- বইয়ের নামঃ আলাস্কা অভিযান
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প, অ্যাডভেঞ্চার
আলাস্কা অভিযান
১
বাঁয়ে তীক্ষ্ণ মোড় নিল বুশ প্লেন। ফায়ারওয়ালে বুট চেপে ধরে নিজেকে সামলাল পাইলটের পাশের সিটে বসা মুসা। থাবা দিয়ে ধরে ফেলল মাথার ওপরের হাতলটা। জানালা দিয়ে তাকাল হাজার ফুট নীচে।
পাইলট ডিউক আইকহ্যাম বুড়ো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল, ওই, যে গ্লিটার টাউন।
শহরটাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে মুসা। যেদিকেই তাকায়, শুধু গাছ আর গাছ। সাদা রঙের চওড়া একটা কাস্তে চলে গেছে যেন গাছের জঙ্গলকে ভেদ করে। ওপর থেকে মহাসড়কের মত লাগছে কাস্তেটাকে। কিন্তু মুসা জানে, ওটা রাস্তা নয়, নদী। ইউকন রিভার। বছরের এ সময়টায় নদীর পানি জমাট বরফ। দশ ফুট পুরু হয়ে বরফের স্তর পড়েছে। শহরটা চোখে পড়ল হঠাৎ। নদীর দিকে মুখ করা। দূর থেকে বাড়ি-ঘরগুলোকে খেলনার মত লাগছে। ওখানেই চলেছে কিশোর ও মুসা।
দারুণ! চিৎকার করে বলল মুসা। সাংঘাতিক!
হাসল ডিউক। এটা সত্যিকারের বুশ কান্ট্রি। নির্জন। বিশাল এলাকা জুড়ে কোন মানুষের দেখা পাবে না।
বিগ কান্ট্রি আলাস্কা! বিড়বিড় করে বলল পিছনের সিটে বসা কিশোর। এয়ারস্ট্রিপটা কই, ডিউক? শুরুতে মিস্টার ডিউক বলেছিল, কিন্তু ডিউক জোরে হাত নেড়ে বাতাসে থাবা মেরে জানিয়ে দিয়েছে, শুধু ডিউক। মিস্টার-ফিস্টার ভাল্লাগে না আমার।
ডিউকের হাসিটা চওড়া হলো। আছে তো। ওই যে নীচেই। এক মাইল চওড়া, দুই হাজার মাইল লম্বা।
তারমানে নীচের ওই বরফে ল্যাণ্ড করবেন? অবাক হলো মুসা।
এত অসমান…
আগে আরও খারাপ ছিল, ডিউক জানাল। গেল শীতে এখানকার লোকে সমান করে দিয়েছে। আমার নামার সুবিধের জন্য। আচমকা সামনের দিকে নিচু হয়ে গেল প্লেনের নাক। গাছের ওই সারি দুটো দেখছ? ওগুলোই রানওয়ের নিশানা। দুটোর ঠিক মাঝখানে নামালে আর কোন ভয় নেই।
থ্রটল অ্যাডজাস্ট করল ডিউক। ফ্ল্যাপ নামিয়ে, গতি কমিয়ে নামার জন্য তৈরি হচ্ছে।
শূন্য থেকে পাথর পড়ার মত ঝপ করে অনেকখানি নীচে নেমে এল প্লেন। এয়ার পকেটে পড়েছে। পেটের মধ্যে পাক দিয়ে উঠল মুসার। ডিউকের সঙ্গে কথা বলাটা এখন নিরাপদ নয়। কাঁধের ওপর দিয়ে ফিরে তাকাল কিশোরের দিকে। দারুণ একটা অ্যাডভেঞ্চার হবে, কী বলো? জোসিও আমাদের দেখলে খুশি হবে। বিশ্বাসই করতে পারবে না, ওর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে সত্যি সত্যি চলে আসব আমরা।
তা ঠিক, মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
জোসি মানে জোসেফ টিনুক। ওদের বন্ধু। অ্যাথাবাস্কান। গ্লিটারের স্থানীয় অধিবাসী। জন্মের পর থেকেই নীচের ওই খুদে শহরটায় বাস করছে। ব্যুরো অভ ইণ্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্সের স্পন্সর করা খেলাধূলার প্রোগ্রামে ফুটবল খেলতে কিছু দিনের জন্য লস অ্যাঞ্জেলেসে যাবার সুযোগ পেয়েছিল। কয়েক হপ্তা কাটিয়ে এসেছে তিন গোয়েন্দার সঙ্গে, রকি বিচে। ফিরে আসার সময় গ্লিটার টাউনে ওদেরকে দাওয়াত করেছিল জোসি। বসন্তের ছুটিতে স্কুল বন্ধ হতেই তাই বেরিয়ে পড়েছে কিশোর ও মুসা। আলাস্কাও দেখা হবে, ভগ জে রেসে বন্ধুকে সাহায্যও করতে পারবে। অ্যাঙ্কারেজ থেকে শুরু হয় ইডিটাররাডের বিখ্যাত এই কুকুর-দৌড়।
বাবা-মার সঙ্গে নিউ ইয়র্কে যেতে হয়েছে রবিনকে, তাই আসতে পারেনি। ওর বাবা মিস্টার মিলফোর্ড ওখানকার একটা বড় পত্রিকায় কাজ নিয়েছেন। যদি ভাল লাগে, ওখানেই থেকে যাবেন, রকি বিচে আর ফিরবেন না। আপাতত ওখানকার কোনও একটা স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হবে রবিনকে। বন্ধুদের ছেড়ে যেতে হচ্ছে বলে দুঃখে কাতর হয়ে পড়েছিল রবিন। মুসা তো কেঁদেই ফেলেছিল। মন খারাপ হয়ে। গিয়েছিল কিশোরেরও।
শক্ত হয়ে বসো, ডিউকের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এল কিশোর।
প্লেনের নাক আরও নামিয়ে দিল ডিউক।
মাথার ওপরের হ্যাণ্ডেলটায় মুসার আঙুলের চাপ আরও শক্ত হলো। ওপর থেকে নীচে তাকিয়ে ওর মনে হচ্ছে, প্লেনটা নামছে না, বরং বিশাল ধরণীই দ্রুতবেগে উঠে আসছে ওদের দিকে।
আরও গতি কমাল ডিউক। জয় স্টিক টেনে নাক সোজা করল। সামান্য সামনে ঠেলে দিল স্টিকটা। নদীর বরফ স্পর্শ করল প্লেনের স্কি। রিভার্স-এ দিল প্রপেলার। থ্রটল বাড়িয়ে দিল। গর্জন করে উঠল ইঞ্জিন। থরথর করে কেঁপে উঠল প্লেনের শরীর। আঁকি খেল দুতিনবার। নাচতে নাচতে এগিয়ে গেল কয়েক গজ। তারপর থেমে গেল।
হাত বাড়িয়ে সুইচ টিপে মোটর বন্ধ করে দিল ডিউক। জোরে নিঃশ্বাস ফেলল। হঠাৎ করে নীরবতা এসে ধাক্কা মারল যেন কানের পর্দায়। রীতিমত ব্যথা হচ্ছে কানে।
পার্কার জিপার তুলে দাও, বলতে বলতে দরজা খোলার হ্যাণ্ডেলের দিকে হাত বাড়াল ডিউক। এখানকার ঠাণ্ডা কিন্তু ভয়ানক। বাতাস ছাড়াই তাপমাত্রা নেমে যায় শূন্যের নীচে, আর যখন বাতাস বয়, তখন তো ভয়াবহ অবস্থা।
পার্কার জিপার তুলে দিয়ে প্লেন থেকে নেমে এল কিশোর ও মুসা।
আমরা যে এসেছি শহরবাসী কি জানে? কথা বলার সময় নিজের মুখ থেকে বেরোনো বাতাস মুহূর্তে বরফের কণা হয়ে যেতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মুসা।