আহ, বাঁচালে আমাকে, ভাই! অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাদেরকে, কৃতজ্ঞ স্বরে বলল রোভার। তোমরা না এলে কি যে করতাম!
কথা শেষ। ঘর থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। লিফটের কাছে ওদেরকে এগিয়ে দিয়ে গেল রোভার।
ভাবছি, লিফটে করে গ্রাউন্ড ফোরে নামতে নামতে বিড়বিড় করল কিশোর, আগামী কাল কি ঘটবে?
৭
বাপরে, বহুত সময় লাগিয়ে দিলে! তিন গোয়েন্দাকে লিফট থেকে বেরোতে দেখেই বলে উঠল বব। আমরা আর পাঁচ মিনিট দেখেই দেখতে যেতাম কি হয়েছে তোমাদের এত দেরি করলে কেন?
কি বলল লোকটা জানতে চাইল ডলি।
জাল পয়সাগুলো কি ওরাই বানাচ্ছে? অনিতার প্রশ্ন।
অন্য লোকটার খবর কি? জিজ্ঞেস করল ফারিহা।কোথায় ধরে নিয়ে গেল ওকে?
সব প্রশ্নের জবাবই দিল কিশোর। জানাল আগামী দিনের পরিকল্পনা।
এখন আমাদের বাড়ি ফেরা দরকার, বলল সে। ভাগ্যিস বাড়িতে বলে এসেছিলাম দেরি হতে পারে
সবাই বাড়িতে বলে এসেছে, বড়দিনের বাজার দেখতে যাচ্ছে ওরা।
তুষারপাতের বিরাম নেই। রাস্তাঘাট, বাড়ির ছাত, সব তুষারে ঢেকে দিচ্ছে।
বাস স্টপে যাওয়ার পথে অনবরত তুষারকণাকে ধাওয়া করে যেতে লাগল টিটু।
পরদিন সকালে যখন ঘুম ভাঙল ওদের, সারা গ্রাম সাদা তুষারে ঢেকে গেছে।
গরম কাপড়-চোপড়ে গা মুড়ে, মাথা ঢেকে ঘর থেকে বেরোল সবাই।কিশোরদের বাগানের ছাউনিতে মিলিত হয়েছে সকাল সাড়ে আটটায়।রবিন বাদে।
সকালের বাসে শহরে চলে গেছে সে এত তুষার দেখে আনন্দে ফেটে পড়ার কথা ছিল ওদের। কিন্তু মগজে এখন
অন্য চিন্তা তুষারের বল বানিয়ে ছোঁড়াছুড়ি খেলা, কিংবা তুষারমানব বানানোর আগ্রহ নেই।
চিন্তিত ভঙ্গিতে কিশোর বলল, ভাবছি, এত তুষারের মধ্যে ডগলাস ফার্মটা খুঁজে পাওয়া না কঠিন হয়ে দাঁড়ায় আমাদের জন্যে।
কথা বলার সময় মুখ থেকে বেরোনো বাতাস সাদা ধোঁয়ার মত হয়ে যাচ্ছে।
তোমাকে আগুন বের করা ড্রাগনের মত লাগছে, কিশোর, হেসে বলল ফারিহা।
কিন্তু তার দিকে তাকিয়ে ভ্ৰকুটি করল কিশোর। হাসল না। কেউই হাসল না। রসিকতা করার মত মানসিক অবস্থা নেই এখন কারও।
কিশোর ঠিকই বলেছে ডলি একমত হলো তার সঙ্গে। ফার্মটা খুঁজে পাব
তো? তুমি বলার আগে ভাবিইনি। কি করে পাব? এই এত তুষারের মধ্যে রাস্তার মধ্যে আরও কয়েন যদি পড়ে থাকে, থাকবে তুষারের নিচে ঢাকা। খুঁজে পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। তারমানে কোন সূত্রও চোখে পড়বে না।
আগেভাগেই অত চিন্তা করে লাভ নেই.মুসা বলল। আগে গিয়ে তো দেখি। পাওয়া না পাওয়া সে তো পরের ব্যাপার।
টিটুর চিৎকারে ফিরে তাকাল ওরা। ছাউনির দরজার বাইরে চলে এসেছে সে। দৌড়ে চলে এল ওদের কাছে।
টেনে-হিঁচড়ে তাকে নিয়ে গিয়ে আবার ঘরের ভেতর ঢোকানোর চেষ্টা শুরু করল ফারিহা।
ও বুঝে গেছে, আমরা অভিযানে বেরোচ্ছি। টিটুর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াল কিশোর,উঁহুঁ, নেয়া যাবে না রে তোকে, টিটু। তুষারে ভিজে সর্দি বাধাবি।মরবি তখন।
তা ছাড়া যাবি কি করে? অনিতা বলল। আমরা তো যাব সাইকেলে।
সাইকেলে যেতে পারব কিনা সন্দেহ আছে, বব বলল।
মেশিন যদি আসে, রাস্তা সাফ হয় তাহলে পারব; না হলে হাঁটা ছাড়া গতি নেই।
টিটুকে ভেতরে নেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে ফারিহা। কিন্তু নিতে আর পারে না।করুণ আর্তনাদ শুরু করে দিল টিটু।ওকে নিয়েই যাই না কেন, মুসা বলল। একটা টবোগান নিলে তাতে চড়ে দিব্যি চলে যেতে পারবে টিটু। ভিজবেও না। ঠাণ্ডাও লাগবে না।
হ্যাঁ, বুদ্ধিটা মন্দ না, ডলি বলল।
বেশ, রাজি হলো অবশেষে কিশোর। কিন্তু সারাক্ষণ একা তো আমার পক্ষে টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় ভারী জিনিসটা।
তোমার একা টানার দরকার কি? সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল বব। পালা করে টানব আমরা সবাই।
টিটুকে সবাই ভালবাসে ওরা। ওকে ফেলে যেতে মন চাইল না কারোরই।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই রওনা হলো গোয়েন্দাদের বিচিত্র মিছিলটা। ছয়টা সাইকেল, আর কিশোরের সাইকেলের সঙ্গে বাধা ছোটখাট স্লেজের মত একটা টানা গাড়ি।তাতে চড়ে আরামছে চলেছে টিটু।
তুষার কাটার গাড়ি এসেছে। মেইন রোডটা পরিষ্কার করার পর গলিগুলো সাফ করছে এখন। আগে আগে গেছে গাড়িটা। সুতরাং রাস্তা সাফ। এগোতে অসুবিধে হচ্ছে না গোয়েন্দাদের।
বিশাল যন্ত্রটার দুই পাশে একনাগাড়ে ছিটকে পড়ে উঁচু হয়ে পাড়ের মত জমে যাচ্ছে তুষার।যতই গাঁয়ের ভেতর দিকে এগুচ্ছে, পুরু হচ্ছে তুষারের স্তর।
সবাই বেশ সতর্ক রয়েছে। কড়া নজর রেখেছে। কোনমতে ডগলাস ফার্মের রাস্তাটা চোখ এড়িয়ে যেতে দেবে না।
চিন্তা নেই একমাত্র টিটুর। টোবোগানে পা ছড়িয়ে বসে মহানন্দে ভ্রমণ করছে।
রবিন ততক্ষণে পৌঁছে গেছে রোভারদের ফ্ল্যাটের দরজায়।
হাতে দুটো ফাদার ক্রিস্টমাসের পোশাক, আর কাঁধে ঝোলানো ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে এল রোভার।
কোন খবর নেই নিশ্চয়? জিজ্ঞেস করল সে।
না, মাথা নাড়ল রবিন। সবে তো সকাল হলো। তবে এতক্ষণে নিশ্চয় ডগলাস ফার্মের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে সবাই।
রাস্তায় নেমে হেনরির দোকানের দিকে হাটতে শুরু করল দুজনে। মিল রোডের সেই অফিস বিল্ডিংটায় ঢুকে পোশাক পাল্টে ফাদার ক্রিস্টমাসের পোশাক নিল, আগের দিন যেখানে খুলেছিল টনি আর রোভার।
বেরিয়ে যখন এল, সম্পূর্ণ নতুন মানুষ। একেবারেই চেনা যাচ্ছে না। আর কে-ই বা খেয়াল করতে যাচ্ছে যে একজন ফাদার ক্রিস্টমাস আগের দিনের ফাদার ক্রিস্টমাসের চেয়ে সামান্য খাটো?