গুড! ধরে রাখো! ছাড়বে না! জোসি বলল। ইঞ্চি ইঞ্চি করে পিছানো শুরু করল। ডালের সঙ্গে মুসাকেও টেনে নিয়ে আসতে লাগল।
জোসিকে আরও তাড়াতাড়ি পিছাতে সাহায্য করল কিশোর। মুসার মনে হলো অনন্তকাল ধরে টানার পর অবশেষে পানি থেকে তুলে আনা হলো ওকে।
আনন্দে চেঁচিয়ে উঠে মুসার পিঠ চাপড়ে দিল কিশোর।
জোসি বলল, এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা যাবে না। ডায়মণ্ডহার্টকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে কিশোর-মুসাকে নিয়ে শক্ত জায়গায় চলে এল ও।
কম্বল দরকার, কিশোর বলল।
থরথর করে কাঁপছে মুসা। ভীষণ শীত থেকে বাঁচার জন্য কুঁকড়ে ফেলেছে শরীর।
সবার আগে ওর কাপড় খোলা দরকার, জোসি বলল।
এই ঠাণ্ডার মধ্যে! কিশোর অবাক।
যা বলছি, করো। ভিজে কাপড় গায়ের উত্তাপ শুষে নিচ্ছে। যত দেরি করবে ততই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। কিশোর; স্লেজে ইমারজেন্সি কিট আছে, জলদি আনো। ওটার মধ্যে স্পেস ব্ল্যাঙ্কেট পাবে। স্পেশাল কম্বল। ওর কাপড়-চোপড় সব খুলে ফেলে গায়ে কম্বল জড়াও। আমি আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করি।
মুসার আঙুল অবশ। জিপার, বোতাম, কিছুই খোলার ক্ষমতা নেই। কাপড় খুলতে ওকে সাহায্য করল কিশোর। তারপর আলট্রাথিন মেটালিক কম্বলটা জড়িয়ে দিল গায়ে।
দাঁতের কাঁপুনি বন্ধ করতে পারছে না মুসা। এর মধ্যেও জোক বলে শীত ভুলে থাকার চেষ্টা করল। হাসল কিশোর। কথা বোলো না।
না বলে পারছি না তো…
বাদামি রঙের এক গুচ্ছ ঘাস নিয়ে ফিরল জোসি। একটা সমতল পাথর থেকে বরফ সরিয়ে ঘাসগুলো রাখল তার ওপর।
কী ঘাস? জানতে চাইল কিশোর।
মেঠো ইঁদুরের বাসা, জোসি বলল। জ্বলে কী রকম দেখো।
শুকনো ডাল ভেঙে ঘাসগুলোর ওপর ছড়িয়ে দিল ও। তারপর পানি নিরোধক একটা হোল্ডার থেকে দিয়াশলাই বের করে আগুন ধরাতে ব্যস্ত হলো।
চোখের পলকে আগুন ধরে গেল ঘাসে। তাতে ডালপাতা ফেলে আগুনটা বাড়াল জোসি। তৈরি হয়ে গেল অগ্নিকুণ্ড। আগুনের ধার ঘেঁষে বসল তিনজনে। ওদের দেহ যেন শুষে নিতে লাগল প্রাণদায়ী সেই উত্তাপ। হাত-পায়ের সাড় ফিরতে মুখ তুলে তাকাল মুসা। হাসি ফুটল মুখে। কিশোর আর জোসির মাঝেও সংক্রামিত হলো ওর হাসি।
মুসার ভিজা কাপড় আগুনের আঁচে শুকাতে দিয়ে নাস্তা খেতে বসল ওরা। ইমারজেন্সি কিট থেকে বের করল পিচফল আর হার্ডট্যাক ক্র্যাকার অর্থাৎ লবণ মাখানো শুকনো গরুর মাংসের টুকরো। একটা ক্যানে কিছু তুষার গলিয়ে নিয়ে স-নিডলের চা বানাল জোসি। অবশেষে শহরে ফিরে যাওয়ার মত বল পেল মুসা শরীরে। আগুন নিভিয়ে, স্লেজ ঘুরিয়ে, শহরে যেতে তৈরি হলো ওরা।
একদিনের জন্য যথেষ্ট প্র্যাকটিস হয়েছে, কি বলল? হেসে ভুরু নাচাল জোসি।
একদিন না, তিন দিন, কিশোর বলল।
উঁহু, মাথা নাড়ল মুসা, তিন মাস।
যে পথে এসেছিল, সে-পথেই ইউকনে ফিরে এল ওরা। নদীর মাঝখান দিয়ে চলল। আর কোন বিপত্তি ঘটল না। নিরাপদেই ওদেরকে পার করে আনল ডায়মণ্ডহার্ট। হঠাৎ গোঁ গোঁ করে উঠল কুকুরটা। বার বার ফিরে তাকাচ্ছে জোসির দিকে।
জোসি বলল, হ্যাঁ, আমিও দেখেছি!
কাকে? কিশোরের প্রশ্ন।
ডায়মণ্ডহার্টের সঙ্গে কথা বলছি আমি, জোসি বলল। আমাদের দিকেই আসছে দলটা। ডায়মও আগে দেখেছে। দেখে আমাকে জানিয়েছে।
কী করে বুঝলে তুমি? জিজ্ঞেস করল মুসা।
প্র্যাকটিস আর অভিজ্ঞতা দিয়ে, জবাব দিল জোসি।
কই, আমি তো কিছু দেখছি না, কিশোর বলল। আকাশ আর বরফ ছাড়া।
গতি কমাল না ডায়মণ্ডহার্ট। তবে অন্য দলটাকে দেখার জন্য সারাক্ষণ মাথা উঁচু করে রাখল।
এ পথেই আসছে এখনও? জোসিকে জিজ্ঞেস করল মুসা।
হ্যাঁ, জোসি জবাব দিল। চিনতে পেরেছি ওকে। টেড।
এত দূর থেকে চিনলে? মুসা অবাক। শুধু ওই কালো বিন্দুগুলো দেখে?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল জোসি। এ সব আমাদের শিখতে হয়। এখানে দূর থেকে যে চিনতে পারবে না, যে কোন সময় ভয়ানক বিপদ হতে পারে তার। আমি এখান থেকেই বলে দিতে পারব দলটা কত বড়, কত গতিতে ছুটছে, কত দক্ষ মাশার।
কিন্তু টেড এখানে কী করছে? কিশোরের প্রশ্ন।
প্র্যাকটিস, জবাব দিল জোসি।
পঞ্চাশ গজের মধ্যে চলে এল টেড। ভঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছে রাস্তা ছাড়ার কোন ইচ্ছেই নেই ওর। ঝামেলা করতে চাইল না জোসি। ডায়মণ্ডহার্টকে থামতে বলে ব্রেক চাপল। জেটা রাস্তা থের্কে নামাতে জোসিকে সাহায্য করল কিশোর ও মুসা। জোসি কুকুরগুলোকে রাস্তা থেকে সরিয়ে এনে চুপ থাকতে বলল।
সোজা ওদের দিকে ছুটে এল টেড। গতি কমাল না। দ্রতা করেও একটা কথা বলল না কারও সঙ্গে।
জোসি চুপ। তাকিয়ে আছে কিশোর-মুসা। রাস্তা দখল করে রেখে নিজেকে শক্তিমান প্রমাণের চেষ্টা করছে টেড। তবে জোসি বুদ্ধিমান। এ মুহূর্তে কিছু বলার অর্থ ঝগড়া বাধানো। সেটা এড়াতে চাইছে ও। ইডিটারোড রেসের আগে মারামারি করে কুকুরগুলোর ক্ষতি করতে রাজি নয়।
বারো ফুটের মধ্যে চলে এল টেড। হাত তুলে ওকে থামার ইশারা করল জোসি। সামনের দিকে নজর টেডের। জোসিকে দেখেও না দেখার ভান করল। শ্লেজের হুস হুস শব্দ তুলে পাশ কেটে বেরিয়ে গেল।
এত অভদ্র তো দেখিনি! রেগে গেল মুসা।
সাবধান করতে চেয়েছিলাম ওকে, যাতে পাতলা বরফে না ওঠে, গম্ভীর শোনাল জোসির কণ্ঠ।
উঠুক। ঠাণ্ডা পানিতে পড়লে বুঝবে মজা, কিশোর বলল। মরবে, কি বলো? মুসা তো বেঁচে গেল।