আপনাআপনি পড়েনি ফাদার, বব বলল। তাকে ফেলে দিয়েছে
কোটওয়ালা লোকটা। পঞ্চাশ পেন্সের কয়েনগুলো হাতানোর জন্যে।
আমারও তাই ধারণা, অনিতা বলল।
কিশোর, ফারিহা আর ডলি পুরো ঘটনাটাই ঘটতে দেখেছে। ওরাও পড়ে
যেতে দেখেছে কোটওয়ালা লোকটাকে, দেখেছে তার গালের কাটা দাগ।
গতকালের বেকারির সেই লোকটা বলেই তাকে চিহ্নিত করেছে ডলি।
কয়েকটা কয়েন তুলে নিয়ে গেছে সে! ঘন ঘন দম নিতে নিতে বলল ডলি। চট করে পঞ্চাশ পেন্সের কয়েনগুলো তুলে পকেটে ভরে ফেলেছে।
তারমানে আমাদের মত একই ব্যাপারে তারও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, কিশোর বলল। গুড। তারমানে সত্যি সত্যি এগোনো শুরু করেছি আমরা।
কিন্ত লোকটা গোয়েন্দা না জালিয়াত? ফিসফিস করে বলল ফারিহা।
জানি না, জবাব দিল কিশোর। তবে একটা ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই
আমার, ওই দুজন ফাদার ক্রিস্টমাসের মধ্যে গোলমেলে কিছু একটা রয়েছে।
আমি ভাবছি পড়ে যাওয়া পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রাগুলো আসল ছিল, না নকল, ডলির প্রশ্ন।
জেনে নিলেই তো পারি, কিশোর বলল। পকেট থেকে টাকা বের করে দিল ফারিহাকে। ফারিহা এই নাও দুই ডলার। একটা ছবি তুলে এসোগে ফাদার ক্রিস্টমাসদের সঙ্গে।
আমি! আঁতকে উঠল ফারিহা।
অসুবিধে কি? কিশোর বলল। ফাদারদের পয়সা দরকার। তোমার ছবি
তুললে পয়সা পাবে। তুলবে না কেন? তা ছাড়া তোমাকে মানাবেও। কারণ তুমি এখনও ছোট আছ। অামি তুলতে গেলে মানাবে না।
বাচ্চাদের মত করে কোলের কাছে জড়িয়ে ধরে রেখেছে একজন
ফাদার ক্রিস্টমাস, আরেকজন তার ছবি তুলছে-দৃশ্যটা কল্পনা করেই হেসে ফেলল ডলি। কিন্তু ফারিহা হাসল না। ফাদার ক্রিস্টমাসদের সঙ্গে ছবি তুলতে মোটেও ভাল লাগছে না তার। কিন্তু উপায় নেই। গোয়েন্দাগিরিতে অত বাছবিচার করলে চলে না। অনিচ্ছা সত্তেও মুখে হাসি ফুটিয়ে ছবি তুলতে গেল সে।
উল্টো দিকের উইনডোতে দাড়িয়ে ফারিহাকে ফাদার ক্রিস্টমাসদের দিকে
এগিয়ে যেতে দেখল বব আর অনিতা। টিটু ওকে দেখেই ছুটে যাওয়ার জন্যে
টানাটানি শুরু করল। এক জায়গায় বসে থেকে মহা বিরক্ত হয়ে উঠেছে সে।
ফারিহাকে ফাদারদের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখে কাগজের স্ট্যাভের ওপাশে
দাড়িয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না মুসা আর রবিন। কয়েক
মিনিটের মধ্যেই ফারিহার হাতে তার ছবিটা ধরিয়ে দেয়া হলো
টাকা বের করে দিল ফারিহা।
আড়ালে দাড়িয়ে একজন ফাদার ক্রিস্টমাসের হাত থেকে ফারিহাকে ভাঙতি পয়সা নিতে দেখল গোয়েন্দারা সবাই।
বেচারি ফারিহা!আষাঢ়ের আকাশের মত মুখ কালো করে তাকে ফিরে
আসতে দেখল ওরা। কাছে এসে কিশোরকে জানাল সে, একটা পঞ্চাশ পেন্সের কয়েনও দেয়নি।
হুঁ, মোটেও হতাশ মনে হলো না কিশোরকে। যাই, দেখি, আমার ভাগ্যটা
পরীক্ষা করে আসি।
দোকান থেকে বেরিয়ে গেল কিশোর। খানিক আগে পড়ে গিয়েছিল যে
লোকটা তার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। পকেট থেকে একটা ডলার বের করে বাড়িয়ে।দিয়ে অনুরোধ করল সে, আমাকে দুটো পঞ্চাশ পেন্সের কয়েন দিতে পারেন? আমার ছোট বোনকে পঞ্চাশটা পেন্স দিতে হবে কার্ড কেনার জন্যে। আমার কাছে
ভাঙতি নেই।
নিশ্চয়ই, হাসিমুখে জবাব দিল ফাদার ক্রিস্টমাস। পকেট থেকে খুচরা বের করে কিশোরকে দিয়ে দিল। কিশোর সে-দুটো পকেটে ভরে, লোকটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে, ফিরে এল দোকানের ভেতর।
ডলি আর ফারিহার কাছে এসে মুদ্রা দুটো বের করে বাজিয়ে শোনাল ডলি আর ফারিহাকে। নিজেও শুনল। তারপর বলল, শুনলে তো? আরও দুটো নকল কয়েন।
৫
মিনিট পনেরো পরে আবার ক্রিস্টমাস গাছগুলোর পেছনে জমায়েত হলো গোয়েন্দারা। সাবধান রইল যাতে কারও চোখে না পড়ে।
ওরা এখন নিশ্চিত, ফাদার ক্রিস্টমাসের ছদ্মবেশের আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ানক দুজন অপরাধী। কিন্তু দুটো বড় প্রশ্নের উত্তর অজানা রয়ে গেল।এক, কি করে প্রমান করবে লোকগুলো অপরাধী। দুই, এদের সঙ্গে গালকাটা লোকটার সম্পর্ক কি?
কি করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করছে ওরা, এই সময় ঘণ্টা বেজে উঠল। হেনরির ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আর অন্য সব দোকানপাট বন্ধ করার সময় হয়েছে। বড়দিনের সময় বলে এখন অনেক দেরি করে বন্ধ হয়, যাতে অফিস ফেরতা লোকজন বাজার করে যেতে পারে। দোকানগুলো থেকে ঝাঁক বেঁধে বেরিয়ে আসতে শুরু করল ক্রেতার দল। চত্বর পেরিয়ে রাস্তায় নেমে যেতে লাগল। বিক্রি না হওয়া ক্রিস্টমাস গাছগুলো দোকানের ভেতর নিয়ে যেতে শুরু করল দোকানদার।
শেষবারের মত একটা বাচ্চার ছবি তুলল ফাদার ক্রিস্টমাসরা। তারপর যখন দেখল, আর একজন ক্রেতাও অপেক্ষা করছে না কোথাও, রাস্তা ধরে হটিতে শুরু করল দুজনে।
আজকের মত কাজ শেষ ওদের, মুসা বলল।
হ্যাঁ, কাজ মানে তো মুদ্রা পাচারী একদিনের জন্যে যথেষ্ট পাচার-টাচার করে এখন গোপন আস্তানায় ফিরে যাচ্ছে, বব বলল।
তাহলে ওদের পিছু নিলেই পারি, ফারিহা বলল।
চমৎকার প্রস্তাব! লুফে নিল রবিন।
কেউ আপত্তি করল না। লোকগুলোর পেছন পেছন রওনা হলো।
মোড় নিয়ে মিলরোডে ঢুকে অদৃশ্য হয়ে গেল লোকগুলো।
জলদি এসো? কিশোর বলল। কোন বাড়িটাড়িতে ঢুকে পড়লে আর দেখতে পাব না।
দৌড়াতে শুরু করল ওরা। আগে আগে ছুটছে টিটু। মাটিতে নাক নামিয়ে গন্ধ নিছে। এতক্ষণ পর একটা কাজের মত কাজ পেয়ে গিয়ে মহাখুশি।