এই সময় থাবা পড়ল দরজায়।
কে? ডেকে জিজ্ঞেস করল বব।
ডলি! ফিসফিস করে এমন ভঙ্গিতে বলল, যেন সাংঘাতিক কিছু ঘটে গেছে।
অকারণে এমন করছে। হাত নাড়ল বব, দেখবে, কিছুই হয়নি।
হু! তার কথায় মনে হলো কান নেই কিশোরের। পঞ্চাশ যোগ পঞ্চাশ
সমান আটাশ! নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল সে।
সেরেছে! শুরু হলো ল্যাটিন ভাষা! মুখ বাকাল মুসা। বলা যায় না, এখুনি হয়তো বলে বসবে পঞ্চাশ মিনিটে এক ঘণ্টা হয়।
কি বললে? মুসার মন্তব্য শুনে যেন বাস্তবে ফিরে এল কিশোর। আসলেই
তো তাই-পঞ্চাশে পঞ্চাশে আটাশই তো হওয়ার কথা।
অঙ্ক ভুলে গেলে নাকি তুমি?
দরজা খুলে দিয়েছে বব। ঘরে ঢুকল ডলি।
এত দেরি করলে যে? জিজ্ঞেস করল বব।
ইশারায় তাকে কথা বলতে নিষেধ করে ডলিকে বসতে ইশারা করল কিশোর।
হঠাৎ চিৎকার করে উঠল রবিন। কিশোরের কথা বুঝে ফেলেছে। ঠিকই
বলেছে ও! পঞ্চাশে পঞ্চাশে তো আটাশই হওয়ার কথা। কারণ পঞ্চাশ পেন্সের একটা মুদ্রার ওজন যদি চোদ্দ গ্ৰাম হয়, দুটোর হবে আটাশ। কিন্তু আজ সকালে একটা মুদ্রা পেয়েছি, যেটার ওজন চার গ্রাম কম, অর্থাৎ দশ গ্রাম। ওরকম দুটো হলে দশে আর দশে দাড়াবে বিশ। এতক্ষণে বুঝেছ নিশ্চয় সবাই?
খাইছে! কপাল চাপড়াল মুসা। এটার ভাষা তো আরও ভারী, প্রাচীন গ্রীক। কিছুই বুঝিনি আমি।
আমিও না! ফারিহা বলল। রবিন, একটা বর্ণও বুঝিনি আমি তোমার
কথা।
আমিও না, ফারিহার সঙ্গে সুর মেলাল অনিতা। আমার বিশ্বাস টিটুও কিছু বোঝেনি। কি রে, টিটু?
খোলসা করে বলো না সব, মুসা বলল, তাহলেই তো হয়ে যায়। এত কথা বলা লাগে না আর।
বলছি, বলছি, কিশোরের দিকে তাকাল রবিন। কিশোর, তুমিই বলো না।
ঠিক আছে নাটকীয় ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকাল কিশোর। সকাল বেলা এক অদ্ভুত জিনিস রবিন লক্ষ করেছে।
সেটা কি? অধৈর্য হয়ে হাত নাড়ল মুসা। তাই তো জানতে চাচ্ছি। অত
ভূমিকা না করে বলে ফেলো না।
কিশোরের পায়ের কাছে বসেছে টিটু। মাথা চাপড়ে তাকে আদর করে দিল
সে। সবাই শোনার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।। ঘরে পিনপতন নীরবতা। সবাইকে একটা অস্থিরতায় রাখার জন্যে যেন ইচ্ছে করে সময় নিচ্ছে কিশোর।
হ্যাঁ, শোনো, অবশেষে মুখ খুলল সে। সকাল বেলা বাজারে যাওয়ার জন্যে রেডি হয়ে বসে ছিল রবিন। আন্টি তখন টেলিফোনে কথা বলছেন। ও শুনছে আর অপেক্ষা করছে। সময় কাটছে না দেখে শেষে কতগুলো মুদ্রা নিয়ে ওজন মাপতে শুরু করে ওজন মাপক যন্ত্রে। বুঝলে কিছু? মাথা নাড়ল সবাই।
গুড, বলল কিশোর। না বোঝাতে গুড-এর কি হলো বোঝা গেল না।
অনেকগুলো মুদ্রা মেপেছে সে। আন্টি ওকে বাজার করার জন্যে দিয়েছিলেন ওগুলো। তার মধ্যে পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রা ছিল দুটো। মজার ব্যাপারটা হলো, দুটোর ওজন এক রকম নয়।
বলো কি! এমন ভঙ্গি করে বলল ডলি, যেন কি ভয়ঙ্কর অঘটন ঘটে গেছে।
হ্যাঁ, তাই,! মাথা ঝাকাল রবিন।
সে-জন্যেই তোমাদেরকে এখানে ডাকলাম, কিশোর বলল। জিজ্ঞেস করার জন্যে তোমাদের কার কাছে কয়টা পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রা আছে।
যাতে ওগুলো নিয়ে মেপে দেখতে পারি আমরা কিশোরের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল রবিন।
এই যে আমার কাছে দুটো আছে, সঙ্গে সঙ্গে বের করে দিল ফারিহা। আর নেই। আমার মানি-বক্সে দুটোই ছিল।
আমার পাঁচটা আছে, গর্বের সঙ্গে বলল অনিতা।এখনও কাছে কাছে। ক্রিস্টমাসের বাজার করিনি তো, তাই রয়ে গেছে।
বাকি সবাইও তাদের যার কাছে যতগুলো পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রা আছে বের করতে লাগল। মহা হই-চই, হট্টগোল। একসঙ্গে কথা শুরু করে দিয়েছে সব।
আরে আস্তে, আস্তে! তাড়াতাড়ি সাবধান করল কিশোর। এত চেঁচামেচি, করলে চাচী চলে আসবে দেখতে..রবিন, তোমার গবেষণাটা আরেকবার চালাও তো দেখি আমাদের সামনে।
সঙ্গে সঙ্গে কাজে লেগে গেল রবিন। একটা কমলার বাক্সের ওপর ওজন
মাপক যন্ত্রটা রাখল সে। বাক্সটাকে টেবিল হিসেবে ব্যবহার করে ওরা। পকেট থেকে মুদ্রা দুটো বের করে দেখাল সে। মায়ের বাজারের পয়সা থেকে সরিয়ে ফেলেছি এ দুটো। অবশ্য মেরে দিইনি, এক ডলারের একটা নোট দিয়ে দিয়েছি তাকে।
ছোট মাপক যন্ত্রটার থালায় একটা মুদ্ৰা রাখল সে। কাটার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখো, ওজন ঠিক চোদ্দ গ্রাম। প্রথমটা তুলে নিয়ে দ্বিতীয়টা রাখল
থালায়। এবার এটা দেখো। দশ গ্রাম। চার গ্রামই কম।
হ্যাঁ, তাই তো দেখছি, কাটাটার দিকে তাকিয়ে আছে মুসা। এদিক ওদিক
কেঁপে কেঁপে আস্তে করে স্থির হলো এক জায়গায়।
এখন ফারিহারগুলোর অবস্থা দেখা যাক, রবিন বলল।
মুদ্রা দুটো তার হাতে তুলেদিল ফারিহা।
দুটোই দেখা হলো।
চোদ্দ গ্রাম এবং চোদ্দ গ্রাম, কাটার দিকে তাকিয়ে থেকে মুসা বলল।
দেখি, তোমারগুলো দাও তো এবার, বব, হাত বাড়াল কিশোর।
তিনটে মুদ্রা তার হাতে ফেলে দিল বব।
চোদ্দ, চোদ্দ, এবং চোদ্দ, ওজন দেখে ঘোষণা করল রবিন।
এরপর অনিতার পালা। তার কাছে আছে পাঁচটা মুদ্রা। সবগুলো চোদ্দ গ্রাম।
কিশোরের চারটে আর মুসার দুটোর একই ওজন।
কি ডলির তিনটে মুদ্রার শেষটাকে ওজন দিয়েই চিৎকার করে উঠল। রবিন,দেখো, ওজন কম। আমার দ্বিতীয়টার সমান!
কান পেতে শব্দ শুনল সবাই।
তারপর মুসা হঠাৎ তার একটা ভারী মুদ্রা আছড়ে ফেলে দিয়ে শুনে বলল,
শুনলে? এক রকম না কিন্তু।