আরেকজন ফাদার ক্রিস্টমাসের খোঁজে যেতে হবে এখন আমাদের, কিশোর বলল। বিল্ডিঙের দিকে পালিয়ে গেছে যে লোকটা। লাল-সাদা আলখেল্লাটা তুলে নিল সে।
কি ভাবে খুঁজে বের করব? ববের প্রশ্ন। দরজায় দরজায় গিয়ে তো আর নক করে জিজ্ঞেস করা যাবে না-এই ভাই, একজন নকল ফাদার ক্রিস্টমাস আছে নাকি এখানে।
তা ছাড়া লোকগুলোর আসল পরিচয়ও জানি না আমরা, ববের কথা সমৰ্থন করল মুসা।যারা ওদের আক্রমণ করল, তাদের সম্পর্কেও কিছুই জানি না। ওরা কি অপরাধী না পুলিশের লোক, তা-ও জানা নেই। রহস্যটা বড়ই জটিল মনে হচ্ছে আমার কাছে। অন্ধকারে ছায়া ঢাকা অপরিচিত বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, সবচেয়ে ভাল হয় যদি এখন আমরা ..
বাড়ি না গিয়ে বরং লোকটাকে খুঁজতে যাই, মুসাকে বাধা দিয়ে বলে উঠল রবিন।
আমিও রবিনের সঙ্গে একমত, কিশোর বলল। সবে জমে উঠতে আরম্ভ করেছে রহস্যটা, এ সময়ে এটাকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকাল ফারিহা। ঠাণ্ডা, মোলায়েম কি যেন গালে লেগেছে। চিৎকার করে উঠল, আরি! তুষার পড়ছে!
বলতে না বলতেই আরেক কণা তুষার উড়ে এসে পড়ল তার নাকে।
তুষারই তো! অনিতাও চিৎকার করে উঠল।
তুষার! তুষার! সমস্বরে কেঁচাতে শুরু করল সবাই। হঠাত করেই উত্তেজিত হয়ে পড়ল ওরা। আনন্দে অস্থির। মনে হচ্ছে এবারের বড় দিনটা প্রচুর তুষার-পড়া সাদা বড় দিন-এ পরিণত হবে। সেটা খুব মজার।
আকাশের দিকে জন্যে মুখ এটা উঁচু করে, হাত তুলে, উন্মাদ নৃত্য জুরে দিল ওরা।মুসা অার কিশোরের জন্য এটা ধর্মীয় উতসব নয়।কিন্তু সাময়িকভাবে তাতে আনন্দ করায় কোন বাধা নেই। সবার খুশি দেখে টিটুও চুপ করে থাকতে পারল না। প্রবল লাফালাফি জুড়ে দিল। পেঁজা তুলোর মত ভেসে ভেসে নেমে আসছে হালকা তুষার কণা। লাফিয়ে উঠে সেগুলেী ধরার চেষ্টা করতে লাগল সে।
কয়েকজন পথচারীকে দেখা গেল এতক্ষণে কাজ শেষে করে বাড়ি ফিরছে।
ছেলেমেয়েদের দিকে বিরক্ত চোখে তাকাল। তুষার ওদের কোন আনন্দ দিতে পারল না। থুতনির কাছে অল্প কিছু দাড়িওয়ালা একজন লোক তো দাঁড়িয়েই গেল জ্ঞান দেয়ার জন্যে, তোমাদের কাছে যতই ভাল লাগুক, তুষার জিনিসটা মোটেও ভাল নয়। ঠাণ্ডা, পিচ্ছিল, প্যাঁচপেঁচে! অতি জঘন্য।
ঠান্ডা দূর করাটা তো কঠিন কিছু না, জবাব দিল অনিতা। আমাদের মত নাচাকুঁদো করুন। দেখবেন গা গরম হয়ে গেছে।
যেন তার কথায় সমর্থন জানাতেই আরও জোরে লাফানো শুরু করে দিল টিটু।
ওপর দিকে চোখ পড়তেই থেমে গেল রবিন। কেঁচিয়ে উঠল, দেখো দেখো।
ওই বাড়িটার একেবারে ওপরতলার জানালাটা-ডান দিকের!
হাত তুলে একটা আলোকিত জানালা দেখাল সে কেন; তোমার কি মনে হচ্ছে ওই লোকটাই জানালাটার দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। জানালার কাছে দাড়িয়ে আছে কেউ। হঠাৎ করেই আলো নিভিয়ে দেয়া হলো। অন্ধকারে কোন কিছুই আর চোখে পড়ল না।
ওই লোকটাই, কোন সন্দেহ নেই আমার, রবিন বলল। ওকে চিনতে পেরেছি আমি। যে লোকটা ছবি তুলছিল। জানালার কাচে নাক ঠেকিয়ে মনে হয় দেখছিল সে।
তারমানে আমাদের ওপর নজর রাখছিল, ডলি বলল। উদ্দেশ্যটা কি তার?
কি করতে চায়? ভীত মনে হচ্ছে তাকে।
অত ভয় পাছ কেন? মুসা বলল। আমাদের চেঁচামেচি শুনে সাধারণ কৌতূহল হয়েছিল, দেখতে এসেছিল। অন্য কিছু না।
ছাড়া আরেকটা কথা ভুলে যাচ্ছ, বব বলল, ভয় পাওয়ার মত যথেষ্ট কারণ রয়েছে অারও।
অনিতা ভয় পায়নি। রহস্যময় এই ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানার ইচ্ছে তার কৌতূহল সামলাতে পারছে না। বলল, ওপরে গিয়ে দেখা যায় না?সবার যাওয়া ঠিক হবে না।রবিন-মুসা তোমরা আমার সঙ্গে এসো। ববের সঙ্গে মেয়েরা সব এখানেই থাকো।
তারমানে এ ক্ষেত্রেও মেয়েদের বেলায় অন্য বিচার রেগে উঠল অনিতা তোমরা গিয়ে মজা করবে আর আমরা দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আঙুল চুষি। বড় অন্যায়।
আমি তো মেয়ে নই, নাকি? অনিতার কথার প্রতিবাদ করল বব। আমি তো থাকতে আপত্তি করছি না। অন্যায়ের কি দেখলে?
জবাব খুঁজে না পেয়ে চুপ হয়ে গেল অনিতা নাও, ধরো, টিটুর শিকলটা বাড়িয়ে দিল কিশোর। এর দায়িত্ব তোমার।
অনিতার কথায় কিছু মনে করেনি সে। দলে নতুন এসেছে অাস্তে অাস্তে শিখে যাবে। কিন্তু কোনমতেই হাসি ফুটল না অনিতার মুখে। মুখ গোমড়া করে রইল। কিশোরদের সঙ্গে যাওয়ার একান্ত ইচ্ছে তার।
বাড়িটায় ঢুকে লিফটে উঠল কিশোর। ড্রেনে পড়ে থাকা ফাদার ক্রিস্টমাসের পোশাকটা সাথে নিয়ে এসেছে।
বোতাম টিপে দিল মুসা। টপ ফ্লোরে লিফট থেকে নামল ওরা। এখন, কোনদিকে যাবে?
৬
ডানে যেতে হবে, রবিন বলল। ভাল করে দেখে রেখেছি আমি।
তা তো বুঝলাম, কিশোর বলল। কিন্তু দরজা তো দুটো। কোনটায় টোকা দেব?
প্রথম দরজাটায় গিয়ে কান পাতল মুসা। রেডিও বাজছে, জানাল সে।
পায়ের শব্দও শোনা যাচ্ছে।
হঠাৎ মেয়ে মানুষের কণ্ঠ শুনতে পেল। দরজার একেবারে কাছে। চমকে গিয়ে লাফ দিয়ে পিছিয়ে এল।
জন, তোমার ওষুধ রাখলে কোথায়? বৃদ্ধার কাপা কাঁপা কণ্ঠ। টেবিলেই রেখেছিলে? ঠিক মনে আছে?
এ ঘরে থাকবে না, ফিসফিস করে বলল কিশোর। সরে এসে দ্বিতীয় দরজাটায় গিয়ে কান রাখল মুসা। খানিকক্ষণ কান লাগিয়ে রেখে জানাল, কোন শব্দই আসছে না।