সবাইকে নিয়ে চলে এল এক ক্রিস্টমাস ট্রী বিক্রেতার দোকানের কাছে। তৈরি
করা ক্রিস্টমাস গাছের ছোটখাট একটা জঙ্গল হয়ে আছে। তার আড়ালে এসে
দাড়াল ওরা কি করা যায় পরামর্শ করার জন্যে।
ওই যে ওই লোকটা জুলিয়ার ছবি তুলেছিল, গাছের ফাঁক দিয়ে হাত তুলে
দেখাল বব।
সাথে পিস্তল-টিস্তল নেই তো? অনিতা বলল।
হ্যাঁ, তা তো আছেই, মুসা বলল। দাড়ির মধ্যে লুকানো।
বাজে কথা একদম বলবে না আমার সঙ্গে! রেগে উঠল অনিতা। ছাগল
পেয়েছ নাকি আমাকে কিছু বুঝি না মনে করেছ?
চুপ করে থাকা কিংবা আস্তে কথা বলার কথা ভুলে গিয়ে চিৎকার করে উঠল সে।
চুপ! আস্তে। ধমক লাগাল কিশোর। কাজের কথা শোনো এখন, সমস্ত
বিকেল এখানে দাড়িয়ে থাকার জন্যে আসিনি আমরা। কিছু করতে হবে। ভাগ
ভাগ হয়ে যাব। তোমরা গিয়ে দাঁড়াও উল্টোদিকের ওই চত্বরটাতে। খবরের
কাগজের স্ট্যান্ডটার অাড়ালে দাড়াবে, ওরা যাতে দেখতে না পায়। সাথে করে
টিটুকে নিয়ে যাও। ফারিহা আর ডলিকে নিয়ে আমি যাচ্ছি দোকানের কাছে,
জানালা দিয়ে চোখ রাখব লোকগুলোর ওপর।
বলার পর আর এক মুহূর্তও দেরি করল না কেউ। ঘুরতে বেরোনো অতি
সাধারণ কয়েকটা ছেলের মত ভঙ্গি করে রইল ওরা। যার যার জায়গায় থেকে
নজর রাখতে লাগল ফাদার ক্রিস্টমাসদের ওপর।
অন্য দোকানের ফাদারদের মতই এই দুজনও স্বাভাবিক আচরণ করছে।
ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে হাসছে, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। ছবি তোলার জন্যে অনুরোধ করছে তাদের বাবা-মাকে। বাচ্চাদের কোলে নিয়ে আদর করছে। চওড়া হাসি হাসছে তুলার তৈরি দাড়ি-গোঁফের আড়াল থেকে।
নাহ, কোন কিছুই সন্দেহ করার মত নয়, চাপা স্বরে মুসাকে বলল রবিন।
জোরে নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। সে-রকমই তো লাগছে। আসার সঙ্গে সঙ্গে
এত তাড়াতাড়ি কিছু একটা দেখে ফেলব, সে-আশাও আমি অবশ্য করছি না। তা ছাড়া কিশোর তো বললোই ফাদারদের কোন দোষ না-ও থাকতে পারে; হতে পারে। ওদের অজান্তেই ওদের হাত দিয়ে হয়তো কেউ পাচার করে দিচ্ছে নকল মুদ্রাগুলো।
হ্যাঁ, তা পারে, কিছুটা হতাশ কণ্ঠেই জবাব দিল রবিন। আর ববের আম্মা
যে কয়েনটা ববকে দিয়েছেন, সেটাও ফাদারদের কাছ থেকেই পাওয়া, সেটাও
তো ঠিক না হতে পারে। বাজার করেছেন। আরও অনেকে পঞ্চাশ পেন্সের কয়েন তাকে দিয়ে থাকতে পারে।
কিশোররা তখন দোকানের বাইরে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে।
ভঙ্গিটা যেন দোকানের উইন্ডোতে সাজানো খেলনা আর অন্যান্য জিনিস দেখছে।
রাস্তার দিকে পেছন করে আছে, উইন্ডোর কাছে দাঁড়ানো অন্যান্য ছেলেমেয়েদের মত। উইভোর কাচে চত্বরের লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। তীক্ষ দৃষ্টিতে তাদেরকে দেখছে ওরা। ফাদার ক্রিস্টমাসদেরও দেখা যাচ্ছে, কাজেই ওই দুজনকে দেখার জন্যেও সরাসরি তাকানো লাগছে না ওদের।
দুই ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় দাড়িয়ে থাকল ফারিহা আর ডলি। বাজার
করতে আসা ছেলেমেয়েরা দোকানে ঢুকছে বেরোচ্ছে, উত্তেজিত কলরব করছে। অস্বাভাবিক কোন কিছুই চোখে পড়ল না ওদের। কিছুই করতে না পেরে বিরক্ত হয়ে গেল টিটু। লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। ঘটনাটা ঘটল তখনই। তার থাবা মাড়িয়ে দিল একজন লোক। চিৎকার দিয়ে উঠল টিটু।
প্রায় একই সময়ে চিৎকার দিয়ে ববের হাত খামচে ধরল অনিতাও।
আরে কি করছ। হাতে নখ বসে যেতে চেচিয়ে উঠল বব।
স্বপ্ন দেখছি নাকি আমি! অনিতা বলল।
তা কি করে বলব? কিন্তু আমার হাতের চামড়া যে তুলে দিচ্ছ এটা ঠিক।
ওই যে লোকটা-কালো ওভারকোট পরা, ববের কথা যেন কানেই যায়নি
অনিতার, রাস্তা পার হয়ে গেল এইমাত্র-দেখলে না?
কাচের দিকে এমন করে তাকাতে লাগল বব, যেন পারলে কাচ থেকে খামচি দিয়ে বের করে আনে লোকটাকে। কালো কোট পরা একজন লোককে চত্বর থেকে নেমে যেতে দেখল সে-ও।
ওই লোকটাকেই দেখেছিলাম আমি বেকারিতে, গালে কাটা দাগ, উত্তেজিত
স্বরে বলল অনিতা। ও গিয়ে কথা বলেছিল ফাদার ক্রিস্টমাসদের সঙ্গে। বুঝতে পারছি না কি ঘটবে এখন!
উত্তেজনায় টানটান হয়ে কাচের দিকে তাকিয়ে রইল দুজনে। আশেপাশে
ঘোরাফেরা করছে ছেলেমেয়ের দল, হই-চই হাসাহাসি করছে: কোন কিছুই যেন
কানে ঢুকছে না বব বা অনিতার।
কই, কিছুই তো করছে না! হতাশ কষ্ঠে বলল বব। লোকটা থামছে না।
রাস্তার ধার দিয়ে সোজা এগিয়ে চলেছে।
আরে না না! হঠাৎ দম আটকে ফেলল অনিতা। দেখো, কি করছে–যুরে
গেল…এগিয়ে যাচ্ছে সিড়ির দিকে!.-আরে, কি কাণ্ড!
জোরে চিৎকার দিয়ে নিজের অজান্তেই ঘুরে সরাসরি তাকিয়ে ফেলল লোকটার দিকে। তার চিৎকার শুনে অন্য ছেলেমেয়েরাও ফিরে তাকাল। হাসির রোল উঠল। চত্বরে লম্বা হয়ে পড়ে গেছে কোটওয়ালা লোকটা। সঙ্গে নিয়ে পড়েছে একজন ফাদার ক্রিস্টমাসকে।
আরি দেখো না অবস্থা বব বলল। চত্বরে কয়েনের ছড়াছড়ি। ফাদারের
পকেট থেকে পড়েছে। কম করে হলেও দশটা পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রা আছে ওর
মধ্যে।
প্রায় ছোঁ দিয়ে দিয়ে পঞ্চাশ পেন্সের কয়েকটা মুদ্রা তুলে নিল কোটওয়ালা
লোকটা।
চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে উঠে বসল ফাদার ক্রিস্টমাস। ছড়িয়ে থাকা পয়সাগুলো তুলে তুলে পকেটে ভরতে শুরু করল। তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেল ছেলেমেয়েরা। এই হট্টগোলের মধ্যে সবার অলক্ষে উধাও হয়ে গেল কোটওয়ালা লোকটা।