বুদ্ধিটা মন্দ না, স্বীকার করল কিশোর। বেশ রসদ ভাগ করে নাও তোমরা। প্রথম পাথরটা ছোড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাব আমি আর মুসা।
খামারবাড়িটার চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলল ডলি, ফারিহা, অনিতা আর বব।
ঠকাস করে গিয়ে প্রথম পাথরটা পড়ল জানালার কাঠের ফ্রেমে।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না গোয়েন্দাদের। দরজায় দেখা দিল লোকটা। ডানে-বাঁয়ে তাকাতে লাগল। প্রবল তুষারপাতের মধ্যে কিসের শব্দ হলো, বোঝার চেষ্টা করছে।
আরেকটা পাথর গিয়ে পড়ল। লোকটার কাছাকাছি। চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল সে। এগিয়ে এল পাথরটার দিকে।
ঠকাস! গোলাঘরের ঘুণে ধরা দরজায় গিয়ে লাগল তৃতীয় পাথরটা।
ঠকাস! ঠকাস!
আরও দুটো পাথর।
অবাক হয়ে ঘুরতে থাকল লোকটা। কুকুরের লেজের গোড়ায় মাছি বসে বিরক্ত করলে সেটাকে ধরার জন্যে যেমন করে ঘুরতে থাকে কুকুর। হয়তো ভাবছে, তুষারপাতের সঙ্গে সঙ্গে পাথর-বৃষ্টিও শুরু হলো বুঝি! দেখতে যাচ্ছে না কেন? অধৈর্য হয়ে উঠল মুসা। যাবে না নাকি?
ওরা বেশি কাছাকাছি পাথর ফেলছে, বিরক্ত হয়ে বলল কিশোর। ওদের বলে এলাম কুয়াটার দিকে নিয়ে যেতে।
ঠকাস!
যষ্ঠ পাথরটা গিয়ে লাগল কুয়ার দেয়ালে।
এইবার পড়তে দেখল প্রহরী। সাধারণ পাথর। তারমানে আকাশ থেকে পড়ছে না। ভাল করে দেখার জন্যে এগিয়ে গেল।
চলো! ফিসফিস করে মুসাকে বলে দৌড় দিল কিশোর।
তুষারপাতের মধ্যে পুরু তুষারের আস্তরণ মাড়িয়ে তাড়াতাড়ি দৌড়ানো সহজ ব্যাপার নয়। তা ছাড়া শব্দ করা যাবে না। ভাগ্য ভাল, পাথরটার দিকে গভীর মনোযোগ রয়েছে লোকটার। তাই অন্য কিছু খেয়াল করল না।
খোলা দরজা দিয়ে ছুটে ভেতরে ঢুকে পড়ল দুই গোয়েন্দা। টনির কাছে চলে এল। কিছু বলার সময় নেই এখন, তাকে বলল কিশোর। আপনাকে ছাড়াতে এসেছি আমরা।
পকেট থেকে পেন্সিল কাটার ছুরি বের করে লোকটার বাঁধন কেটে দিল।
টনির চোখে সতর্কতা দেখে আবার বলল, আমরা আপনার বন্ধু রোভারের বন্ধু।
দড়ি কেটে বসা লাল হয়ে যাওয়া জায়গাগুলো উলতে শুরু করল টনি। বলল, এই লোকগুলো জালিয়াত। কয়েন জাল করে। খুব খারাপ লোক। সব করতে পারে। ওরা আমাকে বলেছে, ওদের কয়েন ছড়িয়ে বেড়াচ্ছি আমি। ওদেরই একজন কয়েনগুলো কোথাও দিয়ে আসতে যাচ্ছিল, রাস্তায় ব্যাগ ছিড়ে পড়ে যায়।
হাতড়ে হাতড়ে যা পারে তুলে নিয়েছিল। তখন সব খুঁজে পায়নি অন্ধকার ছিল বলে। গোণা ছিল বোধহয়। পরে গুনে দেখে কম। আবার যায় তুলে আনতে কিন্ত গিয়ে আর পায়নি একটাও। আমি আর রোভার তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম।
সেগুলো খোঁজার জন্যে তখন লোক লাগাল ওরা। হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াতে লাগল। জানি আমরা, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। গত হস্তায় রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন আপনি আর রোভার।
ও, জানো! টনি অবাক।
গত তিনদিন ধরে এই জাল কয়েন নিয়ে তদন্ত করছি আমরা। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি না, কাল আপনাকে ধরে নিয়ে এল কেন ওরা?
বললামই তো, ওদের কয়েন মানুষকে দিয়ে ফেলেছি আমরা। সত্যি বলছি, একেবারে না জেনে। ওরা চায় না ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যাক। এখানে কয়েনগুলো বানাচ্ছে ওরা, কিন্তু বাজারে ছাড়বে দূরের কোন শহরে নিয়ে গিয়ে।
যাতে সূত্র ধরে ধরে পুলিশ ওদের খুঁজে না পায়।
তাই।
কেন, মেশিনের শব্দ শুনছ না? আঙুল তুলে মাটির দিকে দেখাল টনি।
সেলারে বসে বানাচ্ছে এতক্ষণে বোঝা গেল শব্দটা কম কেন। মেশিনটা রয়েছে মাটির নিচের ঘরে।
রক্ত চলাচল বন্ধ থাকায় উঠে দাড়াতে কষ্ট হলো টনির। তিনজন লোক আছে ওখানে। ওই যে দেখো, ট্র্যাপডোর। সেলারে নামার দরজা। এত লোকের কথা শুনে সতর্ক হয়ে উঠেছে কিশোর। সোজা থানায় গিয়ে পুলিশকে জানাতে হবে।
না না, আর যা-ই করো, পুলিশের কাছে যেয়ো না! কাতর অনুনয় শুরু করল টনি। লোকগুলো ভয়ঙ্কর। কাল ধরে এনেছে আমাকে। আজ আনতে গেছে টনিকে। এতক্ষণে হয়তো ধরে ফেলেছেও ওকে!
সর্বনাশ! চমকে গেল কিশোর। টনিকে ধরলে রবিনকেও ধরবে ওরা, ছাড়বে না।
৯
ওদিকে সমস্ত রসদ শেষ করে ফেলেছে বব বাহিনী। খামারবাড়ির দরজার দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে উঠল। বেরোচ্ছে না কেন এখনও কিশোররা? কুয়োর কাছে দাঁড়িয়ে আছে প্রহরী। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
ঝট করে বুদ্ধিটা উদয় হল অনিতার মাথায়। বিপজ্জনক। কিন্তু কার্যকরী বলল, যে কোন ভাবেই হোক, লোকটাকে দরজার কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে হবে, কিশোররা না বেরোনো পর্যন্ত।
বলে আর দেরি করল না। ঝোঁপ থেকে বেরিয়ে সোজা হাঁটা দিল লোকটার দিকে।
স্তব্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে বব, ডলি আর ফারিহা। কি করতে যাচেছ অনিতা!
তাজা বাতাস চাইছেন, তাই না? হেসে বলল অনিতা।
ভীষণ চমকে গিয়ে পাক খেয়ে ঘুরে গেল লোকটা। হা করে তাকিয়ে রইল দীর্ঘ একটা মুহূর্ত। ধমকে উঠল, এই মেয়ে, এখানে কি করছ।
না, কিছু করছি না। এমনি হাটতে বেরিয়েছি।
হাটতে বেরিয়েছে। এই তুষারপাতের মধ্যে! জবাব খুঁজে পেল না লোকটা।
আচমকা ফেটে পড়ল, মিথ্যে বলার আর জায়গা পাওনি। চাবকে তোমার চামড়া ছাড়াব।
কে ভয় পায় তোমাকে? বুড়ো আঙুল দেখাল অনিতা। ও কি করতে চায়, বুঝে গেছে এতক্ষণে বব। ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে বাড়িটার দিকে দৌড় মারল। লোকটার অলক্ষে বাড়ির পাশ ঘুরে এসে দাড়াল জানালার সামনে। চাপা স্বরে ডাক দিল, কিশোর, জলদি বেরোও! অনিতা লোকটাকে ব্যস্ত রেখেছে! বেশিক্ষণ পারবে না। জলদি করো।