢাল বেয়ে নামছে। কেবিনে ঢুকতে বিচিত্র সুবাস নাকে ঢুকল ওদের। স্টোভের ওপর কালো রঙের একটা কেটলিতে পানি ফুটছে, তাতে কিছু মিশিয়েছেন এরিনা, সেটার গন্ধই বেরোচ্ছে। জোসির হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে ডাল-পাতা, শিকড়, বাকল, শ্যাওলাগুলো বের করে কেটলির পানিতে মিশানো শুরু করলেন।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, জেফরি আঙ্কেল কীজন্য অসুস্থ হয়েছেন, আপনি বুঝতে পেরেছেন?
মাথা ঝাঁকালেন এরিনা। মনে হয়। আপেলটাতে বোধহয় খারাপ কিছু ছিল। ওটা খাওয়ার পর থেকেই পেটব্যথা শুরু।
আপনারা খাননি? আপনি আর মুন?
না। ও একাই খেয়েছে।
জোসি বলল, ঘরে আপেল আছে তাই তো জানতাম না।
ছিলও না, মুন জানাল। ইলকিস বিগ এক ঝুড়ি তাজা ফল উপহার দিয়ে গেছে।
মুসার দিকে তাকাল কিশোর। চোখে চোখে কথা হয়ে গেল। দুজনের মনে একই ভাবনা। জেফরিকে উপহার পাঠাল কেন বিগস? সে জানে বিরোধী দলের নেতা জেফরি। ফল পাঠানোটা ঘুষ না তো? ঘুষ হোক আর যা-ই হোক, মারাত্মক বিষে ভরা এই উপহার।
আপেলের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দেয়নি তো বিগস? বিশ্বাস হতে চাইছে না কিশোরের। তবে উদ্দেশ্যটা বোঝা যাচ্ছে। জেফরি সহ তার পরিবারের লোকেরা অসুস্থ হয়ে পড়লে থিম পার্কের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলায় মনোযোগ দিতে পারবেন না তিনি। তাঁর কেবিন পোড়ানো, জো সারটনের নৌকা নষ্ট করা, সব এই পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। ধরে নেয়া যায়, পার্কের সপক্ষের কেউ এই অকাজগুলো করেছে।
বছরের এ সময়ে তাজা ফল পেল কোথায় বিগস্? জোসির প্রশ্ন।