তারমানে আছে এটাতেই, মাথা দোলাল রবিন। হয়তো ভয় পাচ্ছে কিডন্যাপকারীরা ফিরে আসবে আবার। আলো নিভিয়ে চুপ করে আছে।
বেল বাজালেই বোঝা যাবে, কিশোর বলল। এমন করে হাতে নিল পোশাকটা, যাতে শুরুতেউ লোকটার চোখে পড়ে। তারপর টিপে দিলু বেলপুশ।
তীক্ষ্ণ স্বরে বেজে উঠল বেল।যেকোন মুহূর্তে খুলে যেতে পারে এখন।
কিন্তু ভেতর থেকে সাড়া বা কোন রকম শব্দ এল না।।
রবিন, এ তলাটাই তো? মুসার প্রশ্ন। ভুল হয়নি তোমার?
আবার বেল টিপল কিশোর। আবার শোনা গেল বেলের শব্দ।
বাজাতেই থাকো, রবিন বলল। থেমো না। দেখা যাক কতক্ষণ না খুলে থাকতে পারে। ঘণ্টা বাজানো থামাতে হলে দরজা তাকে খুলতেই হবে। ও এই ঘরেই আছে।
হাসল কিশোর। রবিনের পরামর্শটা পছন্দ হয়েছে তার। বাজাতেই থাকল।
অন্তত বিশবার বাজানোর পর দরজার ওপাশে হুক থেকে শিকল খোলার শব্দ পাওয়া গেল।
বললাম না আছে,উত্তেজিত স্বরে রবিন বলল। টিপতে থাকো।
অবশেষে, খুব ধীরে সামান্য ফাঁক হলো দরজা। দেখা গেল ওকে। কিশোর ভেবেছিল রেগে যাবে। কিন্তু শান্তকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল তরুণ, কি ব্যাপার?
কিশোর জবাব দেবার আগেই তার হাতের ফাদার ক্রিস্টমাস পোশাকটা দেখে ফেলল সে। বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল চোখ। দ্রু নড়ে উঠল সে। এগিয়ে এসে একটানে পোশাকটা কিশোরের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে মুহূর্তে লাগিয়ে দিতে গেল আবার দরজা।
কিন্তু তৈরি ছিল কিশোর। চোখের পলকে পাটা ঠেলে দিল দরজার ভেতরে।
পায়ে শক্ত জুতো ছিল বলে রক্ষা। নইলে পাল্লার চাপে প্রচন্ড ব্যথা পেত।
মরিয়া হয়ে আবার দরজা লাগানোর চেষ্টা করল ফাদার ক্রিস্টমাস।
সরো! চিৎকার করে উঠল সে। সরে যাও দরজার সামনে থেকে। ভাগো!
এর একটা ব্যাখ্যা না শুনে যাচ্ছি না আমরা, জবাব দিল কিশোর।
সব জানি আমরা, মুসা বলল।
কি জানো তোমরা? রেগে উঠল ফাদার ক্রিসমাস।ভাল চাও তো যাও বলে দিচ্ছি।
আমাদের আপনি ভয় দেখাতে পারবেন না, জবাব দিল কিশোর। নিচে আমাদের বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। বলে দিয়ে এসেছি দশ মিনিটের মধ্যে আমরা ফিরে না গেলে ওরা যেন পুলিশের কাছে চলে যায়।
পুলিশ! চমকে গেল ফাদার ক্রিস্টমাস।
অসুবিধে কি? ভুরু নাচাল কিশোর। জাল মুদ্রা পাচার, কিডন্যাপিং-আরও কি কি করছেন সেটা আপনারাই ভাল জানেন। আমার ধারণা, বিশ বছরের কমে জেল থেকে বেরোতে পারবেন না।
হ্যাঁ, ঠিক, মাথা ঝাকাল রবিন, ততদিনে বুড়ো হয়ে যাবেন। চান সেটা?
ফ্যাকাসে হয়ে গেল ফাদার ক্রিস্টমাসের চেহারা। মনে মনে হাসল কিশোর।
ধাপ্পাতে কাজ হয়েছে।
এই সময় লিফটের শব্দ কানে এল। ওপরতলায় উঠে আসছে।
এসো। ভেতরে চলে এসো, জলদি! গোয়েন্দাদের বলে আবার দরজা ফাঁক করে দিল ফাদার ক্রিস্টমাস। বোঝা গেল, পড়শীদের দেখতে দিতে চায় না।
কিশোররা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর জানতে চাইল ওরা কেন এসেছে। আধঘণ্টার মধ্যেই আমার বাবা-মা চলে আসবে। তোমাদের দেখলে খুশি হবে না।
ঠিক আছে কিশোর বলল, তার আগেই চলে যাব আমরা। অবশ্য যদি আমাদের বলেন, কেন করছেন এ কাজ।
কি কাজ করছি বলব? তোমাদের কথা কিছু বুঝতে পারছি না আমি, জবাব দিল ফাদার ক্রিস্টমাস।
সত্যি বলছে! না ভান?
পারছেন না মানে? রেগে উঠল মুসা। জাল কয়েন পাচার করে বেড়াচ্ছেন আর এখন বলছেন কিছু জানেন না? ওসব চালাকি বাদ দিন!
জাল কয়েন? কি বলছ? আমার কাছে কোন জাল কয়েন নেই।
তাহলে এগুলো কি? পকেট থেকে দুটো মুদ্ৰা বের করে দেখাল কিশোর আজ বিকেলে এগুলো আমাকে দিয়েছে আপনার দোস্ত।
আমি বিশ্বাস করি না।
তাহলে শুনুন কি ঘটেছে, কিশোর বলল, বিকেল বেলা তাকে গিয়ে একটা ডলার দিয়ে ভাঙতি চাইলাম। বানিয়ে বানিয়ে বললাম, আমার বোনকে পঞ্চাশ পেল দেব একটা কার্ড কেনার জন্যে। মাকে উপহার দেব। শুনতে পাননি? কাছেই তো ছিলেন
হ্যাঁ হ্যাঁ, এখন মনে পড়েছে, জবাব দিল লোকটা। কিন্তু ওগুলো জাল, কে বলল তোমাকে?
কয়েন দুটো লোকটার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে একটার সঙ্গে আরেকটা বাড়ি দিয়ে শব্দ করল কিশোর। শুনুন শব্দটা। কি মনে হচ্ছে? স্বাভাবিক।
এখনও বিশ্বাস না হলে আরও ভালমত প্রমাণ করে দিতে পারি, রবিন বলল। একটা লোহাকাটা করাত নিয়ে আসুন। কাটলেই দেখতে পাবেন ভেতরে কি আছে।
ঠিক আছে, ঠিক আছে, বিশ্বাস করলাম, হাল ছেড়ে দিল লোকটা। করতাম না। কিন্তু যা সব কাও ঘটতে আরম্ভ করেছে, জাল কয়েন হলে আর অবাক হওয়ার কি আছে।
ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল সে। হাতে রয়ে গেছে এখনও ফাদার ক্রিস্টমাসের পোশাকটা। হয়তো তোমাদের কথাই ঠিক, বলল সে। খানিক আগে আমাদের ওপর কেন হামলা চালিয়েছিল লোকগুলো, এতক্ষণে বোঝা যাচ্ছে। হঠাৎ এমন ভাবে আক্রমণ করে বসল…. ভাবতেই পারিনি….
আসলে কির্ডন্যাপ করতে চেয়েছিল আপনাদের, রবিন বললু। দুজনকেই।
আপনি পালিয়ে আসাতে বেঁচে গেছেন। আপনার বন্ধুকে কোথায় নিয়ে গেল ওরা, কিছু আন্দাজ করতে পারেন?
জানলে কি আর এখানে বসে থাকতাম মনে করেছ? জবাব দিল লোকটা।
টাকার ব্যাপারটা কি বলুন তো? পঞ্চাশ পেন্সের জাল মুদ্রা কোত্থেকে আসছে? জানতে চাইল কিশোর.
কাস্টোমারদের দেয়ার জন্যে প্রচুর ভাঙতি রাখতে হয় আমাদের, লোকটা জানাল। ছবি তুলে অনেকেই দুই ডলার দেয়। এক ডলার দশ পেন্স রেখে বাকিটা ভাঙতি দিতে হয়। কয়েন রাখা ছাড়া উপায় কি। কিন্তু আমরা জাল কয়েন পাচার করছি এ ধারণা হলো কি করে তোমাদের?