ডগলাস ফার্ম। বুঝতে পারল, তার কারণ, রাস্তায় গাড়ির চাকার যে দাগ রয়েছে, সেটা শুরু হয়েছে বাড়িটার গেটের কাছ থেকে।
দাঁড়াও, হাত তুলে সবাইকে থামতে ইশারা করল কিশোর। শুনতে পাচ্ছ?
বনের কিনারে যে যেখানে ছিল, মূর্তির মত দাঁড়িয়ে গেল। কান পাতল।
ফার্মের ভেতর থেকে গুঞ্জনের মত একটা শব্দ কানে আসছে। অথচ বাড়িটা নির্জন মনে হচ্ছে। কাউকে চোখে পড়ছে না
তিনজন লোককে গাড়িতে করে চলে যেতে দেখেছে। তাহলে ভেতরে শব্দ হচ্ছে কিসের?
৮
কোন ধরনের মেশিন-টেশিন হবে, বব বলল অবশেষে।
ফার্মের ভেতর থেকেই আসছে শব্দটা, অনিতা বলল।
আমি যাচ্ছি, কিশোর বলল। দেখে আসিগে। তোমরা সব এখানেই থাক।
আমি আসি, মুসা বলল।
না, তুমিও থাকো। লোক তো নিশ্চয় আছে। আমাকে ধরে ফেলতে পারে।
দুজন ধরা পড়ার চেয়ে একজন পড়া ভাল।কেঁপে উঠল ডলি।ঠান্ডায় না ভয়ে বুঝা গেল না। রবিনের কথা মনে পড়ল তার। টনিকে যে ভাবে কিডন্যাপ করা হয়েছে, রবিনকেও করবে না তো? বলা যায় না, কিশোরকেও আটকে ফেলতে পারে। তখন কি হবে?
কিশোর, সাবধানে থেকো, ফারিহা বলল।
টিটু কি বুঝল কে জানে, চাপা স্বরে গরগর করে উঠল। কিশোরের সঙ্গে যেতে চায় বোধহয় সে-ও তোর যাওয়ার দরকার নেই, হেসে বলল কিশোর। সবার সঙ্গে থাক।
আদর করে মাথা চাপড়ে দিল কুকুরটার।
পা বাড়াল সে। বনের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল খোলা জায়গায়। দৌড় দিল খামারবাড়িটার দিকে। যত তাড়াতাড়ি পারল ছুটে এসে গা ঠেকিয়ে দাঁড়াল বাড়ির পাথরে দেয়ালে। কান পেতে শুনতে শুনতে অপেক্ষা করতে লাগল। কেউ দেখে ফেললে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু এল না কেউ। কানে আসছে একটানা গুঞ্জনের মত শব্দ। কাছে থেকে জোরাল শোনাচ্ছে। মেশিনই।
কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে পা টিপে টিপে, দেয়াল ঘেষে জানালার দিকে রওনা দিল সে। তুষারে চাপা পড়ে যাচ্ছে জুতোর শব্দ। ভালই। মনে মনে তুষারকে ধন্যবাদ দিল সে কয়েক পা এগিয়ে আবার থেমে গেল। সতর্ক হয়ে উঠেছে প্রতিটি ইন্দ্ৰিয়।
সামান্যতম বিপদের গন্ধ দেখলেই দেবে দৌড়।
পার হয়ে গেল কয়েক সেকেন্ড। কিছুই ঘটল না।
আবার পা বাড়াল সে। জানালার কাছে এসে সাবধানে গলা বাড়িয়ে উঁকি দিল ভেতরে।
প্রথমেই চোখে পড়ল টনিকে। হাত-পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে মেঝেতে। একটা লোক বসে আছে তার কাছে। জানালার দিকে পেছন করে। কিশোরকে দেখতে পেল না।
ঠোঁট গোল করে শিস দেয়ার ভঙ্গি করল কিশোর। কিন্তু শব্দ বের করল না।
আরেকটু কাত হয়ে তাকাল ভাল করে দেখার জন্যে।
গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে স্থির দৃষ্টিতে এদিকে তাকিয়ে আছে বাকি সবাই।
কিশোরের প্রতিটি নড়চড়া লক্ষ্য করছে। বুকের মধ্যে প্রবল বেগে লাফাচ্ছে তাদের
হৃৎপিণ্ড।
নিশ্চয় কিছু দেখেছে! হঠাৎ বলে উঠল মূসা।
কি দেখল, উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠল উলি। আস্তে কথা বলার কথা ভুলে গেছে।
তাকে সাবধান করে দিল মুসা।
কি দেখেছে, এখুনি জানা যাবে, অনিতা বলল। ওই যে, ফিরে আসছে।
দৌড়ে আসছে কিশোর।
সামান্য সময়ের জন্যে থেমেছিল, আবার পুরোদমে পড়তে আরম্ভ করেছে তুষার।
টনিকে দেখে এলাম! কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল কিশোর। বেধে মেঝেয় ফেলে রেখেছে।
এই ঠাণ্ডার মধ্যে! ওরা মানুষ না! দত কিড়মিড় করল মুসা।
মাত্র একজন লোক আছে পাহারায়, জানাল কিশোর। ওকে সরিয়ে দিতে হবে, যাতে টনিকে মুক্ত করতে পারি বলা সহজ, করা কঠিন, বব বলল! গিয়ে বললেই তো আর সরে যাবে।
তা তো যাবেই না, হেসে বলল কিশোর। তবে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। ছোট ছোট কিছু পাথর জোগাড় করা দরকার।
তুষারে ঢেকে আছে সব, পাব কোথায়? অনিতা বলল, আর কোন বুদ্ধি বের করতে পারো না?
না, পারি না। এটাই একমাত্র বুদ্ধি। সময় আছে আমাদের হাতে। পাথর জোগাড় করা অসম্ভব হবে না। কিছুটা কৰ্কশ কষ্ঠেই জবাব দিল কিশোর, তুমি পারলে অন্য কোন বুদ্ধি বের করোগে। আমি পাথর দিয়েই কাজ সারতে চাই।
এক মুহূর্ত দেরি না করে গাছের গোঁড়ার তুষার সরাতে শুরু করল সে।
নিচের মাটি পাথরের মত কঠিন। পাথর খুঁড়ে তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে গলদঘর্ম হলো, কিন্তু বের আর করতে পারল না।
নাহ, খোঁড়ার জন্যে দিনটা আজ বড়ই প্রতিকূল! বিরক্ত কষ্ঠে বলে টিটুকে ডাকল। টিটু আয় তো এদিকে।
দুই লাফে কাছে চলে এল টিটু।
পাথুরে জায়গাটা দেখিয়ে দিয়ে হুকুম দিল কিশোর, খোড়।
কিশোর কি চায়, এক কথাতেই বুঝে ফেলল বুদ্ধিমান কুকুরটা। খোঁড়ার কাজে মানুষের আঙুলের চেয়ে তার নখ যে কত বেশি দক্ষ, বুঝিয়ে দিল পলকে।
একের পর এক পাথর খুঁড়ে তুলে ফেলতে লাগল সে।
পাথর তোলার পর তাকে থামতে বলল কিশোর। হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ তোকে। এনে ভালই করেছি। বাড়ি গিয়ে দুটো বড় বড় হাড় পাবি। হাড়ের কথা শুনে আনন্দে হাঁক ছাড়তে গেল টিটু। সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ চেপে ধরল ফারিহা। না না, টিটু না! বব পাথরগুলো দেখিয়ে বলল কিশোর।তুমি পাথর ছুড়বে। ওই যে কুড়াঁটা দেখছ, লোকটাকে ওদিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করো। এই সুযোগে আমি আর মুসা গিয়ে টনির বাঁধন খুলে দেব।
ঠিক আছে।খুশি মনে রাজি হয়ে গেল বব। আশা করি মেয়েরাও আমাকে সাহায্য করতে পারবে। যত বেশি লোককে কাজে লাগানো যায়, তত ভাল। কি বলো? ডলি, ফারিহা আর অনিতা একেক জন একেক দিকে সরে যাক। সবাই মিলে ছুঁড়তে থাকলে বোকা হয়ে যাবে লোকটা। বুঝতে পারবে না কোনদিক থেকে আসছে।