কীভাবে? রবিন জানতে চাইল।
ও যদি মুসার স্কি সরিয়ে থাকে, তবে ও দুটো দেখতে কেমন ও জানে, ঠিক না?
মাথা ঝাঁকাল রবিন।
সটান উঠে দাঁড়াল কিশোর।
এসো। আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে।
মারির উদ্দেশে স্কেট করে এগোল ও।
কী প্ল্যান? নিচু গলায় জবাব চাইল রবিন, বন্ধুর নাগাল পেতে চেষ্টা করছে। কী করব আমরা?
স্রেফ আমার সাথে তাল দিয়ে যেয়ো, ফিসফিসিয়ে জানাল কিশোর। টেবিলের পাশে এসে থেমে দাঁড়াল। হাই, মারি!
মারি সবে মাত্র এক কাপ হট কোকো শেষ করেছে।
ও, তোমরা? ভালই হলো। আমি একা-একা বোর হচ্ছিলাম। উডি আইস হকি খেলতে গেছে। এসো, আমরা স্কেট করি।
অ্যাই, মারি, বলল কিশোর, রবিন স্কি কিনতে চাইছে। ওরা তিনজন পুকুরটাকে ঘিরে ধীরে ধীরে চক্কর কাটছে।
আমি? সবিস্ময়ে বলে উঠল রবিন। পরক্ষণে কিশোরের কনুই খেয়ে বলল, হ্যাঁ, চাইছিই তো।
মুসা প্রথমে যেরকম ভাড়া করেছিল তেমনি স্কি ওর পছন্দ, বলে চলল কিশোর। ও দুটো ভাল ছিল। তোমার কী মনে হয়?
শ্রাগ করল মারি।
হতে পারে। আমি সেভাবে লক্ষ করিনি।
মারির মুখের চেহারার অভিব্যক্তি খুঁটিয়ে পরখ করল কিশোর। মিথ্যে বলছে বলে মনে হলো না।
বুদ্ধিটা কাজে দিল না। অন্য কিছু চেষ্টা করে দেখতে হবে, সিদ্ধান্ত নিল গোয়েন্দাপ্রধান।
তোমার কি এখনও জ্যাকর্যাবিট ক্লাসে যাওয়ার ইচ্ছা? প্রশ্ন করল। হেসে উঠল মারি।
কী বোকামিটাই না করছিলাম, বলল। উডির ক্লাসে গেলে আমাকে ওর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। ও আমার চাইতে অনেক ভাল স্কি করে। এখন ওর ক্লাসে ও সেরা আর আমার ক্লাসে আমি। দুজনই জিতব।
অন্য কেউও তো জিততে পারে, বলল রবিন। তুমি অত নিশ্চিত হচ্ছ কী করে?
আবার হেসে উঠল মারি।
এখন তুমি বোকামি করছ, বলল।
মারি! উডির গলা শোনা গেল। চলে এসো। জিততে হলে আমাদের আরেকজন প্লেয়ার চাই।
আসছি, চেঁচিয়ে বলল মারি। পরে দেখা হবে, কিশোর আর রবিনের উদ্দেশে বলে চলে গেল।
রবিন জ্বলন্ত চোখে ওর গমনপথের দিকে চেয়ে রইল।
ও নিজেকে বিরাট কিছু একটা ভাবে, বলল।
হ্যাঁ, বলল কিশোর। ও এখনও আমাদের সন্দেহভাজন-যদিও ফাঁদটা কাজ করল না।
.
পরদিন সকালে নাস্তার পর, রাশেদ চাচার সঙ্গে তিন গোয়েন্দা স্কি লজের উদ্দেশে হাঁটা ধরল। প্রতিযোগিতার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে ছেলেরা।
সামনের ধাপগুলোর কাছে মাত্র এসে পৌঁছেছে, এমনিসময় ছুটতে ছুটতে আসতে দেখল মারিকে।
হাই, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল। আগের জায়গায় না, আজকে আমাদেরকে পুকুর পাড়ে জড় হতে বলেছে। কথা কটা বলেই দৌড়ে চলে গেল।
তাড়াতাড়ি চলো, তাগাদা দিল মুসা। পুকুরটা কম দূর না।
ভাল দেখে একটা জায়গা বেছে ফেলি, সোৎসাহে বললেন রাশেদ চাচা। প্রতিযোগিতা দেখবার জন্য মুখিয়ে আছেন। গুড লাক, বয়েজ!
তিন গোয়েন্দা স্কি বুট পরে নিল। পুকুরের দিকে স্কি করে যথাসম্ভব দ্রুত রওনা দিল ওরা।
লোকজন সব গেল কোথায়, ওখানে পৌঁছে বলল মুসা।
এক মহিলা যন্ত্রপাতি রাখবার শেডের পাশে বসে। স্নোমোবাইল পালিশ করছে।
তোমরা কি পথ হারিয়েছ নাকি, বাছারা?
স্কেটিং প্রতিযোগিতা তো এখানেই হবে, তাই না? কিশোর জানতে চাইল।
মাথা নাড়ল মহিলা।
না, ওদিকে। বিগিনার্স স্লোপের নীচের দিকে আঙুল, নির্দেশ করল সে। এখুনি মনে হয় শুরু হয়ে যাবে।
ধক করে জ্বলে উঠল মুসার চোখজোড়া।
দাঁড়াও, আগে ওই মারি শয়তানটাকে বাগে পেয়ে নিই, দেখাব মজা!
দৌড় দাও, তুরিত বলে উঠল কিশোর। এখনও হয়তো সময় আছে।
স্কি বুট পরে দৌড়ব কীভাবে! আর্তস্বর ফুটল রবিনের কণ্ঠে। সময়মত কিছুতেই পৌঁছতে পারব না। কোন আশা নেই!
আট
মনে হচ্ছে কেউ তোমাদেরকে ভুল ইনফর্মেশন দিয়েছে, বলল মহিলা। এক কাজ করো, আমার স্নোমোবাইলে উঠে পড়ো। আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
তিন গোয়েন্দা ওদের স্কি রেখে দিল স্নোমোবাইলের পিছনে, স্লেডের ভিতর। তারপর উঠে বসল স্নোমোবাইলে। একটু পরেই ঢালের উদ্দেশে সা-সঁ করে ছুটে চলল।
থ্যাংকস, স্নোমোবাইল থেমে পড়লে মহিলাকে আন্তরিকভাবে বলল কিশোর।
এক লাফে নেমে পড়ে, ছোঁ মেরে খুলে নিল স্কিজোড়া। ছুটল জুলিয়া টিচারের কাছে। রবিন ওর পায়ে পায়ে ছুটছে।
মুসা ওদের পাশ কাটিয়ে লিফটের উদ্দেশে ধেয়ে গেল। জ্যাকর্যাবিট ক্লাসের বাদবাকিরা ইতোমধ্যে শূন্যে উঠে পড়েছে।
তোমরা দেরি করে ফেলেছ, কুঁচকে বললেন জুলিয়া।
আমাদের দোষ নেই, সাফাই দিল রবিন। একজন আমাদেরকে পুকুরের দিকে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তীব্র চোখে মারির দিকে চাইল ও। কিন্তু মারি চোখে চোখ ফেলল না।
টিচার, মৃদু কণ্ঠে বলল কিশোর। আপনার সাথে একটু কথা ছিল। আমার সাথে? বলো না।
জুলিয়া টিচারকে এক পাশে নিয়ে গেল কিশোর। মিনিট খানেক দুজনের মধ্যে কী কথা-বার্তা হলো কেউ জানতে পারল না।
কথা সেরে ফিরে এসে স্কি পরে নিল কিশোর। রবিন ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। এবার স্কি লিফটে চড়ল ওরা।
ডায় যখন উঠে আসছে, মুসাকে দেখতে পেল তীব্র গতিতে নেমে যাচ্ছে স্কি পায়ে। কিশোরের মনে হলো, চমৎকার স্কি করছে ওর বন্ধু।
মুহূর্ত পরে নেমে এল উডি, সে-ও কম যায় না। ওর মান ভিডিওতে দেখা স্কিয়ারদের কাছাকাছি প্রায়।
অবশেষে চুড়োয় এসে পৌঁছল ওরা। এবার বানি ক্লাসের প্রতিযোগিতার পালা।
বিল ঢালের মাঝামাঝি জায়গায় গিয়ে পড়ে গেল। বাকি পথটুকু পিছলে নেমে গেল। কিন্তু উঠে দাঁড়ালে দেখা গেল দাঁত বের করে হাসছে।