দাঁড়াও,যমজদের উদ্দেশে বলল গোয়েন্দাপ্রধান। তোমরা কি একটা স্কি আকৃতির রুপোলী লকেট দেখেছ?
হ্যাঁ, বলে উঠল দ্বিতীয় ভাই। ওসব তো মেয়েরা পরে।
মুসা চোখ পাকিয়ে তাকাল, কিন্তু তার আগেই ঘুরে দাঁড়িয়ে মার সঙ্গে বেরিয়ে গেল দুভাই।
ওদের গন্ডোলা আটকে যাক, আর না নামুক, থমথমে গলায় বলল মুসা।
ইতোমধ্যে রাশেদ পাশা এসে যোগ দিয়েছেন ওদের সঙ্গে। হেসে উঠলেন তিনি।
লাঞ্চ করবি না? আয়।
সবাই ওরা ফিরে গেল ক্যাফেটেরিয়ায়। সামনে ধূমায়িত খাবারের প্লেট নিয়ে বসল।
তোদের নতুন রহস্যের কথা বল, রাশেদ চাচা কিশোরকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
তুমি রহস্যের কথা জানলে কী করে, চাচা? জিজ্ঞেস করল কিশোর। পানির গ্লাসে চুমুক দিল।
মুচকি হাসলেন চাচা।
একটু-আধটু গোয়েন্দাগিরি তো আমিও জানি, না কি? গেম রূমে যমজ ভাইদেরকে প্রশ্ন করলি শুনলাম। আর সকালে কী যেন খুঁজছিলি মনে পড়ে গেল। ব্যস, দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেললাম।
আমার লকেটটা, বলল মুসা। কাল রাত থেকে পাচ্ছি না।
পাহাড়ে আজকে কে যেন পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে মুসাকে, বলল। রবিন। লকেটটা যে চুরি করেছে সে হতে পারে!
তোমারও কি তাই মনে হয়, চাচা? কিশোর প্রশ্ন করল।
জানিসই তো, বললেন চাচা। কোন সিদ্ধান্তে আসতে হলে তথ্য প্রয়োজন। চেয়ারে হেলান দিলেন। মুসাকে কি কেউ ইচ্ছে করে ঠেলা দিয়েছে? নাকি ওটা নিছকই একটা অ্যাক্সিডেন্ট?
নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল গোয়েন্দাপ্রধান।
দুটো ঘটনা আমাদের মনে রাখতে হবে, বলল।
সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে চাইল ওর দিকে।
এক হচ্ছে, মুসার লাকি লকেটটা হারিয়ে গেছে। এবং দুই, পাহাড়ের ঢালে মুসাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যাপারটা চাচা যেমন বললেন ইচ্ছাকৃত কিংবা অ্যাক্সিডেন্ট, দুরকমই হতে পারে।
এবার আসি সন্দেহভাজনদের তালিকায়।
কারা তোর সাসপেক্ট? রাশেদ চাচা জানতে চাইলেন।
নীচের ঠোঁটে আবারও চিমটি কাটল কিশোর।
যমজ দুটো, কিম আর জিম, বলল ও। কোটা কে বলতে পারব না, কাজেই দুটোকেই রাখছি আমার সন্দেহের তালিকায়। ওদের যে কোন একজনের পক্ষে মুসাকে ধাক্কা দেয়া সম্ভব।
ওরা কেন করতে যাবে কাজটা? রাশেদ চাচা প্রশ্ন করলেন।
স্রেফ দুষ্টামি, বলল রবিন। ছেলেমানুষী।
মৃদু হাসলেন চাচা।
ব্যস, এরা দুজনই তোদের সাসপেক্ট, আর কেউ না?
ঘ্যানঘেনে বিল? রবিন জিজ্ঞেস করল।
ও ছিল ঘটনাস্থলে, বলল কিশোর। স্কিইং পছন্দ করে না ও। ক্লাসটা তাড়াতাড়ি শেষ করে দেয়ার জন্যে মুসাকে ধাক্কা দিয়ে থাকতে পারে।
আর কেউ? মুসা বলল।
উডি আর মারি কাছাকাছি ছিল।
ওরা মুসাকে ধাক্কা দিতে যাবে কেন? রাশেদ চাচা জিজ্ঞেস করলেন।
দুমুহূর্ত ভেবে নিল কিশোর।
মারি বানি ক্লাসে থাকতে চায় না, জ্যাকর্যাবিটে যেতে চায়, বলল।
ও ভেবেছিল আমি পড়ে গেলে ইন্ট্রাক্টর আমার সাথে ওকে পাল্টাপাল্টি করে দেবেন, বলল মুসা। কথাটা বলেও ফেলেছে।
কিন্তু উডি? চিন্তিত কণ্ঠে বলল কিশোর। মারিকে জ্যাকর্যাবিট ক্লাসে আনার জন্যে ও কি মুসাকে ফেলে দিতে পারে?
কাজটা তোদের। গোয়েন্দাগিরি করে জবাবটা তোদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে, বললেন চাচা।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল কিশোর। বিল, উডি আর মারির নাম গেঁথে নিল মনের মধ্যে।
আমাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, বন্ধুদের উদ্দেশে বলল। আজকে বিকেলের ক্লাসে নতুন কোন ক্ল পেয়ে যেতে পারি।
সে আর বলতে, বলল মুসা। আমরা সতর্ক থাকব।
লাঞ্চের পর চাচার কাছ থেকে বিদায় নিল ছেলেরা। তারপর থপথপ করে দরজার উদ্দেশে পা বাড়াল।
হঠাৎ থমকে দাঁড়াল মুসা।
আরে, আমার স্কি জোড়া এখানে কেন?
দরজার এপাশে দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা, ও দুটো।
তুমি শিয়োর এগুলো তোমার? কিশোর প্রশ্ন করল।
টেপ দিয়ে নাম লেখা রয়েছে, আঙুল তাক করে দেখাল মুসা।
ওই দেখো। আর কোন সন্দেহ আছে?
কেউ হয়তো ভুল করে নিয়ে ফেলেছিল, পরে বুঝতে পেরে এখানে রেখে গেছে, বলল গোয়েন্দাপ্রধান।
কিংবা ওই যমজ বিচ্ছু দুটো হয়তো ইয়ার্কি মেরেছে, বলল রবিন। চারপাশে দৃষ্টি বুলাচ্ছে।
আশপাশে যমজদের দেখা গেল না।
যাক, পাওয়া তো গেছে স্কি দুটো, স্বস্তির সঙ্গে বলল মুসা। স্কি আর পোল তুলে নিয়ে বন্ধুদের অনুসরণ করল ও।
কিশোর আর রবিন যথাস্থানে ওদের স্কি খুঁজে পেল। তিন বন্ধু স্কি পরে নিল।
জুলিয়া টিচার আর বিল ঢালের নীচে দাঁড়িয়ে। ভিক্টরকে উডি, মারি আর কয়েকজন জ্যাকর্যাবিটের সঙ্গে দেখা গেল।
কিশোর আর রবিনকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়ল বিল।
জলদি এসো। ঠাণ্ডায় জমে গেলাম!
পরে দেখা হবে, বলে পোলে চাপ দিল মুসা।
কিন্তু এক চুল নড়তে পারল না ও।
আরও জোর খাঁটিয়ে আবারও চাপ দিল।
অবস্থা যে কে সেই।
আমার স্কিতে কী যেন হয়েছে, চেঁচিয়ে উঠল মুসা। নড়ছে না!
ছয়
স্কি খুলে ফেলল মুসা। উল্টে দিল। চাকা চাকা বরফে ভরে আছে তলা দুটো!
জুলিয়া স্কি করে চলে এলেন ছেলেদের কাছে।
কী হয়েছে?
মুসা ওর স্কি জোড়া ইন্ট্রাক্টরকে দেখাল।
লাঞ্চের সময় লজের ভিতর রেখেছিলে নাকি? প্রশ্ন করলেন জুলিয়া।
মাথা নাড়ল মুসা।
না, বাইরেই রেখেছি। কিন্তু কে যেন ভিতরে নিয়ে গেছে।
এবার বোঝা গেল, মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন জুলিয়া। তোমার স্কিজোড়া ভিতরে থাকার ফলে গরম হয়ে যায়। বাইরে যখন পা রেখেছ তুষার গেছে। গলে। কিন্তু বাইরে এতটাই ঠাণ্ডা, পানি আবার জমে গেছে। আর তাই তোমার। স্কির নীচে বরফ দেখতে পাচ্ছ।