ট্র্যাপডোরটা দেখিয়ে মুসা বলল, নিচে আরও তিনজন রয়েছে।
থাক, কিশোর বলল। ওদের ব্যবস্থা পরে করব। আগে গার্ডটাকে ঠেকানো দরকার।
জানালার কাছে এসে দাঁড়াল সে।পেছন পেছন এল মুসা আর টনি।
কুয়ার কাছ থেকে সরেনি লোকটা।জানালার দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে আছে।
তার সামনে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে গোঁয়ারের মত তর্ক জুড়ে দিয়েছে অনিতা।
সুযোগটা কাজে লাগাল কিশোররা। টনিকে সহ বেরিয়ে এল দরজা দিয়ে।
ওদের বেরোতে দেখেছে অনিতা। বুঝতে পারছে, আরও কিছুক্ষণ ব্যস্ত রাখতে হবে লোকটাকে।
স্বর নরম করে বলল, এমন করছেন কেন আপনি? আমি তো ক্ষতি করিনি।
হাঁটতে বেরিয়েছিলাম…
এই তুষারপাতের মধ্যে নেকড়েরা হাঁটতে বেরোয় না, আর তুমি বেরিয়েছ, এ কথা বিশ্বাস করতে বলো আমাকে? নিশ্চয় কোন মতলব আছে তোমার।
সত্যি বলব? যেন কত গোপন কথা ফাঁস করে দিচ্ছে অনিতা, এমন ভঙ্গিতে বলল, তাহলে শুনুন কেন এসেছি। সেদিন হাটতে হাটতে চলে এসেছিলাম এদিকে।কুয়াটা দেখে কৌতূহল হলো। ঝুকে দেখতে গিয়ে আঙুল থেকে একটা আঙ্গটি খসে পড়ে গেল কুয়ার মধ্যে।মার আঙ্গটি। অনেক দামী হীরা বসানো।
লোভে চকচক করে উঠল লোকটার চোখ। মনে মনে হাসল অনিতা। টোপ গিলেছে হাদাটা। কুয়ার দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে ঝূকে নিচে তাকাল।
কাছে চলে এসেছে ততক্ষণে কিশোররা।
কই, কিছু তো দেখছি না, লোকটা বলল। টর্চ নিয়ে আসিগে।
তার আর দরকার হবে না, বলেই পেছন থেকে তাকে জোরে ধাক্কা মারল টনি। কুয়ার দিকে আরও ঝুকে গেল লোকটার দেহের ওপরের অংশ। দুই পা ধরে হ্যাচক টান মারল কিশোর আর মুসা।
কুয়ার মধ্যে উল্টে পড়ে গেল লোকটা। কুয়ার মুখ দিয়ে বেরোনো তার চিৎকারটা কেমন অপার্থিব শোনাল।
দারুণ দেখালে, অনিতা উচ্ছসিত প্রশংসা না করে পারল না কিশোর।
মাথা উঁচু করে একটা বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়াল অনিতা। ভাবখানা, গোয়েন্দা হিসেবে তোমার চেয়ে কম নই আমি।
তাতে কিছু মনে করল না কিশোর। হাসল কেবল তার দিকে তাকিয়ে।
দৌড়ে এল ডলি আর ফারিহা। এ কি করলে? শঙ্কিত স্বরে বলল ডলি। যদি মরে যায়?
মরবে না, কুয়ার দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে নিচে উঁকি দিল কিশোর। পানি নেই। গভীরতাও কম। তবে সাহায্য ছাড়া উঠে আসতে পারবে না আর।
নিচ থেকে চিৎকার শুরু করল লোকটা। তুলে আনার জন্যে অনুনয় বিনয় করতে লাগল। বার বার কাতর কণ্ঠে জানাতে লাগল, তার পা ভেঙে গেছে।
তুলে অবশ্যই আনা হবে, কিশোর বলল। তবে আমরা নই। পুলিশে আনবে।
ওপরে উঠে আসার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগল লোকটা। কিন্তু ভাঙা পা নিয়ে কিছুই করতে পারল না।
ঘুরে দাঁড়াল কিশোর। বাকি তিনটার ব্যবস্থা করতে হয় এখন। চলো যাই।
তিনজনকে নিয়ে বিশেষ বেগ পেতে হলো না। জানলই না ওরা আটকা পড়েছে। ওপর থেকে হুড়কো আটকে দেয়া হলো ভারী কাঠের ট্রাপডোরটার। তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হলো ঘরের মধ্যে যত ভারী, ভারী জিনিসপত্র আছে, সব। কোনমতেই যাতে দরজা ভেঙ্গে উপরে উঠে আসতে না
পারে লোকগুলো।
হাত ঝাড়তে ঝাড়তে কিশোর বলল, এখানকার কাজ শেষ। বাকি তিনজনকে ধরতে হবে এবার। রবিন আর রোভার বিপদের মধ্যে রয়েছে। জলদি।
আবার তুষার মাড়িয়ে দল বেঁধে ফিরে চলল ওরা। বনের মধ্যে দিয়েই এগোল এবারও। দুটো কারণে। এক, তুষার এখানে কম। দুই, গাড়ি নিয়ে যদি ফিরে আসে গালকাটা লোকটা, তাহলে যাতে ওর চোখে না পড়ে।
রাস্তার মাথায় যেখানে সাইকেলগুলো রেখে গিয়েছিল, তার কাছাকাছি আসতে ইঞ্জিনের শব্দ কানে এল। তাড়াতাড়ি গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে ফাঁক দিয়ে তাকাল কালো গাড়িটাই। ফিরে যাচ্ছে খামারবাড়িতে। তুষারপাতের মধ্যে দূর থেকে গাড়ির আরোহীদের চোখে পড়ল না। তবে ওরা শিওর রবিন আর রোভারকে কিডন্যাপ করে নিয়ে ফিরে এসেছে গালকাটা আর তার দুই সহকারী। মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কিশোর। জরুরী কষ্ঠে ববকে বলল, বব, সোজা থানায় চলে যাও। যত তাড়াতাড়ি পারো, পুলিশ নিয়ে ফিরবে। আমরা খামারবাড়িতে ফিরে যাচ্ছি আবার। রবিনদের উদ্ধার করতে হবে।
সময়মতই পুলিশ নিয়ে ফিরে এল বব। তার বন্ধুদের সবাইকে পেল ওখানে, কেবল রবিন বাদে। রোভারও নেই।
মাটির নিচ থেকে তিন জালিয়াতকে তুলে আনল পুলিশ। হাতকড়া লাগাল। কুয়া থেকেও তুলে নিল আহত লোকটাকে। আরও একজনকে পেল, হাত-পা বাঁধা অবস্থায়: টনিকে যেখানে ফেলে রাখা হয়েছিল, সেখানে। তাকে কাবু করতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি কিশোরদের। এতজনের বিরুদ্ধে একা কিছুই করতে পারেনি লোকটা।
তার মুখেই জানা গেল সব ঘটনা। গালকাটা আর তার আরেক সঙ্গীকে নিয়ে হেনরির দোকানে গিয়েছিল সে। রোভারকে ধরে আনার জন্যে। কল্পনাই করেনি, ফাঁদ পেতে রাখা হবে ওদের জন্যে। তাতে পা দিয়ে বেমক্কা ভাবে ধরা পড়েছে গালকাটা আর তার সহকারী। গাড়িতে ছিল তৃতীয় লোকটা। দুজনকে বন্দি হতে দেখে গাড়ি নিয়ে পালাল। তবে শেষ রক্ষা করতে পারল না।
ঘটনাটা কি ঘটেছে পরে রবিনের মুখে জেনেছে কিশোররা। দোকানের দরজায় ফাদার ক্রিস্টমাস সেজে ছবি তুলে যাচ্ছিল ওরা। ভালই করছিল রবিন।
কিন্তু রোভারের চেয়ে খাটো দেখে সন্দেহ করে বসেন দোকানের মালিক মিস্টার হেনরি। অগত্যা সব কথা খুলে বলতে হয় তাকে। গালকাটারা এলে ওদের ধরার জন্যে তার সাহায্য চায় রবিন।