এগুলো পরে স্কি করা যাবে না, হতাশ কণ্ঠে বলল মুসা। আমার কপালটাই খারাপ!
ভিক্টর, উডি আর মারি স্কি করে চলে এল।
কী হয়েছে? ভিক্টর প্রশ্ন করলেন।
জুলিয়া ঘটনাটা জানালেন।
মুসার স্কি বরফ হয়ে আছে।
আমরা যখন লাঞ্চ করছিলাম, সেই ফাঁকে কেউ একজন ওগুলো ভেতরে রেখে দেয়, বলল রবিন।
খুব খারাপ কথা, বলল মারি। তা হলে তো মুসার আর ক্লাস করা হচ্ছে না। ওর জায়গাটা আমি নিতে পারি।
তার দরকার পড়বে না, জোরাল গলায় বললেন জুলিয়া।
হ্যাঁ, সায় দিলেন ভিক্টর, আমি মুসাকে নিয়ে যাচ্ছি। ও আরেক জোড়া স্কি ভাড়া করে নেবে।
স্কি খুলে মুসার সঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করলেন তিনি।
গোটা ক্লাসটায় কিশোর মুসার জমে-যাওয়া স্কিজোড়ার কথাই শুধু ভাবল। কেউ একজন ওকে সরাতে চাইছে। কে সে?
বিকেল নাগাদ বানি ক্লাসের রোপ টো ব্যবহার করা শেখা হয়ে গেল। এরপর পাহাড়ের অনেকখানি উঁচু থেকে নেমে এল ওরা। দারুণ মজা পেল কিশোর। কিন্তু ওর মাথায় কেবলই ঘুরপাক খেল রহস্যটার চিন্তা।
তোমাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে স্নোম্যান বানানোর পার্টিতে, ক্লাস শেষে বললেন জুলিয়া। সবার জন্যে প্রচুর হট চকোলেটের ব্যবস্থা থাকবে।
হট চকোলেট আমার ভাল্লাগে না, সাফ জানিয়ে দিল বিল। জিভ পুড়ে যায়।
স্নোম্যান তো বাচ্চারা বানায়, আওড়াল মারি।
পার্টি জমাতে এদের দুজনের জুড়ি মেলা ভার, ব্যঙ্গের সুরে কিশোরকে বলল রবিন।
দুই বন্ধু চলল মুসার সঙ্গে দেখা করতে।
লকার রূম নানা ক্লাসের ছেলে-মেয়েদের ভিড়ে গিজগিজ করছে।
উহ, টায়ার্ড হয়ে গেছি, বলে নিজের জুতোজোড়া পরে নিল রবিন।
আমি হইনি, বলল মারি। আমি সারা দিন-রাত স্কি করতে পারব।
উডি ওর জুতোজোড়া তুলে নিল। ফিতে দিয়ে বাঁধা ও দুটো। একটা ফিতে ধরে টান দিতেই আলাদা হয়ে গেল দুপাটি।
কীভাবে করলে? রবিন উৎসুক কণ্ঠে জানতে চাইল।
একে বলে স্লিপ নট, বলল মারি। উডি আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে কীভাবে বাঁধতে হয়।
আঙুল ঠাণ্ডা হয়ে গেলে এটা খুব কাজে আসে, ব্যাখ্যা করল উডি।
অবশ্য সাবধান থাকতে হয়, মারি বলল। নইলে যখন তখন খুলে যেতে পারে।
রাশেদ চাচা লকার রূমের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন ওদের জন্য।
কীরে, কেমন কাটল তোদের বিকেলটা?
ভাল, জানাল মুসা। তবে আমার লাকি লকেটটা থাকলে আরও ভালভাবে স্কি করতে পারতাম।
ভাগ্যটাও হয়তো ভাল থাকত, বলল রবিন।
কিশোর চাচাকে মুসার জমাট বাঁধা স্কির কথা জানাল।
কপাল খারাপ, মন্তব্য করলেন চাচা।
আরেকটা সূত্র, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। গেঁথে নিল মনে।
ওরা সবাই মিলে এরপর লজের পিছনের তুষারাবৃত মাঠটার উদ্দেশে এগোল। গিয়ে যখন পৌঁছল, জায়গাটা তখন লোকে লোকারণ্য।
তোরা মজা কর, বললেন চাচা। আমি সব মালপত্র জড় করে ঘরে নিয়ে যাই। একটু পরে দেখা হবে।
আচ্ছা, বলল কিশোর।
একটা তুষার কুকুর বানানো যাক, চাচা চলে গেলে প্রস্তাব করল রবিন।
রাফিয়ানের মত, সোৎসাহে সায় জানাল মুসা।
ভাল হচ্ছে না কিন্তু! মারির গলা ভেসে এল। পরমুহূর্তে তুষারের একটা বল ছুঁড়ে দিল ও ভাইকে লক্ষ্য করে।
কিম আর জিম তুষারমানব বানাচ্ছিল। ওটার আড়ালে ঝট করে বসে পড়ল উডি।
ফলে, মারির ছোঁড়া বলটা যমজদের তুষারমানবের মাথার খানিকটা অংশ ভেঙে দিল।
সরি,বলল মারি।
নো প্রবলেম, বলল যমজদের একজন।
জিম আর আমি একটা তুষারানো বানাচ্ছি। একটা মাত্র চোখ থাকবে ওটার।
আর লম্বা একটা নাক, জিম বলল। দানোটার নাকের জায়গায় একটা কাঠি গুঁজে দিল ও।
উডি আরেকটা তুষারের বল ছুঁড়ে মারল মারির উদ্দেশে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো।
উফ! বলে উঠল এইমাত্র পার্টিতে যোগ দেওয়া বিল। কোট থেকে ঝেড়ে ফেলল তুষার। আমি এসব ফালতু খেলার মধ্যে নেই! চলে গেল গট গট করে।
বিল বেচারার সময়টা একেবারেই ভাল কাটছে না, মনে মনে বলল কিশোর। তুষার কুকুরের দেহ তৈরির জন্য একটা বল পাকাল ও।
দানোটার নাক ফুল, কিশোরের কানে এল যমজদের একজনের কণ্ঠ। চোখ তুলে চাইল ও।
তুষারানোর নাকে কী একটা ঝুলিয়ে দিল এক ভাই।
চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল গোয়েন্দাপ্রধানের।
ওটা পেলে কোথায়? চেঁচিয়ে উঠল।
অ্যাই! মুসা চিৎকার ছেড়ে দৌড়ে গেল ওর লকেটটা কেড়ে নিতে।
কিন্তু তার আগেই কিম ওটা হাত করে ফেলেছে।
অ্যাই, জিম, ধর! ভাইয়ের উদ্দেশে ছুঁড়ে দিল।
জিম লুফে নিল ওটা।
তবে রে! মুসা ওর দিকে তেড়ে যেতে কিমের দিকে ছুঁড়ে দিল।
কিন্তু কিমের আগেই এক লাফে এগিয়ে এসে ওটা লুফে নিল উডি।
গুড ক্যাচ, উডি, বলল মুসা।
এসো, বেঁধে দিই, বলল উডি।
শক্ত করে বেঁধো। আবার যাতে পড়ে না যায়। রুপোলী লকেটটা স্পর্শ করে বলল মুসা। ওর হাসি কান পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।
উডি মুসাকে লকেটটা পরিয়ে দিচ্ছে, হেসে উঠল মারি।
উডি, স্লিপ নট দিয়ো না যেন।
যমজদের উদ্দেশে ঘুরে দাঁড়াল কিশোর।
তোমরা বলেছিলে মুসার লকেট দেখোনি।
ওটা ওরাই নিয়েছিল, গর্জে উঠল রবিন।
বিশ্বাস করো আমরা নিইনি, কিম ফ্যাকাসে মুখে জানাল। খুঁজে পেয়েছি।
লজের পাশে মাটিতে আঙুল তাক করল জিম।
তুষারে পড়ে ছিল, বলল।
কিশোর জিমের নির্দেশিত জায়গাটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। তুষারে অসংখ্য পদচিহ্ন। কে বলবে কার পায়ের ছাপ ওগুলো।
মুসার লকেট ওখানে গেল কীভাবে?
কেউ নিশ্চয়ই ফেলেছে। মুসার গলা থেকে খসে পড়েনি তো?