পাঁচটার সময় ডলির সঙ্গে দেখা করল রবিন, তালিকা দুটো মিলিয়ে নেয়ার জন্যে। কিন্তু দুজনের তালিকায় একটা দোকানের নামও পেল না যেগুলো মিলে।
অর্থ্যাৎ,,রবিনের আম্মা যেখানে যেখানে গিয়েছেন, তার কোনটাতেই যায়নি ডলির বোন। এর দুটো মানে হতে পারে। হয় ভিন্ন ভিন্ন দিনে যে কোন এক জায়গা থেকে মুদ্রা দুটো তাদের হাতে এসেছে, নয়তো দুই জায়গা থেকে ওগুলো পেয়েছে তারা। কোখান থেকে এসেছে, বের করা অসম্ভব বলে মনে হলো ওদের কাছে।
বাকি গোয়েন্দারাও চুপ করে বসে রইল না। যার যার মানি-বক্স খালি করে
টাকা-পয়সা যা আছে সব নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সেগুলো ভাঙিয়ে পঞ্চাশ পেলের
মুদ্রা জোগাড়ের জন্যে। ভাগ্যিস স্কুল এখন ছুটি, নইলে এসব করার সময়ই পেত না কেউ। রহস্যটা হাতছাড়া হয়ে যেত।
কিশোর, ফারিহা আর টিটু গেল পোস্ট অফিসে। কাউন্টারে বসা মেয়েটা
উৎসাহের সঙ্গেই ওদের টাকা-পয়সা ভাঙিয়ে পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রা দিয়ে দিল।
বব দাড়িয়ে রইল রাস্তায়। পথচারী দেখলেই একটা করে ডলার বাড়িয়ে ধরে অনুরোধ করতে লাগল পঞ্চাশ পেন্সের দুটো মুদ্রা দেয়ার জন্য।
মুসা করতে গেল বাজারে,টুকিটাকি জিনিষ কিনতে লাগল। এমন করে
কিনল, যাতে প্রচুর পঞ্চাশ পেলের মুদ্রা জোগাড় হয়। যেমন, এক টিউব পেপারমিট লজেন্স কিনলে দিতে হবে বিশ পেন্স, দোকানিকে এক ডলার দিলে খুশি হয়েই সে বাকি পয়সার সঙ্গে একটা পঞ্চাশ পেন্স দিয়ে দিল। প্রতি দোকান
থেকে একটার বেশি জিনিস কিনল। আর এই কাজটা করতে গিয়েই একটা মজার আবিষ্কার করে বসল সে।
মুদী দোকান থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে, টাকা দিয়ে দোকানির বউকে
জিজ্ঞেস করল পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রা দিতে পারবে কিনা।
পারব। তারপর মাথা নাড়তে নাড়তে যোগ করল মহিলা, বুঝলাম না
লোকের কি হয়েছে আজ। সবাই এসে খালি পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রা চাইছে।
খানিক দূরে একটা বেকারিতে অনিতার বেলায়ও প্রায় একই ব্যাপার ঘটল।
একটা লোক কেক কিনে দাম মিটিয়ে দেয়ার পর মহিলাকে কয়েকটা ডলার দিয়ে জিজ্ঞেস করল, এগুলোর বিনিময়ে তাকে পঞ্চাশ পেলের মুদ্রা দিতে পারবে কিনা।
৩
লোকটা অনেক লম্বা, উত্তেজিত কষ্ঠে বলল অনিতা। মাথার হ্যাটটা চোখের ওপর নামিয়ে রেখেছিল। কোটের কলার তুলে দিয়ে চিবুক ঢেকে দিয়েছিল এমন ভাবে, যাতে তার চেহারা বোঝা না যায়। কিন্তু তার বা গালের কাটা দাগটা ঠিকই দেখে ফেলেছি আমি।
বেকারিতে যা যা শুনে এসেছে, সবাইকে জানাচ্ছে সে। ছটা প্রায় বাজে। কে কি করে এসেছে, বলার জন্যে আবার জমায়েত হয়েছে গোয়েন্দারা। মুসা আর অনিতা জরুরী খবর জেনে এসেছে। বাকি সবাই তেমন কোন খবর আনতে না পারলেও পঞ্চাশ পেলের মুদ্রা নিয়ে এসেছে অনেকগুলো। তবে দুঃখের কথা, ওগুলোর কোনটার ওজনই চোদ্দ গ্রামের নিচে নয়।
খড়ের গাদায় সুচ খুঁজছি আমরা, মুখ কালো করে ডলি বলল।
জাল মুদ্রা পাইও যদি আরও, তার সঙ্গে, সুর মেলাল বব, তাহলেই বা
জালিয়াতদের খুঁজে বের করব আমরা কিভাবে? টাকা সর্বক্ষণ হাত থেকে হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে-কার কাছ থেকে কখন কি ভাবে কার কাছে গেল, কিছুই বলার উপায় নেই।
তা ঠিক, একমত হলো কিশোর। আজ, বিকেলে যে ভাবে গায়ের পথে
পথে ঘুরে বেড়ালাম আমরা, এ রকম করে ঘুরে কোন লাভ নেই।
তাহলে কি করব? রবিনের প্রশ্ন। রহস্যটার ব্যাপারে তার আগ্রহই যেন
সবচেয়ে বেশি। তার আশঙ্কা হচ্ছে বাকি সবাই ভোটাভুটি করে রহস্য উদ্ধারের চেষ্টাটাই না বাদ দিয়ে দেয়।
পুলিশকে জানাতে পারি আমরা, মুসা বলল।
পুলিশ জানে না কি করে বুঝলে,রবিন বলল। আমাদের আগেই হয়তো জেনে বসে আছে ওরা।
হ্যাঁ, তা ঠিক, বব বলল। বেকারিতে যে লোকটাকে দেখে এসেছে ডলি,
লোকও হতে পারে। সাদা কাপড়ে তদন্ত করে বেড়াচ্ছে হয়তো।
উঁহুঁ, ওকে আমার মোটেও ডিটেকটিভ বলে মনে হয়নি, মাথা নাড়ল ডলি। বরং কেমন রহস্যময় ভাবভঙ্গি। পুলিশ ওরকম করে না।
তারমানে তদন্তটা চালিয়েই যেতে হচ্ছে আমাদের, কিশোরের দিকে তাকাল
রবিন। তাই না?
কিশোর জবাব দেবার আগেই চিৎকার করে উঠল টিটু, খুফ। খুফ।
হেসে ফেলল কিশোর, আমি আর কি বলব? টিটুই তো যা বলার বলে দিল।
যাই হোক, গায়ে যা দেখার দেখে নিয়েছি আমরা। এখানে আর কিছু দেখার নেই। শহরে গিয়ে চেষ্টা করে দেখতে হবে। ভাগ্য ভাল হলে কিছু পেয়েও যেতে পারি ওখানে।
ওর কথা যে কতখানি সত্যি, তখন যদি সেটা জানত!
পরদিন সকালে পাশের শহরে যেতে তৈরি হলেন ববের আম্মা। ববকে বললেন সঙ্গে যেতে। ববের ছোট বোন জুলিয়াও সঙ্গে যেতে চাইল। আপত্তি করলেন না তিনি। গেলে ররং ভালই। বড়দিনের বাজার করবেন। জিনিসপত্র প্রচুর। বহন করার জন্যেও লোক দরকার।
শহরের বড় রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে তিনজনে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে এসে দাড়িয়ে গেল জুলিয়া।
দেখো, দেখো, মা, উত্তেজিত স্বরে বলে উঠল সে। দুজন ফাদার দোকানের দরজায় দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেল দুজন লাল কাপড় পরা লোককে। লম্বা, সাদা বড় বড় দাড়ি। ওদের সঙ্গে দাড়িয়ে ছবি তুলছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। ক্রেতা করার নতুন কায়দা। ভালই। দোকানের ভেতর ফাদার ক্রিস্টমাস সেজে মূর্তির মত দাড়িয়ে থাকাটা পুরানো হয়ে গেছে।