তবে এখনও অনেক দেরি আছে। প্রথমে সেই বট গাছটা খুঁজে বের করতে হবে আমাকে। হাজারও গাছ রয়েছে এই এলাকায়। সঠিক গাছটা খুঁজে পেতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যেতে পারে। কিংবা আরও বেশি সময়। গাছটা না পেলে বেরোতে পারব না।
সরু কাঁচা রাস্তার একটা বাঁক পেরোলাম। আর, হঠাৎ করেই, সামনে দেখা গেল ওটা। মস্ত, ফুলে ওঠা, বড় বড় শিকড়। আমার জন্য এখন সবচেয়ে মনোরম দৃশ্য।
ছুটে এলাম গাছটার কাছে। ঠেলা দিলাম গাছের গায়ে। ভাবলাম, আগের বারের মতই খুলে যাবে। কিন্তু কিছুই ঘটল না।
‘এলিভেটরের দরজা তখনই খোলে, রবিন, আমি যখন চাই,’ পিছন থেকে শোনা গেল একটা মোলায়েম, ভীতিকর কণ্ঠ।
ফিরে তাকালাম। এগিয়ে আসছে স্কারপিনি। হাতে একটা যন্ত্ৰ। নিশ্চয় ওর উদ্ভাবিত যন্ত্র। ব্রেন-অলটারিং ইলেকট্রিক গান দিয়ে গুলি করে আমার কিছু করতে পারেনি দানব-মহিলা, নিশ্চয় দেখেছে ও। তাই আরও শক্তিশালী যন্ত্র নিয়ে এসেছে।
‘তুমি কিন্তু মোটেও সহযোগিতা করছ না, রবিন,’ মৃদু অভিযোগের সুরে বলল স্কারপিনি। ‘তুমি আমাকে হতাশ করেছ। কাজেই আমি তোমাকে শাস্তি দেব। এই যন্ত্রের রশ্মি তোমার মগজে সামান্য একটুখানি ঢুকিয়ে দিলেই সারা জীবনের জন্য আমার গোলাম হয়ে যাবে তুমি। আমার প্রতিটি নির্দেশ পালন করে চলবে। যখন যা বলব, নির্দ্বিধায় করবে।’
হেসে উঠল স্কারপিনি। যন্ত্রটা উঁচু করে ধরল। আমার ওপর লক্ষ্য স্থির করছে। গাছের গায়ে জোরে জোরে কিল মারতে লাগলাম। কিন্তু দরজাও খুলল না, এলিভেটরও এল না। নিজেকে বাঁচানোর মাত্র একটা সুযোগ আছে আর, বুঝতে পারলাম। কাজটা করতে যদিও ভাল লাগবে না আমার। কিন্তু করতে হবে। স্কারপিনি আমাকে বাধ্য করে ফেলেছে।
স্কারপিনির যন্ত্রটার গায়ে একটা টেলিস্কোপের মত জিনিস লাগানো। সেটার ভিতর দিয়ে তাকিয়ে আমাকে নিশানা করছে ও।
গ্রেগ জনসনের কাছ থেকে নেয়া ব্রেন-অলটারিং গানটা হাতেই রয়েছে আমার। উঁচু করে ধরলাম। তারপর স্কারপিনি ওর যন্ত্রের বোতাম টেপার আগেই ওকে লক্ষ্য করে ট্রিগার টিপলাম।
আঠারো
পিস্তলের নলের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল এক ঝলক রশ্মি। মুহূর্তে সাদা আভায় ঢেকে গেল স্কারপিনির মুখ। পলকে চোখের দৃষ্টি বদলে গেল ওর, নিষ্প্রাণ শূন্য দৃষ্টি দেখা গেল চোখে। হাত থেকে খসে পড়ল যন্ত্রটা। দুই হাতে মুখ চেপে ধরে প্রচণ্ড এক আর্ত চিৎকার দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল ও। দৌড়ে ঢুকে গেল বনের ভিতরে।
জোরে নিঃশ্বাস ফেললাম। কতক্ষণ যে দম বন্ধ করে রেখেছিলাম জানি না। গাছের গায়ে হেলান দিলাম। আমার কাঁধের চাপ লাগতেই খুলে গেল দরজা। এসে গেছে এলিভেটর। হাতের ইলেকট্রিক গানটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে লাফিয়ে উঠে পড়লাম এলিভেটরে। ‘জি’ বোতামটা টিপে দিলাম। দ্রুত উঠতে শুরু করল এলিভেটর। বোতামের প্যানেলের দিকে তাকালাম। ‘এইচ’ বোতামটা নেই। আবার উধাও হয়ে গেছে।
পুরো একটা মিনিট লাগল গ্রাউণ্ড ফ্লোরে উঠতে। থেমে দাঁড়াল এলিভেটর। দরজা খুলল। বেরিয়ে এলাম শপিং মলের নীচতলার বারান্দায়। আর কোন খারাপ অনুভূতি নেই এখন।
চারদিকে লোকের ভিড়।
‘এই, রবিন!’ পরিচিত কণ্ঠের ডাক শোনা গেল।
ফিরে তাকালাম। হাত নাড়ছে কিশোর। পাশে দাঁড়ানো মুসা। একটা ফাস্টফুডের দোকানের সামনে রয়েছে ওরা। হেসে এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে। আর ওদের সঙ্গে লাঞ্চ করতে দ্বিধা নেই আমার।
উনিশ
আরাম করে বসে হট ডগ আর স্যাণ্ডউইচ খেলাম। তারপর বললাম, আমি জিনিস কিনতে যাচ্ছি।
‘তখন না একবার কিনতে গেলে?’ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল কিশোর। ‘এতক্ষণ তাহলে কোথায় কাটিয়ে এলে?’
জবাব দিলাম না।
আমার পায়ের দিকে আঙুল তুলল ও। শপিং মলের ভিতরেও স্কেট পরে আছো কেন? তোমার ব্যাকপ্যাক কোথায়? তোমার জুতো?’
‘নিশ্চয় কোথাও ফেলে এসেছি,’ বললাম।
আমার জবাব শুনে ভ্রূকুটি করল কিশোর। মুসার দিকে তাকাল। স্কেট দুটো খুলে নিলাম। ‘মুসা, তোমার ব্যাকপ্যাকে বাড়তি জুতো কিংবা স্যাণ্ডেল-ট্যাণ্ডেল আছে? দাও তো পরি। রাতে যখন নিনার জন্মদিনের পার্টিতে আসবে, তখন ফেরত দেব।’
আমি জানি, মুসা একজোড়া বাড়তি কাপড়ের জুতো রাখে ওর ব্যাগে। ব্যায়াম করার সময় পরে।
জুতো বের করে দিল ও। আমার চেয়ে ওর পা বড়, তবে কাজ চালিয়ে নিতে পারব।
জুতো পরে, আমার দুই বিস্মিত বন্ধুকে হাঁ করিয়ে রেখে, রওনা হলাম। দরজা দিয়ে বেরোনোর আগে ফিরে তাকালাম। এমন ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে ওরা, নিশ্চয় ভাবছে, আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মুচকি হেসে বেরিয়ে এলাম।
সোজা এগোলাম এসকেলেটরের দিকে। একের পর এক এসকেলেটর বদলে উঠে এলাম পঞ্চম তলায়। পকেটে টাকা আছে। তাই আরেকটা এভিয়েটর ডল কিনতে অসুবিধে হলো না। তবে গ্রেগ জনসনের দোকানে ঢুকে কী অবস্থা দেখতে পাব, সেটা ভেবে কিছুটা ভয় ভয় লাগল। নতুন কোনও বিপদে পড়তে চাই না।
ডল এম্পোরিয়ামের দিকে ঢোকার সময় সতর্ক রইলাম। সামান্যতম বিপদের সম্ভাবনা দেখলেই ছুটে পালাব। আশপাশে কয়েকজন কাস্টোমারকে দেখলাম। আগেরবারের মত নির্জন নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলো আমার কাছে। যা থাকে কপালে ভেবে ঢুকে পড়লাম দোকানের ভিতর।
তাকে রাখা একটা এভিয়েটর ডল দেখলাম।