কেন, পুলিশ কিছু করতে পারছে না?
দমকল বাহিনী যেমন নেই-আগুন লাগলে আমাদের নিজেদেরকেই আগুন নিভাতে হয়-দেখলেই তো, পুলিশও নেই আমাদের শহরে, কথাটা বলে আবার মুদির লিস্ট দেখায় মন দিলেন এরিনা।
পুলিশ না থাকলেও দরকার পড়লে স্টেট ট্রুপারদের ডাকতে পারি আমরা, মুন বলল। তবে কখনও ওদের ডাকার প্রয়োজন পড়েনি। এবার মনে হয় পড়বে।
হুঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা আমরা করব।
এখানে, আলাস্কার এই দুর্গম অঞ্চলে জীবনযাত্রা মোটেও সহজ নয়, কিশোর, জোসি বলল। সব সময় কোন না কোন বিপদ লেগেই আছে। তোমাদের রকি বিচের মত নিরাপত্তা আর সুযোগ-সুবিধা পাবে
এখানে। কলের চাবিতে মোচড় দিলে সাপ্লাইয়ের পানি আসে না, হাসপাতাল নেই, একশো মাইলের মধ্যে একজন ডাক্তারও নেই।
সে-কারণে সাধারণ ছোটখাট দুর্ঘটনাকে আমরা তেমন কিছুই মনে করি না, এরিনা বললেন। সব কিছু নিয়ে ভাবতে গেলে টিকতে পারতাম না। অনেক কিছুই মনে রাখি না আমরা। কিন্তু কেউ আমাদের কেবিনে আগুন দিলে, সেটা আমরা ভুলতে পারি না।
আপনাদের বিরুদ্ধে কার এমন আক্রোশ থাকতে পারে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
ব্ৰিণ্ডল জ্যাক, একসঙ্গে বলে উঠলেন এরিনা ও মুন। এরিনা বললেন, শিকারের ওই জায়গাটা নিয়ে দশ বছর হলো জেফরির সঙ্গে ঝগড়া। এখনও মিটমাট হলো না।
অস্বস্তি বোধ করছেন জেফরি। জ্যাক বদমেজাজী, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ঘরে আগুন দেয়ার মত এতবড় একটা অন্যায় কাজ সে করবে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু আমি ভাবছি আরেকজনের কথা। ইডিটারোড রেসে জিততে পারলে ভাল টাকা পাওয়া যায়। এ সময় আমাদের ঝামেলায় ফেলে দিতে পারলে রেসে মনোযোগ দিতে পারবে না জোসি।
তাই বাধা দিয়ে আমাকে রেসে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে চাইছে, এই তো বলতে চাও? ভুরু নাচাল জোসি। তুমি কি টেডকে সন্দেহ করছ, চাচা? ঝামেলা পাকিয়ে আমাকে যদি ঠেকাতে চায়, লাভ হবে না, আমি ওকে ছাড়ব না…।
জেফরির দিকে ফিরল কিশোর। আঙ্কেল, থিম পার্ক বানানোয় আপনি বিরোধিতা করছেন। আপনি দলের নেতা। এ নিয়ে আপনার সঙ্গে শত্রুতা করছে না তো বিপক্ষের কেউ?
জানি না। তবে ইলকিস বিগস মরিয়া। ওর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তবে তাই বলে কারও ঘরে আগুন দেয়ার মত খারাপ লোক না ও।
ভাবছি, আমি আর কিশোর গিয়ে একটু ঘোরাঘুরি করে খোজখবর নিয়ে আসব কি না, মুসা বলল। আমরা এখানকার বাসিন্দা নই। লোকে আমাদের সঙ্গে মন খুলেই কথা বলবে।
তা ঠিক, হাসল জোসি। দুজন চিকাকোকে সন্দেহ করবে না লোকে।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, নতুন কেউ এলে তাকে চিকাকো বলে নাকি?
জোসি বলল, হ্যাঁ। এক শীত কাটানোর পর চিকাকোর বদলে তোমরা হয়ে যাবে সাওয়ার-ডো, অর্থাৎ টক হয়ে যাওয়া ময়দার তাল। শব্দটা চালু করেছিল পুরানো আমলের স্বর্ণসন্ধানীরা। রুটি বানাতে ময়দার সঙ্গে ঈস্টের বদলে সাওয়ার-ডো ব্যবহার করত ওরা…
রুটি, রুটি! মনে করিয়ে দিয়ে ভাল করেছ, এরিনা বললেন। ময়দা দরকার। আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস। মুসা, যদি জেনারেল স্টোরের দিকে যাও তোমরা, জিনিসগুলো নিয়ে এসো। পারবে?
পারব,মুসা বলল।
এই যে লিস্ট।
ভালই হলো, কিশোর বলল। জিনিস কেনার ছুতোয় সহজেই স্টোরের মালিকের সঙ্গে কথা বলতে পারব।
কেবিন থেকে বেরিয়ে হেঁটে চলল দুজনে। কিছুদূর যেতে সামনে পড়ল গোল্ড ফেরানি। মাথায় এখন লাল ঘেঁড়া টুপি। গায়ে একটা সবুজ পার্কা।
থাকতে এসেছ নাকি এখানে? রুক্ষ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল বুড়ো।
না, রেস দেখতে এসেছি, মুসা বলল। ইডিটারোডের ডগ রেস।
বাঁকা চোখে ওদের দিকে তাকাল গোল্ড। নাকি সোনা খুঁজতে?
না, সোনা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমাদের আগ্রহ ডগ রেসে।
সত্যি কথা বলল।
সত্যি কথাই বলছি।
ভাল। শোনো ইডিটারোডের সব খবর আমার জানা। টেড আর জোসি রেসে অংশ নিতে যাচ্ছে, তা-ও জানি। এটা গ্লিটারের জন্য একটা বড় খবর। তারচেয়েও বড় খবর আছে এখানে, যার দেখার চোখ আছে সে ঠিকই দেখতে পাবে।
কী খবর? কিশোরের প্রশ্ন।
নাকের একপাশে টোকা দিল গোল্ড। তা বলব না। গোপন ব্যাপার। চলি। কয়েক পা গিয়ে ফিরে তাকাল লোকটা। সোনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতে যেয়ো না, তাহলে বিপদে পড়বে।
কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। ও কী বলল, কিছুই তো বুঝলাম। সোনার খনিটনি পাওয়া গেছে নাকি এখানে? যেটা এখনও গোপন রয়েছে?
কী জানি! চিন্তিত ভঙ্গিতে কিশোর বলল। তবে আমার মনে হয় না। এখানে কোন কথা গোপন থাকে না। সোনার খনির মত এতবড় একটা খবর… সময় হলেই জানা যাবে। চলল।
শহরের ভিতর দিয়ে হাঁটার সময় চারপাশে নজর রেখে চলল মুসা। অনেক কিছুই দেখার আছে। একটা কেবিনের ছোট্ট জানালার কাছে বসে আছে দুটো ছোট ছেলে। মার্বেলের মত গোল কালো চোখ। খানিক দূর গিয়ে একজন বুড়ো মানুষের সঙ্গে দেখা। চেহারায় বয়েসের ভঁজ। পিঠে বাঁধা লাকড়ি, বোঝার ভারে কুঁজো। আরেকটা কেবিনের পাশ কাটানোর সময় ঘরের দরজায় বসা দুটো হাস্কি কুকুর লাফ দিয়ে উঠে দুজনের দিকে দাঁত খিচানো শুরু করল।
জেনারেল স্টোরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে মুসা বলল, অকারণে থিম পার্ক করতে চাইছে না ওরা। টুরিস্ট এখানে সত্যি আসবে। দেখার অনেক কিছু আছে।
স্টোরের সামনে এসে দাঁড়াল দুজনে। ঠেলা দিয়ে দরজার পাল্লা খুলল। ওপরে লাগানো একটা ঘণ্টা টুং-টাং করে বেজে উঠল। ঘরে ঢোকার পর পাল্লা লাগানোর সময় আবার বাজল ঘণ্টা।