মা, আমি ফাদার ক্রিস্টমাস দেখব! ফাদার ক্রিস্টমাস দেখব! মার হাত
ধরে টানাটানি শুরু করল জুলিয়া।
শিকারীর চোখ মেলেই ছিল ফাদাররা। দেখে ফেলল একজন। এগিয়ে এসে বলল, আপনার মেয়েকে নিয়ে একটা ছবি তুললে কেমন হয়, ম্যাডাম মাত্র এক ডলার দশ পেন্স লাগবে। চমৎকার একটা বাঁধানো ছবি পেয়ে যাবেন। যখন ইচ্ছে দেখে স্মরণ করতে পারবেন এবারের বড় দিনটাকে। কি বলেন?
ববের আম্মা জবাব দেবার আগেই জুলিয়াকে টেনে নিয়ে গিয়ে পোজ দিয়ে
দাড়িয়ে গেল দ্বিতীয় ফাদারের সামনে।
অনুমতি না দিয়ে আর পারলেন না ববের আম্মা। ঠিক আছে, তুলুন, তবে
মাত্র একটা, তার বেশি না।
খুব খুশি জুলিয়া। পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধয়ে পোজ দিয়ে। দাড়াল ফাদার। সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলল তার সঙ্গী। হেসে বলল জুলিয়াকে, হয়ে গেছে।
মা আর ভাইয়ের কাছে ফিরে এল জুলিয়া। ছবি ডেভেলপ হতে দেরি হলো
না। সেটা বাড়িয়ে ধরে প্রথম ফাদার ববের আম্মাকে বলল, এই যে ম্যাডাম
নিন। মাত্র এক ডলার দশ পেন্স।
ছবি দেখে খুশি হলেন ববের আমা। বাহ, ভাল হয়েছে তো! ছবিটা ববের
হাতে রাখতে দিয়ে ব্যাগ থেকে দুই ডলার বের করে দিলেন তিনি লোকটাকে।
দশ পেন্স রেখে নব্বই পেন্স ভাঙতি দিল তাকে লোকটা। তার মধ্যে একটা
পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রাও রয়েছে।
পঞ্চাশ পেন্স। আরেকটু হলে হাত থেকে ছবিটাই ফেলে দিচ্ছিল বব। শুরুটা চমৎকার! পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রাটা কি ভাবে মায়ের কাছ গেকে নেয়া যায় সেই চিন্তা করতে লাগল সে।
হঠাৎ করে নিতান্ত কাকতালীয় ভাবেই সমস্যাটার সমাধান হয়ে গেল। মিনিট দশেক পর বব আর জুলিয়া একটা খবরের কাগজের ট্যান্ডের সামনে অপেক্ষা করছে। মা গেছেন ভেতরে, কাগজ কিনতে। খানিক পর বেরিয়ে এসে ববকে জিজ্ঞেস করলেন, বব, তোর কাছে ভাঙতি পয়সা আছে? পঞ্চাশ পেন্স ভাঙিয়ে দিতে পারবি? তোর বাবার জন্যে একটা পত্রিকা কেনা দরকার। দোকানদার ভাঙতি দিতে পারছে না।
হাতে যেন চাঁদ পেয়ে গেল বব। তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ভাঙতি পয়সা বের করে গুঁজে দিল মায়ের হাতে। তবে মায়ের পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রাটা নিয়ে নিজের পকেটে ভরতে ভুলল না। বাজিয়ে শোনার প্রবল ইচ্ছেটা চাপা দিল সে। শোনার জায়গা নয় এটা। লোকজনের অভাব নেই। কে কোনখান থেকে নজর রেখেছে বলা বাড়ি ফিরে আর একটা মুহূর্ত দেরি করল না সে। সিড়ির রেলিঙের ধাতব হাতলে বাড়ি মারল। উত্তেজনায় কেঁপে উঠল বুক, যখন শুনল শব্দটা আসল মুদ্রার মত মিষ্টি নয়। অন্য রকম। কেমন ভোঁতা ভোঁতা।
খোদা! কি কপাল আমার! ভাবল সে। গতকাল এ রকম একটা জিনিসের
জন্যে পুরো গ্রীনহিলস গ্রামটা চষে বেড়িয়েছে ওরা। কিন্তু পায়নি।
দশ গ্রাম। হুঁ, আরেকটা জাল মুদ্রা এটা, কোন সন্দেহ নেই তাতে, মাপক যন্ত্র দিয়ে মেপে দেখে বলল কিশোর।
কোথায় পেলে এটা? ববকে জিজ্ঞেস করল অনিতা। আজকেও সারাটা সকাল ঘুরে বেড়িয়েছি গায়ের মধ্যে, কিছুই পাইনি। আর তুমি শহরে একবার গিয়েই পেয়ে গেলে!
হেনরির ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বাইরে পেয়েছি, বব বলল। ফাদার
ক্রিস্টমাস দুজনের কথাও ওদের জানাল সে।
দাঁড়াও, দাঁড়াও! হঠাৎ বলে উঠল রবিন। ফাদার ক্রিস্টমাস! সেদিন
আমাদের পাশের বাড়ির মিসেস ডগলাসও গিয়েছিলেন শহরে। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তার ছেলেকে। ওই ছেলেটাও নাকি ফাদার ক্রিস্টমাসের সঙ্গে ছবি তুলেছে। মিসেস ডগলাস মাকে বলছিলেন। আমার মুদ্রাটা যেদিন পেয়েছি তার আগের দিন।
মজার ব্যাপার তো! মুসা বলল। তারমানে খোঁজ-খবর পাওয়া যেতে শুরু করেছে।
কিন্তু আমি এ কথা মেনে নিতে পারছি না ডলি বলল। আমার বড় বোন তো আর ওদের সঙ্গে পোজ দিয়ে ছবি তুলতে যায়নি।
তারমানে তুমি বলতে চাও, ফাদার ক্রিস্টমাসরা ওই কয়েন দেয়নি? এই
মুদ্রা রহস্য নিয়ে খুব উত্তেজিত হয়ে আছে সে।
হয়তো দিয়েছে, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। পয়সা তো হাতে হাতেই
ঘোরে। স্বাভাবিক ভাবে চোখে না পড়লে কে আর গবেষণা করে দেখতে যায় কোনটা আসল কোনটা নকল। রবিন যদি ওভাবে হঠাৎ করে আবিষ্কার না করে ফেলত, ওটাও চলে যেত বাজারে, অন্য কারও কাছে। ডলির কয়েনটাও অন্য কারও কাছ থেকে ফাদার ক্রিস্টমাসের হাত ঘুরে, ডলির আপার হাত ঘুরে তার হাতে চলে এসেছে।
তা ঠিক, ফারিহা বলল। তাছাড়া ফাদার ক্রিস্টমাসরা পয়সা জাল করবে এটাও ভাবা যায় না।
তার দিকে তাকিয়ে হাসল কিশোর।
যদিও সবাই জানে, আবার বলল ফারিহা, দোকানের ফাদার ক্রিস্টমাসরা
আসল হয় না।
কিন্তু একটা কথা ভেবে দেখো, জাল কয়েন পাচারকারী যদি হয়ও ওরা, বব বলল, অত বড় বড় দাড়ির আড়ালে কেউ চিনতে পারবে না ওদের।
হ্যাঁ, তাই তো।দুজন ফাদার ক্রিস্টমাস বাচ্চাদের সঙ্গে এ ভাবে হেসে হেসে কথা বলে, কে সন্দেহ করবে তাদের! রবিন বলল।
আমরা করব! দৃঢ়কষ্ঠে জবাব দিল কিশোর। এবং সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্যে আজই শহরে যাব আমরা।
৪
বাসে করে বিকেল চারটের সময় এসে ডগলাসের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে নামল ওরা। বড় দিনের সময় এখন, সকালে যেমন ক্রেতার ভিড় ছিল, বিকেল বেলাও একই রকম ভিড়।
ওই যে ওরা!, উত্তেজিত ভঙ্গিতে দুই ফাদার ক্রিস্টমাসকে দেখাল বব।
এ ভাবে চেঁচিও না, সাবধান করল কিশোর। এসো আমার সঙ্গে।