আপনি নাহয় রাখেন না, লোকটার প্রশ্নের জবাব দিল না কিশোর। কিন্তু আপনার বন্ধু?
তার কথা তাকেই জিজ্ঞেস কোরো, বিষন্ন কষ্ঠে জবাব দিল লোকটা।
প্রশ্ন খুঁজে পেল না আর কিশোর। রহস্যটা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে।
রবিন আর মুসাও বুঝতে পারছে না আর কি প্রশ্ন করা যায়। আগুপিছু বিবেচনা না করে হুট করে লোকটাকে অভিযুক্ত করে বসায় লজ্জা পাচ্ছে এখন তিনজনেই। মনে হচ্ছে, দুই ফাদার ক্রিস্টমাস-যাদেরকে ওরা সন্দেহ করেছে, দুজনেই নির্দোষ
বুঝতে পেরেছি! ওদেরকে চমকে দিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে উঠল লোকটা।
চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়েছে, একসঙ্গে সব বলতে গিয়ে কথাই বেরোতে চাইল না।
শান্ত থেকে ধীরেসুস্থে বলার অনুরোধ করল তাকে কিশোর।
পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রা, না? গত হপ্তায় বনের মধ্যে কি পেয়েছি, কল্পনাও করতে পারবে না। বনের মধ্যে দিয়ে একটা রাস্তা চলে গেছে ডগলাস ফার্মের দিকে। সেই রাস্তার এক জায়গায় দেখি অনেকগুলো কয়েন পড়ে আছে। রাস্তার ধারে ঘাসের মধ্যে। তুলে নিলাম ওগুলো। তারমানে ওগুলোই ছিল তোমাদের এই জাল মুদ্রা। আমরা কল্পনাই করতে পারিনি। কে হারিয়েছে সে-খোঁজ নেয়ারও প্রয়োজন মনে করিনি। পরের দিন হেনরির দোকানে কাজে গেলাম। কুড়িয়ে পাওয়া পয়সাগুলো দিয়ে লোকের ভাঙতি শোধ করতে লাগলাম।
আমরা মানে কে কে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
আমি আর আমার বন্ধু টনি। একটু আগে যাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দম নেয়ার জন্যে থামল সে। তারপর বলল, আমার নাম রোভার।….এখন বুঝতে পারছ তো, কোনও ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই আমরা?
পয়সাগুলো পুলিশকে দিয়ে আসা উচিত ছিল আপনাদের, গম্ভীর মুখে কিশোর বলল। তাহলে আজকে আর এই ঝামেলার মধ্যে পড়তে হত না।
জানি! কিন্তু নিজেকে আমাদের জায়গায় কল্পনা করলেই আমাদের সমস্যাটা বুঝতে পারবে। রোভার বলল। খুব কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলতে হচ্ছে আমাদের। আমরা ছাত্র। বড়দিনের এই ছুটিতে কাজ করছি কলেজে পড়ার টাকা রোজগারের জন্যে। খদ্দের আকৃষ্ট করার জন্যে আমাদের ভাড়া করেছে হেনরি।
ছবি তোলার টাকার লাভ সে নেয় না, সব আমরাই পাই। কাজেই সব খরচ খরচাও আমাদের। ফিল্মমের দাম, দামী ক্যামেরার ভাড়া ইত্যাদির খরচ মিটানোর পর লাভ খুব কমই থাকে আমাদের।
টাকার দরকার কার না আছে? রোভারের এ সব কৈফিয়তে মন ভিজল না মুসার। তাই বলে রাস্তায় পাওয়া টাকা তুলে নিতে হবে? ক্ষতি যা করার করে ফেলেছেন। এখন পস্তানো তো লাগবেই।
চুপ করে রইল রোভার।
কিশোর বলল, আমরা এখনও জানি না ওই মুদ্রাগুলো এল কোত্থেকে? ওগুলোর সঙ্গে গালকাটা লোকটার সম্পর্ক কি?
গালকাটা? বোকা হয়ে তাকিয়ে রইল রোভার।
যে লোকটা আপনার বন্ধু টনিকে কিডন্যাপ করেছে। যে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল হেনরির দোকানের সামনে যতই শুনছে, বিমূঢ় হয়ে যাচ্ছে রোভার। জিজ্ঞেস করল, রহস্যটার সন্ধান অনেক আগেই পেয়েছ মনে হচ্ছে?
মাত্র গতকাল, জবাব দিল কিশোর।
দেখো, একটা অনুরোধ করব, কাতর কণ্ঠে বলল রোভার, দয়া করে পুলিশের কাছে যেয়ো না। গেলে হয়তো টনির সাংঘাতিক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
ঠিক আছে, যাব না, কথা দিল কিশোর। আমরা নিজেরাই এটা সমাধানের চেষ্টা করব।
কিন্তু বাড়ি ফিরে না গেলে টনির বাবা-মা যদি পুলিশে খবর দেন? প্রশ্ন তুলল মুসা।
তুলবে না, রোভার বলল। কারণ ওরা এখানে নেই। ছুটি কাটাতে চলে গেছে হলিডে কটেজে। হেনরির দোকানে আমাদের ক্রিস্টমাস ইভের কাজ শেষ হয়ে গেলে টনিও চলে যাবে।..তা তোমরা এখন কি করার কথা ভাবছ?
রীতিমত অসহায় বোধ করছে এখন রোভার। কাচুমাচু ভঙ্গিতেই বোঝা যায়।
কয়েনগুলো যেখানে পেয়েছেন আপনারা, প্রথমে সেখানে যাব, কিশোর বলল। আকাশ থেকে তো আর পড়েনি ওগুলো। কোন না কোন সূত্র পেয়েই যাব জায়গামত যেতে পারলে।
হুঁ, উদ্বিগ্ন ভঙ্গিতে চোয়াল ডলল রোভার। কাল যে কি হবে বুঝতে পারছি না।টনিকে ছাড়া হেনরির দোকানের কাজটা চালাব কি করে? হেনরির সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে-বড় দিন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার ওখানে কাজ করব আমরা। কলি যদি দুজনের একজন হাজির হতে না পারি, কি বলবে সে?
সেটা নিয়ে ভাববেন না, সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল কিশোর। টনির বদলে আমাদের কাউকে দিয়ে দেব। রবিন যেতে পারে।
রবিন। ভুরু কুঁচকে ফেলল রোভার।
কিশোরের কথা শুনে মুসা আর রবিনও চমকে গেল।
হ্যাঁ, আমার এই বন্ধুটি, রবিনকে দেখাল কিশোর। টনির চেয়ে সামান্য খাটো হবে। হাই হিল জুতো পরে নিলেই লম্বা হয়ে যাবে অনেকটা। বাকিটা পরণ করে নেবে ফাদার ক্রিসমাসের পোশাক দিয়ে।আলখেল্লা আর দাঁড়ি-গোঁফের আড়ালে কেউ চিনতে পারবে না ওকে।
সত্যিই পারবে না, মুসা বলল।
আমি কি তোমাদের তদন্তে কোন সাহায্য করতে পারি? জিজ্ঞেস করল রোভার।
আপাতত লাগবে না, কিশোর বলল। আপনি বরং খেয়েদেয়ে শান্তিতে একটা ঘুম দিন। তাজা না হয়ে কাল সকালে চাকরিতে যেতে পারবেন না।
রোভারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, তাকে গুড নাইট জানিয়ে রওনা হলো তিন গোয়েন্দা।
বেরোনোর আগে দরজার কাছ থেকে রবিন বলল, কাল সকালে দেখা হবে।
সকাল সাড়ে আটটায় আপনার এখানে চলে আসব আমি। ফাদার ক্রিস্টমাস সেজে আপনার সঙ্গে দোকানে যাব।